অনুবাদ

মুসলিম নারীদের উত্তম রমাদান নির্দেশিকা

মুসলিম নারীদের উত্তম রমাদান নির্দেশিকা

সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলমানরা রমজানের কাউন্ট ডাউন শুরু করে দিয়েছেন অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে। পবিত্র এই মাসকে ঘিরে সবারই আশা কীভাবে সর্বোচ্চ সওয়াব অর্জন করা যায়।

অবশ্য কেবলমাত্র ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়!

আর সবার মত মুসলিম গৃহিণীদের অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে এই মাসকে ঘিরে। এই সময় তাদেরকে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়।

রমজানের বরকত অর্জন করতে হলে চাই ঠিকভাবে কাজ পরিচালনা, সময় ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবমুখী কর্ম পরিকল্পনা।

রমজানে মাসে মহিলাদের অনেক দায়িত্ব থাকে বিশেষ করে যারা বাইরে কাজ করেন। যাইহোক, তাদেরও সুযোগ রয়েছে এই মাসে সওয়াব অর্জনের। তাদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সবকিছু ঠিকঠাক বন্দোবস্ত করে হাজারো কাজের মাঝে ফজিলতপূর্ণ এই এক মাসের সওয়াবটুকু পাওয়া।

বিভিন্ন প্রকারের দান সদাকা মহিলাদের জন্য একটি জরুরী বিষয়। মিসকিনদের জন্য খাবার রান্না করে তাদের মাঝে বিলি করা। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অফিস কলিগদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে দরিদ্র অভাবী মানুষজনকে সাহায্য করা। এরকম আরো কল্যাণমূলক দাতব্য কাজে নিয়োজিত করা।

এই মাসে মহিলাদের একটি বিরাট দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের রমজানের গুরুত্ব বোঝানো। বাসায় মেহমান এলে তাদের দেখভাল করা বা মেহমানদারি করা। হালাল বিনোদন যেমন; বই পড়া, খেলাধুলা করা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

রমজানের ৩০টি দিন বাচ্চাদের জন্য রয়েছে অপূর্ব সুযোগ। এই সময়টিতে রোজা রেখেও তারা অন্যান্য কাজ (যেমন; সালাত, হাল্কা খেলাধুলা, হাল্কা শরীর চর্চা) কীভাবে করবে তা তাদেরকে শিখানো মায়েদের দায়িত্ব। নিজেরা করবে ও অন্যদেরও সাহায্য করবে।

সময় ব্যবস্থাপনা করা মানে এই নয় যে আপনি কেবল এই রমজানে সময়ানুযায়ী চলবেন। বরং অপ্রয়োজনীয় কাজ যা আপনার সময়ের অপচয় করে সেসবই বন্ধ করুন। সোজা কথায় সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা আমাদের শিখতে হবে।

প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু গুরুত্বের বিষয় রয়েছে। একেকজনের কর্মক্ষমতা একেকরকম। পারিপার্শ্বিকতাও ভিন্ন। আপনি চাইলে অবশ্য আমাদের এই টিপসগুলো একবার দেখে নিতে পারেন।

আল্লাহর কাছে দুয়া করুন তিনি যেন আপনার সময়ে বারাকাহ দান করেন। অত্যধিক আশা করা ঠিক না। নিজের প্রতি সুবিচার করুন। আমরা কেউই অতিমানবী নই। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যতটুকু কাজ আপনি করতে পারেন ততটুকুই করুন। বাস্তবসম্মত কর্ম পরিকল্পনা করুন।

কাজ সহজ করুন। প্রতিদিন ইফতারিতে অনেক আইটেম না করে পুষ্টিকর ও টাটকা মানসম্মত খাবার রাখু...। এতে আপনার সময় বাঁচবে।

 আপনার রান্নাঘরকে রমজান আসার আগেই তৈরি রাখু...। রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো আগেই প্রস্তুত রাখু...। যেমন; আদা রসুন পিঁয়াজ ইত্যাদি বিভিন্ন মশলা ফ্রিজে পেস্ট করে রেখে দিন। সব ধরনের মশলা রেডি থাকলে রান্নায় সময় কম লাগে। মাছ, মাংস কেটে ধুয়ে প্যাকেট করে ডিপে রাখু...। 
ঘরে তৈরি লেবুর শরবত বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।

 ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখু...। এইভাবে আপনি সহজেই কাজ করতে পারবেন এবং সময়ও বাঁচবে।

গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে প্রাধান্য দিন। যেই কাজগুলো আপনার কাছে বেশি গুরুত্ব বহন করে সেইগুলোকে অগ্রাধিকার দিন।

 অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি বাদ দিন এই মাসে। মা-বাবা, নিকট আত্মীয়, বৃদ্ধ বা অসুস্থ প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নিন। পারলে একটি রুটিন করুন। কাকে কাকে দেখতে যাবেন,রমজানে আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে ঠিক সময়ে সালাত আদায়, যিকির আজগার, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন নফল ইবাদত, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদতের প্রতি। হাসি-তামাশা পূর্ণ একত্র করে বড়সর অনুষ্ঠান এই মাসে অন্তত বাদ দেওয়া উচিৎ।

