বিবিধ

শুধু তোমার জন্য

শুধু তোমার জন্য
  ছোটবেলায় মাথায় খুব উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্ন আসতো। আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম- আম্মু তুমি বিয়ে করেছিলে কেন? কতো কষ্ট তোমার দেখো! সারাদিন কাজ আর কাজ! আম্মু তখন বলতো- আমিও এমন ভাবতাম! কিন্তু একসময় মনে হোল আমি যদি এখন মরে যাই, আমাকে কেউ মনে রাখবে না। কিন্তু, ছেলেমেয়ে থাকলে তারা মনে রাখবে। জিনিষ টা খুব আজব মনে হতো। কেউ বুঝি চির স্মরণীয় হওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় কষ্ট বরণ করে নেয়? কতো কষ্ট! বাচ্চা জন্ম দেওয়া , লালন পালন করা! তারপরে সম্মান করবে কি করবে না, তার ও কোন ঠিক নেই। কিন্তু, যেদিন আম্মু চলে গেলো সেদিন আম্মুর চাওয়ার মর্ম বুঝলাম। একদিন এক অনুষ্ঠানে এক অপরিচিত ভদ্র মহিলা এসে জিজ্ঞেস করলো- তুমি অমুকের মেয়ে না? আমি রীতিমতো বিস্মিত। কীভাবে বুঝল! উনি বললেন- তোমার চোখ হুবহু তোমার মায়ের মতো। যে কেউ দেখলেই চিনবে আরেকদিন বাবুর টিচার ঠিক করতে সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনের বাসায় গেলাম। টিচারের মা পাক ঘরে কাজ করছিলো। আমাকে দেখে উঠে এসে অনেক ক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল- তুমি অমুকের মেয়ে, তাই না? এখানেও অবাক হলাম। বুঝলাম। মানুষ মরে গিয়েও এভাবেই পৃথিবীতে বেঁচে রয়। কবিতা ,লিখালিখি সব কিছুই আমার মায়ের থেকে পাওয়া। আরেকজনের মিষ্টি গানের গলা। শুধু আম্মুর গানের গলা কে মনে করিয়ে দেয়। আসলেই, এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে? নিজের তনয় তনয়াদের মাঝে? মা এই জন্যই মানুষের জন্য এতো বড় উপহার। আমার আমলনামার সব ভালো কাজ এই জন্যই তাকে উৎসর্গ করেছি। ভার্সিটিতে প্রায়ই অনেকে আসে মায়ের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য। বুঝি! একটা সন্তান ই বুঝে, একজন মৃত্যু পথ যাত্রী মাকে ফিরিয়ে আনার কতো হাহাকার। যতো দান সদকা সব আমার মায়ের জন্য। নিজের ভালো হবে, এসব ভাবনা আসেনা। এখনো সামান্য ব্যাথা পেলেই আম্মুকেই মনে পড়ে। যে কোন কষ্টে, তার মুখ চোখে ভাসে। কি সার্থকতা একজন মায়ের! যে কষ্টে তার কোন অংশ নেই, তাতেও তাকে মনে পড়ে। মানুষের জীবনে এর চেয়ে বেশী আর কি চাই! স্মরণীয় হওয়ার জন্য!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