সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"
১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ (আগামীতে সমাপ্য) পেরিয়ে গেছে দু মাস সময়কে ধরে রাখা যায়না সময়কে ধরা যায় একমাত্র সময় অনুযায়ী চলতে পারলেই। ভোরের স্নিগ্ধতায় প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলো নাদিম। ফজরের নামাজ পড়ে মেসের দিকে ফিরছে, রোজই তো মসজিদ থেকে ফিরে তবে আজকের প্রশান্তির বিরাট বড় একটা কারণ আছে। গ্রামের বাড়িতে নাদিমের অংশের দশ বিঘা জমির পাঁচ বিঘা বিক্রি করে দশলাখ টাকা হয়েছে, সে টাকা থেকে রাজিবের কাছ থেকে নেয়া টাকা গুলো আজ পরিশোধ করতে যাবে নাদিম। আজ থেকেই মুক্ত হয়ে যেতে চায় সে। নাদিম নামাজ ঠিকমতো পড়তোনা, দুমাস আগে ওর মা মারা গেছে, খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো, সেসময় ইমরান ওর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ওর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করছিলো, গ্রামের লোকজন নাদিমের অংশের জমি ওর ভাইদের কাছে থেকে আদায় করিয়ে দিয়েছে। সর্বোপরি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে নাদিম ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আল্লাহই তাকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করেছেন। হঠাৎ ইমরান এসে নাদিমের হাত চেপে ধরলো, -কী ব্যাপার এতো খুশি কেন? -ইমরান সত্যি বলতে কী ঢাকায় থাকাকালীন সকালর এমন স্নিগ্ধতা আগে কখনো অনুভব করিনি জানোতো। এই আকাশ বাতাস মানুস সবকিছুকে কেমন জানি বন্দী মনে হতো, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সব কিছু মুক্ত সব কিছু। -আসলে মনের মুক্তি অর্থাৎ টেনশন মুক্ত হলে এমনই হয়, তুমি আজ বেশ মুক্ত মানে তোমার মনটা। কখন যাচ্ছ রাজিবের ওখানে? -সন্ধায়, কারণ দিনের বেলা রাজিব বাসায় থাকেনা,ওর বাবা মা বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকেন। রাজিব দিনের বেলা ব্যাবসার কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করে। -নাদিম তুমিকী এখনও রাজিব কে খুব ভালোবাসো? কথা বলেনা নাদিম চুপ হয়ে যায় এপ্রশ্নকে না বলে এড়িয়ে গেলে মিথ্যা হয়ে যাবে, আর হ্যা বলার কোন কারণ নেই কারন নাদিম জেনেছে,"মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য" একটু পরে ইমরাণের মুখোমুখি দাড়ায় নাদিম, -আসলে রাজিবের সবকিছু আমার এখনও একটা দুঃস্বপ্ন মনে হয়, আমার মনে হয় রাজিব কখনোই এমন করত পারেনা...... আর কেউ কিছু বললোনা, দুজনই পাশাপাশি হেঁটে মেসের দিকে গেলো। স্মৃতি রাজিবের সামনে দাঁড়ালো, ওর হাতে ছোট্ট একটা ক্রুশ, ভুমিকা ছাড়াই, -আচ্ছা আপনার রুমে এটা কী আমি যে বলেছিলাম এসব সরিয়ে ফেলতে, এসব কী যেখানেই হাত দিই সেখানেই ক্রুশ কী ব্যাপার বলেনতো?? -স্মৃতি আসলে কি জান, আমার না ক্রুশ আমার খুব ভাল