সাহিত্য

অন্তরালে অন্ধকার.....

অন্তরালে অন্ধকার.....
পর্ব- ৫ (শেষ পর্ব) মাশকুরা ওর পড়ার টেবিলে, খাতায় লিখার নামে আঁকিবুকি আঁকছে। রাত আটটা বাজে, কোন মনোযোগ নেই পড়াশুনায়। বাড়ির সবার গতিবিধির দিকে পুরো নজর। মিসেস নূরজাহান মেয়ের পড়াশুনায় অমনোযোগ দেখে একটু চিন্তিত হয়েছেন, একটু পরে মাশকুরার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলেন, মৃদু মমতামাখা কন্ঠে, -কোন সমস্যা মাশকুরা? মাশকুরা প্রায় চমকে ওঠে, -না নাতো, এই এমনি। -কিছু লুকাচ্ছিস? -না মা কিছু লুকাচ্ছিনা, আমি তোমার কাছে কিছু লুকিয়েছি কখনো? দীর্ঘশ্বাস  ফেলেন নুরজাহান, -আচ্ছা তাহলে পড়াশুনা করো আমি আসছি। মাশকুরা ব্যাথাতুর কন্ঠে, -মা! পিছু ফিরে তাকান মিসেস নুরজাহান, -হুম! -বাবা কি করছে? আমাকে একটু বাবার ওখানে নিয়ে যাবে, বাবার কাছে বসে গল্প করতে ইচ্ছে করছে, আমার একা একা ভয় করেতো বাবা যদি ধমক দিয়ে দেয়! কেঁদে ফেলে মাশকুরা, মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। অজানা আশংকায় কেঁপে ওঠে মিসেস নুরজাহানের মনটা, মেয়েকে বুঝতে না দিয়ে, -চলো, নিয়ে যা......... কথা শেষ করতে পারেননা, কলিং বেল বেজে ওঠে, সাথে পুলিশের সাবধান বানী, -মেওর বাড়ির কেউ পালানোর চেষ্টা করবেননা, চারেদিকে পুলিশ বেষ্টনী, পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করা হবে। মিসেসে নুরজাহান চমকে ওঠেন, বুঝতে পারেননা হঠাৎ পুলিশ কেন, দরোজা খুলেছেন স্বয়ং মেওর, বাড়ির সব সদস্য এসে বাড়ির মুল গেটে জমা হলো। মাশকুরা দেখতে পেলো সাদিয়া আর নাবিলা ওদের বাড়ির লোকজনের সাথে পুলিশের পেছনে দাড়িয়ে আছে, মেওর কথা বলছেন, -কী ব্যাপার আপনারা? আর কী বলছেন, এতো পুলিশ কেন? -আপনাদের বাড়িতে জরিনা নামে একজনকে আপনার ছেলে ধ... করেছে আর আপনারা  আটকে রেখেছেন। চমকে ওঠেন মেওর সাহেব আর মুনির। -কোন প্রমাণ আছে? -প্রমাণ ছাড়া মেওরের বাড়িতে তামাশা করতে আসিনি, আপনি আমাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিন। মুনির ভীত কন্ঠে, -না আপনারা এভাবে ভেতরে...... -আমাদের সময় নষ্ট করবেননা, পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢোকে, পিছু পিছু নাবিলা আর সাদিয়া, আরো আশেপাশের লোকজনও এসেছে, উৎসূক দৃষ্টি তাদের, মাশকুরা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে একপাশে দাড়িয়ে আছে, আর কাঁদছে, মিসেস নুরজাহান নির্বাক। নাবিলা পুলিশকে লক্ষ্য করে, -স্যার, এইতো এই তালা দেয়া রুমটাতে, আর এই যে চাবিটা। চাবি নিয়ে দরোজা খোলে, পুলিশ, লাইট জ্বালায়, দেখতে পায় জরিণা এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে, ভয়ে কাঁপছে সে, সবটায় শুনেছে, পুলিশের কথার, এবার সে সাদিয়াকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে, সাদিয়া ওর কংকালসার শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে, -ভয় নেই জরিনা, দেখো পুলিশ এসেছে না তোমার আর ভয় নেই, নাবিলাও পাশে এসে দাড়ায়, -আমি তোমাকে বলেছিলামনা যে তোমাকে এখান থেকে বের করবো? ভয় পেওনা...... পুলিশের কর্কশ কন্ঠ, -মেওর সাহেব আর মুনিরকে হাতকড়া লাগিয়ে গাড়িতে উঠাও। নাবিলাকে লক্ষ্য করে, -থ্যাংক ইউ ম্যাম, আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য। আমরা আসছি, -জ্বি, ওয়েলকাম। পুলিশ চলে গেলে জরিণার মুখে হাসি ফুটে ওঠে, উৎসুক জনতার একরাশ ঘৃণা মেওর বাড়ির চারেদিকে ছড়াতে থাকে, অনেক কথা বলে চলেছে সবাই, মাশকুরা আর মিসেস নুরজাহান চুপচাপ, নির্বাক। সাদিয়া, নাবিলার পুরো মুখমন্ডল জুড়ে বিজয়ের হাসি, আর ওরা দুজনই জরিনার প্রাণ খোলা হাসি দেখছে। আর মনে মনে বলছে, এভাবেই যেন সব জরিনার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)