অনুবাদ

সিরিজ-১ বছরটি হোক সফল আপনার সন্তানদের জন্য

সিরিজ-১ বছরটি হোক সফল আপনার সন্তানদের জন্য

বছরের শুরুতে কোন কাজটা আপনাকে গভীর ঘুম থেকে এক ধাক্কায় তুলে ফেলে? কোন দায়িত্বটা একই সাথে আপনাকে দিচ্ছে প্রচুর স্ট্রেস সেই সাথে স্বস্তি? প্রশ্নগুলো আসলে একজন মায়ের জন্য,যার এক বা একাধিক স্কুলগামী বাচ্চা আছে। মা হিসেবে বছরের শুরুতে আমরা বেশ স্বস্তি অনুভব করি যে বাচ্চার স্কুল শুরু হচ্ছে,প্রতিদিন স্কুলে যাবে এবং সেই সাথে দুঃশ্চিন্তা! সারা বছরের জন্য বাচ্চার স্কুলের একটা অলিখিত দায়িত্বের ভার যেনো চলে আসে মায়ের উপর। এবং এই সময়টা জুড়ে যেকোন মা ই বেশিরভাগ সময় নিজেকে একজন ‘সিংগেল মা’ ভাবতেই পারেন! 

একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি একসাথে দুটি কাজ করছেন,বাসায় এবং স্কুলের জন্য মেনটর হিসেবে আর অবশ্যই এই চাকুরি আপনার প্রতিদিনের জন্য। বাচ্চা একজন কি একাধিক,স্কুল শুরু কি মাঝামাঝি অথবা শেষ,প্রতিটি মা ই এরকম প্রেশার অনুভব করেন বছরের শুরু থেকে। তবে একটা ব্যাপার কি জানেন মা? আমরা চাইলেই,বাচ্চার এই স্কুল বছর গুলোকে দারুন ভাবে সাজাতে পারি। কোন রকমে বছর পার করা না,আমাদের আন্তরিকতা দিয়ে নিজেদের এবং বাচ্চার অবস্থানের উন্নতি করতে পারি একটু একটু করে সারা বছরে। এটাই তো আমরা চাই তাই না? 

একটা নির্দিষ্ট রুটিন আর কিছু লক্ষ্য স্থির করতে পারলেই আমাদের বাচ্চাদের সম্ভাবনা গুলো আরো বেড়ে যাবে। তো চলুন,এই কঠিন সময়ে আমরা একসাথে নিজেদের কষ্টগুলোকে ভাগ করে নিয়ে একটা দারুন স্কুল বছর তৈরী করি? 

১। কিছু প্রত্যাশা তৈরী করুন বাচ্চার জন্য 

আমরা প্রত্যাশা কে আমাদের জন্য সব সময় ভারী করে রাখি কিন্তু এবছর এটাকে সাথে নিয়ে চলার চেষ্টা করবো। বাচ্চাদের কে জানাবো,এই বছর ওদের নিয়ে আমার কি প্রত্যাশা,এতে করে তাদের সাথে আমার চিন্তার দুরত্ব কম হবে। আর প্রত্যাশা গুলোকে আমরা সাজাবো প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার সময়,বাচ্চার টিফিন তৈরির সময়,লাইব্রেরি থেকে কেনাকাটা করার সময় এবং অবশ্যই সব কাজের শেষে একটু সময় নিয়ে আলাদা করে। আমরা চিন্তা করতে পারি, এই বছর ক্লাস রুটিন কেমন হয়েছে? কিভাবে কোন টিচারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে? কোন সাবজেক্ট এর জন্য কেমন ফলাফল আশা করছি? বাচ্চাদের এবং নিজের ঘুমের সময়,ঘুম থেকে উঠার সময় কখন হবে? ঘুমানোর আগে কি কি কাজ করতে হবে,স্কুলে যাবার আগে কি কি করতে হবে? 

২। হোমওয়ার্ক করার জন্য সময় নির্দিষ্ট করুন 

যে কোন কাজের জন্য সময়কে নির্দিষ্ট করে নেয়া মানে কাজ অর্ধেক কমে যাওয়া। এজন্য বলা হয় রুটিন হচ্ছে আপনার বন্ধু। ঘরের কাজের জন্য কিংবা বাচ্চাদের কাজের জন্য করা রুটিন গুলো আপনার দায়িত্বকে ভাগ করে দিবে এবং ঘরে কাজের ছন্দে গতি আনবে। এবার চিন্তা করে বের করুন,আপনার বাচ্চা কখন কিভাবে হোমওয়ার্ক করতে পছন্দ করে? সে কি স্কুলে থাকা অবস্থাতেই হোমওয়ার্ক করে ফেলে? বাসায় এসে কিছু খেয়েই হোমওয়ার্ক করতে বসে নাকি অন্য