লাগে...... হতবাক স্মৃতি দ্রুত কন্থে, -কি বলছেন? আপনি জানেননা ঈসা (আঃ) কেয়ামতের আগে এসে ক্রুশ ভেঙ্গে দিবেন? আর সেটা আপনার পছন্দ? -মৃত ব্যক্তি ফেরত আসেনা জাননা? -কে মৃত ঈসা (আ) আপনি ত কিছুই জানেননা দেখছি,আপনি মুসলমান ত? শংকা জাগছে। -থামো স্মৃতি, কি থেকে কি বলছ? -থামব কেন? আপনাকে শুনতে হবে, ঈসা (আঃ) মারা জাননি, তাকে আল্লাহ তার আরশে উঠিয়ে নিয়েছেন, ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছে ঈসা (আঃ) এর মত দেখতে একজন কে, সেই মানুসটি মদ খেয়ে মাতাল ছিল, ঐ মাতালকেই খ্রিষ্টানরা......... -খবরদার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করবেনা। -আমি কটাক্ষ করছিনাত, যেটা সত্য সেটাই বলছি। আমার অবাক লাগছে, আপনার মতামত কথাবার্তা খ্রিষ্টানদের মত, এত মিল কেন......... কলিং বেল বেজে উঠায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলনা রাজিব, মনিটরিং করে নাদিমকে দেখতে পেল, বলল, -স্মৃতি রুমে যাও, একজন গেস্ট এসেছে। -ঠিক আছে। স্মৃতি রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। নাদিমকে সামনে পেয়ে জরিয়ে নেয় রাজিব। -কেমন আছ বন্ধু? -আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি রাজিব? -এইত, যিশুর কৃপায় ভাল আছি। নাদিম রাজিবের পিছুপিছু সেই হলরুমে গিয়ে বসল, কেউ নেই সেখানে, বসতে বলল রাজিব নিজেও বসে, -হাতে ব্রিফকেস যে? কি আছে? -বড় লোকরা যা নেয়, অবশ্য টিভিতেই দেখেছি, বাস্তবে আমার ইচ্ছা হল। রাজিবের ভ্রু জোড়া কুচকে যায়, চোখ দুটুতে যেন আগুন, ওর দৃষ্টি স্থীর হল নাদিমের হাসসোজ্জল মুখমন্ডলে, -তোমাকে আমি এখনি মেরে ফেলতে পারি , কেউ টের পাবেনা। অকস্মাত রাজিবের কন্ঠে রুক্ষতা টের পেয়ে তাকালো অবাক হয়ে, এক্তু ভয়ই পেল ওর রক্তলাল চোখ দেখে, -রাগ করছ কেন?এমনই তো কথা ছিল তাইনা?এই নাও তমার পাচ লাখ টাকা আরও একটা জিনিস আছে বাইবেল, এই বাইবেলে এমন একটা যুক্তি পেয়েছি যার কারনে খ্রিষ্টান হওয়া থেকে...... চিৎকার করে ওঠে রাজিব, -নাদিম এই দুনিয়ায় আজি তমার শেষ দিন, কথাটা বলেই পাশের একটা ওয়াল আলমিরা থেকে রিভল্বার বের করল, তাক করলো নাদিমের কপাল বরাবর, -তোর বাচার কোন অধিকার নেই। নাদিমের শীতল কন্ঠে অবাক হয় রাজিব, -বাচা মরা নিরধারনের তুমি কেউ নও রাজিব, একজন আছেন যিনি নিজে হাতে এই বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করছেন......... রিভল্বার সরিয়ে, হেসে ওঠে রাজিব, সত্যিই তুমি একজন সুপুরুষ, আমি পরিক্ষা করছিলাম তমাকে, জিতে গেছো, এসো ড্রয়িংরুমে চমকে দেব। রাজিবের পিছু পিছু হলরুম থেকে বের হল নাদিম, -শুনলাম বিয়ে করেছ? -হ্যা করেছি, সে জন্যইতো বললাম চমকে দেব। নাদিমকে সোফায় বসতে বললো রাজিব, -তুমি বসো আমি আমার বঊকে নিয়ে আসছি। -হ্যা করেছি, সে জন্যইতো বললাম চমকে দেব। নাদিমকে সোফায় বসতে বললো রাজিব। -খাটি বাঙ্গালীদের মতো কথা বলছো যে -আমি তো বাঙ্গালীই, জন্মতো এদেশেই, যদিও বেড়ে ওঠা ইউ এস এ তে, তাতে কী হয়েছে নাদিম? সর্বোপরি ফিরে তো এসেছি। -হুম মানতে হবে,তুমি......... নাদিম থেমে যায় ওর সামনে এসে স্মৃতি দাড়িয়েছে, মুখটা দেখেই অটোমেটিক দাড়িয়ে গেলো, -অসম্ভব! স্মৃতি ওর অবাক হওয়ার কারণ বুঝলো কিছুটা, নিজে বসতে বসতে মলিন কণ্ঠে, -প্লিজ আপনি বসুন, নাস্তা করুন। নাদিম বসলো ঠিকই কিন্তু ওর দৃষ্টি আটকে আছে স্মৃতির নিরুপায় মুখের দিকে, অবাক কন্ঠে, -শেষ পর্যন্ত তুমিও? -আমিও? মানে কী সেটা? নাদিম কিছু বলার আগেই রাজিব বললো, -নাদিম থাকনা ওসব, তুমি নাস্তা করো। স্মৃতি নাদিমকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো কিন্তু আজ নতুন করে ওকে দেখার পর তাকিয়ে আছে,নাদিমের অবাক হওয়ার পরিমাণ এখনও কমেনি যেন, এবার একমনে নাস্তা খেয়ে যাচ্ছে রাজিব খেয়াল করে স্মৃতি নাদিমের দিকে তাকিয়ে আছে, তাই স্মৃতির কাছে এগিয়ে গেলো আর নিচু স্বরে, -আমাকে প্রথম দেখেও তো এভাবে তাকিয়ে ছিলে, কিন্তু এখন ওর দিকে তাকিয়ে আমার কলিজাতে আগুন ধরিয়ে দিওনা প্লিজ দোহায় তোমার... স্মৃতি মাথা নিচু করলো। এবার নাদিম কথা বলে উঠলো, -আনুর কী খবর? ওকে বিয়ে করলেনা যে? -আরে আমি কী আনুকে ভালোবাসী নাকী যাকে ভালোবাসী তাকেই বিয়ে করেছি। -স্মৃতিকে যে ভালোবাসো তাতো কখনো বলনি, -কেন না বললে কী হয়েছে? এখন দেখছোত, আচ্ছা তোমার হিংসা হচ্ছে নাকী? স্মৃতি অবাক হয়ে তাকালো রাজিবের দিকে, কারণ এই মুহূর্তে রাজিবের বলা কথায় কোন কিছুর ইঙ্গিত রয়েছে, নাদিম মাথা নিচু করে ফেললো, -না হিংসা কেন হবে নাদিম উঠে দাড়ায়, -চলি রাজিব -ও কে নাদিম এসো আবার। বাই। -বাই। নাদিম স্মৃতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, ওর প্রথম ভালো লাগার মানুষটি বিধর্মী হয়ে গেছে, এটা ভেবে ওর কষ্টের পরিমান বেশিই হয়ে গেলো। কিন্তু নাদিম আর এমনটা হতে দিতে পারেনা। নাদিম প্রতিজ্ঞা করলো আর একজন ব্যাক্তিকেও খ্রিষ্টান হতে দেবেনা, প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবে সে। বেরিয়ে যায় নাদিম। ১৬ স্মৃতি কিছুক্ষণ চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকলো, কিন্তু মোবাইল বেজে ওঠায় রাজিবের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে রিসিভ করলো, -হ্যা নিশা বলো। রাজিব ওর মোবাইলে কিছু একটা করছিলো, নিশা নাম শুনে স্মৃতিকে ফিসফিসিয়ে, -ফ্রেন্ড? স্মৃতি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে মোবাইলে কথা বলা চালিয়ে গেলো, -নিশা কেমন আছো? -ভালো, আনু মেডিকেলে আসছেনা কেন? -আমারও একই প্রশ্ন...... -রাজিবকে জিজ্ঞেস করোনি? -না করতে পারিনি, কেন কী হয়েছে? -আনু তো ওদের বাসাতেও নেই, ওর মা পাগল প্রায়,ওর বাবা পুলিশ সি আই ডি কিছুই বাদ রাখেননি -কী বলছো কতদিন থেকে? -দু থেকে আড়াই মাস, কিন্তু আজই