মা হিসেবে আমি ব্যর্থ
আমার ছেলে তার স্ত্রীকে খাওয়ার খোটা দেয়, বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে এর দোষ আমার, ছেলের না। এই দোষ আমার। আমাকে হাজার বার ছেলের বাবা বের হয়ে যেতে বলছে,বাসায় বসে বসে খাই এই খোটা দিয়েছে আমি একদিন দুইদিন একমাস,একবছর করে ২৫/৩০ বছর সয়ে গেছি শক্ত অবস্থানে যাইনি, ছেলের বাবা কে বুঝিয়ে দেই নাই আপনি আমাকে সযতনে আমার বাবা মায়ের কাছ থেকে চেয়ে এনেছেন থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে আপনার সব কিছুতে আমার অধিকার তাই আমি আমার হকে এখানে থাকি খাই আপনি বলার কে! এ কারনেই ছেলেও তাই শিখেছে।চড়ের বদলে চড় না দিয়েও বুঝানো যায়।চড় দেয়া হয়তো তার পরিবারের ঐতিহ্য কিন্তু আমার শিক্ষা তা নয়।
আমার মেয়ে মুখরা।সে স্বামীর আত্মীয়স্বজনদের দেখতে পারেনা সেটাও আমারই দোষ। আমিও এমনটাই করেছি।ফলশ্রুতিতে একটা মেয়েরও আমার সংসার হলোনা।সব সংসারের নামে সংসার সংসার খেলছে আর নিজেদের সন্তানগুলিকে তেমনই বানাচ্ছে।ছেলেগুলোকে ভেড়া,মেয়েগুলোকে হায়েনা।
আমার ছেলে অন্যের হক মেরে খায়।কারন আমিও আমার স্বামীকে দিয়ে তার ভাই বোনের হক মেরে দিয়েছি।হোক সেটা সম্পদের,,সম্পর্কের,আদর ভালোবাসার বা সময়ের।আমার ছেলেও তাই করে।
মা হিসেবে আমি ইন্সাফ করতে পারিনি সন্তানদের মধ্যে।আমি আমার সন্তানদের কাউকে বেশি ভালোবেসেছি কাউকে কম।এটা শুধু ততটুকুই আমার সন্তান দেখেছে যতটুকু দৃশ্যমান ছিলো ভিতরে আরও অনেক পক্ষপাতিত্ব ছিলো যা তারা দেখেনি।আমি তাদের সন্তানদের মধ্যেও ভেদ ভাও করেছি।আমাদের আদরের সন্তানের সন্তানদের বেশি দিয়েছি ভালোবেসেছি আর অন্যদের মুখে মুখে বলেছি ভালোবাসি।অতটুকুতেই তারা এতটা নিষ্ঠুর হয়েছে বাকিটা দেখলে কি হতো আল্লাহু আ'লাম।
আমার ছেলে বউ পেটায়, রাগী কিন্তু মনের দিক থেকে খুব ভালো।হ্যা আসলেই ভালো কারন একটু রাগ বেশী কিন্তু ওর মন টা ভালো। এই কথায় ততক্ষন পর্যন্ত আমি সায় দেই যতক্ষন পর্যন্ত সে আমার সাথে ভালো আমার অন্যান্য সন্তানদের সাথে ভালো।বউ জাহান্নামে যাক।
আমার ছেলের সংসারে আমি মিলমিশ করিয়ে দেই।ঝগড়া যেই বাধাক আমি ছেলের বউ কে ভালোবেসে আদর করে বলি জানোইতো ও একটু এমন থাক বাদ দাও।স্যরি বলো। কারন আমাকেও তাই করতে হতো।
আমি চাই আমার সন্তানরা ধার্মিক হোক।সেই ধার্মিক যা আমি শ্রেষ্ঠ মনে করি। তার বাইরে সব ভেজাল,ফিতনা।
আমার সন্তানের জন্য আমিই দায়ী।আমি যদি তার মনে মানবিকতা,সম্মান,ভালোবাসা, হকের জ্ঞান দিতে পারতাম তবে আজকে আমাকে তারে বলে বলে সহমর্মি বানাতে হতো না।আজকে সে নিজেই উম্মাহর এই হালতে কানতো।সে আজকে ঘরে অশান্তি করতো না।তার জীবনের মৌলিক চাহিদা ছাড়া বাদ বাকী সব কিছু থেমে থাকতো।ভালো খাবার, ছেলেমেয়ের আবদার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন নিয়ে হৈ হুল্লোড় করা, এগুলো সে আজকে নাজার আন্দাজ করতো।সে আজ জায়নামাজে বেশি সময় কাটাতো।মা হিসেবে আমিও লজ্জিত হতাম না।
আমার সন্তানের বদ ব্যাবহারের জন্য আমিই দায়ী।সে যখন তার বউকে বলে ডাইনী তখন আমি ভাবি কত শতবার এই কথা শুনেছি। আমার দুধের বাচ্চা গুলো তখন কচ্ছপের মতো মাথা শরীর নামক খোলোসের ভিতর লুকিয়ে বাচতে চাইতো। তখন পালটা বলিনি আপনাকেও কোনো মুস'আবের (রাদিআল্লাহু আনহার) মতো লাগেনা আয়না দেখেন তারপর বলেন ডাইনী পাওয়ার জন্য আপনি যথেস্ট যোগ্য।
যে সন্তানকে ঘরের মানুষের জন্য দরদী,ইন্সাফকারী বানাতে পারিনি কিভাবে আশা করি সে নিজের জৈবিক চাহিদা বাদ দিয়ে বৃহত্তর উম্মাহর জন্য কাজ করবে, উম্মাহর এই ভয়াবহ দুর্দিনে কষ্ট পাবে।
আমার সন্তানের জন্য আমিই দায়ী।আমাদের সব অন্যায় অবিচার মেনে নেয়া উচিত নয়। ইসলামী শারিয়াহ নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।ফিকহের জ্ঞান রাখা উচিত।হকের জ্ঞান রাখা উচিত।গালে চড় খেলে চোখ রাঙিয়ে দেখিয়ে দেওয়া উচিত আমার সাথে অন্যায় করা অতো সহজ না।আমার রব আমাকে যে হক, সম্মান দিয়েছেন তা কেড়ে
নেয়ার আপনি কে! সম্মান ততক্ষন পাবেন যতক্ষন দিবেন।নয়তো হাতীর পাচ পা দেখায় ছাড়বো।সন্তান ও বুঝবে মায়েরা কি করতে পারে।ভবিষ্যতে বউয়ের সাথে ঝামেলা করার আগে দশবার চিন্তা করবে।
ব্যাতিক্রম উদাহরন নয়।আমার নিজের দেখাই আছে খুব কাছের মানুষ যারা বউয়ের কাছে নিজের তান,মান ধান বিক্রি করে দিয়ে ভৃত্যের মতো আছে তাই ব্যাতিক্রম নিয়ে তর্ক করতে আসার মানে নাই।
২৮/১০/২৩
শনিবার
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)