সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"

ধারাবাহিক উপন্যাস "নিয়ন্ত্রিত পরিণতি"
৫ বাসায় যাওয়ার জন্য একা বের হয় স্মৃতি। মাকে ফোন করলেও হতো কিন্তু স্মৃতির ইচ্ছে করছেনা, মায়ের এই নিয়ে যাওয়া হঠাৎ এই মুহুর্ত থেকে খুবই বিরক্তিকর মনে হতে লাগলো। সমস্ত নিয়মের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করছে স্মৃতির। বাসায় ঢুকেই বাবার মুখোমুখি হয়, সাইমন চৌধুরীর শংকিত কন্ঠ, -এ কী তুমি এখন একা? স্মৃতি ইতস্তত করে, -না মানে আসলে আজ কোচিং ছিলনা, না ছিলনা নয়, স্যারের বাবা মারা যাওয়ায় কোচিং হয়নি। সাইমন চৌধুরী, -ফোন করনি......... স্মৃতি দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে যায়, ওর নিজেকে আড়াল করে রাখতে ইচ্ছে করছে এই মুহুর্ত থেকে। আনমনা স্মৃতি সন্ধার পরে চুপচাপ বসে আছে, আনুর কলের অপেক্ষায়। ঠিকই আনুর কল আসে আগের মতো বিরক্তির সামান্য ছাপও নেই স্মৃতির মধ্যে, রিসিভ করে স্মৃতি কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আনুর কথায় থেমে যায়, -জানো স্মৃতি রাজিব খুব রোমান্টিক, ও খুব ভালোবাসে আমাকে আজ নিজের গাড়ীতে করে মার্কেটে নিয়ে গিয়েছিলে, অনেক দামি একটা ড্রেস কিনে দিয়েছে, কসমেটিক্স গহনা স্মৃতি আমি খুব খুশি খুব খুব...... -তুমিতো তাহলে খুব লাকী আনু, কতোক্ষণ ছিলে? -এইতো এখু...ি ফ্রেশ হয়ে তোমাকে কল করলাম। -এখন বলো বিয়ে করছো কবে? -বিয়ে? সে বিষয়ে এখনও কথা হয়নি, বেশী অপেক্ষা করতে হবেনা স্মৃতি যদিও ওর মাষ্টার্স শেষ হয়নি তবুও... -ভালোতো, তবে আনু তোমার বাবা মা ওনাকে পছন্দ করবেন কী না সেটা লক্ষ্য রাখা উচিত। -আরে রাখো, ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি এটা নেই সেটা নেই, বিদঘুটে পরিস্থিতি আর ভালো লাগেনা এখন মুক্তির রাস্তা পেয়ে গেছি, এই পথ থেকে সরার কোন ইচ্ছে আমার নেই। স্মৃতি কারো আসার শব্দ পেয়ে, -রাখছি আনু কেউ আসছে পরে কথা বলবো। ভেতরে ঢুকলো একটা মেয়ে কন্ঠে তার স্নিগ্ধতা, -আসসালামু আলাইকুম। -ওয়ালাইকুম আস সালাম... -আমি রুবিনা বিনতে আব্দুল্লাহ দোতলায় এসেছি আপনার সাথে পরিচিত হতে এসেছি। -অ আপনি বসুন, আমি তাসনিয়া চৌধুরী স্মৃতি। পড়াশুনা কোন পর্যায়ে? -অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, গণিতে, আপনি? -মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করছি। স্মৃতি রুবিনার হাতে একটা বই দেখতে পেলো, বললো, -আপনার হাতে কী বই ওটা? -দেখবে? তুমি বললাম, তুমিতো ছোটই হবে। -ঠিক আছে, দেখি বইটা। সুফিয়া চৌধুরী ভেতরে ঢোকেন, হাতে নাস্তার ট্রে, -রুবিনা খাও মা। স্মৃতি অবাক কন্ঠে, -তুমি চেনো ওনাকে? -হ্যা চিনিতো কাল এসেছিলো তুমি ছিলেনা, খেয়ে নাও তোমরা। বেরিয়ে গেলেন সুফিয়া চৌধুরী। -কী ধরণের বই আমি আসলে পড়তে পারবনা, সামনেই এ্যাডমিশন টেষ্ট। -খুব ভালো বই, খিলাফতের দায়িত্বভিত্তিক। মানুষ কেন সৃষ্টি হয়েছে? তার দায়িত্ব কী? -অ নামাজ রোযা নিয়ে? রুবিনার অবাক হওয়ার প্রয়োজন ছিলো কিন্তু হয়না, সে দেখেছে খিলাফতের দায়িত্ব বলতে বেশিরভাগ মানুষ শুধু নামাজ রোযা বোঝে। -আমাকে কিছুক্ষণ সময় দেবে? স্মৃতি। -অবশ্যই। -আমি তোমাকে একটা ঘটনা বলছি, ইদানিং কিছু খ্রিষ্টান পাদ্রী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের উদ্দেশ্য কী জানো? -কী? -তারা মুসলমানদেরকে খ্রিষ্টান বানিয়ে ফেলছে, বিভিন্ন্ ধরণের লোভ দেখিয়ে, ট্র্যাপে ফেলে, মোটকথা যেকোন মূল্যে তারা এই কাজটা করছে। আর যারা ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝেনা তারা খ্রিষ্টান হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সবচেয়ে আগে ইসলামকে জানা জরুরী। স্মৃতি মনোযোগী হয়, হতবাক হয়ে যায়। রুবিনা ওর মনোযোগ দেখে মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায়, আর বলে, - এই বইটাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আছে যেমন মানুষকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? এর উত্তর হলো, ইবাদাত করার জন্য, এখন প্রশ্ণ আসতে হবে ইবাদাতটা কী? নামাজ রোজা হজ্জ যাকাত এই গুটিকয়েক ফরজ কাজগুলো করলেই ইবাদাতের হক আদায় হয়ে যাবে? না হবেনা, এই কাজগুলো নিজে করতে হয় অন্যকে করার জন্য আহবান করতে হয়,নামাজ তোমাকে পড়তে হবে অন্যকে পড়ার জন্য বলতে হবে তুমি ভেবে দেখ তুমি একা কতজনকে বলতে পারছো, খুব বেশী পারবেনা তাই সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর এই সব ফরজের বড় একটা ফরজ আছে জানো তুমি কী সেটা? স্মৃতি মৃদু কন্ঠে, -না আপু জানিনা। -সেটা হলো কুরআনের বিধানকে রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠত করা, সংবিধান হিসেবে, মানুষের গড়া আইন বিধান বাদ দিয়ে কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠত করা, তাহলেই মানুষ বাধ্য হবে অন্যায়কে বর্জন করতে, দেখবে সবাই নামাজ পড়ছে, কুরআন পড়ছে, সবসময় সত্য কথা বলছে,পর্দা করছে। রাসুল (স) বলেছেন সানা থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত, এই ধরো আমাদের দেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত একজন নারী একাকী পথ চলবে কিন্তু কোন পুরুষ তার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাবেনা...... বিস্মত কন্ঠ সমৃতির, -তাই কি কখনো হবে আপু? -হ্যা তাই, আসলে এক দিনে বলে বুঝানো কঠিন, তুমি কুরআন পড়তে পারো? -হ্যা আপু পারি, গ্রামের মক্তবে শিখেছিলাম। -অর্থসহ কুরআন পড়েছো কখনো? -না পাওয়া যায়? -হ্যা, আমার কাছে আছে, দিয়ে যাবো, প্রতিদিন একটা সময় কুরআন পড়লে, অর্থ ব্যাখ্যাসহ, এরপর হাদিস পড়বে, দেখবে কতো কিছু অজানা আমাদের, এভাবেই জানতে হবে, কুরআন সব বিজ্ঞানের মূল উৎস, এটাকে না জানলে দুনিয়াবী শিক্ষার কোন মূল্য নেই স্মৃতি, মৃত্যুর পর শুধু হায় হায় করতে হবে। এবার রুবিনা মুচকী হাসে, -ছোট খাটো একটা লেকচার দিয়ে ফললাম তাইনা? তোমার সময় নষ্ট করে... -না না, আমি তো এসবের কিছুই জানতামনা, তোমাকে বরং ধন্যবাদ দেয়া জরুরী। -না স্মৃতি ধন্যবাদের কিছু নেই, তুমি পড়ো, একটা সময় নির্দিষ্ট করে পড়তে থাকো জানতে পারবে, আমি তোমাকে আরো বই দেবো এখন আমি আসি। রুবিনা চলে গেলে, স্মৃতি কিছুক্ষণ ভাবে ওর কথাগুলো নিয়ে, একটু ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকলো যেন। বাবার ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে আসে, ডিনার করতে ডেকেছে। খাবার টেবিলে সাইমন চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠ, -ঐ মেয়ে কেন এসেছিলো? -বাবা খুব প্রয়োজনীয় কথা বললো জানোতো? মুখের খাবার শেষ করে স্মৃতি, -বাবা তুমি কী নামাজ পড়ো? মাকে পড়তে দেখেছি তোমাকেতো দেখিনা বাবা নামাজ পড়তে। সাইমন চৌধুরী বিমর্ষ হয়ে গেলেন কিন্তু কিছু বললেননা, স্মৃতিও আর কথা বাড়ালোনা বাবাকে পর্যবেক্ষন করলো কিছুক্ষণ। ডিনার শেষ করে রুমে গিয়ে পড়তে বসলো। চলবে......

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)