আমি আরো একটা কথা শুনলাম বলবো কীনা বুঝতে পারছিনা...... -বলো সমস্যা নেই। -আমি অবশ্য গুজবই মনে করছি, কারণ তোমাদের বিয়ে তো তিনমাস হতে চললো, তোমার জানার কথা...... রাজিবের মামার নাম নাকী ডেভিড ডি কষ্টা? হতবাক হয়ে গেলো স্মৃতি, -কী? -হ্যা তাইতো শুনেছিলাম। -কী বলছো তুমি? আচ্ছা পরে কথা বলবো নিশা। মোবাইল রেখে চিন্তামগ্ন রাজিবের মুখের দিকে তাকালো, -রাজিব রাজিব চমকে তাকালো, -হ্যা বলো। -আনু কোথায়? দু তিনমাস হলো ও গায়েব ওর বাবা মা...... -আমি কী করে জানবো, আমার কী জানার কথা? -আপনারই তো জানার কথা, আপনিইতো আনুর সম্পর্কে বেশী জানেন, কারণ ও জানায়। -আমি জানিনা। -মিথ্যে বলছেন, আপনার সবকিছুই সন্দেহজনক, অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে নাকী আপনার? কোথায় আনু বলেন? -তুমি রেগে যাচ্ছ কেন, থামো স্মৃতি, তুমিতো জানোই কবে আনুর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো, তুমি কেন বলছো ওর কথা, আমি তো তোমাকে...... -থাক উচ্চারণ করবেননা, ঐ কথা আপনার মুখে শুনতে আমার ঘৃণা হয়, বললেননা তখন, আপনাকে প্রথম দেখে তাকিয়ে ছিলাম, হ্যা সেটা মিথ্যা নয়, কিন্তু তখনতো জানতামনা আপনার সুন্দর চেহারার আড়ালে, একটা কুৎসিত মন আছে, যেখানে ঘৃণ্য পরিকল্পনাগুলো বাসা বাধছে প্রতিনিয়ত। ডেভিড ডি কষ্টা আপনার মামা? -হ্যা .........তাকালো স্মৃতির দিকে। -নিজের মামা? -হ্যা। -খ্রিষ্টান? আপনার মাও কী খ্রিষ্টান? রাগান্মিত রাজিব দোষী আসামীর মতো স্বীকার করতে লাগলো সবকিছু, -হ্যা হ্যা, আমার বাবা খ্রিষ্টান, মা খ্রিষ্টান, আমি খ্রিষ্টান আমার চৌদ্দ গোষ্ঠী খ্রিষ্টান, তোমার বাবাকে খ্রিষ্টান বানিয়েছি, তোমাকে বানাবো তোমার মাকে বানাবো, আনুকে বানিয়েছি, দেশের বিশ শতাংশ ধনী ব্যক্তিরা এখন খ্রিষ্টান, আমরা বানিয়েছি। স্মৃতি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, কী বলছে রাজিব? উঠে দাড়ালো স্মৃতি, স্মৃতিকে অস্বাভাবিক ভাবে দাড়াতে দেখে, নিজের আকস্মিক রাগে নিজেই চমকে স্মৃতির দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর দুচোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে, রাজিব উঠে দাড়ালো, -স্মৃতি প্লিজ কেদনা, আসলে...... -আর কোন যুক্তি নেই আপনার কাছে, আপনি আমার স্বামিই নন। ছিঃ ছিঃ একই সাথে একজন....একজন বিধর্মীর সাথে একই ছাদের নিচে... স্মৃতি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে হাত ধরে ফেলে রাজিব, -কোথায় যাচ্ছ তুমি? কোথাও যাবেনা, তুমি খ্রিষ্টান হয়ে যাও যিশুর কাছে আর কিছু চাইবনা, আর কাউকে খ্রিষ্টান বানাবোনা, আমি তোমাকে যেতে দেবনা, তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত টিকতে পারবনা। হাত ছেড়ে নিয়ে রাজিবের গালে ঠাস করে থাপ্পড় দেয় স্মৃতি, -নির্লজ্জ, সবাইকে আনুর মতো মনে করবেননা, আমি মুসলমান