উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

২০ লাখ টাকার কাবিন- ২

২০ লাখ টাকার কাবিন- ২
আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকেনা রাহেলার।নিজের মন্দ ভাগ্যের ঘড়ির কাঁটাটিকে স্থির হয়ে দাড়িয়ে পড়তে দেখে। কান বেয়ে রক্ত পড়তে দেখে আলমের চোখে মুখে পশু সুলভ উল্লাস। আবার চড় তুলতে যাবে , সেই মুহূর্তেই ফোন বেজে উঠলো । ফোনে রাহেলার মা- বাবা কেমন আছ? আজ রাতে আমাদের বাসায় খাবে কেমন? রাহেলা কেমন আছে? ওকে একটু দাও তো বাবা! আলম ফোন টা রাহেলা কে দিতে দিতে চোখ গরম করে তাকায়। এটা হচ্ছে মা কে মাত্র ঘটে যাওয়া ঘটনা না বলার ডোজ । রাহেলা কাঁপা কাঁপা গলায় মায়ের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। সারাদিন আলমের কাছ থেকে পালিয়ে থাকে।সন্ধায় আলম ঘরে আসে। তাকে যেন চেনাই যাচ্ছেনা । সকালের রুদ্র মূর্তির সাথে এই মানুষটির যেন কোন সম্পর্কই নেই। মিষ্টি কণ্ঠে বলে- কই গো! তুমি এখনো রেডি হলেনা যে! রাহেলা তখনো বিধ্বস্ত । কানে ভীষণ জ্বালাতন।  কোন কথা না বলে নিরবে রেডি হয় সে, যাওয়ার সময় আলমারি থেকে গহনা অল্প স্বল্প যেগুলো বাকি ছিল তা নিয়ে নেয়। কেন যেন তার মনে হচ্ছে এ বাড়িতে সে আর বেশিদিন নেই। আলম সেদিন অনেক কিছু কিনে শ্বশুর বাড়ির জন্য। বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে হই হই রব! জামাইয়ের সে কি আদর। সুজুগ বুঝে রাহেলা মা কে ডেকে নিয়ে যায়। গয়না গুলো বুঝিয়ে দেয় মাকে, আর সেই সাথে শ্বশুর বাড়ির ঘটনা গুলো খুলে বলে। কিন্তু মা কিছুতেই বিশ্বাস করেনা মেয়ের কথা। ভাবে, মেয়ের জামাই পছন্দ হয়নি, তাই অকারণে শত খুত খুঁজে বের করছে মেয়েটা । জামাই তার লাখে একটা ! তার বিরুদ্ধে মেয়ের এই তাল বাহানা একেবারেই বাজে একটা গল্প মনে হোল। রাহেলা সেদিন আর শ্বশুর বাড়ি ফিরে জেতে চাচ্ছিলনা। তবুও যেতে হোল। দেখতে দেখতে আলমের বিদেশ যাওয়ার দিন এসে গেলো । রাহেলাকে মায়ের বাড়িতে রেখে সে বিদেশ পাড়ি জমাল। এরপর দিন যায় মাস যায় আলমের কোন খবর নেই। নেই কোন ফোন। একদিন এক লোক আসলো বেশ কিছু কাগজ নিয়ে, বাসায় রাহেলা একা। লোকটা বলল- এই কাগজটায় সাইন করে দিন, এটার মাধ্যমে আপনার স্বামী আপনাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাবেন ।রাহেলা খুশিতে নিজেকে আর সামলাতে পারলনা। একবার কাগজ টা পড়ে দেখার ও দরকার বোধ করলনা। সাইন করে দিলো। আর একটা কপি দিয়ে গেলো। মা বাসায় আসার পর রাহেলা খুশির সংবাদটা দিলো। মা আগ্রহ ভরে কাগজটা দেখতে চাইলো । কিন্তু একি! এটা তো divorce letter! মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! তার বোকা মেয়েটা না দেখেই এতে সাইন করে দিয়েছে। গয়না গাটি আসবাব পত্র যা দিয়েছিলেন সব তো গেলো ই, ১ টাকা কাবিন ও ছেলেটা আদায় না করে মেয়েটা কে তালাক দিলো। এভাবেই অতিরিক্ত লোভের আসায় সব খুইয়ে ফেলেছে রাহেলার বাবা মা। তালাক হওয়ার পর রাহেলা আর আগের মতো নেই। কোন মতো বাবার সংসারের খুঁটিটা আঁকড়ে পড়ে আছে। তার আরও ২ টা বোন আছে। তাদের কথা ভেবেই সে নিজেকে খুব অপরাধী ভাবে। সারাক্ষণ তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। কিন্তু তবুও তারা তাকে পছন্দ করেনা। ২০ লাখ টাকা কাবিনে তার বিয়ে হয়েছিলো এক ধনীর সাথে, অথচ তারা কাবিন তো দূরে থাক বিয়ের শাড়িটা পর্যন্ত দেয়নি। ওই শাড়িতে মাখা আছে তার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ , আর জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার উপাখ্যান ।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