বিবিধ

রামাদানুল কারীম আর টুকিটাকি বাস্তবতা

রামাদানুল কারীম আর টুকিটাকি বাস্তবতা
sssssssssssssssssssssssss ইউনি থেকে আসতে আসতে রিক্সায় বসে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি। মাথার উপর আকাশটা,রাস্তার দুপাশের গাছ গুলো একটু অন্য রকম লাগছিলো। প্রকৃতির প্রত্যেকটা পরতে একটা প্রশান্তি প্রশান্তি ভাব, এমন কি কড়া রোদটাতেও।রমজান মাসে সব মনে হয় এরকম নতুন করে সাজে। দোকান গুলোও সেজেছে তবে সেই সাজে প্রশান্তি নাই অসস্তিটা আছে ষোল আনাই। একেক টা শপিংমল দেখলে লাগে সং এর মতো। চারদিকটা দেখতে দেখতে ঠাস করে চোখে পড়ল একটা ব্যানার। ওতে লিখা এইখানে ৬০ রকমের ইফতার পাওয়া যায়। মাগো! ষাআআইইইইট! এইবার লেগে গেলাম আশে পাশে খাবার দোকান গুলো দেখতে। একেক ফুডশপের আয়োজন একেক রকম আইটেমের বাহুল্যতায় কেউ কারো পেছনে পড়ে থাকতে রাজি না। এত্তো খায় লোকে! তেল চকচকে দোকান গুলো দেখলে কে বলবে এই দেশের মানুষ গুলো খেতে পায়না! রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। কড়া রোদে বোতলের মুখে বেকায়দায় ছিপি আটকানোর মত আটকে আছি রাস্তায়। পাশেই বিরাট একটা ফুডশপ তাতেও ইফতারির আইটেমে এলাহি কারবার। বৃদ্ধ এক ভিখিরি খুব অনুনয় করে খাবার চাইছিলো দোকানির কাছে। বিনিময়ে ধমক ধামক ছাড়া আর কিছুই পেলোনা বেচারা ফকির। এই শপটাতেও হয়তো ৫০/৬০ খাবার আইটেম ছিলো। সব হয়তো সেল হতনা। কিছু থাকবে কিছু নষ্ট হবে কিছু ফেলে দেয়া হবে।এত্তো খাবার থেকে বুড়ো দাদু ফকিরটাকে কিছু দিলে কি ক্ষতি হতো? ব্যাটারা খাবার ফেলে দেবে তবুও দান করবেনা! একজন পরিচিত ব্যক্তির সাথে কোথা হচ্ছিল। তার বাসায় ইফতারির কত রকম আইটেম করা হয় তার ফিরিস্তি অনেকটা জোর করেই শোনাচ্ছিল আমাকে। এক পরযায়ে আমি বললাম এতো ইফতার বানাও, ইবাদত করো কখন? সে বলল ইফতারি বানানোর ঝামেলায় প্রায়ই আসর কাজা হয়ে যায় এবং এই ব্যাপারটা নিয়ে সে so much উদ্বিগ্ন। বললাম ইফতারিতে তো এতো আইটেম না হলেও চলে। আইটেম কমাও। খাবার বানাতে গিয়ে নামাজ কাজা যাবে এটা ক্যামন কথা হইলো! সে বলল এতো গুলা আইটেম বানানো তার ফ্যামিলি ট্র্যাডিশন আর আইটেম কমালে বাপ ভাই মা বোন কেউ খাবার মুখেও তুলবেনা। এই তিনটা ঘটনার বাস্তব সাক্ষী অনেকেই হয়তো ঘটনার নায়ক নায়িকা স্থান কাল পাত্র ভিন্ন। এই ব্যাপার গুলো ফেইস করতে গিয়ে মনে হল রমজান মাসেই বরং এই দেশ থেকে সংযম বিদায় নেয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এখন রমজানের চেহারা এমনই। অথচ এই মাসটার গুরুত্ব ও কারো খুব একটা অজানা নয়। আসিফ মহিউদ্দিনের একটা রমজান বিদ্বেসী পোস্ট পড়লাম। সে তার সবটুকু দিয়ে ইসলাম কে অপমান করেছে যা সাধারনত এই ধরনের নরকের কীট গুলো করে থাকে। কিন্তু তার কিছু লাইনের বাস্তবতা স্বীকার না করে পারলামনা। লোকটা ইনডিকেইট করেছিলো সেই ব্যাপার গুলো যা খুব সচেতন মুসলিমরা ও করে থাকেন। লোকটার প্রশ্ন ছিলো রমজান যদি সংজমের মাসই হয় তাহলে ইফতারের পরে এতো অতিরিক্ত ভুরি ভোজন হয় কেনো? কেনো এই মাসেই সব কিছুর দাম খুব বেশি বেড়ে যায়? শপিংমল গুলোতে এতো ভিড় কেনো লেগে থাকে? এই ব্যাপার গুলো খুব সিরিয়াস আমাদের জন্য। জেনে বুঝেও আমরা ক্যানো এমন করি??? রমজান নিয়ে ব্যবসা হয় কিন্তু দানের জন্য হাত ওঠেনা, চুটিয়ে শপিং হয়,খাওয়া হয় কিন্তু ইবাদাত হয়না, কোরান খতমের পর খতম হয় কিন্তু একটা আয়াতও মানার জন্য জানা হয়না। নাহ! এই ব্যাপার গুলো চেইঞ্জ করা দরকার যদি আমাদের জাহান্নামের লাকড়ি হতে আপত্তি থাকে। আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি সবার জন্য সমান ভাবেই বর্ষিত হয়। কেউ তা সাগর হয়ে ধারন করতে পারে কেউ নদী হয়ে, কেউ পুকুর বা কলশি হয়ে। কেউ আবার এমনি পাথর যে রহমতের বৃষ্টিধারা তার উপর দিয়ে গড়িয়েই যেতে থাকে তার এক ফোটাও সেই হতভাগা ধারন করতে পারেনা। আমরা কি তাহলে সেই পাথরের মতো হয়ে গেলাম? পাথরের লিস্ট থেকে বের হয়ে অন্তত কলসীর মত সৌভাগ্যবান হওয়ার সুযোগ কিন্তু চলে যায়নি। কলসী হয়েই রহমত ধারন করাটা শুরু হয়ে গেলে সাগর হওয়াটা খুব দূরে নয়। কে জানে আমাদের কলসী হওয়ার প্রচেষ্টাতেই আল্লাহ হয়তো সাগর সাগর হয়ে আমাদের সঅঅঅব কালিমা মুছে দেবেন!!!!!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন