পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আমরা সব সময়ই অন্যকে নাসীহা করতে বেশি পছন্দ করি।অন্যের দোষ পেলে কষ্ট পাবো কি, লুকিয়ে রাখবো কি বরং তাতে যে কি পরিমান পাশবিক আনন্দ পাই তা আর বলার অপেক্ষা রাখিনা।অনেক সময় দেখা যায় সেই দোষ বললে আমার চোখে যিনি দোষী তার তেড়ে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশী।তাই তখন বেছে নেই সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম। একা ঘরে যেটা হতো সেটা হয় ভরা বাজারে।অফলাইনে তো তাও হাতা হাতি গালাগালিতে কেউ ছাড়াতে আসে বা মিটমাট করার চেস্টা করে অনলাইনে শুরু হয় সহমত,ঠিক বলেছেন।আপু আপনি সত্যি কথা অনেক সাহসিকতার সাথে তুলে ধরেছেন।লিখে যান।এই টাইপের উতসাহ মুলক চাম/চামি।আমার এখন কিছু বুঝে আসে যে রাজ/নী/তিতে, বা বড় পদে থাকা অথবা সেলিব্রেটিদের আগে পিছে মানুষ নিজের আত্মসম্মানবোধ বেচে দিয়ে এমন তোষামোদি কিভাবে করে।আসলেতো তারা নিজেদের মেরুদণ্ড বেচে দেয় তার বদলে টাকা পয়সা পায়, কারো কাজের ক্ষেত্রে উন্নতি হয় বা কারো বাড়ে সামাজিক মর্যাদা।সেটাতো হওয়ারই কথা এতো বড় পাওয়ারফুল মানুষের চা/ম/চা বলে কথা।
তবে এখনো এটা বুঝে আসে না টাকা পয়সা, পাওয়ার বা উপকার কোনো কারন ছাড়াই অনলাইনের কথিত সেলিব্রেটিদের এতো তাবেদার কেনো!পুরানো সেলিব্রেটিদের কথা বাদই দিলাম চোখের সামনে যাদের সেলিব্রেটি হতে দেখলাম তাদেরও এমন অবস্থা ভক্ত আশেকানদের যে আমার বাসার সামনের বিশিষ্ট দেওয়ানবাগীর কথা মনে পড়ে। শুক্রবার এলে যার জন্য আরামবাগ, ফকিরাপুল,পল্টনে ঢুকা যায় না রাস্তার ফকির,মিস্কিন থেকে কোট টাই পড়া ভদ্রলোকও থাকতেন সেখানে।

সেলিব্রেটি হওয়ার সহজ পদ্ধতি আগেও লিখেছিলাম তারপরে অনেক সেলিব্রেটি ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে হারিয়েছিলাম।

অন্যের ইলম, আমলের খোজ রাখা।পর্দার খোজ রাখা।অন্যের বাচ্চারা স্কুল, কলেজে কেমন করে যায় আমার নিজের টা কিভাবে যায় তা উপস্থাপন করা।পারিবারিক সমস্যা গুলো ঘুরায় প্যাচায় ফেবুতে লেখা তার সাথে বিশাল জ্ঞানী মার্কা কুরআনের হাদীসের রেফারেন্স নিজের পক্ষে টেনে নেয়া।এইভাবে খেয়াল করে লিখলে ভালোই মার্কেট পাওয়া যায় কিন্তু পাব্লিক কে যে নিজের পরিবারের পলিটিক্স সম্বন্ধে জানানো হচ্ছে এটা বুঝে আসে না ক্যান আল্লাহ জানেন।

টক্সিক মানুষদের লেখা থেকে মানুষ নাসীহা পায় না,।উন্নতিও হয় না । বরং আরো বিষন্ন হয়।মনে করে সে এতো আগায় গেছে কিন্তু আমিই পারিনা।এই চিন্তা করে যতটুকু শুরু করে আবার ছেড়ে দিয়ে আরো পতিত হয়।

