সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"
১১ ও ১২ ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ক্লাসে ঢুকে খুব চুপচাপ স্মৃতি। স্যারের লেকচারে কোন মনোযোগ নেই। এই মেডিকেল কলেজে পড়ার স্বপ্ন ছিলো স্মৃতির পূরণ হয়েছে সে স্বপ্ন। সে ভাবছে, আর কোন স্বপ্ন আছে কী নিজের? হ্যা আরো একটা স্বপ্ন দেখেছে, ছোট্ট একটা ঘর, সেখানে সবকিছু সাজানো পরিপাটি স্মৃতি নিজের হাতে সাজায়। হাজব্যান্ড মোটামুটি আয়ের চাকুরী করে, বাবার মতো ব্যস্ত নয় , ছুটির দিনটা ওরা বাইরে খায়, বাইরে ঘোরে। ভাবছে স্মৃতি, ওর বরের চেহারাটা কেমন হবে? চোখ বন্ধ করে ফেলে, ভেসে ওঠে নাদিমের মুখমন্ডল। খুব দ্রুত চোখ খুলে ফেলে। নিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, -কী হয়েছে স্মৃতি? ইতস্তত কন্ঠে, -না কিছু না। হঠাৎ স্মৃতি নিশার দিকে ভালো করে তাকায়, নিশা ঠিক স্মৃতির মতো করে মাথায় স্কার্ফ পরেছে, ফুলহাতা সাদা এপ্রণ,। ক্লাস শেষ হয়েছে। নিশা স্মৃতির অবাক হওয়া বুঝতে পারে, মৃদু হাসে, -অবাক হয়েছো? -হ্যা নিশা......... -স্মৃতি তোমার দেয়া যুক্তিগুলো একদমই সত্য, যুক্তিহীন মিথ্যার অনুকরণ করাটা বোকামী ছাড়া কিছুই নয়, অনন্তকালের যে জীবন সে জীবনের জন্য নিজেকে সঠিকভাবে তৈরী করাই বুদ্ধিমানের কাজ। হঠাৎই আনু পেছনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকিয়ে, -ব্যাকডেটেড। স্মৃতি, নিশা তাকালো ওর দিকে কিন্তু কিছুই বললোনা। ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো স্মৃতি আর নিশা। বিয়ের ব্যাপারটা নিশার কাছে শেয়ার করলো স্মৃতি, হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করে নাদিম, -কেমন আছো স্মৃতি? -আলহামদুলিল্লাহ,এখানে কেন? আপনি কেমন আছেন? -তোমার কী কিছু হয়েছে? স্মৃতি মাথা নিচু করে, ওকে দেখে স্বপ্নটাকে সত্যি করার ইচ্ছেটা বারবার তাড়া করছে ওকে। নিশা কথা বললো, -ও একটু পরপর অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছে। নাদিম মৃদু স্বরে, -কেন? -কী জানি। -নিশা আমি শুনলাম স্মৃতির নাকী বিয়ে? -হ্যা নাদিম ভাই ঠিকই শুনেছেন। -ও কী রাজি? -নিশা একবার স্মৃতির দিকে তাকায়, -সেটা ক্লিয়ারলী বলেনি। আপনি ওর কাছেই শুনে নিন। নাদিম স্মৃতির মুখের দিকে তাকায়, -স্মৃতি! স্মৃতি দ্রুত মাথা নিচু করে, নাদিমের অন্তর ভেদ করা দৃষ্টি যেন সব বুঝে ফেলবে এই আশংকায় মাথা নিচু করেছে স্মৃতি, -হ্যা......... -তুমি কী অন্য কাউকে পছন্দ করো? -না না তা নয় আমি কী আপনাকে সেটা বলেছি? নাদিম এবার দৃষ্টি সংযত করে, টেবিলের দিকে তাকায়, -অহ! কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো তুমি এ বিয়ে করতে চাচ্ছোনা, যাইহোক খুব ভালো কথা। নাদিমের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, খুব কষ্ট পাচ্ছে সে, একটা খুব সুন্দর ফুলগাছ অন্তরে রোপন করেছিলো, সযতনে