আমি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি, কী করে ভাবলেন আমি খ্রিষ্টান হবো?......... হাউমাউ করে কঁেদে ওঠে স্মৃতি, -ইয়া আল্লাহ এ কোন পরীক্ষায় ফেললে আমায়। একটু পরে স্বাভাবিক হয়ে বের হতে নেয় স্মৃতি রাজিবের দৃঢ় কন্ঠ, -স্মৃতি তুমি যাবেনা, প্রয়োজনে আমি তোমাকে বন্দী করে রাখবো, কষ্ট হবে তোমাকে আটকে রাখতে কিন্তু হারানোর ভয় তো থাকবেনা...... -আপনি এমনটা করতে পারেননা, একজন অসহায় নারীর সাথে জোর খাটানোটা বাহাদুরী নয়। -তুমিতো শুধুই একজন নারী নও, তুমি আমার পুরো পৃথিবী। কথা শেষ করে স্মৃতির হাত ধরে, রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে দরোজা বন্ধ করে দলো, স্মৃতি দরোজা ধাক্কালে রাজিব উচ্চস্বরে, -যেদিন বুঝবো যে তুমি আমাকে ছেড়ে যাবেনা সেদিনই তুমি ছাড়া পাবে। স্মৃতির দরোজা ধাক্কানো থেমে গেলো, খুব অসহায় ভাবে কাদছে সে, কী করবে বুঝতে পারছেনা, মায়ের কাছে ফোন করার কথা ভেবেও করলোনা কারণ মায়ের মানিক ক্যাপাসিটি খুবই দুর্বল, আর বাবার কথা রাজিব যা বললো তাতে বাবার কাছে বলা ঠিক হবেনা, উপায় বের করতে হবে......ভাবলো স্মৃতি। রাজিব এবার ওর মামাকে কল করলো, ওপার থেকে ডেভিড ডি কষ্টা, -বলো রাজিব, কেমন আছো? আংকল, আমিতো ফঁেসে গেছি। -মানে? -ও সব জেনে গেছে। -জানারই তো কথা, এবং তা আরও আগে, এখন কেন? খুব খারাপ কথা রাজিব, এতোদিনে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। -ও কখনো মানবেনা, এখন চলে যেতে চাইছে। -কী? -হ্যা! ওর বাবাকে দেয়া সবকিছু কেড়ে নাও, আর সাইমন চৌধুরীকে বলে দাও তার মেয়েকে মানাতে পারলে তবেই সবকিছু ফিরে পাবে, দ্রুত করো, সময় নেই, দেশ এখন উত্তাল, সিনেমাটা নিয়ে। -কোন সিনেমা আংকল? অবাক হন ডেভিড ডি কষ্টা, -রাজিব! টুইটার, ফেসবুকে বসছনা? টিভি নিউজ কিছুই দেখছনা নাকী? -হয়ে ওঠেনি, তুমি বলো। -ইউ এস এ তে তৈরী,সিনেমা "দি ইনোসেন্স অব মুসলিমস" -কী হয়েছে ওটাতে? -মুসলমানদের নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর দাম্পত্য জীবন নিয়ে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।   ১৭ মোবাইল রেখে দ্রুত ল্যাপটপ নিয়ে বসলো, নেট কানেকশন দিয়ে সার্চ করলো "দি ইনোসেন্স অব মুসলিমস" সাথে সাথে অনেকগুলো তথ্য বেরিয়ে আসলো, "দি ইনোসেন্স অব মুসলিমস" পিরচালনায়-স্যাম বাসিল/নাকুলা বাসিল মুক্তি পায়-২৩ শে জুন ২০১২ খরচ হয়েছে-৫মিলিয়ন ডলার (১০০ জন ইহুদী থেকে সংগৃহিত) কাজ করেছেন- ৬০ জন অভিনেতা ও কলাকুশলী সিনেমাটির মূল প্রতিপাদ্র- নবী মুহামমদের চরিত্র হণন। ১৩ ই সেপ্টেম্বর ২০১২ মিশর, ইয়েমেন, ইরান, ইরাক, তিউনিশিয়া, মার্কিন দুতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে মুসলিম উম্মাহ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টি দেশে চলচ্চিত্রটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়। আফগানিস্থান, পাকিস্থান