বিবিধ

রক্তাক্ত ক্ষত

রক্তাক্ত ক্ষত
রক্তাক্ত ক্ষতটায় আবার নতুন করে খোচা খেলাম। ভার্সিটি যাই একা আর আসি এক ক্লাসমেটের সাথে। প্রতিদিনের মত আজও একসাথে আসছিলাম। পাশে বসা সহপাঠীটি সাভার ট্রাজেডির কথা বলছিল। বলছিল হিউম্যানিটি, ইউনিটি ওখান থেকেই শেখা উচিত। সসস্ত্র বাহিনীর খুব প্রসংশা করল সে। মনের একদম ভেতর থেকেই একেবারে ১০০% সায় দিলাম তার কথায়। নিজের অজান্তেই কথা গুলো বের হয়ে এলো যে, শাপলা স্কয়ারেও এই সেনাবাহিনী, এই র‍্যাব, এই পুলিশই ছিল কিন্তু সেদিন হিউম্যানিটি কোথায় ছিলো? মেয়েটা মাছি তাড়ানোর মত হাত নেড়ে বলল বাদ দাও তো! প্রচন্ড একটা চড় খেলাম মনে হল; বাদ দিবো! কিছুক্ষণের জন্য কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ইজ শী অ্যা হিউম্যান বিং! তিন তিনটা হাজার মানুষের লাইফ তার কাছে বাদ দেয়ার মত বিষয়! পরে বললাম তুমি হয়তো বাদ দিতে পারো সেটা তোমার রুচী তারপরও বলছি সাভারের গণহ... ছিল ইনডাইরেক্ট ওখানে সরাসরি খু... হয় নাই কেউ কিন্তু সাভারের হিউম্যানিটারিয়ান র‍্যাব পুলিশই শাপলা স্কয়ারে হিটলারিয়ান হয়ে হাজার হাজার মানুষকে সরাসরি বুকে শ্যুট করে শেয়াল কুকুরের মত মেরেছে। মেয়েটা সাবযেক্ট চেঞ্জ করে অন্য বিষয়ে বকবক করতেই লাগল। ওর সাথে কথা বলার আর প্রবৃত্তি হলনা আমার। বাসায় এসেও মেয়েটার মাছি তাড়ানোর স্টাইলে 'বাদ দাও তো' মনে হলেই ভেতরটা হাহকার করে উঠছে। কে ভাবে ওদের জন্য? কেন ভাববে? মানুষ গুলো যে মাদ্রাসার! থাকে এতিমখানায়, কপালে জুটলে মোটা চালের ভাত আর লবন মরিচ গুলিয়ে বানানো ডাল নামক পানিয় খেয়েই ওরা সন্তুষ্ট থাকে না পেলে উপোস থাকে। বেশীর ভাগই এক প্রস্থ পায়জামা পাঞ্জাবী রাতে ধুয়ে সকালে পরে। দুনিয়ার প্রতি মোহ নাই, তেমন কোনো চাওয়া নাই, পাওয়া নাই, অভিযোগও নাই। যতটা জানি যারা মাদ্রাসায় চাকরী করে তাদের বেতন গারমেন্টস কর্মীদের চেয়েও কম। ওরা মরুক বাচুক কার কি আসে যায়? কিন্তু ওরা যখন কোনো ছোট খাটো ভুলও করে বসে তাহলে দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রাস্তার ফকিরনী পর্যন্ত আঙুল উচিয়ে বলে 'ওই দেখ ওরা নাকি আবার মাদ্রাসায় পড়ে!' এতোটা ডিসক্রিমিনেশন আমার সহ্য হয়না। সাভারে যারা মারা গেছে তারা মানুষ আর শাপলা স্কয়ারে যারা প্রান দিলো তারা মানুষ না? ৫মে' র পর খুব মুষড়ে পড়েছিলাম, তাই দেখে একজন বলছিলো 'ওদের মউত এভাবে ছিল তাই ওরা এভাবে মরছে তার জন্য তুমি কাঁদো কেন? ওদের মরা ওরা মরছে তোমার পড়ালেখা করা জরুরি তোমার পড়া তুমি পড়।' হেদায়াত মুলক বানীটা শুনে ঘেন্না ধরে গিয়েছিল ব্যাক্তিটার প্রতি। আমার ভাই গুলার জন্য তো কিছুই করতে পারলামনা। যতোটা দোয়া করা উচিত ছিলো সেটাও পারিনি করতে। কাদতে গিয়েও যদি হিসেব করি তাহলে ক্যামনে মুখ দেখাবো আল্লাহর সামনে? আর পড়াশুনা! হাহ! এমফিল, পিএইচডি তো কতই করল লোকে, তার মধ্য থেকে কয় জন মানুষ হতে পেরেছে বলতে পারেন কেউ? কিছুদিন আগেও সাব আইডিয়াল হিসেবে হোমরা চোমরা কারোর দিকেই নজর যেত এখন আর সে রকম হয়না। প্রাইভেট ভারসিটিতে পড়ি বলে ভেতরে একটা আফসোস কাজ করতো এখন আর হয়না বরং মনে মনে ভাবি মাদ্রাসায় পড়ার মত সৌভাগ্য আমার হলনা। এখন কেনো যেনো মনে হয় ভালো একটা এভারলাস্টিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য শহীদ গাজীদের চেয়ে উত্তম মডেল আর হয় না।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন