ধর্ম ও গবেষনা

মিথ্যা বলার নানান কায়দা ও পরিণতিঃ পর্ব ১

মিথ্যা বলার নানান কায়দা ও পরিণতিঃ পর্ব ১
প্রারম্ভিকাঃ মিথ্যাচারিতা একটা জঘন্য অপরাধ, যা নিন্দনীয় এবং নিকৃষ্ট আচরণও বটে। এটা যাবতীয় পাপ ও অপকর্মের কেন্দ্র বিন্দু, যাকে গুনাহ সমূহের মা ও বলা হয়ে থাকে। মিথ্যার ফলে সৃষ্ট অপকর্ম ব্যাক্তিকে জাহান্নামে পৌছিয়ে দেয়। সত্যবাদিতার জন্য মানুষ যেমন সফলতা অর্জন করে প্রতিদান লাভ করে তেমন মিথ্যাবাদিতা ও মিথ্যাচারিতা মানুষকে চরম বিফল ও ধ্বংস করে দেয়। আমরা কেউ নিজের ধ্বংস ডেকে আনতে চাইনা। তাই মিথ্যার ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচার জন্য এর ধরণ সমূহ ও এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকা আবশ্যক। আর তাই দুই পর্বে মিথ্যা বলার নানান কায়দা-কানুন ও এর ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরার ছোট্ট একটা ব্যর্থ প্রয়াস চালালাম...। আজ ১ম পর্ব। আশা করি কারো না কারো উপকারে আসবে ইনশাল্লাহ...। মিথ্যা কিঃ যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ঘটনার প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে উক্ত ঘটনার বাস্তবতা বিবর্জিত কোন বর্ননা দেয়াকেই মিথ্যা বা মিথ্যাচার বলা হয়। মিথ্যা অপরাপর পাপ সমূহের সূতিকাগার। আর মহানবী (সাঃ) ও এই কথাই বলে গিয়েছেন, “মিথ্যা সকল পাপ কাজের জননী।” আর মিথ্যার শেষ পরিণতি হলো ধ্বংস। এটা মুনাফেকিরও অন্যতম বৈশিষ্ট্য বটে। মিথ্যা সমাজ থেকে শুরু করে ব্যাক্তিগত জীবনেও নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই মিথ্যাবাদীকে সবাইই অবিশ্বাস ও ঘৃণা করে থাকে। মিথ্যা বলার নানান কায়দাঃ মিথ্যার ধরণ বিভিন্ন রকমের হয়। কথায়, কাজে, ইশারায়, রসিকতায়, সাক্ষ্য ডানে, এমনকি পেটে ক্ষুধা রেখে ও মিথ্যা কষ্ট স্বীকার করা সহ নানান ধরণের মিথ্যাচারিতা আমরা হরহামেশাই করে থাকি। দৈনিন্দন জীবনে এসব মিথ্যাচারিতাকে মানুষ খুব সহজ ভাবেই নিয়ে থাকে। আর এই মিথ্যাকে খারাপ চোখে না দেখার কারণেই মানুষ মিথ্যার বেশাতি ছড়াচ্ছে অহর্নিশ। এমনকি যেখানে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার কোন প্রয়োজন হয় না সেখানেও আজকাল অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর কারন, হয়তোবা ব্যাক্তি মিথ্যার পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞ, অথবা মিথ্যাই যাদের বেশাতি তারা কথা বলতে গেলেই মিথ্যা ছাড়া পরিতৃপ্ত হয় না। এই ক্ষেত্রে ইবলিশ শয়তান তাঁদের সক্রিয় সহযোগী বন্ধুর ভূমিকায় থাকার কারণে মিথ্যার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে এরা একেবারেই উদাসীন। নীচে মিথ্যার কথা বলার কয়েকটা ধরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলঃ ক) হাসাবার জন্য মিথ্যা কথা বলাঃ আজকাল আমাদের মধ্যে এই চর্চাটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে যে, আমরা আমাদের বন্ধু মহলে লোকদেরকে হাসাবার উদ্দেশ্যে অহরহ মিথ্যা কথা বলে থাকি। অথচ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্পষ্টই বলেছেন যে, “ধ্বংস সেই ব্যাক্তির জন্য যে লোকদের হাসাবার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে। তাঁর জন্য রয়েছে ধ্বংস, তাঁর জন্য রয়েছে অকল্যাণ।” (তিরমিজি) আমাদের সমস্যা হলো নবীজীর (সাঃ) এই বাণী আমাদের কয়জনেরই বা জানার সৌভাগ্য হয়েছে! অথবা জানার পর কয়জনই বা মানার মানসিকতা রাখি! খ) আড্ডা জমিয়ে রাখার জন্যও মিথ্যা বলাঃ চায়ের দোকানে, কফি হাউজে, ক্লাবে কিংবা পার্কে আড্ডার জন্য পরিবেশটা বড়ই মানানসই। এসব জায়গাগুলোতে তাই আড্ডা জমিয়ে রাখার জন্যও অনেকেই হরদম মিথ্যার বেশাতি চালিয়ে যান। আর এর আরেকটা কারন হচ্ছে, মানুষ মিথ্যার পরিণতিকে মোটেই ভয় না পেয়ে বরং একে আরও অতি সহজ ভাবে গ্রহন করে নিয়েছে! গ) মিথ্যাকে ক্ষেত্রভেদে সত্য বলেই চালিয়ে দেয়াঃ মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দেয়ার চর্চা আজকাল ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই ব্যাপকতা লাভ করেছে। বিক্রেতাকে ক্রেতা ফাঁদে ফেলার জন্য থেকে শুরু করে একেবারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঘুষ খেয়ে পরে তাকে হালাল করতে পর্যন্ত মিথ্যাকে আজ আশ্রয় করেছে। আর এতে করে যেকোনো জায়গায়ই বঞ্চিত হয়ে থাকে সাধারনত যারা বঞ্চিত ও নিগ্রহের শিকার সবসময়ই, তারাই। এ থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া জরুরী অথচ কেউ কেউ এটা নিয়ে ভাবছে না। নবীজীর (সাঃ) বাণী হচ্ছে এ ব্যাপারে, “সব চেয়ে বড় খেয়ানত হলো তুমি তোমার ভাইয়ের কাছে এমন কথা বললে, যা সে সত্য বলেই মনে করলো, অথচ তুমি কিনা তাকে মিথ্যাই বলেছো।” (আবু দাউদ) ঘ) বেশী কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে ফেলাঃ আসলে কথা যতো বেশী বলা হয়, অনেক সময়ই সেই কথায়ই ত্রুটি বেশী হয়ে থাকে, আর তাকে ঢাকতে গিয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বসে কেউ কেউ। কারন কথা বলতে থাকার অর্থ সেই মুহুর্তে অন্য কোন কথায় যথাযথ মন না দেয়া। অথচ যে কোন প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্য কিন্তু পরিমিত সময়ই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি সময় নেয়ার অর্থই হলো বানিয়ে কথা বলা, অবাস্তব কথা বলা! প্রকারন্তরে মিথ্যা বলা। এ থেকে মুক্তির উপায় বাতলে মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।” (ইবনে নাসাঈ) ঙ) লোভ সামলাতে না পেরে মিথ্যা বলাঃ কোন একটা জিনিস পাওয়ার জন্য খুব ইচ্ছা, হয়তোবা সেটা পাওয়ার জন্য আমি উপযুক্ত নই, কিংবা সেটা পাওয়ার এখন সময় নয়, কিন্তু যদি কেউ সেটা পাওয়ার জন্য খুব বেশী মরিয়া হয়ে যায়, তখনই তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সেই জিনিসটা পাইতে হয়। আর সমাজে এ ধরণের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী। এতে করে আমরা দুটি নিশ্চিত বিপর্যয়ের শিকার হই- একঃ এহেন লোভীরা পাপী হয়ে অপমৃত্যুর শিকার হয়ে থাকে। দুইঃ মিথ্যা কথা বলার জন্য কবীরা গুনাহ্‌র শাস্তির মুখোমুখি হয়ে থাকে। প্রাক সমাপ্তিঃ কাজের চাপে মূলত লেখালেখির সময় খুব একটা পাওয়া হয় না। তবুও এতো কিছুর মাঝের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আর কি। আপনাদের উৎসাহ আর সমর্থন পেলে এবং লেখা থেকে কেউ উপকৃত হলে ইনশাল্লাহ আগামীকালেকেই দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হবো...। সবাই ভালো থাকবন, নিরাপদে থাকবেন, দোয়া করবেন আমার জন্য সহ এই দুনিয়ার সকল বঞ্চিত মুসলিমের জন্য।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)