ও বাংলাদেশের ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়। লিবিয়ার বিক্ষোভকারীরা দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাজীতে মার্কিন দূতাবাসে ভবনে রাষ্ট্রদূত ক্রিষ্টোভার ষ্টিভেনসের গাড়ীতে রকেট হামলা চালায় এবং রাষ্ট্রদূত সহ চারজন নিহত হয়। তথ্যগুলো দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় রাজিবের, বিড়বিড় করে বলে, -অ মাই গড এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানিনা, সত্যিই আর দেরী করা ঠিক হবেনা ভালোবাসার যে অনুভূতি আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছিলো তা উপড়ে ফেলতে হবে, মাথা নিচু করলো রাজিব, ওর ইচ্ছে করছে এখন চিৎকার করে ভেতরের সমস্ত চাওয়া পাওয়া, আর অনুভতিকে কবর দিয়ে দিতে কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব, মনের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কী করে, কোন মাধ্যম আছে কী? যিশু কী এর উপায় জানিয়েছেন কাথাও? নিজের মনকে একর পর এক প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছে রাজিব, ল্যাপটপ বন্ধ করলো রাজিব, কোথাও একটা কল করলো, ওপার থেকে সাড়া পেয়ে, -আনাম মন দিয়ে শোন, সাইমন চৌধুরীর একাউন্ট বন্ধ করে দাও, কোন টাকা যেন উঠাতে না পারে, সমস্ত ব্যবসা অচল করে দাও, আর আগামীকালের মধ্যে ওর ফ্লাট দখল করো। শুধু একটা কথা বলবে " আপনার মেয়ে এখনও অবাধ্য আছে, পারলে তাকে রোজারিওদের কথা মানতে বলুন সব ফিরে পাবেন" ক্লিয়ার" -ইয়েস স্যার সব কাজ শেষে আপনাকে জানাবো।ওকে বাই স্যার। মোবাইল রেখে চটপট রেডি হলো রাজিব, আনুর খঁোজ নেয়া দরকার ওকে কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি চায় রাজিব কারণ এখণ আনুকে নিয়ে ভাবার সময় নেই রাজিবের। আনুকে কল করলো রাজিব, -হ্যালো আনু -কে -আমি রাজিব। -কেন ফোন করেছো -না তোমার কোন খোঁজ খবর ছিলোনাতো, তাই...... -আর নিতেও হবেনা, আমি এখন খুব ভালো আছি রাজিব তুমিতো আমাকে ভালোবাসনি, তাই তোমাকে মুক্তি দিতে অন্য জনকে খ্রিষ্টীয় নিয়ম মতো বিয়ে করেছি। আমি তোমার সবটা শুনেছি, মানতে কষ্ট হয়েছে, তুমি সেদিন গীর্জাতে আমাকে মিথ্য বলেছিলে। তোমাকে আজও আমি অনেক ভালোবাসী, তাই তোমার পথ থেকে সরে দাড়িয়েছি, তোমার মিশন কমপ্লিট করার জন্য সাথে হয়তো থাকতে পারবনা, তবে বাধা হয়েও দাড়াবনা। -কাকে বিয়ে করেছো? -তুমি হয়তো চেনো, রিকো জেফারসন। -হ্যা চিনি, থ্যাংস এ লট, ভালো থেকো আনু বাই। -বাই। মোবাইল কেটে দিয়ে গ্যারেজের একটা গাড়ীতে উঠে, দ্রুত চালিয়ে বেরিয়ে গেলো। রাজিব নিজের রুমে শুয়ে আছে, মামা আসবে দু তিন দিনের মধ্যে আর এসেই স্মৃতির ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। বাবা মা মামার উপরেই সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন। আর রাজিবের মনে হচ্ছে ব্যাপার গুলো নিয়ে কোন আন্দোলন হতে যাচ্ছে, সিনেমা নিয়েতো দেশ উত্তাল এখন এটা যোগ হলে রক্ষা নাই, শেষ পর্যন্ত গণধোলাই না খেতে হয়।