লালনও করছিলো, কিন্তু সেটাতে আজ কাঁটা গজিয়েছে, কাঁটাটিকে উপড়ে ফেলার সাধ্য নেই নাদিমের। স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষণ সময় নিলো নাদিম, নিশা বুঝতে পেরেছে কিন্তু কিছু বলছেনা। স্মৃতি মলিন কন্ঠে, -আপনার এখন কী অবস্থা? -এইতো আছি, বিরাট বড় ফাঁদে পা দিয়ে, মা গ্রামেই থাকবে আর আমি এখন কম পরিচিত এলাকায় একটা মেসে উঠেছি, ফাঁদ পাতা দল এখনও আমার খোঁজ পায়নি, ওদের কাছ থেকে যে টাকাগুলো নিয়েছিলাম সেগুলো ফেরত দিয়ে তবেই ওদের মুখোমুখি হবো। স্মৃতি শংকিত কন্ঠে, -কারা তারা?! -ওরা মানুষকে টাকা দিয়ে খ্রিষ্টান বানায়, বিভিন্ন্ প্রয়োজন পুরণ করে দেয় লোভ দেখায়, শর্ত একটাই খ্রিষ্টান হতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাদিম, - আচ্ছা থাক ওসব, তোমার বিয়ে কবে? -সামনে ১৫ তারিখ, আপনি আসবেন। -না আসতে পারবোনা জনসম্মুখে আসছিনা এখন। নিশা অনেকটা সময় নিয়ে নাদিমকে দেখলো, এতোটা কষ্ট চেপে রেখে নিজেকে সামলে নিতে পারলো কিভাবে! স্মৃতি মলিণ কন্ঠে, -আপনার নাম্বারতো বন্ধ, চেন্জ করেছেন? -হ্যা, আমি তোমাকে কল করবো নাম্বার এখন দেয়া যাবেনা। -ঠিক আছে। নাদিম উঠে দাড়ায়,স্মৃতির দিকে না তাকিয়েই, -ভালো থেকো, সুখি হও। আর আমার জন্যও দোয়া করো স্মৃতি খুব বড় একটা মিশন নিয়ে আমরা একত্রিত হচ্ছি, আর সেই মিশনের পথ ধরে এগুতে কোন পিছুটান নেই আর, একদিক থেকে ভালোই হলো! অবাক হয়ে তাকায় স্মৃতি, -কী রকম? -না কিছু না আসছি, আল্লাহ হাফেজ। নাদিম চলে গেলো। নিশা কোন ভূমিকা ছাড়ায়, -স্মৃতি নাদিম ভাই তোমাকে...... আনু এসে বসার কারণে থেমে যায় নিশা।আনু বললো, -তোমরা আমাকে আর পাত্তাই দেওনা, কেন? অনেক আগে থেকে খুঁজছিলাম, রাজিব এসেছিলো তেমাদেরকে লান্চ করাতে চয়েছিলো। নিশার প্রশ্ন, -আমাদেরকে কেন? -বারে তোমরা আমার ফ্রেন্ড না? আচ্ছা শুনলাম তোমার নাকী বিয়ে ঠিক হয়েছে? স্মৃতির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি আনুর। -তোমাকে কে বললো? -রাজিব বলেছে। খুব অবাক হয় স্মৃতি, -রাজিব! কিভাবে জানে? -তোমার বাবা আর ওর মামা বন্ধু না, শুনেছে হয়তো মামার কাছে। -ও হয়তো তাই। নিশা দ্রুত কন্ঠে, -সৃতি চলো চলো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। -হ্যা চলো। সাইমন চৌধুরী ড্রয়িং রুমের সোফায় বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছেন, ডান হাতে কফি মগ, বাম হাত দিয়ে কানে টেলিফোন, ওপারের সাড়া পেয়ে হাস্সোজ্জ্বল কন্ঠে, -হ্যা কেমন আছো? ওপারেরে কথাগুলো জোরেই শোনা যায়, -হ্যা ভালো, তুমি ভালোতো? -ভালো কিন্তু একটা ব্যাপার সমস্যা মনে হচ্ছে, -আমি বুঝেছি সিস্টেমের কথা বলছোতো? -হ্যা হ্যা। -আরে ভেবনা ঐ দিনটাতে তোমাদের সিস্টেম মতোই মানে মুসলিম রীতি মতোই হবে, কিন্তু তারপর থেকে আমাদের। -ধন্যবাদ, আসলে কী হয় কী হয় একটা টেনশন কাজ করছেতো? তাই। -হ্যা বুঝেছি, খাস বাঙ্গালী কীনা! থক টেনশন করোনা, আমি আছিতো। -আচ্ছা রাখছি। বাই। রেখে দিলেন সাইমন চৌধুরী।   ১২ স্মৃতির বিদায়ের সময় হয়ে এসেছে। ও এখনও বরকে দেখেনি। একবারও তাকানোর ইচ্ছে হয়নি ওর, তবে বিয়ে পড়ানোর সময় নাম শুনে চমকে উঠেছিলো, কিন্তু পরক্ষণেই ভেবেছিলো একই নামে কতো মানুষইতো থাকে। সুফিয়া চৌধুরী অনবরত কেঁদেই চলেছেন, সাইমন চৌধুরীও অনেক কষ্টে নিজেকৈ সামলে মেয়েকে জামাইয়ের হাতে তুলে দিলেন, বললেন খুব কমন একটা কথা, -আমার মেয়েটাকে ভেলো রেখো বাবা! -আপনি চিন্তা করবেননা, ও অনেক ভালো থাকবে। স্মৃতি দেখতে চাইলো কথাটা শুনে কিন্তু মাথা উঠানোর সাহস ওর হলোনা। হঠাৎ নিশা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে, -সরি স্মৃতি, ফুফি হাসপাতালে ছিলো, তাই ...... -কী হয়েছে ওনার? স্মৃতির উদ্বিগ্ন কন্ঠ। -টাইফয়েড......স্মৃতির বরের দিকে তাকিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে, -আপনি!! বরের উচ্ছল কন্ঠ, -হ্যা সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম। তবুও স্মৃতি তাকালোনা।গাড়ী ছুটে চলেছে বরের বাসার দিকে, স্মৃতির শূন্য দৃষ্টি সামনের দিকে হঠাৎই দৃষ্টি ওর আটকে গেলো ড্রাইভারের সামনের আয়নায়। ওর বরের চেহারা দেখে সপ্তাশ্চর্যের কিছু দেখার মতো করে চমকে উঠলো। কম্পিত কন্ঠে, -আপনি! -হ্যা আমি, কেন তুমি জানতেনা? -না তো! এ কী করে সম্ভব। আপনিতো...... -না স্মৃতি তুমি যা জানো সবই ভুল, আজ যেটা হয়েছে এটাই চরম সত্য আমি শুধুমাত্র তোমাকেই ভালোবাসী। -আপনি কী বলছেন? -ঠিকই বলছি, সেজন্যই তোমাকে বিয়ে করলাম। স্মৃতি কী করবে বুঝতে পারছেনা, মেনে নেয়া অসম্ভব ওর জন্য, খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, চিৎকার করে, অঝোর ধারায় অশ্রু প্লাবিত হতে লাগলো। মোবাইল বেজে উঠলো স্মৃতির পাশে বসা সেই মানুষটির, যে নাকী স্মৃতিকে ভালোবাসে, সে আর কেউ নয়, অসংখ্য তরূণীকে যে ফাঁদে ফেলেছিলো, ধর্মত্যাগ করিয়েছিলো নিজের ব্যাক্তিত্ব সৌন্দর্য আর সম্পদ দিয়ে এ সেই রাজিব রোজারিও। স্মৃতি রাজিবের খ্রিষ্টান হওয়ার ব্যাপারটি জানেনা কোনভাবেই ওকে জানতে দেয়া হয়নি। আনুর সাথে প্রণয় জানার মধ্যে শুধু এটুকুই জানে আর কিছু জানেনা। তৃতীয়বারের মতো কল এসেছে আনুর কল, রাজিব রিসিভ করে, -বলো -ফোন ধরোনা যে। -আমি কী বাধ্য? -অবশ্যই......... -কেন কী বলবে বলো। -স্মৃতির বিয়ে হয়ে গেলো। -সে কথাতো আমাই তোমাকে বলেছিলাম যে আজ স্মৃতির বিয়ে। আনু! তুমি কী ভালো আছো? স্মৃতি রাজিবের দিকে তাকায়, বিনিত কন্ঠ, -আমাকে যা ঠকানোর ঠকিয়েছেন, এখান থেকে বেরোনোর কোন পথ হয়তো নেই কিন্তু প্লিজ ওকে ঠকাবেননা। রাজিব মোবাইল রেখে দেয়, -থামো স্মৃতি আমি কী তোমার সাথে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেছি? তোমার বাবাকে প্রস্তাব দিয়েছি শুধুমাত্র, ঠকালে তোমার বাবা তোমাকে ঠকিয়েছেন.........