রান্নাবান্না
কতিপয় প্রকৃত রান্না রাঁধিবার খেয়ালী পদ্ধতি

আজকাল দৃষ্টির চারিপাশে একখানা অভিযোগ প্রায়ই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকের পক্ষ হইতেই শুনিয়া থাকি...পূর্বের ন্যায় আর খাইতে ভালো লাগিতেছে না, পূর্বের ন্যায় আর রাঁধা-বাড়ায় মন বসিতেছে না...পূর্বের ন্যায় আর কোন কিছুতেই স্বাদ পাইতেছি না...অথবা পূর্বের ন্যায় আর রেসেপি'র উপরে টান পাইতেছি না..কেমন যেন ঘেন্না আসিয়া গিয়াছে...! :cry:
।
কিন্ত হায়! ইহা কেমন করিয়া ঘটিলো! বিশেষ করিয়া যেই বংগদেশেতে খাইবার লাগিয়া এবং রাঁধিবার বেলায় হুড়োহুড়ি পড়িয়া যায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে...! তবে কি বিধাতা মুখ তুলিয়া লইয়াছেন? অন্ন জোগাড় করিতে না বাহির হইলেও যেমন করিয়া পুরুষের চলিবে না তথাচ করিয়া তো নারীরও রাঁধিতে না বসিলে চুল বাঁধা হইয়া উঠিবে না! এ কেমন জ্বালা গো দয়াময়! :-(
।
আর হ্যাঁ! সেই দুঃখ যাতনা উপলব্ধি করিতে পারিয়াই কেন জানি না মনে হইলো, ম্যাজিক দণ্ডের সহযোগিতা লইয়া তো বেশ রাঁধিয়া কাটাইলাম এতোটা কাল, সুযোগ বুঝি আজ দোরগোড়ায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, ইত্যকার যাবতীয় আবিষ্কৃত রেসিপিগুলো যথাযথ ক্ষেত্রে উপস্থাপনা করিবার...! তবে তাহাই হোক না হয়! আজ না হয় ম্যাজিক দণ্ড তোলা রহিলো, ক্ষানেক হস্ত ব্যাবহার করিয়া সাধারণ মাগলদিগকে, অর্থাৎ সাধারণ জনগনকে কয়েক প্রকার রাঁধা-বাড়া শিখাইয়া দেয়া যাউক...! :mrgreen:
।
সর্বপ্রথমে ডিম ভাঁজা'য় অতুলনীয় স্বাদ বৃদ্ধির উপায়!
।
কথায় রহিয়াছে, প্রতি শুক্রবারেই গরীবের ঈদ পালন হইয়া থাকে ডিম্ব সালুন দ্বারা! অর্থাৎ দারিদ্র সমাজে এই ডিম্ব সালুন অত্যন্ত জনপ্রিয় একখানা উপাদেয় খানা'র নাম। এখন যদি কোন এক অলস দুপুরে কিংবা রাত্রে আপনার মনে হইয়া থাকে যে, ক্রমেই ডিম্ব সালুনের স্বাদ চলিয়া যাইতেছে...তবে এই পোস্টখানা আপনার জন্যই...! আসুন শিখিয়া রাখি কি করিয়া সামান্য ডিম্ব সালুন দ্বারাই অন্ন গ্রহন কে অসামান্য করিয়া তোলা যায়...! :twisted:
।
প্রথমেই একখানা প্রাপ্তবয়স্কা শুধুমাত্র "মুরগী"র ডিম (প্রথমত অপ্রাপ্তবয়স্কা মুরগীর ডিম খাওয়া শিশু নির্যাতন বিধায় আইনত দণ্ডনীয়, দ্বিতীয়ত যে কোন বয়সেরই মোরগের ডিমের ক্ষেত্রে এই রেসিপি প্রযোজ্য নহে) ফাটাইয়া একখানা ছোট বাটিতে ঢালিয়া দিন, অতঃপর কয়েকখানা আলু যতোটুকু পারা যায় কাঁচিকাঁচি করিয়া কাটিয়া লইয়া (কাঁচি দ্বারা কাটিলে যতোটুকু কুচি কুচি হইয়া