বিবিধ
কে দেবে নিরাপত্তা?????

এইরকম প্রচন্ড ভাবে মিজাজ খিচড়ে থাকার পেছনে যথেষ্ট কারন থাকে যখন কড়া রোদ মাথায় নিয়ে ৪০/৫০ টাকা রিকসা ভাড়ার রাস্তা হেটে অতিক্রম করে ক্লাস ধরার ঝক্কি অতিক্রম করতে হয়। ইউনি'তে যাওয়ার ৫ টা রাস্তা আছে তার মধ্যে ৩টাতে উন্নয়নের ঠেলায় এখন শুধু ভোটকা ভোটকা পাইপের অধিকার। অ্যাজ অ্যা রেজাল্ট অবশিষ্ট দুখানা রাস্তায় সকল যান বাহনের নট নড়ন চড়ন অবস্থান গ্রহন। আধা ঘন্টা একই জায়গায় রিকসা দাঁড়ানো। সারাদিনও দাড়ায়ে থাকা অসম্ভব কিছুনা, তাই নেমে হাঁটা ধরলাম। অনেকেই পায়ের উপর চলছিলো রিকসা গাড়ি থেকে নেমে।
মানুষের জটলার কারনে হাঁটাই দায়।
এতোগুলা মানুষের ভিড়ে সতর্ক হয়ে হাটতে গিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম। ফুটপাথে আমার কয়েক গজ সামনেই ঘটনাটা ঘটল। একটা বেয়াদব ছেলে চট করে একটা স্কুল পড়ুয়া মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে বসল। মেয়েটা যে অশালীন ছিলো তা একেবারেই না। অ্যাপ্রোন এর উপর বড় ওড়না দিয়ে সুন্দর করে চুল, মাথা, পিঠের ব্যাগ সহ শরীরের অর্ধেক ঢাকা। আজকের আগে ভাবতাম দেখিয়ে বেড়ানোদের ভাগ্যেই এই সমস্ত আচরন জোটে। আজকে শালীন সভ্য এই মেয়েটার ভড়কে যাওয়া আর ঘেন্না মিশ্রিত মুখে অস্ফুট চিৎকার দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরা দেখে দোপেয়ে বেয়াদব জীবগুলোর প্রতি প্রচন্ড ঘেন্না হচ্ছিলো। ইচ্ছে হচ্ছিলো মনের মত থাপড়ে আলিফের মত সোজা করে দিয়ে আসি।
ঘটনা টা যখন ঘটল অনেকেই কাছ থেকে দেখেছে। কেউ তেমন কিছু বলল না শুধু কয়েকটা গালি ছাড়া। আর সেই দোপেয়ে তো তার দোস্তদের সাথে বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে হাসতে পগার পার।
খিচড়ানো মেজাজেই আরো কিছু শেয়ার করি। সুন্দর এক বিকেলে বেড়াতে বের হয়েছিলাম ক্লাস এইটে পড়ে এক পিচ্চিকে নিয়ে। তার আবার ঘুরে বেড়ানোর খুব শখ। এখানে সেখানে ঘুরলাম। গল্প, ঘোরাঘুরি, টুকিটাকি কাজ সেরে এবার বাসায় ফেরার পালা। পিচ্চিকে তার বাসার গলির মুখে নামিয়ে দিয়ে চলে আসবো এমন সময় সে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল 'আপু আমার সাথে বাসায় চলনা প্লিজ!!!' অবাক হয়ে দেখলাম নেকাবের ওপাশে সমানে ঘামছে সে। চোখে স্পষ্ট ভয়। হাতও ঘেমে পিচ্ছিল। বললাম 'বেশি দেরি তো হয়নাই আপুসোনা, আন্টি কিচ্ছু বলবেনা। আমরাতো আন্টিকে বলেই আসছি তাইনা?' মেয়েটা বলল 'আম্মু তো বকবেনা তাও চল। আপু প্লিইইইজ!!!' মেয়ে দেখি কেঁদেই ফেলবে। মুশকিল তো! রিকসা ওয়ালা হয়তো কিছু আঁচ করলো। বলল 'যান আপা বাচ্চা মানুষ ভয় পাইতেছে। রাস্তাঘাট