বিবিধ
গুহাজীবনে আমন্ত্রণ

সুইডেন এ জন্মেছিলেন একজন গ্রেট সায়নেটিস্ট যার নাম ক্যারোলাস লিনিয়াস। তিনি আধুনিক ট্যাক্সোনমির জনক। বৈজ্ঞানিক নাম দেয়ার ব্যাপারটি তার কাছ থেকে এসেছে। এর মাধ্যমে এক রকম বৈশিষ্ট্য আছে এরকম সব প্রাণীকে সাধারণ শ্রেণীভুক্ত করার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে । ফলে সে গোত্রের একটি প্রাণী সম্পর্কে জানলে অন্য সব প্রাণী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে তারপর এ বিষয়ে এ শতাব্দীতে আর যে মহান ব্যক্তি এ বিষয়ে কাজ করেছে সে হল আমাদের বন্ধু রেজা শাওন।
বর্তমানে ছলা-কলা (কলা অনুষদ) বিভাগ এর কৃতি ছাত্র শাওন ভেবে দেখল যে তার জন্য বিজ্ঞানের এই রস-কস হীন পৃথিবীতে বেশী দিন পড়ালেখা করা সম্ভব না। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই ইন্টারমিডিয়েট এর পর সে সায়েন্স বাদ দিয়ে ঢাকা ইয়ুনিভারসিটির সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হল। এর কিছুকাল পরেই শাওন দেশ জাতি উদ্ধারে দেশকে টাটা-বাইবাই বলে হল্যান্ডের উটরেক্ট ইয়ুনিভারসিটিতে চলে আসল মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন এর উপর পড়তে।বন্ধুর জীবনীর ভূমিকা শেষে তার আসল কৃতিত্বের কথায় আসি।
যে সব পুরুষ তাদের প্রেমিকাকে রিকশায় তুলে বাসার সামনে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে তাদেরকে সাধারণ শ্রেণীভুক্ত করার কাজটি করেছে বন্ধু রেজা শাওন। তাদের নাম- "মাদী পুরুষ"। লিনিয়াস তার এই নামকরণ এবং এর সফল প্রয়োগের জন্য পুরস্কার পেলেও বন্ধুর কপালে জুটেছে দুর্ভোগ। বন্ধু জীবনে 'মাদী পুরুষ' হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল আর এতেই বন্ধুর প্রেমিকা তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। যে ছেলে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পড়তে বিদেশে এসে রান্না করতে পারে না বলে মাসের পর মাস বাইরে খায়, নুডল্যস খেয়ে কাটায় তাকে দেশী প্রেম শাস্ত্রের কঠিন ধরাবাঁধা ব্যাকরণে আটকানো কঠিন। তবে দেশী প্রেমিকারা মনে হয় প্রেমেও কট্টর। তারা সেই স্বাধীনতা দিতে নারাজ। অতএব, হল প্রেমিকা সংহার।
বন্ধুর জীবনে প্রায়শই আরও নানাবিধ বিপত্তি ঘটে। প্রতি কয়েকমাস পর পর তার সাইকেল হারায়। সাইকেল আর সাইকেল চোরের দেশ হল্যান্ড। আমার মত অতি সৌভাগ্যবান কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাই কিছু না কিছু চুরির শিকার হয়েছেন এ পর্যন্ত। সাইকেল চুরির শিকার হওয়া ব্যক্তি ছাড়া অন্য সবার জন্য সাইকেল চুরি সূর্য পূর্ব দিকে উঠার মতই একটা সাধারণ ঘটনা।
তবে আমার ধারণা পৃথিবীর অন্যতম (সবচয়ে বেশীও বলা যেতে পারে) সাইকেল ফ্রেন্ডলি এদেশের রাস্তা। অনায়াসে একটা ছোট বাচ্চা নিরাপদে সাইকেল চালাতে পারে এদেশের রাস্তায়। মানুষের চেয়ে সংখ্যায় বেশী এ দেশে সাইকেলের সংখ্যা প্রায় ১৮ মিলিয়ন এবং জনসংখ্যা প্রায় ১৭ মিলিয়ন । আসলে ডাচরা দুই জিনিসের ব্যাপারে খুব বিরক্তিকর। এক, টাকা পয়সার ব্যাপারে একেবারে হিসেবি। পাই পাই করে ধরে। আর দুই হল সাইকেল চুরি। অবশ্য যে দেশে মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা দশ লাখ বেশী সে দেশে সাইকেল চুরি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে চুরিরও ত একটা লিমিট থাকা দরকার !অসতর্কভাবে তালাবিহীন ঝুলিয়ে রাখলে ত চুরি হয়ই। এছাড়াও ভাল লক দিয়ে বাসার সামনে রাখলেও হয় চুরি। আর সেন্ট্রাল স্টেশন, সে ত দুনিয়ার সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ সাইকেল চোরদের মেলা !
