সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"
৯ ও ১০ এভাবেই চলছিলো, সময়টা দ্রুত চলে যার আর জন্ম হয় বিভিন্ন ধরণের ঘটনার। জন্ম হয় মানুষের, মৃত্যু আসে আপন গতিতে। এই সময়ের ব্যাবধানেই নির্ধারিত হয় সফলতা ব্যার্থতার মাপকাঠি। স্মৃতির স্বপ্ন ছিলো, মেডিকেলে পড়ার, সেটাতে সফল হয়েছে, তবে ওর পরীক্ষাটা ভালো হয়নি কিন্তু টিকে গেছে অবাক হয় স্মৃতি। আনু নিশা ওরাও টিকেছে। স্মৃতি আর নাদিমের বন্ধুত্ব হয়েছে, বন্ধুত্ব করতে হয়েছে রাজিবের সাথেও সেটা স্মৃতির ইচ্ছাকৃত নয় বাবার চাপে পড়ে। নাদিমের বন্ধুত্ব স্মৃতির ভালো লাগে, ভালো লাগে রুবিনার যুক্তিযুক্ত কথা শুনতে, তবে আদর্শের পথ ধরতে গিয়ে এখনও বড্ড বিড়ম্বনায় পড়তে হয় স্মৃতির। এখনও রুবিনার মতো স্থীর সিদ্ধান্ত নেয়া স্মৃতির জন্য খুব কঠিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবার নির্দেশমতো আধুনিকতায় গা ভাসানোর ইচ্ছা না থাকলেও সেটার অভিনয় ঠিকই করে যেতে হয়, প্রতিনিয়ত। আজ বড্ড টেনশনে পড়েছে স্মৃতি ওর মাকে নিয়ে, চুপসে গেছেন তিনি, কথা বলেননা ।সারাক্ষণ কী একটা ভাবেন। স্মৃতি সেই হারিয়ে যাওয়া পার্টসটি আজও খুঁজে পায়নি। সুফিয়া চৌধুরী নিজের বেডরুমে বসে লিস্ট করছেন, স্মৃতি মায়ের পাশে গিয়ে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে, -কী করছো মা? এই সন্ধাবেলায় আলো না জ্বালিয়ে লিখছো যে, চোখে প্রশার পড়ছেতো। লাইট জ্বালায় স্মৃতি, -ও মা কথা বলছনা যে, -কী বলবো? -কী লিখছো? -এইতো শান্তার বই আর সবুজের ঔষধের লিষ্ট, তোর কী লাগবে বলতো মা, লিখে ফেলি। স্মৃতি কারেন্ট শক খাওয়ার মতো মাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়, মায়ের দিকে বোবা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে, -মা কী বলছো এসব? -হ্যারে বল তোর কী লাগবে, ওরা তোর বাবাকে এসব বলতে ভয় পায় তাই...... স্মৃতি অস্থির হয়ে যায়, কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা, মায়ের কথাবার্তা আর মুখমন্ডলে অস্বাভাবিকতা স্পষ্ট। স্মৃতি লিষ্ট কেড়ে নেয়, লিষ্টে লেখা, শান্তার বই, সবুজের ক্যান্সারের ঔষধ স্মৃতির অন্তরে মোচড় দেয়, মাকে জোরে ঝাকায়, -মা ওমা এসব কী বলছো তুমি? শান্তা আর সবুজ ভাইয়া তো...... -থামো স্মৃতি লিষ্টটা দাওতো আরো আছে, তুমিতো তোমার বাবার খুব প্রিয় মেয়ে, যা দরকার বাবার কাছে চেয়ে নিও। সবুজ শান্তা তো বাবাকে বলতে পারেনা, সেসব তো আমাকেই দেখতে হবে। স্মৃতি কেঁদে ফেলে, ফোন করে মায়ের অবস্থার কথা মাকে জানায়, কিন্তু বাবা আজ ফিরবেননা, দুদিন পরে ফিরবেন। ১০ কয়েক মাস পর, সুফিয়া চৌধুরী এখন মোটামুটি সুস্থ। সেই চিকিৎসার শুরু থেকেই তার জন্য বাসায় একজন নার্স ফিক্সড করে রাখা হয়েছিলো। নার্স এখন ছুটিতে। সাইমন চৌধুরী দুঘন্টা আগে