তো ভালোনা। আমি দাড়াইলাম।' রিকসা ওয়ালাকে ওয়েইটিং এ রেখে চললাম মেয়েটার সাথে। পথটুকু সে আমার সাথে ঘেঁষে ছিলো। শক্ত করে হাত ধরে ছিলো। ছেলেদের একটা জটলা যখন পাস করছি তখন লিডার গোছের ছেলেটা আমাদের পেছনে আসতে আসতে বলছিলো 'গার্জিয়ান নিয়ে কয়দিন চলবা পাখি? সারা জীবন?' সেই সাথে পুরো গ্রুপটার অট্ট হাসি আর "তেরি মেরি মেরি তেরি............ ডট ডট ডট। বুঝলাম মেয়েটার প্রচন্ড ভয়ে হজম হয়ে থাকার কারন। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বাসায় কিছু জানিয়েছে কিনা। ও বলল বাসায় সবাই জানে। ওর বাবা একদিন ছেলেগুলোকে বকা দেয়ার পরে এগুলোর আরো বাড় বেড়েছে। তাই সবাই ভাবছে বাসাটা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। ওকে দিয়ে এসে রিকসায় উঠলাম। রিকসা ওয়ালা চাচা নিজের মনেই বলছিলো 'কেউ শান্তিত নাই আফা, কেউ বালা থাইকপার ফারেনা এই দুইন্নাত।'
রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম সেইদিন। একজায়গাতেই থমকে আছি বেশ কিছু সময়। আমি আর আমার ক্লাসমেট একসাথে ইউনি থেকে ফিরছিলাম। আমাদের রিকসার পাশেই একটা অটো দাঁড়িয়ে। মুখোমুখি সিটে যাত্রিরা বসা। ক্লাসমেট লামিয়া হঠাত বলে উঠলো 'দেখ, কি পরিমান অসভ্য এই ছেমড়াটা।' ফিরে তাকিয়ে দেখলাম বয়স চল্লিশেক এক মহিলার হাটুর সাথে ভারসিটি পড়ুয়া বয়েসের ছেলেটা হাটু লাগানোর চেষ্টায় রত। ভদ্র মহিলা আআর ছেলেটার অ্যাটিচিউড দেখে এইটুকু বুঝলাম যে তারা কেউ কারো চেনা ব্যক্তি নন। রি রি করে উঠলো শরীর। প্রচন্ড বিরক্ত মহিলা মান সম্মানের ভয়ে কিছু বলতেও পারছিলোনা সইতেও পারছিলোনা। জ্যাম ছেড়ে দেয়ায় দেখলামনা শেষ পর্যন্ত কি হলো। শুধু মনে হচ্ছিলো মহিলা থাপড়ে কানা করে দেননি কেনো ছেলেটাকে।
ঘটনা গুলো মনে পড়লেই খুব খারাপ লাগছে। নিজের সিকিউরিটি নিয়েও চিন্তিত। হাজার বার আল্লাহকে বলা হয়ে গেছে "হেফাজত কর।"
ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়া খালিফাতুল মুসলিমিন!! টলমল চোখে আপনাদের অভাব অতল গভীর ভাবে ফীল করছি। আপনাদের স্বর্ণ যুগে মেয়েরা কত নিরাপদ ছিলো! কত মর্যাদা, কত সম্মান ছিলো তাদের! একটা মেয়ে একলা নির্জন পথে অনেক সৌন্দর্য, সম্পদ নিয়ে চললেও কেউ চোখ তুলে চাইতনা, এতটাই নিরাপদ ছিলো তারা। মেয়েরা প্রয়োজনে ব্যাবসা করেছে, ময়দানে নেমে যুদ্ধ করেছে, মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেছে, একাকি কত পথ পাড়ি দিয়েছে! সাথে ছিলো নিরাপত্তার বলয় আর স্বস্তির একটা স্নিগ্ধ পবন।
আমাদের সেই নিরাপত্তা দেবে কে???????????
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)