মানুষ নানা অযুহাতে নিজের কাজকে জাস্টিফাই করেন নিজের প্রফেশন কে যুক্তিসঙ্গত করেন কিন্তু আদতে উনার মতো একজন টিচার, একজন ডাক্তার বা সমাজকর্মী না থাকলেও এই সমাজের খুব বেশি সমস্যা হতো না।তারপরেও নিজের জায়গায় ঠিক আছে অন্যে করলেই তার দ্বীনদারিতায় ঘাপলা আছে বের করে ফেলি।কিন্তু আমরা এগুলা বুঝি না যে এখন আর মানুষ এগুলা খায় না।মানুষ পোস্ট পড়ে আর হাসে।যারা হাসাহাসি করে তাদের মধ্যেই কেউ আবার লাইকও দিয়ে আসে।পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য অথবা হতে পারে হয়তো সত্যিই ভালো লাগে তাই।আমার কাছে ইদানিং অনেকের লেখাই আসে না।এই রিয়েকশন না দেয়ার কারনে।

আমার এক বন্ধু বলেছিলো একবার উমরাহ তে যেয়ে তার নামেই তার কাফেলার কেউ বদনাম করছিলেন অন্যদের কাছে। কিন্তু যেহেতু সে অনেক মানুষের ভীড়ে অনেক পিছনে ছিলেন তাই তাকে তিনি দেখতে পাননি।আমার সেই বান্ধবীর কিছু কাজ তার পছন্দ হয়নি তাই।কিন্তু এই যে পছন্দ না হওয়াতে সেই মানুষ তার রিয়েকশন অন্যের কাছে জানালেন তাতে কি তিনি উম্মাহর কোনো উপকার করলেন! বরং গীবত হলো। যার নামে বলা হলো তিনি নিজেও কয়েকবার এরপর কা'বার সামনে বসছেন কষ্টে যদি অভিযোগ জানাতেন কি হতো!আমাদের যাদের হাজ্জ উমরাহর নাসীব হয়েছে তারা দেখেছি সবচেয়ে বেশি পর্দার খেলাপ তাওয়াফের সময়ই হয়ে যায়।বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের মানুষ থাকেন সেখানে কিন্তু আমাদের সো কল্ড মুয়াল্লিম রা বলতেই থাকেন ইহরাম অবস্থায় মুখ ঢাকা যাবেনা।কথাটা মুখ ঢাকা হবে না হবে নিকাব করা যাবে না।আমার মাদীনায় থাকা উস্তাযার সাথে যখন এব্যাপারে কথা বলি তখন তিনি ক্লিয়ার করে দেন এ ব্যাপারে।এবং একটা সহজ পদ্ধতি শিখিয়ে দেন যেখানে আমরা নিকাবটাই একটু সিস্টেম করে বেধে নিলে মাথার উপর দিয়ে নিকাবের কাপড়টা এনে চোখ মুখ ঢাকা যায় সহজে।যদিও আমি মাস্ক পড়েছিলাম।এবং মাদীনায় যাওয়ার আগে প্র‍্যাক্টিক্যালি দেখতে পারিনি তাই।যেখানে আইশা রা বলেছেন যে আমরা মুখ খোলা রাখতাম এবং যখনই অন্য কেউ আসতেন তো মাথার চাদরটা টেনে নিতাম।তখন এই সুযোগ টা ছিলো কারন নিশ্চয়ই তখন একসাথে এতো মানুষ ধাক্কাধাক্কি করে তাওয়াফ করতেন না।