দামী সাইকেল হারানো ছাড়াও সে বাসার ভেতরে চাবি রেখে লক করে আসে বাইরে থেকে। এরপর লোকজন এসে যখন খুলে দেয় তখন তাকে জরিমানা গুনতে হয় আরও বেশ কিছু ইউরো। হল্যান্ডে খাওয়ার আয়োজন, পড়ালেখা, সাইকেল সহ এরকম হাজারটা সমস্যার সমাধান শেষ করে সে যখন অনলাইনে এক দণ্ড শান্তির জন্য প্রবেশ করে তখন তাকে ফেসবুকে হাজারটা প্রেম প্রস্তাব ম্যানেজ করতে হয়।
বন্ধুর এহেন সমস্যা সংকুল জীবনের জন্য আমি একটা সমাধান বের করলাম।সমাধান হলঃ 'গুহাজীবন'। বন্ধুর সাথে ইতিপূর্বে দেশভ্রমনের অভিজ্ঞতা আছে। পরের প্ল্যান হল তার সাথে মরক্কো যাওয়া ইনশাআল্লাহ। ফেজ শহরে গিয়ে দুইটা ফেজ টুপি কিনে মাথায় দিয়ে একটা ছবি তুলতে হবে এরকমটাই প্ল্যান।সে যাই হোক, আপাতত তার সমস্যা সমাধানে যে দেশ ভূমিকা রাখতে পারে সেটি হল ভিয়েতনাম।ভিয়েতনামে পাওয়া গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহা। গত বছরের খবর। তবে অনেকেই হয়ত পরিচিত না এ খবরের সাথে। আর তাই বন্ধুর সাথে সাথে পৃথিবীর সকল নির্যাতিত মানুষ (বিবাহিত পুরুষ) দেরকেও আমার এই আহবান।
এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহা ছিল মালয়েশিয়ায়। ২০১০ সালে আবিষ্কৃত হওয়া এই ভিয়েতনামিজ কেইভ আগেরটার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড়। এর ভেতরে আছে একটা জঙ্গল এবং নদী। এর আছে নিজস্ব ইকোসিস্টেম আছে। অভিযাত্রীরা প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার এর ভেতরে প্রবেশ করার পর সিজনাল বন্যার পানির জন্য আটকে যান। ধারণা করা হয় এটি আরও লম্বা। প্রায় দুই মাইল জায়গায় এটি প্রায় ৪৬০ বাই ৪৬০ ফিট। এই বিশাল সুন্দর জায়গাটি এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। ভাল খবর হল বাংলাদেশের স্ত্রী সমাজ এই বিষয়ে অবগত না। আশা করি মোবাইল নেটওয়ার্কও নাই। অতএব, স্ত্রী/পড়াশুনা বা অন্য যে অন দুনিয়াদারী থেকে মুক্ত হয়ে ধ্যানসহ আধ্যাত্নিক উন্নতির অপরাপর অনুশীলনের জন্য এই জায়গা সেরা।
বন্ধুকে বললাম চল এই দুনিয়াদারি বাদ দিয়ে গড়ে তুলি একটা গুহা সম্প্রদায়। আর কত এই দুনিয়াদারি !
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)