 যখন কাউকে দাওয়াত দিবেন একটু ভেবে চিন্তে দিবেন। আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশীকে ইফতারে দাওয়াত দেওয়া নিশ্চিন্তে অতি সওয়াবের কাজ। এটি আপনার ও মেহমানের মাঝে হৃদ্যতা বৃদ্ধি করে কোন সন্দেহ নেই। আপনি যদি সঠিক কর্ম পরিকল্পনা না করেন তবে কাজের চাপে আপনাকে নাস্তানাবুদ হতে হবে।

 এমন খাবার রান্না করুন যেটা সময় কম লাগে এবং কষ্ট কম অর্থাৎ সহজ রেসিপি। সম্ভব হলে ২/৩ টা আইটেম দাওয়াতের আগের দিন রান্না করে রাখু...। এতে ওই দিন আপনার ওপর চাপ কমবে।

নিকট কোন আত্মীয় বা বন্ধু এমন কাউকে ডেকে নিন যে কিনা আপনাকে সাহায্য করবে। একজন দুইজন সাহায্যকারী থাকলে খুব ভালো হয়। কাজের চাপ ভাগাভাগি করে নিলে আপনি সুস্থ থাকবেন। বাচ্চাদেরও কিছু কাজ দিন।

 ডিশ পার্টি একটি অভিনব পদ্ধতি। এতে আপনার আত্মীয় পরিজন বা বন্ধুরা একেকজন এক একটি আইটেম রান্না করে আনবে। আপনিও করলেন ২/৩ টি। এতে আপনার একার উপর চাপ তেমন পড়বে না। সওয়াবও আশা করা যায় সবাই পাবেন ইনশাআল্লাহ।

 দিনে কিছুসময় ঘুমিয়ে নিন। রাতে ইবাদত বন্দেগী এই মাসে খুব তাৎপর্যপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ ও চাঙা করে।

 ইফতার ও সাহরীতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও টাটকা ফলমুল আপনাকে দিবে সারাদিন কাজ করার শক্তি। রাতে আপনার উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার উদ্দীপনা।

ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত তেল, চর্বি, মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এই খাবারগুলো আপনাকে শক্তি দেওয়ার বদলে অলস করে দিবে। দেখা যাবে রোজা রেখে সারাদিন এসিডিটি বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

নিজের সময়গুলো সুষ্ঠুভাবে মেনেজ করার পাশাপাশি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সাহায্য করুন। এতে তারাও দিনে রাতে ইবাদত বন্দেগীতে অংশগ্রহণ পারবে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে।

অনেকেই মনে করেন যে রমজানে বুঝি শরীর চর্চার প্রয়োজন নেই। এটি ঠিক নয়। হাল্কা এক্সসারসাইজ আপনাকে প্রাণবন্ত করে তুলবে।

 কর্মজীবী মহিলারা এই মাসে বাড়তি কাজের চাপে থাকেন। একদিকে সংসার অন্যদিকে অফিস সামলাতে হয় তাদের। বাইরে বের হওয়ার জন্য বেশি পরিশ্রম হয়। তবে আশার কথা হল তারা জানে কীভাবে সব কিছু সামলাতে হয়।

সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতার সাথে কাজ করলে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারের আশা রাখতে পারেন। সুতরাং যেই কাজই করুন সততার সাথে করুন।

 আপনার সারাদিন কাজ করার যেই সময় তাকে এমনভাবে ভাগ করুন যাতে আপনি পর্যাপ্ত ঘুম ও অন্যান্য কাজ অনায়াসে করতে পারেন। পরিবারকেও কিছু সময় দিন।

 অফিসে বা বাসায় অথবা যানবাহনে যে কোথাও হোক না কেন যিকির করুন। ফালতু গালগল্প, গসিপ এড়িয়ে ইস্তিগফার করুন এই মাসে বেশি বেশি। সালাত আদায় করুন আওয়াল ওয়াক্তে। এক পাতা হলেও কোরআন পড়ুন ৩০ টি দিন।

 অফিসে মুসলিম কলিগদের সাথে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করুন। এতে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি পায়।

 পরিবারের সকল সদস্যকে ঘরের কাজে নিয়োজিত করুন। কাজ ভাগ করে দিন। বাচ্চাদেরও কাজ শিখান। এই মাসে স্কুল বন্ধ থাকে।

পরিশেষে বলবো যে, আপনার মাথায় এটা রাখতে হবে সময় ব্যবস্থাপনা অনেক কাজ করার কোন যাদুর কাঠি বা যন্ত্র নয়। বরং এটি এমন একটি কর্মপদ্ধতি যা আপনাকে দিবে সময় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। কোন কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোনটি আগে করা দরকার তা গুছিয়ে নিন। এই কর্মপদ্ধতি শেষ পর্যন্ত আপনাকে করে তুলবে কর্মক্ষম ও আপনার ভিতরে কর্মক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করবে। 

মূল লেখিকা- রাশা দেওয়িদার। 

অনুবাদঃ সারাহ ইসলাম

সম্পাদনাঃ ISB TEAM

সোর্সঃ https://aboutislam.net/

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)