আমাদের হাজ্জ উমরায় নিয়ম কানুনের সাথে আরেকটা বড় শিক্ষা দেয়া হয় যেটা তা হলো সবর।প্রচুর সবর করতে হবে।কারন এক বাসাতেই দুইজন মানুষের সাথে আমাদের বনিবনা হয়না সেখানে পৃথিবীর নানান দেশের নানান ধরনের মানুষের এক জায়গাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন থাকা কম কথা নয়।বিশেষ করে হোটেলের লিফট, লবি এগুলাতে অনেক সবর রাখতে হয়।তারপর ওয়াশরুম গুলোতে।এয়ারপোর্টের ওয়াশরুমে অনেক বেশি সবরের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়।আমাদের সহ উপমহাদেশের বেশিরভাগ মানুষই অনেক বৃদ্ধা অবস্থায় উমরাহতে হাজ্জে যান।এমনো হয়েছে তারা কোনোদিন ঢাকা আসেননি।হাই কমোড ইউজ করেন নি কিন্তু অই খানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে কবুল করেছেন।কাফেলাতে তাদের সাথেও ধৈর্যের সাথে মিশতে হয়। এবং আমার মতো খুতখুতা মানুষের জন্য তা অনেক বড় পরীক্ষা ছিলো।
এতো বড় মিলন মেলার অংশ হবো আর সবরের পরীক্ষা দিবোনা তাতো হবে না।হোটেল থেকে মাসজিদ পর্যন্ত হেটে যেতে বোরকা ধরে সামান্য আলগা করে রাখতে হতো দুইহাত দিয়ে কারন রাস্তা জুড়ে কফ থুতু।কারা করে নিশ্চয়ই স্থানীয়রা না।আমার রুমে নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতোনা তাই লবিতে আসতে হতো কথা বলতে।ও আল্লাহ সিগারেটের ধোয়া আর গন্ধে মাথা ধরে যেতো।যে দেশেরই হোক মানুষ তো মুসলিম আল্লাহ কবুলও করছেন তাই গেছেন কিন্তু অতটুকু বুঝ হয়নি তাই অই অবস্থাতেও অন্যকে কষ্ট দিচ্ছেন।আমি মাঝে মাঝে চাইতাম কিছু বলি আমার শ্বশুর বলতেন বাদ দাও।জিয়ারায় যাবো যখন তখন ফোনে কথা বইলো এখন কিছু বইলো না হাজী মানুষ। আলহামদুলিল্লাহ আমাকে আটকানোর মানুষ ছিলেন নয়তো আমিও হয়তো এমনি বলে ফেলতাম।এতো কিছুর মধ্যেও যখন হাটতে হাটতে হঠাত করে সামনে ঠান্ডা পানির বোতল ধরতেন, গায়ে পানি ছিটায় দিতেন বা ছাতা ধরতেন অপরিচিত মানুষ তার শুকরিয়া কতটুকু করি।আবার মুঠোভরতি খেজুর অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছেন সুবহান আল্লাহ। খেজুর কিনতে গেলেও দুনিয়ার খেজুর খাওয়ায় টেস্ট করতে দিতেন।আমরা না নিলেও আমার বিচ্ছুটা নিতো পকেট ভর্তি করে।

অন্যকে নাসীহা করার আগে অনেকবার চিন্তা করতে হবে।নিজের দাওয়াতের ভাষা নরম করতে হবে।মুসা আ কে বলা আল্লাহর আদেশ মনে করতে হবে যখন তাকে ফেরাউনের কাছে পাঠালেন তখনকার।এই ব্যাপারটা জীবন্ত কুরআন নামে একটা কোর্সে শিকড়ের সন্ধানে বইয়ের লেখিকা হামিদা আপু খুব ডিটেইলস পড়িয়েছিলেন।জ্বালাময়ী লেখা লেখাই যায়।অন্যকে অপমান করে ছোটো করে বলাই যায়। কিন্তু আমি কি আমার ভবিষ্যৎ দেখেছি।আমার যে দ্বীনদারিতা,ইলম,আমল নিয়ে বড়াই করছি তা কি আমাকে স্বত্ব ত্যাগ করে লিখে দেয়া হয়েছে যে আর কোনোদিনই আমার কাছ থেকে তা আর নেয়া হবে না।এবার আমি ইচ্ছামতো মানুষকে আক্রমন করি।যে এতো সুন্দর হালাল হারমের জ্ঞান দিতে পারেন তার মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে কতটা জ্ঞান দিছেন এই ব্যাপারে।যিনি আমাকে এতো সুন্দর করে ইসলামিক ল' বিশ্লেষণ করার তাওফিক দিয়েছেন, যিনি আমাকে লেখার হাত দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করে সেই জ্ঞান কে নমনীয় ভাবে দাওয়ার কাজে লাগানো উচিত। লিখে যদি মানুষ কে কষ্ট দেই কি লাভ এমন লিখে।না লিখলেই বা কি হবে!
এই জন্যই বলা হয় জ্ঞান সবাই অর্জন করতে পারে কিন্তু সেই জ্ঞান অনুযায়ী প্রজ্ঞা অবলম্বন করা কঠিন।অল্প জায়গায় অধিক জ্ঞান অর্জন করে ফেললে তখন অজায়গায় কুজায়গায় উপচে পড়ে, যা ভালো করতে যেয়ে সেই জায়গাকে নোংরা করে।

