ধর্ম ও গবেষনা

আসুন কুরআনের ছায়াতলে সমবেত হই

আসুন কুরআনের ছায়াতলে সমবেত হই

আসুন কুরআনের ছায়াতলে সমবেত হই

 


মানুষের মন শুধুই হাসি আনন্দ আর বিনোদন খুঁজে ফিরে । পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়েও আছে আনন্দ বিনোদনের নানান উপকরণ। কিন্তু একের পর এক দিবসে মেতে থাকা,হাতের মুঠোয় প্রযুক্তি,লাগামহীন আকাশ সংস্কৃতি,রেস্টুরেন্টের হুল্লোড়ে মূহুর্তগুলো আর সেলফি বন্দী স্ক্রিন- এগুলো খুবই ক্ষণিকের। মূহুর্তেই শেষ। এগুলো মানুষের মনে কোন প্রশান্তি স্থায়ী করতে পারছেনা। কোন মুক্তির পথ দেখাতে পারছেনা । মানুষকে পৌঁছে দিতে পারছেনা কোন সোনালী মানযিলে। বরং সংস্কৃতি চর্চা আর বিনোদন উপভোগ করার নামে মানুষ আরো ডুবে যাচ্ছে পংকিল পাঁকে। জীবনে সম্মুখীন হচ্ছে নানামুখী সমস্যার। কেউ হতাশার চোরাবালিতে তলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে। আবার আরেক শ্রেণীর মানুষ মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করে বুদ্ধিজীবী হবার নামে এক মহান সত্ত¡াকে অস্বীকারের মধ্যে আধুনিকতা খুঁজছে। বিনিময়ে ভোগ করছে চূড়ান্ত মানসিক অশান্তি। কিন্তু বিনোদন- আধুনিকতা আর সংস্কৃতি চর্চার ফাঁপা ঢোলক বাজাতে বাজাতে হ্যামিলনের অদৃশ্য বাদক আমাদের প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে পথ হারাবার সর্বশেষ গহŸরে। ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে উদীয়মান ভবিষ্যত।
পা পিছলে যাবার শেষ মূহুর্তে মানুষ একটু উদার হৃদয়ে বাঁচার অবলম্বন তালাশ করে। আঁকড়ে ধরতে চায় কোন সুস্থির খুঁটি। এমনই দুর্বিপাকে পড়া থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য তাদের দয়াবান প্রভুর তরফ থেকে আছে আশার আলো। পথহারা অশান্ত অন্তরগুলোকে প্রশান্তির নিবিড় ছায়ায় নিয়ে আসতে , অন্ধকার গলিপথ থেকে আলোর সৈকতে নিয়ে আসতে আছে সর্বশ্রেষ্ঠ গাইডলাইন আল- কুরআন। আল- কুরআন মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের পথ দেখাবার বাতিঘর। জীবনের সুস্থ সাবলীল প্রশান্ত অভিযাত্রার জন্য পবিত্র কুরআনের সাহচর্য অপরিহার্য। আল কুরআন আলো, আল কুরআন শান্তির পথ, আল কুরআন অন্তরের প্রশান্তি,আল কুরআন মরিচীকা পড়া অসুস্থ মনের জন্য প্রতিষেধক। মহান আল্লাহ তাঁর পাঠানো এই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ নাযিল করবার উদেদশ্য সম্পর্কে নিজেই বলছেন-
১. “অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর ইচ্ছাক্রমে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন। ” (সূরা মায়িদা ১৫-১৬)
২. “আমি কুরআন নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্য শিফা ( আরোগ্য লাভের উপায়) ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ( না মানার কারণে) ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।” ( সূরা বনী ইসরাঈল-৮২)
৩. “আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে।” (সূরা ইবরাহীম-১)
৪. “তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।) (সূরা হাদীদ-৯)
সত্রিই পবিত্র কুরআন এক জীবন্ত পথ নির্দেশিকার নাম। যা সরাসরি মহান আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে তাঁর রাসূলের উপর। যেন রাসূল (সা:) এই পথ নির্দেশিকার হাত ধরে পৃথিবীবাসীকে অনুপম সুন্দর জীবনধারা শিক্ষা দিতে পারেন। এই হেদায়াত গ্রন্থের প্রশিক্ষণে জগতবাসীকে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসাবে চিনাতে পারেন। চিনাতে পারেন কল্যাণ আর অকল্যাণ। কুরআনের পরিচয় আল্লাহ এভাবে দিচ্ছেন সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে-