থাকে তাহাকেই বলে কাঁচিকাঁচি) উহার সঙ্গে পূর্বেই কাটিয়া রাখা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ সামান্য কিংবা প্রয়োজনমাফিক হলুদের গুড়া, লবন ও মরিচের গুড়া'র (যদি প্রয়োজন হয়) এবং সর্বোপরি দুই চা-চামচ হালকা গরম দুধে'র সহিত সেই বাটিতে ঢালিয়া দিয়া তৎপর একখানা চামচ পরিস্কার পানি দ্বারা ধৌত করিয়া লইয়া যেই বাটিখানায় ডিমখানা রাখা আছে, সেইখানে ডুবাইয়া ভালো করিয়া ফেটাইয়া লইয়া একখানা মিশ্রন তৈরি করিয়া পূর্বেই একখানা অগ্নিকুন্ডলিকায় (চুলায়) বসাইয়া রাখা কড়াইখানায় ঢালিয়া রাখা গরম কিংবা ফুটন্ত সয়াবিন তৈলে ঢালিয়া দিন চারিপাশে ছড়াইয়া ছড়াইয়া...অতঃপর ক্ষানেক সময় অতিবাহিত হইবার পরে যদি দেখা যায় যে অমলেটখানা সোনালি বর্ণ ধারন করিয়া রীতিমত ফুলিয়া উঠিতেছে ধীরে ধীরে, তো তক্ষন বুঝিবেন আপাতত আপনি সফল হইয়াছেন, এইবার মস্তকখানা উর্ধ্বে তুলিয়া সজোরে আলহামদুলিল্লাহ্ পড়িয়া নিন...অতঃপর বিনয়ের সহিত পরিবেশন করুন প্রয়োজনীয় স্থানে, কিংবা আনন্দের সহিত নিজেই গলঃকধরন করিয়া নিন...ব্যস হইয়া গেলো স্বাদের ডিম-ভাঁজা খাওয়া, যাহা আপনাকে আনিয়া দেবে তপ্ত পরিবেশে খানিক শীতল জলধারার ন্যায় অনুভূতি...! :-D
।
মসুরের ডাল উইথ ডিম্ব ভাঁজি!
।
উপরোক্ত ডিম্বভাঁজি যেদিন আপনি খাইবার নিয়ত করিবেন, উক্ত দিনেই আপনি আরেকখানা নিয়ত করিতে পারিবেন, তাহা হইলো, মসুরের ডাল উইথ ডিম্ব ভাঁজি! 8-)
।
ব্যাপার খানা কোনমতেই কঠিন নহে! শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে আপনি এক খানা পাতিলে করিয়া যতোটুকু করিয়া পারা যায় ঘন করিয়া রাঁধিয়া উক্ত ডালের পাতিল খানা হইতে যখন ধোঁয়া উঠা বন্ধ হইয়া যাইবে, তক্ষন উক্ত ভাঁজি করিয়া রাখা ডিম্ব খানা গরম গরম উক্ত ডালের পাতিলে আস্তে আস্তে ছাড়িয়া দিন...দেখিবেন এইবার ডিম্ব খানা ধীরে ধীরে আরও ফুলিয়া যাইতেছে সামান্য করিয়া ডাল নিজের ভেতরে টানিয়া লইয়া...ব্যস অর্ধঘন্টাখানেক পার করিয়া আপনি এইবার গরম গরম সাদা ফকফকা ভাতের সহিত উহা খাইতে পারেন, ডাইল ঢালিয়া আর ডিম্বখানা ভাঙিয়া, যদি ক্ষমতায় থাকিয়া থাকে তো সামান্য ঘি ঢালিয়াও লইতে পারিবেন...! :-D
।
এইবার যাঁহারা যাঁহারা উক্ত রেসিপিখানা সফলতার সহিত সম্পন্ন করিতে সক্ষম হইবেন, অধমকে জানাইয়া দিয়া যাইবেন এবং যথাবিহিত সম্ভবপর হইলে দাওয়াতও করিতে পারিবেন...ঝাড়ুতে কিংবা থ্রেস্টালে চড়িয়া হাজির হইয়া যাইবোক ইনশাল্লাহ! :-D
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)