এই ড্রাইভার থামো। গাড়ী ঘুরিয়ে সেন্ট পলে চলো। স্মৃতির মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে,বড্ড অস্থর লাগছে ওর। গাড়ী থামলে নেমে পড়লো রাজিব, স্মৃতির পাশে এসে ওর পাশের গেট খুলে ডান হাত এগিয়ে দিলো, -এসো স্মৃতি নেমে এসো। -আমি নামতে পারবো। -না একা নামতে দেবনা তোমায়! স্মৃতি হাত ধরে ফেলে রাজিব, স্মৃতি সাথে সাথে হাত ছাড়িয়ে নেয়। রাজিব স্মৃতির দিকে তাকিয়ে মুচকী হাসে, -স্মৃতি তোমার রাগ দেখে মনে হচ্ছে, গতরাতে আমাদের ঝগড়া হয়েছে আর এখন আমি তোমার মান ভাঙ্গাচ্ছি...... স্মৃতির রাগান্মিত দৃষ্টি স্থীর হলো রাজিবের মুখমন্ডলে, -ফাজিলের মতো কথা বলছেন কেন? -আচ্ছা নাও বলবনা, আমার সাথে এসো। রাজিব এগিয়ে চললো সেন্ট পল গীর্জা অভিমুখে, পিছু পিছু স্মৃতি। হঠাৎ পেছন থেমে ড্রাইভারেরে দ্রুত কন্ঠ, -ম্যাডাম স্যান্ডেল খুলতে হবে। পেছনে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাতে নেয় অমনি স্মৃতির ফোনটা বেজে ওঠে, স্যান্ডেল না খুলে ফিরে আসে গাড়ীর কাছে, রিসিভ করে, -আসসালামু আলাইকুম। ওপারের মলিন কন্ঠ, -ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমি নাদিম, কেমন আছ? মৃদু কম্পন মনের মাটিতে, -আলহামদুলিল্লাহ,আপনি কেমন আছেন? কোন কথা নেই ওপাশে, ঝাপসা হয়ে আসে স্মৃতির দৃস্টি, -কথা বলছেননা যে ওপাশে কান্নার অধিকতা এতো বেশী যে কথা বলতে পারছেনা। -আপনি কী কাঁদছেন? -না! -......রাজিব ফিরে এসে, -কার সাথে কথা বলো? উত্তর দেয়না স্মৃতি কথা চালিয়ে যায় নাদিমের সাথে। রাজিব ওর হাত থেকে মোবাই কেড়ে নেয়, -হ্যালো......... কেটে গেছে,মোবাইল চেক করতে নেয়, স্মৃতি মলিন কন্ঠে, -আপনি এভাবে চেক করতে পারেননা। ওর মলিন কন্ঠ শুনে অবাক হয় রাজিব, -কী হলো তোমার, আচ্ছা মোবাইল নাও, দেখবনা তুমিই বলো কে ছিলো? -আমার পরিচিত। রাজিব কিছু বললোনা, গাড়ীতে উঠে, -এসো স্মৃতি। গাড়ী থামলো, রোজারিও লজ এর সামনে, স্মৃতি নেমপ্লেটের দিকে তাকালোনা কিন্তু অবাক হলো খুবই, কারন রিসিপশনের কোন ব্যাবস্থা নেই, লোকজন নেই, স্মৃতি রাজিবের পিছু পিছু ওদের ফ্লাটে ঢুকলো কিন্তু সেখানেও তৃতীয় কোন ব্যাক্তি নেই, ওর ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, ভয়ে মনটা কেমন জানি করছে। রাজিব পেছনে তাকিয়ে স্মৃতির অবস্থা দেখছিলো,মৃদু স্বরে, -ভয় পাচ্ছো? স্মৃতি কোন উত্তর দেয়না, তাই রাজিবই বললো, -আসলে আমার মা বাবা বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকেন, ওনারা এখন ইউ এস এ তে। একটু থেমে, -স্মৃতি এদিকে এসো, এই যে এই রুমটা দেখছো এই রুমটা আজ থেকে তোমার, আমাদের হতো, যদি তুমি আমাকে মেনে নিতে পারতে, যাই হোক আজ থেকে তুমি এখানে থাকবে যাও ভেতরে যাও আমি তোমার লাগেজ দিছ্চ। অবাক হয় স্মৃতি রাজিবের কথায় কিছুটা ভয় কমে যায়, ভেতরে ঢুকে রুমটির সৌন্দর্য দেখে, অভিভূত হয় এতো সুন্দর