উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
পরাণের বান্ধবরে বান্ধব , বুড়ি হইলাম তোর কারনে

পরাণের বান্ধবরে বান্ধব , বুড়ি হইলাম তোর কারনে
কাঙালিনী সুফিয়ার এই বুক ফাটা গানটা শুনেনি এমন মানুষ বোধ হয় বাংলাদেশে কম ই পাওয়া যাবে । অবশ্যই গানের গায়িকা নারী প্রজাতির প্রাণী। যে অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে গেছে, তারপর ও বান্ধবের মন পায়নি।
আমাদের বাসায় যে বুয়াটা কাজ করে সে বিধবা হয়েছে ৮ টি বছর ধরে, কিন্তু এখনো বিয়ে করেনি। কেন যেন আজকে বুয়াকে সুবুদ্ধি দিতে মনে চাইলো। বললাম
- খালা! বিয়ে করে ফেলেন! আর কতদিন একা থাকবেন। আপনার বুঝি কষ্ট হয়না?
-যাকে চাইছিলাম তাকে তো পাইনি! এখন আর বিয়ে করে কি হবে!
কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পেলুম! কাহিনী শুনতে চাইলাম। উনি যা বললেন তার সার সংক্ষেপ হলো-
প্রায় ১২ বছর আগে এক লোক কে খুব ভালোবাসতেন।
লোক তখন এস এস সি পাশ করেছে মাত্র। লোকটার বাবা মারা গেলো। আর বুয়ার ও অন্যত্র বিবাহ ঠিক হোল। বুয়া অনেক কাকুতি মিনতি করলেন বিয়ে করার জন্য।
কিন্তু লোক বলল- তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না বিবাহ করা! তার মাত্র বাবা মারা গেছেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বুয়ার ভাইয়েরা যদি কোনমতে ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিতে পারেন, চেষ্টা করে দেখবেন। এ ছাড়া এখন বিবাহ করা সম্ভব নয়!
বুয়া জানতে চেয়েছিল - সে কি অপেক্ষা করবে? লোকটা অপেক্ষা করতেও বারন করে দিলো।
ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভাঙ্গা মনে বিয়ে করলেন বাবা মায়ের ঠিক করা পাত্র কে!
এরপর বিয়ের ৫ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খুব সামান্য অসুখে মহিলার স্বামী মারা গেলেন। পূর্ব প্রেমিক তখনো সিঙ্গেল।
সারা গ্রামবাসী জানে, আগের প্রেমিকার প্রেমে মজনু হয়ে এখনো বিবাহ করেন নি।
বুয়ার বিয়ের পর , প্রায় ১২ বছর লোকটা অবিবাহিত ছিলেন। কেউ অবিবাহিত থাকার হেতু জানতে চাইলে প্রচার করতেন- এক প্রেম বিফলে গেছে বলে বিয়ে করেছেন না।
কিন্তু প্রশ্ন হোল- ভালোবাসা যদি এতোই প্রবল হত, তাহলে কি আট বছর প্রেমিকা বিধবা থাকা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতেন? সবার আগে ভালোবাসার ছাতাটা তো তার ই ধরার কথা ছিল।
তা তো হয়নি!
উল্টা বিধবা মানুষ শ্বশুর বাড়ির গঞ্জনা সইতে না পেরে ২ ইয়াতিম ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বুয়া হওয়ার জন্য পাড়ি জমাতে বাধ্য হলেন!
এরপর ১২ বছর পর লোকটা বড়লোক দেখে একটা মেয়ে বিবাহ করলেন। কিন্তু , তারপর ও সুখে নেই । শ্বশুর বড়লোক হলেও একটা লুঙ্গি ও নাকি শ্বশুর বাড়ি থেকে পান নি!
আল্লাহর উচিৎ বিচার।
লোকটার বিয়ের দিন মহিলা গ্রামেই ছিল। হটাত দেখা হলে, মহিলা জিজ্ঞেস করেছিলো,
- আপনাদের বাড়িতে এতো মানুষ কিসের!
লোকটা বলেছিল- আমার চাচার মৃত্যু বার্ষিকী!
- আপনি মিথ্যা বলছেন কেন!
- না, সত্যি!
- আজকে আপনার বিয়ে না?
- হ্যা। তুমি আমাকে বদ দোয়া দিও না রোজিনা!
- বদ দোয়া দিবো কেন! আমার শুধু একটাই দুঃখ! আপনি যদি সেদিন আমাকে একবার ও বলতেন কিছুদিন অপেক্ষা করতে! আজকে আমার এতো কষ্ট হতো না! আপনি সবাইকে বলে বেরিয়েছেন, আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। অথচ, আট বছর হয় আমি বিধবা কোনদিন যেয়ে আমার খোঁজ ও নেন নি!
- তুমি তো ঢাকায় থাকো! আর তোমার আপার বাসায় থাকো! একা থাকলে নাহয় যেতাম তোমার বাসায়!
-যদি থাকে বন্ধুর মন, গাং পার হইতে কতক্ষণ!
- আর তুমি তো কুমারী না। বিধবা। আমি তো আগে বিয়ে করিনি। খালি খালি বিধবা বিয়ে করে ঠকবো কেন রোজিনা?
- তাহলে এতদিন এই ঢং টা করলেন কেন? আমি তো জানতাম ই আপনি এমন স্বার্থপর! প্রথম যেদিন ফিরিয়ে দিছেন ঐদিন ই চিনছি। তাই এই আট বছর আপনার সাথে কথা বলিনি!
- আসলে আমি এতদিন বড়লোক একটা শ্বশুর খুঁজছি। নিজের কাজ করে খেতে বেশী ভালো
ভাল লাগেনা।
- আচ্ছা! আপনি সুখে থাকেন। আমার জীবন কাটবে এক ভাবে! দুঃখ একটাই। সারাজীবন ভুল মানুষকেই ভালবাসলাম।
মেয়েরা পরাণের মানুষের জন্য কতো আত্মত্যাগ করে। মানুষটার বংশ রক্ষা করতে যেয়ে নিজের শরীরে সন্তান ধারন করে, এবার তাতে তার শারীরিক সক্ষমতা কিংবা কমনীয়তা লোপ পাক না কেন! আবার সেই স্বামী যখন দেখে বউ আগের মতো সুন্দর নেই , তখন পরকিয়া করে।
অথচ, তার বংশ রক্ষা করতে যেয়েই আজ সেই চপলা যৌবন হারিয়ে গিয়েছে।
মন দিয়ে উজাড় করে ভালবাসলেও, নারীর শরীরে সেই পুরুষের একক আধিপত্য আছে কিনা এটাই পুরুষের ভালোবাসার মাপকাঠি।
যে নারী সারা জীবন একজনকে ভালবাসল, সে যদি বিধবা হয়, তার জন্য সেই ভালোবাসার মানুষটিই অপরিচিত একজন ব্যক্তির মতো।
অকারণে চোখের জল, মায়া, রোদ ঝড় বৃষ্টিতে তাকে মনে করা, তার কল্যাণ কামনা করা কিছুর ই কোন দাম থাকে না এই পুরুষ প্রজাতির কাছে। কারন, তারা শরীর সর্বস্ব । ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় , কিন্তু বেশীরভাগই এমন।
তাই বলি, পরাণের বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করে বুড়ি হয়ে কোন লাভ নেই আসলে। এতো কষ্ট করেও সেই প্রজাতির প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়া বড়ই দুস্কর!
চামড়ার ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসি বলা খুব তো কঠিন না। কাজেই প্রমাণ হয়- ভালোবাসা স্বার্থপর।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)