‘হুদাল্লিন্নাস’ অর্থাৎ মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক। ‘বায়্যিনাতিম্ মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান’ অর্থাৎ সুস্পষ্ট পথের নির্দেশিকা এবং সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী।
সূরা ইউনুসের ৫৭ নং আয়াতে বলেছেন-
“হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং হৃদয়ের প্রতিষেধক, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত। বল ,এটা তো আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। এর জন্য তাদের আনন্দ করা উচিৎ। এটি তারা যা কিছু সঞ্চয় করছে তার সবকিছুর চাইতে উত্তম। ” (সূরা ইউনুস-৫৭)
এই হল আল কুরআন যা প্রতি মূহুর্তের চলার পথের সহায়িকা। কুরআনের কথা তো সরাসরি মহান রবের কথা। যে এর মাধ্যমে নিজের জীবনকে সাজিয়ে নিবে সে অবগাহন করবে সুখের প্র¯্রবণে। আর যে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে গটগট করে একাই পথ চলতে চাইবে , সে খানিক পরেই মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই সর্বশেষ নাযিলকৃত এই মহান গ্রন্থ থেকে সুপথ খঁজে নেবার প্রথম শর্ত হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ভয় আর নি:শর্ত আনুগত্য। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলছেন-
-“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।”(সূরা আ’রাফ-৩)
-“রাসূল তোমাদের জন্য যা এনেছেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর” (সূরা হাশর-৭)
আল কুরআনুল কারীম মহান ্আল্লাহর বাণী সম্বলিত এক মহিমান্বিত কিতাব। সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর এর শ্রেষ্ঠত্ব ¯্রষ্টা কর্তৃক স্বীকৃত।পবিত্র মাহে রমাদান কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসের এত মাহাত্ম! এত মর্যাদা বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত! এই রমাদান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র কুরআনের কারণে। এই মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে বলেই এই মাস সকল মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস। কুরআন নাযিলের রাতটি হাজার মাসের চাইতে সেরা । এই কুরআনকে আমরা পরিপূর্ণ অনুসরণ করব,আর খেয়াল রাখবো যেন এই মহাগ্রন্থের সাথে আমাদের আচরণ উপেক্ষা বা অবহেলার হয়ে না যায়। কুরআন অমান্যকারীদেরকে মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিচ্ছেন-
“এটি মহিমান্বিত কুরআন,যা লিপিবদ্ধ আছে সুরক্ষিত কিতাবে। পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারেনা । তা নাযিলকৃত সৃষ্টিকুলের মহান রবের কাছ থেকে ।তবে কি তোমরা এই বাণীকে তুচ্ছ গণ্য করছ?আর তোমরা তাতে তোমাদের অংশ এই নির্ধারণ করেছ যে, তোমরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে?”(সূরা ওয়াকিয়া ৭৭-৮২)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে যে পথনির্দেশিকা পাঠালেন, তা উপেক্ষা করে কেউ ধ্বংসের পথ অনুসরণ করবে এটা তিনি চাননা। তাই এই কুরআনের অনুসরণ না করলে তিনি শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। যারা তাঁকে,তাঁর এই শাস্তিকে ভয় করে কুরআনী বিধানের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে তারাই সফলকাম হবে এই দুনিয়াতেও আখিরাতেও। আর তাই আল্লাহ তা‘য়ালা বলেছেন কুরআন থেকে তারাই পথ পেতে পারে যারা তাঁকে ভয় করে চলে , যারা মুত্তাকী। আল্লাহ বলছেন-