কোন সময়ে? নিজের হোমওয়ার্ক নিজেই করে নাকি সাথে আপনাকে বসতেই হয়? প্রতিদিনের হোমওয়ার্ক করতে বেশিরভাগ কতটুকু সময় লাগে? এই বিষয় গুলোকে মাথায় রেখে আপনি রুটিন সাজাবেন। জায়গা নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন,যে যে বিষয়ের হোমওয়ার্ক হয়ে যাবে সে কপিগুলো এক জায়গায় থাকবে। আপনি কাজের ফাঁকে সেটা দেখতে পারবেন,প্রয়োজনে সে রুটিনের একটা কপি আপনার কিচেনেও থাকবে। 

৩। বাচ্চাকে সাথে নিয়ে এ বছরের জন্য “স্কুল গোল” তৈরী করুন 

প্রতি বছরের জন্য স্কুল গোল কেন থাকাটা জরুরি এটা আমি শিখেছি, প্যাম টেবোর কাছ থেকে যিনি খেলোয়াড় টিম টেবোর মা ছিলেন। উনি তার সন্তানের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকেও সমান ভাবে ম্যানেজ করতে পারতেন কারণ প্রত্যেকটির জন্য আলাদা করে ইয়ারলি গোল তৈরী করতেন। এই গোল সেট এর কাজটি বাচ্চাকে নিয়ে আপনি করলে,সে নিজেও তার জন্য সচেতন হবে। এই বছর পড়াশোনার গোল কি হবে? সেখানে স্কুল+অন্য বিষয়ের পড়াশুনা কতটুকু থাকবে, অন্যান্য কি কি বিষয়ে সে কাজ করবে,কতটুকু সময় কোথায় দিবে এরকম সব কিছু নিয়েই একটু একটু করে বাচ্চার সাথে বসে প্ল্যান করে ফেলুন। আপনার যদি একাধিক সন্তান থাকে,তাহলে বড় বাচ্চাটির প্রতি বছর এরকম প্ল্যান বা পরিকল্পনা করতে দেখে ছোট বাচ্চাটিও অভ্যস্থ হবে। এবং এটাও আলোচনা করুন,কাংখিত গোল যদি আমাদের না অর্জন হয় সেক্ষেত্রেও কি করতে পারি?

৪। বাচ্চার জন্য কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দি,যা তার জন্য প্রয়োজন

একজন মা হিসেবে আমরা চাই কিছু গুণাবলি কিছু স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য আমাদের বাচ্চাদের মাঝে তৈরী হোক। যা আপনা আপনি হয় না এ জন্য সময় দিতে হয় এবং সবার আগে নিজেদের মাঝেও আত্নস্থ করতে হয়। অভিভাবক এবং সন্তানদের মাঝে কাংখিত বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির একটা গ্যাপ থাকে,সেখানে প্রত্যাশা বেশি সুযোগ কম। কিন্তু আমরা যদি বছরের শুরুতেই সন্তানদের সাথে বসে সেটা পরিকল্পনা করে ফেলি তাহলে কিন্তু অনেকটা ই সহজ হয়ে যায়। অভিভাবক হিসেবে আমরাও বাচ্চাদের সাথে সক্রিয় থাকতে পারবো,সারা বছরে এই বৈশিষ্ট্য গুলো বাচ্চাদের মাঝে কিভাবে তৈরী করা যায় তার জন্য উপায় ও বের করা যাবে,যদি পরিকল্পনা আগে থেকেই থাকে। 

৫। একদম নিখুঁত ভাবেই নয়,আগের চাইতে আরো ভালো কিছু হোক

একদম নিখুঁত ভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে বা হয়েছে কি, এটা না দেখে,আগের চাইতে এখন কতোটা অগ্রগতি হয়েছে সেটাকে বেশি গুরুত্ব দিন। বছর শেষে হয়তো পরিকল্পনা অনুযায়ী,আপনার বাচ্চা ক্লাসের সেরা একজন হয়নি তবে সেটা খুব গুরত্বপূর্ণ না ভেবে,সে কি কি বিষয়ে আগের চেয়ে ভালো করেছে সেটার জন্য তাকে অভিনন্দন জানান,নিজেকে অভিনন্দন জানান যে সন্তানের সাথে আপনার ও কি কি অগ্রগতি হয়েছে সে জন্য। দিন শেষে, একদম কানায় কানায় পূর্ণ প্রাপ্তির চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রেখে যদি বর্তমানের প্রাপ্তিকে খুশী মনে গ্রহন করতে পারেন,তাহলেই আপনি সফল। 

মূল লেখক- লিসা অ্যাপেলো 

ভাবানুবাদ- শুকনোপাতা

সূত্র- iMOM.com 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
তিনকোণা শত্রু

তিনকোণা শত্রু

Women Express

৪ এপ্রিল ২০২৩

So, if you wishing...

So, if you wishing...

Women Express

১৫ মার্চ ২০২৩

আবেশ

আবেশ

Women Express

৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