সাহিত্য

নিষ্পাপ

নিষ্পাপ
গভীর রাত, অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে,চারেদিকে অন্ধকার। জানালার গ্রীল ধরে বৃষ্টির পানির হালকা পরশ নেয়া ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে, তবে এসময় ঘুমটাও বেশ গভীর হয়। চোখে ঘুম নেই আফছানার, বছরের এই রাতে তিনি আজ থেকে পাঁচ বছর যাবত ঘুমাতে পারেননা, সেই পাঁচ বছর আগেও এমনই বৃষ্টি হচ্ছিলো। "হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার, দোতলার বেলকনিতে চলে যান আফছানা। সেখান থেকে ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান, প্রথমে মনে হয়েছিলো হয়তো নিচতলার কারো রুম থেকে, কিন্তু না! দ্রুত দরোজা খুলে ছাতা ছাড়ায় বাইরে চলে যান তিনি, সেখানে সদ্য নবজাতক শিশুকে দেখেন,  এ পর্যায়ে আফছানার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করেছিলো। সযত্নে বাচ্চাটিকে উঠিয়ে নিয়ে আসেন, এইটুকু শিশু এতো বৃষ্টি সহ্য করতে পারে খুব কেঁদেছিলেন তিনি সেদিন।" আজও অশ্রুতে ভরে ওঠে তার দৃষ্টি অফ! কী যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি, এগিয়ে যান খাটের দিকে, হালকা নীল ডিমলাইটের আলোতে সেই শিশুটির নিষ্পাপ চেহারা প্রাণ ভরে দেখতে থাকেন। জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছিলেন অনেক ভালোবেসে কিন্তু সেই সম্পর্ক টেকসই হয়নি। একজন চরিত্রহীন জীবনসঙ্গী থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো, তাই একাই থাকেন। রাজধানীর একটি থানায় ছোট্ট একটি কুটির শিল্পের কারখানা আছে তার, সেটা দিয়েই মা ছেলের মাস চলে যায়। সেই শিশুটি আজ তাকে মা বলে ডাকে। ওর পাশে শুয়ে পড়েন তিনি, গভীর মমতায় কপালে চুমু দেন। নিঃশব্দ কান্না তার অন্তরে, কেঁদে কেঁদে তার অন্তর বলছে," তোর কোন ক্ষতি আমি হতে দেবনা তোকে যারা অবহেলা করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলো তাদের ছায়াও তোকে মাড়াতে দেবনা, ওরা খুব হিংস্র, ওরা নিজেদের অন্যায় ঢাকতে এতোটা হিংস্র হয়েছে। আমি সবসময় তের পাশে থাকবো। শিশুটিও যেন তার আশ্রয়কে আকড়ে ধরে, যেন ঘুমের ভাষায় বলে, "মা আমায় তোমার কাছে একটু আশ্রয় দাও মা, কখনো একা ছেড়ে দিওনা, মাগো আমাদেরকে কেউ ভালোবাসেনা দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়, একটু ভালোবাসা আমাদের পাওনা নয় বলো............। কাঁদতে থাকেন আফছানা তার মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব পথশিশু যেন অসহায় ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে, এ দৃষ্টিগুলো তার অন্তর কে নাড়া দেয়।, ইস কী বেদনার সেই তাকিয়ে থাকা!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)