বিবিধ

নারীবান্ধব ব্লগে পুরুষের লেখালেখি

নারীবান্ধব ব্লগে পুরুষের লেখালেখি
ব্লগের নামে নারী শব্দটি শুনেই ডাক সাইটে পুরুষ ব্লগাররা থমকে যান! সে কি! নারীদের ব্লগে লেখবেন? ব্যাপারটা কেমন দেখাবে? অনেকের মধ্যে আবার দ্বন্দ্ব কাজ করে। নারীদের ব্লগে কি পুরুষরা লেখতে পারবে? এই ২ টি প্রশ্ন ২/১জন পুরুষ ব্লগারদের মনেও যে আসেনি তা নয়। এক্ষেত্রে আমি উপরের ২ টি কে প্রশ্ন হিসেবে ধরে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। উইমেন এক্সপ্রেস দেশের প্রথম অনলাইন নারী ব্লগ। অনেক অনেক ব্লগের ভিড়ে অগ্রসরমান নারী জাতিকে তুলে ধরাই যে ব্লগের উদ্দেশ্য বলে আমার মনে হয়! আর নারী সংক্রান্ত লেখা বা ভাবনাগুলো বিনিময় ও এর বড় একটা লক্ষ্য । প্রতিটা সৃজনশীল মানুষেরই তার স্বীয় সৃজনশীলতার প্রকাশ বা বিকাশ ঘটানোর অধিকার আছে। কিন্তু,সবসময় অনলাইন ব্লগিং এ নারী সঠিকভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেনা, কারন সাইবার জগতেও নারীর প্রতি সহিংসতা এতোটুকু ও কম নয়। নারীর সৃজনশীলতার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং প্রতিশ্রুতিশীল নারী লেখকদেরকে পুরুষ লেখকদের সমান কাতারে তুলে আনা এখন সময়ের দাবী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, বাংলা সাহিত্যে নারী লেখকদের অবদান খুব বেশী নয়, বলতে গেলে হাতে গোনা। তাই, লেখালেখির জন্য নারী বান্ধব প্ল্যাটফরম দরকার ছিল খুব বেশী। উইমেন এক্সপ্রেস এইজন্য সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ব্লগটা যাত্রা শুরুর পর থেকেই পুরুষ ব্লগারদের মধ্যে একঘরে একপেশে হওয়ার ভাব লক্ষণীয় ছিল। এর সমধান দেওয়ার আগে, চলুন ঘুরে আসি কিছু তত্ত্ব কথা থেকে। নারীর সাথে উন্নয়নকে সম্পৃক্ত করা হয় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ইস্টার বসরাপের বই- womens role in economic development এ। এখানে তিনি দেখান পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে আফ্রিকা এবং ভারতের কৃষি নারী নির্ভর। এই বই থেকেই ৬০ এর দশকে women in development কনসেপ্ট আসে। ১৯৭০ সালে women and development কনসেপ্ট এ বলা হয় নারী সবসময়ই উন্নয়নের অংশ, সুতরাং নতুন করে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার কোন প্রশ্ন নেই। এই পদ্ধতি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অধস্তনতা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়। উপরের ২ টি ধারনাই মোটামুটি ব্যর্থ হয় কেননা শুধু উন্নয়নে নারীর ভূমিকা আর উৎপাদনে নারীকে সংযুক্ত করাতে নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যায়নি। খুব বেশী দরকার ছিল নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ১৯৮০র দশকে আসে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তত্ত্ব। যা নারীর পরিবর্তে জেন্ডার শব্দটিতে বেশী গুরত্ত দেয়।এই তত্ত্ব মনে করে পুরুষ মাত্রই পুরুষ প্রধান সমাজের সমর্থক নয়। GAD মনে করে নারীর প্রতি সমতা বিধানে পুরুষকে সম্পৃক্ত করা গেলেই একটা সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন করা যাবে। নারীবাদ কিংবা নারী স্বাধীনতা সমতার জন্য লেখালেখি কি শুধু নারীরাই করে গেছেন? ইতিহাস কিন্তু তা বলেনা। ইতিহাস বলে নারীদের সমতা প্রদানের জন্য বিখ্যাত পুরুষ চিন্তাবিদরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। জন স্ট্রুয়ার্ট মিল তাদের মধ্যে অন্যতম। যার বিখ্যাত বই- the subjection of women. যেখানে নারীর প্রতি সমাজের নিষ্ঠুরতা আর অবহেলার কথা হয়তো একজন নারীর চেয়েও বেশী অনুধাবন করেছেন তিনি। তিনি নারীর রাজনৈতিক অধিকার, শিক্ষার অধিকার, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ণ নিয়ে দু হাতে লেখে গেছেন। আরেক নারীবাদী বেটি ফ্রিডান অভিন্ন সমাজ গঠনে নারী এবং পুরুষ উভয়কে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। পৃথিবীর নারী স্বাধীনতার পথিকৃৎ নারী মুক্তির দিশারী একজন পুরুষ, নবী মুহাম্মদ(সা.)। যে সমাজে নারী স্বাধীনতা তো দূরে থাক জন্ম নেওয়ার পরে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখার অধিকার পর্যন্ত ছিলনা, বাবার সম্পদে কোন অধিকার ছিলনা, স্বামীর সামনে কোন মর্যাদা ছিলনা, সেই অবহেলিত নারী সমাজকে আস্তাকুর থেকে তুলে এনে সমাজে মা, বোন স্ত্রীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করলেন। আপনি যখন ব্লগকে নারী নামকরণের কারনে তুচ্ছ জ্ঞান করছেন, অন্য কোন পুরুষ লেখলে তাকে হাতে চুড়ি পড়ার কথা বলে ঠাট্টা করছেন, তখন আপনি মনের অজান্তেই আপনার মা বোনকে অপমান করছেন, সমাজে সমতার পরিবেশকে নষ্ট করছেন। আমরা কোন হানাহানি চাইনা, অধিকারের দাবী নিয়ে পুরুষদের বঞ্চিত ও করতে চাইনা। আমরা চাই- আপনারাও নারী বান্ধব হন, নারীদের নিয়ে আপনারাও ভাবুন , লেখু..., এবং আপনাদের ভবিষ্যৎ কন্যা বা সহধর্মীর জন্য একটা নির্মল লেখালেখির আঙ্গিনা তৈরিতে ভূমিকা রেখে যান।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