আমি যখন বেপর্দা ছিলাম বিয়ের পর পর নতুন বউয়ের কাল আমার, আমার শ্বাশুড়িমায়ের এক বড় আপা তালিমে আমাদের বাসায় আসছিলেন।মা তখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন এই বলে যে দেখেন আমার বেপর্দা বউ।এতো চেস্টা করেও বোরকা পড়াতে পারিনা।আমার কাছে মনে হতো মাথায় কাপড় দিয়ে রেখেছি,ফুল হাতা জামা পড়া বেপর্দা কোনদিক দিয়ে আমি! কিন্তু সেই সাধারণ একটা অখ্যাত স্কুলের অতি সাধারন কাপড়চোপড়ের প্রিন্সিপাল আন্টি তখন যা বলেছিলেন তা আমার জীবনে অনেক বড় দাগ কেটে গেলো।আন্টি বললেন আমাদের বৌমা ঠিকই আছে তুমিই ঠিকমতো দাওয়াহ দিতে পারো নাই।তুমি এমন ঠেস মেরে এক ঘর বাইরের মানুষের সামনে বললে হবে!আমার বৌমার আকল আছে শিক্ষা আছে তাকে বুঝায় বলো একা দেখবা সে শুনবে।আমার তো মনে হয় তোমারেই আবার শিখাতে হবে আমাকে দাওয়াহ দেয়া। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আন্টিকে ভালো রাখুন।আমার সামনে আমার শ্বাশুড়িকে কপট বকা দিয়ে উনি আমার মন জিতে নিলেন।তখন বয়সও কম ছিলো একটুতেই চোখ গড়ায় পানি পড়তো।সুবহান আল্লাহ সেদিনের পর আর আন্টিকে দেখে লুকায় থাকতাম না।আন্টির সাথে কথা বলতাম,গল্প করতাম।ও আচ্ছা এর আগে তালিম হলে বা এমন আন্টিরা এলে আমি আমার ঘরে দরজা আটকায় বসে থাকতাম।সামনে গেলেই নানান কথা শুনবো এই ভয়ে।

তাই আমাদের এখনো সেইসব বুজুর্গদের কাছে আসলে দাওয়াহ শিখতে হবে।কয়টা বই পড়ে,কিছু ভিডিও দেখে আর কয়েকটা ওয়েবিনার, কোর্স করেই যদি দাওয়াহর ভাষা শিখতে পারতাম তাহলে আর নাবী রাসুলদের এতো সময় নিয়ে ঘাত প্রতিঘাত,দুঃখ কষ্ট নির্যাতনের শিকার করে তাদের তৈরি করতেন না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা। আমার মাদীনার উস্তাযার কাছে যখন অনেক কথার মাঝে বলতাম যে উস্তাযা ফজরে যখন নামাজ পড়ি আর বাচ্চাদের ডাকতে ডাকতে অস্থির হই তখন এতো চিল্লাচিল্লি করে ফেলি।মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাই কেমন লাগে তখন বলেন।উনি বললেন কেনো চিতকার চেচামেচি করবেন ভুলে যান কেনো কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আপনিও অই দলে ছিলেন।সবর করেন।দু'আ,করেন। চেস্টা চালিয়ে যান ইনশাআল্লাহ আল্লাহ শুনবেন। মন শান্ত হলো।আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের মুখের ভাষা আর কলমের আচড় দিয়ে মানুষকে আক্রমন করা থেকে বিরত রাখুন।

Farjana  Hossain Rupa 
6/10/23
Dhaka


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩

লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

সরল স্বীকারোক্তি

সরল স্বীকারোক্তি

৬ ডিসেম্বার ২০২৩