, রাজিব নিজের মনে বিড়বিড় করছে, -আমি কী স্মৃতিকে কোন ধরণের সিদ্ধান্তের হাত থেকে বাচাতে পারবো! আমি বাচাবোই বা কেন, তবে সেদিন নাদিমকে জীবিত ছেড়ে দেয়া উচিত হয়নি। ও নিশ্চয় এতোদিনে কোন না কোন উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছে। চিন্তাকে থামিয়ে উঠে দাড়ালো, তারপর যিশুর মূর্তির সামনে গেলো, -প্রভু আমার কাজে দৃঢ়তা দান করুন, একজন নারীর কাছে আমাকে দুর্বল করে দিবেননা, আমি আপনাকে মাতা মেরীকে, আর ঈশ্বরকে বিজয়ী করতে চাই, বাইবেলকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই। আমায় শক্তি দিন প্রভু। রাজিব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজে, ডিনার করা হয়নি এখনও, স্মৃতিকে দশটায় খাবার দেয়া হয়েছে, ডাইনিং টেবিলে বসলো রাজিব, -ফ্রিডো খাবার সার্ভ করো। ১৮ ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে বসলো নাদিম, ইমরাণ আগেই বসেছে। মেসর অন্য সদস্যরা খেয়ে নিয়েছে, নাদিম আর ইমরান গণসংযোগ থেকে ফিরেছে পৌনে বারোটায়, ফ্রেশ হতে আরো পনেরো মিনিট। নাদিম ঢেকে রাখা প্লেটের ঢাকণা উঠালো, -মিছিলের ডেটতো ঠিক হয়ে গেলো এখন উপস্থিতি ঠিকমতো হবেতো ইমরাণ? সরকারের পক্ষ থেকে বাধা আসবেনাতো? নাদিমের উদ্বিগ্ন কন্ঠ শুনে ওর মুখমন্ডলে দৃষ্ট রাখলো ইমরাণ, -আরে রাখো তোমার সরকার, সব বিষয়ে বাধা দেয়া সরকারের অভ্যাস তাই বলে আমরা পিছিয়ে থাকবো? আর উপস্থিতি? আমাদের যথাসাধ্য আমরা করছি আর বাকীটা আল্লাহ ভরসা, নাও এবার খাবার খাও। দুজনই এবার চুপচাপ ডিনার সেরে ফেললো। এবার নাদিমের অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে কল আসলো,রিসিভ করলো, -আসসালামু আলাইকুম! -ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি রুবিনা বলছি আপনি হয়তো আমাকে চিনবেননা তবুও জরুরী একটা বিষয় জানানোর জন্য ফোন করলাম মানে স্মৃতির ব্যাপারে...... - হ্যা হ্যা বলুন। -আমি শুনেছিলাম স্মৃতি খ্রিষ্টান হয়ে গেছে, কিন্তু আমার শোনা ভুল ছিলো ও খ্রিষ্টান হয়নি। রিজিবদের কথা না মানার কারণে স্মৃতিকে ওরা বন্দী করে রেখেছে। -কী!? অত্যাচার করছে নাতো! -তাহলেতো খুব ভালো কথা। -না অত্যাচার করছেনা, তবে বাইরে বের হতে দিচ্ছেনা। বিষয়টা আপনাকে জানানো প্রয়োজন মনে করেছি তাই জানালাম। -ধন্যবাদ জানানোর জন্য। স্মৃতির মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে, রিসিভ করে ওপারের কন্ঠ বুঝে দেরী হয়না স্মৃতির, রুবিনার ফোন, রুবিনা দ্রুত কন্ঠে, -কিছু কথা বলছি শোন, তুমিতো জানোই বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা খুবই কম, হিন্দুদের চেয়েও। ওদের বাংলাদেশে বাস করার একটাই কারণ আর তা হলো খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বাড়ানো। মুসলিমদেরকে ধর্মচ্যুত করা, বিনিময়ে নানা সুযোগ সুবিধার আশ্বাস দেয়া।