“ এটি সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহভীরুদের জন্য হিদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে।” (সূরা বাকারা-২-৪)
অর্থাৎ ,আল্লাহকে ভয় করে যারা চলে তারাই উপরোক্ত গুণের অধিকারী হতে পারে, তারাই হতে পারে পবিত্র কুরআনের সত্যিকার ধারক বাহক। তাকওয়া বা আল্লাহভীতির এই গুণ মানুষের মাঝে তৈরী করার ব্যবস্থাও মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনই করেছেন। কুরআন নাযিলের মাস মাহে রমাদানকে তিনি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাকওয়ার গুণ অর্জনের ট্রেনিং নেবার জন্য । এই মাসে রোজাকে ফরজ করেছেন, যেন বান্দারা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির গুণে গুণান্বিত হতে পারে। তাই আমাদের উচিত মাহে রমাদানের সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে কুরআনের প্রকৃত অনুসারী ও ধারক-বাহক হিসাবে তৈরী করা।
পবিত্র কুরআন এমনই এক পরশ পাথর যার অনুসরণ সত্যিই বদলে দিতে পারে জীবনকে। একটি অশান্ত বিশ্বকে পরিণত করতে পারে প্রশান্ত বিশ্বে। একটি দুর্নীতিযুক্ত জ্বরাগ্রস্ত সমাজকে পরিণত করতে পারে সুস্থ সমাজে। মহান আল্লাহ কুরআনকে অন্ধকারকে আলোতে রূপান্তরিত করার এ শক্তি দিয়েছেন। মহান মর্যাদাপূর্ণ এই শক্তিশালী কিতাব জানার জন্য এসেছে , হুবহু মানার জন্য এসেছে,এসেছে পৃথিবীকে বদলে দেবার জন্য। এই অমিয় গ্রন্থ শুধু গিলাফে মুড়িয়ে চুমু খাওয়া, রমজানে অর্থছাড়া এক খতম, আর মৃত বাড়ীতে পড়ার জন্য আসেনি। তাকের উপরে শোভা পাবার জন্য আসেনি। ছুঁয়ে শপথ করবার জন্য আসেনি। কুরআন এসেছে সার্বক্ষণিক অনুসরণের জন্য । নিঝুম রাতে গহীন জঙ্গলে পথহারা ব্যক্তি যেমন আলোর মশাল ছাড়া এক পাও আগাতে পারবেনা, তেমনি কুরআনের মশাল ছাড়া শান্তির পথে এক কদমও অগ্রসর হওয়া সম্ভব না । যেখানেই কুরআনের বিধান অমান্য হবে সেখানে অশান্তি নামতে বাধ্য।
সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের এই মানুষদের জন্যই মহান আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। মানুষের বর্তমান থেকে নিয়ে ভবিষ্যত, ইহকাল থেকে নিয়ে পরকাল সর্বত্র কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহ কুরআন দিয়েছেন। আর তাই আমাদের জীবন পথে এই মর্যাদান্বিত কিতাবকে আঁকড়ে ধরা আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই আবশ্যক। রাসূল (সা:) বলেছেন- আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি ,যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবেনা। একটি আল্লাহর কুরআন আর অপরটি রাসূলের (সা:) সুন্নাহ।”
তাই আসুন কুরআনের ছায়াতলে গড়ে তুলি প্রশান্তির জীবন। আলোকিত হই কুরআনের রংয়ে। পৃথিবীকে সাজাই কুরআনের সাজে। আমরা ইনশাআল্লাহ আল কুরআনের মহিমাময় আলোকে হৃদয়ে ধারণ করবো। ভিন্নভাষী হওয়ায় যেহেতু অর্থ বুঝিনা ,তাই অর্থসহ কুরআনকে আয়ত্ত¡ করবো। আমাদের ব্যক্তিজীবনকে পরিবর্তন করবো কুরআনী আচরণ দিয়ে। কুরআনী বিধানের দিকে আহŸান জানাবো পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র, দেশ, জাতি সবাইকে। আল কুরআনের ছায়ায় গড়ে উঠুক শান্তির ভুবন। মুছে যাক সব হাহাকার অশান্তি। বিশ্ব উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক জান্নাতী আলোতে। মহান আল্লাহর কাছে এই আমাদের কামনা। তিনি আমাদের সাহায্য করুন।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন