আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করা হয় তারমধ্যে একটা হচ্ছে গল্পের বই পড়া। আমি যে শুধু ছেলেকে সঙ্গ দেবার জন্য ছোটদের বই পড়ি তা কিন্তু না, আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি গল্পগুলো। তাছাড়া নিজে আনন্দ না পেয়ে বাচ্চার মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়াটা অনেক মুশকিল বলে মনেহয় আমার কাছে। গতরাতে আমরা দুজন ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের আত্মকথন মূলক একটা বই পড়েছি। একটা বাচ্চা নিজের মনে অক্লান্ত ভাবে কত রকমের কল্পনার জাল যে বুনে চলে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন লেখিকা। গল্পে বাচ্চাটার নিজস্ব একটা আকাশ আছে, একটা সমুদ্র আছে, একটা পাহাড় আছে, পাহাড়ে চড়ার লম্বা একটা সিঁড়ি আছে। আর এসবকে ঘিরে শিশুসুলভ কথোপকথনের ছড়াছড়ি পুরো বইতে। কিন্তু বইয়ের শেষে লেখিকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সবার মনেই প্রকৃতি আছে, আছে প্রকৃতির প্রতিটি রঙ-রূপ...। যেগুলোর অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হলে সবার আগে মনের বন্ধ জানালার কপাটগুলো খুলতে হবে।
ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম থোকা থোকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উপলব্ধি করলাম আমার মনের মাঝেও একটুকরো আকাশ আছে। তাতেও হয় সুর্যাস্ত...সুর্যোদয়...ভেসে বেড়ায় থোকা থোকা মেঘ, ঝরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো বাঁধ ভাঙ্গে জোছনা, চমকে ওঠে বিজলী, খসে পরে তারা.......! খেয়াল করলাম কোন কারণ ছাড়াই এক এক করে খুলে যাচ্ছে মনের জানালার কপাটগুলো। দেখতে পাচ্ছি মনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ হিমালয়কে, যাকে জয় করার জন্য আছে প্রলম্ব সিঁড়ি। আছে স্বপ্নপুরী, বিষাদের কারাগার, ফুলের বাগান, শান্ত দীঘি, আছে খাঁদা-খন্দ...... ঘৃণার জাল, নিরাশার গলি-ঘুপচি, মিথ্যার চোরাবালি....!
খুলে গেলো আরেকটি জানালা দেখলাম আমারো একটা নিজস্ব সমুদ্র আছে, আছে বাঁকা চাঁদের মতো রুপালি সৈকত। তাতে আছড়ে পড়ে হীরকের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে নীলচে সাদা ঢেউরাশি। নীলাকাশ ছায়া ফেলে যার পানিকেও করে তুলেছে একই রকমের নীল। সৈকতের কিনার জুড়ে আছে সারি সারি নারকেল আর পাম গাছ। চারিদিকে অর্কিড, জেসমিন, বুগেনভিলা, কার্নেশান আর ফরগিভ মি নট ফুলের ছড়াছড়ি। বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন আর পাখীদের কিচির মিচির। আর সমুদ্রের গভীরে আছে হাঙ্গর রূপি হতাশা, নীল তিমির মতো উচ্চাশা, লন্ঠন মাছের মতো টিমটিম জ্বলতে থাকা আশা, রংবেরঙের প্রবালের মতো স্বপ্ন......!
আচ্ছা মনের মাঝে মহাকাশ কি আছে.....? নিশ্চয়ই আছে নয়তো মাঝে মাঝে এতো শূন্যতা এতো হাহাকার ঘিরে ধরে কেন মনকে.....? কেমন যেন একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি, সব থাকতেও কিছুই নেই এমন এক অনুভূতি.........! মধ্যাকর্ষন বলের অভাবে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসা যেখানে ভাসতে থাকে চোখের সামনে কিন্তু তাদেরকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। মনকে ঘিরে ধরে একরাশ শূন্যতা............
সাহিত্য
খোলা জানালার হাতছানি.........
ব্লগটি লিখেছেন: ridita
| ১ মে ২০১৪
আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করা হয় তারমধ্যে একটা হচ্ছে গল্পের বই পড়া। আমি যে শুধু ছেলেকে সঙ্গ দেবার জন্য ছোটদের বই পড়ি তা কিন্তু না, আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি গল্পগুলো। তাছাড়া নিজে আনন্দ না পেয়ে বাচ্চার মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়াটা অনেক মুশকিল বলে মনেহয় আমার কাছে। গতরাতে আমরা দুজন ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের আত্মকথন মূলক একটা বই পড়েছি। একটা বাচ্চা নিজের মনে অক্লান্ত ভাবে কত রকমের কল্পনার জাল যে বুনে চলে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন লেখিকা। গল্পে বাচ্চাটার নিজস্ব একটা আকাশ আছে, একটা সমুদ্র আছে, একটা পাহাড় আছে, পাহাড়ে চড়ার লম্বা একটা সিঁড়ি আছে। আর এসবকে ঘিরে শিশুসুলভ কথোপকথনের ছড়াছড়ি পুরো বইতে। কিন্তু বইয়ের শেষে লেখিকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সবার মনেই প্রকৃতি আছে, আছে প্রকৃতির প্রতিটি রঙ-রূপ...। যেগুলোর অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হলে সবার আগে মনের বন্ধ জানালার কপাটগুলো খুলতে হবে।
ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম থোকা থোকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উপলব্ধি করলাম আমার মনের মাঝেও একটুকরো আকাশ আছে। তাতেও হয় সুর্যাস্ত...সুর্যোদয়...ভেসে বেড়ায় থোকা থোকা মেঘ, ঝরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো বাঁধ ভাঙ্গে জোছনা, চমকে ওঠে বিজলী, খসে পরে তারা.......! খেয়াল করলাম কোন কারণ ছাড়াই এক এক করে খুলে যাচ্ছে মনের জানালার কপাটগুলো। দেখতে পাচ্ছি মনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ হিমালয়কে, যাকে জয় করার জন্য আছে প্রলম্ব সিঁড়ি। আছে স্বপ্নপুরী, বিষাদের কারাগার, ফুলের বাগান, শান্ত দীঘি, আছে খাঁদা-খন্দ...... ঘৃণার জাল, নিরাশার গলি-ঘুপচি, মিথ্যার চোরাবালি....!
খুলে গেলো আরেকটি জানালা দেখলাম আমারো একটা নিজস্ব সমুদ্র আছে, আছে বাঁকা চাঁদের মতো রুপালি সৈকত। তাতে আছড়ে পড়ে হীরকের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে নীলচে সাদা ঢেউরাশি। নীলাকাশ ছায়া ফেলে যার পানিকেও করে তুলেছে একই রকমের নীল। সৈকতের কিনার জুড়ে আছে সারি সারি নারকেল আর পাম গাছ। চারিদিকে অর্কিড, জেসমিন, বুগেনভিলা, কার্নেশান আর ফরগিভ মি নট ফুলের ছড়াছড়ি। বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন আর পাখীদের কিচির মিচির। আর সমুদ্রের গভীরে আছে হাঙ্গর রূপি হতাশা, নীল তিমির মতো উচ্চাশা, লন্ঠন মাছের মতো টিমটিম জ্বলতে থাকা আশা, রংবেরঙের প্রবালের মতো স্বপ্ন......!
আচ্ছা মনের মাঝে মহাকাশ কি আছে.....? নিশ্চয়ই আছে নয়তো মাঝে মাঝে এতো শূন্যতা এতো হাহাকার ঘিরে ধরে কেন মনকে.....? কেমন যেন একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি, সব থাকতেও কিছুই নেই এমন এক অনুভূতি.........! মধ্যাকর্ষন বলের অভাবে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসা যেখানে ভাসতে থাকে চোখের সামনে কিন্তু তাদেরকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। মনকে ঘিরে ধরে একরাশ শূন্যতা............
সকল বিভাগসমুহ:
- মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ(১৩)
- সাহিত্য(৩৮৬)
- উৎসব(০)
- পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )(১৩৪)
- মেইক ইউরসেল্ফ (রুপচর্চা,পারসোনালিটি,ক্যারিয়ার,স্বাস্থ্য)(১৩৩)
- উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)(১৭০)
- অনির্ধারিত(১৫৪)
- ইতিহাসের পাতা থেকে(১৭)
- নোটিশ বোর্ড(৬)
- বিবিধ(৩২৪)
- রান্নাবান্না(১০৪)
- ফিল্ম ও মিডিয়া(২১)
- ধর্ম ও গবেষনা(১০৬)
- অনুবাদ(১৬)
- ইন্টারন্যাশনাল উইমেন(৪০)
- বই পরিচিতি/বই রিভিউ(১৭)
- নিউজ(০)
- অপরাজিতা(০)
- নোটিশ বোর্ড(০)
- তথ্যচিত্র(০)
জনপ্রিয় ব্লগসমুহ:
-
গল্প হলেও সত্যি (শেষ পর্ব)
১২ সেপ্টেম্বার ২০১৯ভিউ হয়েছে: 1833 -
So, if you wishing...
১৫ মার্চ ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1719 -
চন্দ্রগ্রহণে চন্দ্রাহত জীবন
৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1563 -
নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী
১৭ জানুয়ারী ২০২১ভিউ হয়েছে: 1563 -
এটা কিসের ব্লগ?
১০ মার্চ ২০১৪ভিউ হয়েছে: 1512
অনলাইনে আছেন:
সম্পর্কিত ব্লগ
জুলাই ২০২৪
শুকনোপাতার রাজ্য
১ জুলাই ২০২৫
শুকনোপাতার কথামালা-৫
শুকনোপাতার রাজ্য
২৪ জুন ২০২৫
শুকনোপাতার কথামালা-৪
শুকনোপাতার রাজ্য
১৬ মে ২০২৫
শুকনোপাতার কথামালা-৩
শুকনোপাতার রাজ্য
১৯ মার্চ ২০২৫
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
অভিমানী মনের আত্মদহন... ১ম খন্ড
মনটা আমার বাঁধনহারা...
৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
কাটুক প্রহর জ্ঞানান্বেষণে.....
মনটা আমার বাঁধনহারা...
৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
অন্তঃরালের ছায়া- শেষ খন্ড
মনটা আমার বাঁধনহারা...
৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
অন্তঃরালের ছায়া- ২য় খন্ড
মনটা আমার বাঁধনহারা...
১৩ জানুয়ারী ২০১৫
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)