বিবিধ

এক দিবসের কিয়দাংশ! (আমার আমি)

এক দিবসের কিয়দাংশ! (আমার আমি)
সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজে আব্বু বাসায় আসার পর ভাবলাম,খাওয়ার পর আব্বুকে এক কাপ চা করে দিবো,ডাক্তারের নিষেধ থাকায় আব্বুকে ইদানিং চা বানিয়ে দেয়া হয় না!আমার চা প্রিয় বাপজান,এক কাপ চা এর জন্য খুব হাসফাঁশ করেন বুঝলেও,নানুর অবস্থা দেখার পর আম্মু আমাকে পই পই করে মান করে দিয়েছেন। আজ আম্মুও বাসায় নেই,তার উপর আজ 'বাবা দিবস',ভাবলাম,এট লিস্ট এক কাপ চা তো খাওয়াতে পারি! একদিন এক কাপ খেলে কিচ্ছু হবে না! কিন্তু খানিক পরে বুঝলাম আজকে আব্বুর মনের অবস্থা খুব্বই খারাপ! আর তাই রাত পর্যন্ত হাসপাতালে ছোটবোন আর আম্মুর সাথে থাকার কথা থাকলেও দুঃশ্চিন্তা আর শরীর খারাপের কারণে দেখা না করেই চলে এসেছেন! এক'দিন আসলে ধকলও কম যায়নি,তার উপর সমস্যার তো অন্ত নেই! এশার নামাজ পড়েই যখন শুয়ে পড়লেন,তখন আমি চায়ের মগটা নিয়ে রুমে এসেছিলাম!কিন্তু বুঝলাম,আব্বু এখন একটা ভালো ঘুম দিতে চাচ্ছেন,যাতে দুঃশ্চিন্তা গুলো মাথা থেকে সরিয়ে সলিউশন বের করতে পারেন। চা আর দেয়া হলো না... আমি এখন অপেক্ষা করছি,আব্বু কখন ঘুম থেকে উঠবে। কারণ,উনি ঘুম থেকে উঠলে,কয়েকটা ব্যাড নিউজ বা দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়ার মতো কিছু নিউজ উনাকে দিতে হবে!! ইচ্ছে থাকলেও নিউজ গুলো না দিয়ে উপায় নেই! সন্তান হিসেবে আমি এখনো সু-সন্তানের প্রথম স্টেজেও পা রাখতে পারিনি,আর তাই আমার পক্ষে সম্ভব না,বাবার দুঃশ্চিন্তা গুলো থেকে অন্তত ১টা দুঃশ্চিন্তাও সলভ করে দেয়ার! আজ শহর জুড়ে বৃষ্টি মুখর রাত...আজ বর্ষার প্রথম দিন। চারপাশে তাই মেঘ ডাকা মুহুমুহু বাতাসে জড়ানো চমৎকার ওয়েদার। জীবনে প্রথম মনে হচ্ছে,এমন সন্ধার কোন দরকার নেই,দরকার নেই এমন তারাহীন রাতের। দিন তিনেক আগে,রাতের এমনই সময় আমি নানুর নিথর দেহ টা জড়িয়ে চিৎকার করে বলছিলাম,'ও নানু উঠেন,আমার তো অনেক কথা আছে আপনার সাথে,আপনি তো কিছু বলে গেলেন না,উঠেন নানু উঠেন!' কিন্তু নিষ্প্রান সেই দেহটা থেকে কোন সাড়া পায়নি! আমি অবুঝ না হয়ে পারিনি,আমার আসলেই অনেক কথা ছিলো নানুর সাথে!আমার বিশ্বাস ছিলো একটা বারের জন্য হলেও,নানু যাবার আগে চোখ মেলে আমাদের দিকে তাকাবেন! নানু ছিলেন আমার আরেক মা,যার জন্য আমার অনেক না হোক,কিছু তো করার ছিলো!কিন্তু উনি সময় দিলেন না,শেষ বারের মতো নানু ডাকার সুযোগও দিলেন না! আজ যখন সাড়ে চার বছরের মামাতো ভাই লাজিম আমাকে বলে,'আপু,আল্লাহকে একটু ফোন দাও না,দাদুর সাথে কথা বলবো!উনাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলবো!' আমি তখন ওকে বুঝানোর বদলে আপন মনেই বিড়বিড় করে নানুর সাথে রাগ দেখাই! রাগ দেখাই নানা ভাইয়ের সাথেও!! নানা ভাই সব সময় আম্মুদেরকে বলতেন, 'আমি চাই আল্লাহ যেনো তোর মা কে কবরে রেখে যাওয়ার সুযোগ দেন!তোর মায়ের দায়িত্ব আমার,তাই আমার দায়িত্ব আমি পুরোপুরি শেষ করে যেতে চাই,তোদের দায়িত্বে রেখে যাবো,তোরা যদি ঠিক মতো পালন করতে না পারিস!তখন তো তোর মা ও কষ্ট পাবে,আমিও!' আল্লাহ ঐ ভদ্রলোকের দোয়াই শুনলেন!আমাদের না...! নানু চলে যাবার পর আমি প্রিয়জনদের জন্য কিছু করতে পারবো এই আশাটাও করা ছেড়ে দিয়েছি!আমি এখন আরো ভালো ভাবেই বুঝতে শিখেছি,আমাকে দিয়ে আসলে ওমন কিছুই হবে না!বড় আম্মু আসলে ঠিকই বলতেন,ওমন কিছু করতে হলে,কপালওয়ালী মেয়ে মানুষ হতে হয়! আমার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখার কপাল! দুঃশ্চিন্তা করতে করতে অল্পতেই বুড়িয়ে যাওয়া বাবার মুখ! একূল-ওকূল সামলাতে সামলাতে রোগাক্রান্ত মায়ের ক্লান্ত হাঁসি আর সারা জীবন দু'হাত ভরে আদর দেয়া মানুষ গুলোর নিরবে হারিয়ে যাওয়া! আমি আসলেই ওমন কপালওয়ালী কেউ না,আমিও আর দশজন স্বার্থপর মানুষদের মতো! কেবল নিজের খোরাক জুটাতেই জীবন পার করে দিবো,আর বুকের ভেতর ছাই চাপা আফসোসের আগুন নিয়ে ঘুরবো। সময় পার হবে,বাস্তবতা বদলাবে,তবুও নিজের প্রয়োজনের কিয়দাংশও পূরণ করতে হিমশিম খাবো,দিনের পর দিন পার করে,একদিন ব্যস্ত শহরের বিষাক্ত বাতাসে উড়িয়ে দিবো,নিজের জমানো ইচ্ছে গুলোর লিস্ট! আর দিন শেষে ভাববো,ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন... দিনে দিনে ষড়ঋতুর মতোই জীবন থেকে কখন যে হারিয়ে যাবে শরত,হেমন্ত,বসন্ত গুলো টেরও পাবো না! একসময় যা হতাশা মনে হতো,তখন তা ই হবে আশা! হাহাহাহা!!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