, ওরা খুব সম্পদশালী হয়ে থাকে। ওরা এদেশে মিশন হাসপাতাল তৈরী করেছে,মিশন স্কুল কলেজ, তৈরী করছে, আর খুব কম শুনলেও তুমিও শোনার কথা যে, হাসপাতাল স্কুল গুলোতে ধর্মচ্যুত করার জন্য প্রবঞ্চণা দেয়, এমনকী সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর কানে আজান দেয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে বাইবেলের ভ্রান্ত অংশ শুনিয়ে দেয়া হয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, মুসলিম শুন্য করার জন্য অন্যান্য দেশ গুলোতে আগ্রাসী হামলা চালাচ্ছে। ইরান ইরাক আফগানিস্থান, মিশর, এই দেশগুলোর উপর আমেরিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপে হামলা চালানো হচ্ছে, কারণ ওদের টার্গেট ইসলামকে সমূলে বিনাশ করার দৃঢ়তম ষড়যন্ত্র। আর আমেরিকাতে সম্প্রতি তৈরী হয়েছে একটা সিনেমা, ইহুদীদের তৈরী করেছে আমেরিকা চাইলে সিনেমাটি বয়কট করতে পারতো কিন্তু করেনি। তুমি যেনে থাকবে মাঝেমাঝেই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ব্যাঙ্গ চিত্র তৈরী করছে, আর তা ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে, এসবের একটাই কারণ, ইসলাম এই সত্য পথটাকে বিনাশ করা, এই পথ থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া, কুরআনের সাথে বিরোধীতা করে কুরআনকে অবমাননা করা।, অথচ সকল আবিষ্কারের মূলে এই কুরআন। একটা কথা কী জানো অন্য সব ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হলেও কুরআন কেউ বিকৃত করতে পারেনি পারবেওনা। কেন বলোতো? জানো? -হ্যা আপু জানি, কুরআন লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে। -ঠিক বলেছো। আর তুমি ভয় পেওনা, যতটুকু শুনেছি রাজিব তোমাকে ভালোবাসে ও তোমার ক্ষতি করতে পারবেনা, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তুমি ওকে সত্যিটা বুঝাতে থাকো, আর এদিকে আন্দোলন গড়ে উঠছে, খুব শীঘ্রই মিশনারী সব কিছু বন্ধের দাবীতে, জিম্মি করে রাখা সকলের মুক্তির দাবীতে, আর প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মচ্যুত করা রোধের দাবীতে। নাদিম ভাইকে চেন? -হ্যা চিনিতো! -ওনারা সংঘবদ্ধ হয়েছেন, আরো ছাত্রদেরকে একত্রিত করছেন, তুমি ভালো থাকো আর আমি তোমার ব্যাপারটা অন্য দেরকে জানানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু সমস্যা হলো রাজিব কোন ক্ষতি না করলেও অন্যরা, মানে ওর মামা......... তুমি প্লিজ তোমার সব আপডেট জানিয়ে দিও। সাবধানে থেকো আল্লাহ হাফেজ। -আচ্ছা আপু ধন্যবাদ তোমাকে। আল্লাহ হাফেজ। মোবাইল রেখে ঘড়ির দাকে তাকালো, দুপুর একটা বাজে। গোছল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো স্মৃতি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)