উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

২০ লাখ টাকার কাবিন- (পর্ব ১)

২০ লাখ টাকার কাবিন- (পর্ব ১)
ছেলেটা দেখতে মোটেও ভালো না। চেহারায় কেমন একটা রিকশাওয়ালা রিকশাওয়ালা ভাব। ঠোঁটের নীচ টা ভীষণ কালো । দেখেই মনে হয় টানা স্মোক করে। তবুও তার মেলা যোগ্যতা , আমেরিকায় নিজের বাড়ি আছে, ব্যবসা আছে। আর পড়া লিখা কোন এক প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট করেছে। তবুও মন মানেনা রাহেলার। বাবা মা শুধু বাড়ি গাড়ি আর  টাকা টাই দেখছে। ছেলেটা বিদেশে থাকে তার চরিত্র কেমন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই যেন বিরাট অপরাধ। নামাজে অনেক কাঁদে সে। কিন্তু বাবা মা যে কিছুতেই মানতে চায়না। উল্টা সেদিন বড় মামীকে অপমান করে দিলো এক সরকারি চাকুরের প্রস্তাব আনায়। এতো গরীব ছেলের কাছে তারা মেয়ে বিয়ে দিবেনা। যদিও রাহেলা শুনেছে ছেলেটা খুব নামাজি, ভদ্র। দেখতে দেখতে রাহেলার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। বিয়েত না যেন এক এলাহি কাণ্ড !  বিয়ের দিন বঁধু বেশে নিজেকে দেখে সে অবাক হয়। এতো সুন্দরী হয়ে জন্মেও নাকি ওই মামদো ভূতের ছানাটাকে বিয়ে করতে হবে! কান্না পায় খুব! নিজেকে পৃথিবীর প্রথম অসুখী বঁধু মনে হয়। বিয়ের স্টেজ এ বড় জা এসে এক জোড়া স্বর্ণের দুল দিয়ে বলল- এটা তোমার শাশুড়ি রেখে গেছেন তোমার জন্য। ৩০ ভরি স্বর্ণের ভারে এমনিও রাহেলার প্রাণ যায় আর আসে। অনেক মানুষ এসেছে বিয়েতে। অনেকেই ২০ লাখ টাকা কাবিন শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। রাহেলার মা সেরকম খুশি আজ। মেয়ের বিদায়ের কোন দুঃখ তাকে গ্রাস করেনি। সমাজকে দেখিয়ে দেওয়ার মতো বিয়ে দিতে পেরে তিনিও তৃপ্তির হাসি হাসছেন। মেয়ের বিয়ের বাজার সব এসেছে ইন্ডিয়া থেকে এটাই বা কম গর্বের কি! যদিও অনেক আত্মীয় ই বলছেন, বর কনের চেয়ে খাটো । এই ব্যাপারটা তিনি পাত্তা দিতে নারাজ! যে বর ২০ লাখ টাকা কাবিন করতে পারে তার আবার কিসের লম্বা খাটো! মহা ধুমধামে বিয়ে শেষে রাহেলার বাসর রাত লাজুক বঁধু বসে আছে বিছানায়। কিন্তু একি! আলমের যে আসার কোন খবর ই নেই। মাঝরাতে যাও আসলো তাও টলতে টলতে। নববধূকে কুশল বা অভিবাদন না জানিয়েই সে তার স্বামীর অধিকার প্রয়োগ করলো। রাহেলা কিছুটা হত বিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো স্বামী নামের পশুটির দিকে। সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে বড় জা এসে বলল- আমাদের এখানে একটা রেওয়াজ আছে, নতুন বউয়ের সব গয়না, আর ভালো শাড়ি জা দের হেফাজতে রাখতে হয়। এটা দিয়ে যাচাই করা হয় মেয়ে শ্বশুর বাড়িকে কতটা আপন ভেবেছে। নতুন বউ আর কি বলবে। আলমারি থেকে গয়না শাড়ি বের করে জায়ের হস্তগত করলো। নিজের কাছে রাখল শাশুড়ির সেই দুলটা আর মায়ের পক্ষের দেওয়া ছোট খাটো গয়না। একদিন , শাশুড়ির দেওয়া সেই গয়নাটা পড়লো । গতকাল রাতে আলমের কেন জানি মেজাজ খুব গরম ছিল। তার মধ্যে রাহেলা মদ খাওয়া নিয়ে ২/১ টা উপদেশ দিয়েছে। তাতেই রাতে ২ টা চড় খেয়েছে। সকাল থেকে আলমকে একবার ও দেখেনি। মায়ের দুলটা পরে স্বামীর মন ভালো করার বুদ্ধি করেছে সে। একটু পরেই আলম ঘরে ঢুকল । রাহেলার কানে নিজের মায়ের দুল দেখে মেজাজ আরও চড়ে গেল। এক টানে কান থেকে দুলটা খুলে ফেলে বলল- bloody bitch! এই দুল তুই কোন সাহসে পরেছিস? ঘটনার আকস্মিকতায় রাহেলা হতভম্ব, কান বেয়ে রক্ত পরছে অঝোরে । (চলবে)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