ফিরেছেন, এখন সন্ধা ৭ টা বাজে। তিনি আজ প্রফুল্ল চিত্ত নিয়ে ফিরেছেন, বসে আছেন ইজি চেয়ারে, আর পাশে বেতের চেয়ারে বসা সুফিয়া চৌধুরী। সাইমন চৌধুরী তাকালেন স্ত্রীর দিকে, -এখন কেমন লাগছে? -ভালো। তোমাকে খুশি খুশি লাগছে কেন? হাসেন সাইমন চৌধুরী, একটু নিচু গলায়, -স্মৃতি কোথায়? -ওর রুমে, কেন? -আমি ওর বিয়ে ঠিক করেছি! অবাক হন সুফিয়া চৌধুরী, -কী? কবে ঠিক করেছো,আমাকে জানালেনা যে! -আরে তুমি অসুস্থ ছিলে, আর এখন তো জানালাম। -ছেলে কোথাকার কী করে? -ওসব পরে শুনলে হয়না? স্মৃতিকে খুব পছন্দ করে......... -কবে বিয়ে? -দুমাস পর। -স্মৃতির পছন্দ অপছন্দ খেয়াল করতে হবেনা? -স্মৃতি চেনেতো। -চিনলেই ভালো। সুফিয়া চৌধুরীর মন সায় দেয়না, উনি উঠে চলে যান, সাইমন চৌধুরী উঁচু গলায় স্মৃতিকে ডাকেন, -স্মৃতি এখানে এসোতো মা। দ্রুত বাবার কাছে এসে, -হ্যা বাবা বলো। -বসো বেতের চেয়ারটাতে বসে। -পড়াশুনা কেমন চলছে মা? -চলছে বাবা ভালো। বাবার দিকে তাকায় স্মৃতি, বাবার সাথে থাকার সুযোগ কম হলেও খুব ভালোভাবে জানে, -বাবা আমার মনে হয় তুমি আমাকে অন্য কিছু বলতে চাও। সাইমন চৌধুরী ইতস্তত কন্ঠে, -হ্যা......... -বলো বাবা। সমস্যা নেই। -এটা সমস্যার বিষয় নয় মতামতের বিষয়। মতামত? অবাক হয় স্মৃতি বাবা তার কাছে মতামত চাইছে, কী এমন বিষয়! -বলো বাবা কী ব্যাপারে? -তোমার বিয়ে ঠিক করেছি, স্মৃতি। খুব অবাক হলো, -বাবা কী বলছো তুমি? -ঠিকই বলছি, পড়াশুনা চালিয়ে যাবে স্বাভাবিক গতিতে, কিন্তু বিয়েটা করতে হবে। কেঁদে ফেলে স্মৃতি, সাইমন চৌধুরী অবাক কন্ঠে, -কাঁদার কী হলো এখন? আমি যা বলছি স্বাভাবিক ভাবে মেনে নাও না হলে ...... উঠে ছলে যান সাইমন চৌধুরী, স্মৃতি মাথা নিচু করে ওখানে বসেই কাঁদতে থাকে, পরে উঠে রুমে যায় কান্না চলছে, ওর মন কেন যানি এই বিয়েতে সায় দিচছেনা, যদিও ছেলে সম্পর্কে কিছুই শোনেনি, তবুও............ মোবাইল বাজলো কয়েকবার কিন্তু রিসিভ করলোনা। এবার দরোজায় টোকা দিলেন সুফিয়া চৌধুরী, -স্মৃতি খেয়ে নেবে এসো। স্মৃতির উঠার, খাওয়ার ইচ্ছা নাই একদমই, যেমন ছিলো তেমনই থাকলো। -স্মৃতি এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছো? স্মৃতি......... সাইমন চৌধুরী স্ত্রী র পাশে এসে দাড়ালেন, মলিন কন্ঠে, -থাক ওকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দাও। সুফিয়া চৌধুরী তাকালেন সাইমন চৌধুরীর দিকে, দৃষ্টিতে অভিযোগ, -যা পারো করো, এ যাবত তো চাপিয়েই দিয়ে এসেছো, কবে ছাড়বে চাপানো? যার ব্যাপারে বলছো তার মতামততো ভালোভাবে নেবে? আর তোমার সিদ্ধান্তগুলো কেমন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। খুব রেগে গেলেন সাইমন চৌধুরী, -যেমন আছো তেমন থাকো, আশ্রয় হারিওনা.........চলবে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)