করে সাজানো, গোছানো। কিন্তু পরক্ষণেই খুব কষ্ট হয় আর পরিবেশটা ভয়ঙ্কর মনে হয়, স্মৃতির কান্না এসে যায়। রাজিব ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে, -স্মৃতি দ্রুত চেঞ্জকরে ফেলো, ফ্রেশ হয়ে নাও ফ্রিজে খাবার আছে দুজনের হয়ে যাবে, দুই টোনা টুনি...... মুচকি হাসে রাজিব। স্মৃতির কাছে ওর সব কথায় বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। রাজিব সেটা টের পায়, মৃদু কনঠে, -সরি, আচ্ছা আমি খাবার রেডি করছি। বেরিয়ে যায় রাজিব, স্মৃতির মোটেও ভালো লাগছেনা, একটা বাসায় বিয়ে হলো অথচ বরের কোন আত্মীয় স্বজন সেখানে উপস্থিত নেই এমন কী তার সেই মামাও নেই যে নাকী স্মৃতির বাবার বন্ধু। এমন কী হয় কখনো? খাটের উপরে নিরুপায় ভঙ্গিতে বসে পড়ে স্মৃতি, এতো বড় কটা ফ্লাট তবুও দম বন্ধ হবার উপক্রম, মোবাইল বেজে উঠলে রিসিভ করে স্মৃতি, -মা! -কেমন আছিস স্মৃতি? রিসিপশন কেমন হলো? স্মৃতি বলার মতো কোন ভাষা খুজে পাচ্ছেনা, দ্রুত বেগে রাজিব প্রবেশ করে মোবাইলটা নিয়ে নেয়, মা তাইনা? -হ্যা মা কেমন আছেন? সুফিয়া চৌধুরী মা ডাক শুনে খুব খুশি হন, -ভালো আছো বাবা? -হ্যা মা ভালো। -তোমার বাবা মা ভালো আছেনতো?কারো কোন সাড়াশব্দ নেই যে, মানুষের উপস্থিতি কী কম নাকী? মানে বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছেনা। রাজিব সাইমন চৌধুরীর কন্ঠ শুনতে পায়, তাই দ্রু কন্ঠে বলে, -মা আপনার পাশে কী বাবা আছেন? -হ্যা আছে নাও কথা বলো। সাইমন চৌধুরীর সাথে কথা বলার সময় বের হয়ে যায় রাজিব। স্মৃতি রাজিবের রুমটা চারেদিকে দেখে, আসবাব পত্রগুলো খুব দামী, কর্ণারে শোপিস দেখার সময় ওর দৃষ্টি আটকে যায়, শোপিস গুলোর সাথে একটা অস্পষ্ট আকৃতি খুব ভালোভাবে লেগে আছে যেন। সব শোপিসে সেই জিনিসটি আছেই। কী সেটা বিভিন্ন ধরণের শোপিস কিন্তু কোন একটা জায়গায়...... আরো একটা জিনিস দেখে চমকে ওঠে স্মৃতি, ওর হারিয়ে যাওয়া সেই পার্টসটি, পার্টসের পাশে, সেই জিনিসটি, স্মৃতি এবির বুঝতে পারে জিনিসটি কী আর শোপিসগুলোর সাথে কীসের আকৃতি, ক্রুশবিদ্ধ যিশু খৃষ্টের মুর্তি। কিছুদিন আগে একটা ইংলিশ সিনেমায় দেখে জেনেছে।দ্রুত কর্ণারের গ্লাস খোলে।অবাক ওঅস্পষ্ট কন্ঠ স্মৃতির, -এসব কী, আর আমার পার্টস এখানে কী করে? রাজিব ফিরে এসে স্মৃতির মোবাইল স্মৃতির কাছে দিয়ে, -স্মৃতি এখনও ফ্রেশ হওনা যে, প্লিজ আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে। -আপনার এসব শোপাস কে কিনেছে? -আমি, মা আরও অনেকে। -রুবিনা আপু ঠিকই বলেছে, খ্রিষ্টান পাদ্রীগুলো মুসলমানদের ইবাদাতটাও করতে দেবেনা, খেয়াল করেছেন শোপিসগুলোর সাথে কী ? এ ঘরে নামাজইতো হবেনা, এগুলো সরাতে হবে। রাজিব হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কথা শেষ করে স্মৃতি ওয়াশরূমে ঢোকে। চলবে.........

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)