সাহিত্য

অন্তরালে অন্ধকার.....

অন্তরালে অন্ধকার.....
পর্ব-৩ ও ৪ গভীর রাত। চারেদিকে শুনশান নিরবতা। নাবিলা, সাদিয়া যে রুমে শুয়েছে সেখানে ওরা ছাড়াও আরো তিনজন ঘুমাচ্ছে। নাবিলা উঠে বসলো। যেভাবেই হোক নাবিলা এখন মেওর বাড়ীর বন্ধ ঘরের জানালায় যাবে, সাদিয়ার অনুমানটা সঠিক কিনা দেখার জন্য। ওড়না মাথার উঠিয়ে দিলো, গলায় ক্যামেরাটা ঝুলিয়ে নিলো, হালকা করে মুখটাও ঢাকার চেষ্টা করলো, কেউ যেন একবার দেখেই চিনে না ফেলে এই জন্য।  খুবই সন্তর্পনে পা ফেলে  মেইন দরোজা পর্যন্ত গেলো, কিন্তু এই দরোজায় বেশ বড়োসড়ো একটা তালা ঝুলছে একটু হতাশ হলো নাবিলা, কিন্তু পরক্ষণেই দরোজার পাশে লোহার সাথে একটা চাবি ঝুলানো দেখে খুশি হলো। অনেক ঝক্কি ঝামেলা শেষে মেওর বাড়ি বন্ধ জানালার পাশে, কিন্তু নাবিলা ভয় পাচ্ছে কারণ এরকম পরিস্থিতে সে কখনই পড়েনি। জানালাতে টোকা দিলো, কোন সাড়া নেই কারো, অনেকটা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও, নাবিলা একটা করে টোকা দিচ্ছে আর বারবার চারপাশে দেখছে কেউ দেখে ফেললো কীনা । না কারো কোন সাড়া নেই। নিরুপায় হয়ে একটু আড়াল হয়ে দাড়ালো ভাবলো সাদিয়ার ধারণা সত্য নয়। ও যতটুকু জেনেছে তাতে মেওর বাড়ীর কাজের মেয়েকে ধ...ের পর আটকে রাখা হয়েছে একটা ঘরে, কিন্তু কোন ঘরে তা জানা নেই। আর এই ধ...ের কাজটি করেছে মেওরের বড় বউয়ের একমাত্র ছেলে মুনির। মেয়েটিকে আটকে রাখার কারণ হলো সে যেন কখনো কাউকে কিছু বলতে না পারে। নাবিলা ভেবেছে ওকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে, ওর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরী করবে, আর মুনিরের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কাজের মেয়েটার বয়স নাকী ১৪ বছর। সবটাই নাবিলার শোনা কথা, সাদিয়ার কাছে শুনেছে। নাবিলা ফেরার জন্য পা বাড়ায়, ঠিক তখনই একটা ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে পায়, -কে? সক্রিয় হয়ে ওঠে নাবিলার পুরো অবয়ব। একটু নিচু স্বরে, -আমি, আমি সাদিয়াকে চেন? ওর বোন। -কী চান? -তু...তুমি একটু জানালাটা  খোল আমি দু মিনিট কথা বলেই চলে যাবো। জানালা খুলে গেলো, বাইরের রাস্তার আলো মেয়েটির মুখমন্ডলে। জীর্ণ, শীর্ণ, মলিন মুখখানা, তাতে জখমের দাগ স্পষ্ট। নাবিলা ছবি তোলার চেষ্টা করলো, আলোর পরিমান কম হওয়ায় ছবিটি ঝকঝকে না হলেও অস্পষ্ট নয়। প্রশ্ন করার আগে মোবাইলের অডিও রেকর্ডার অন করলো, -নাম কী তোমার? -জরিনা। -রাতে খেয়েছো? -না -তোমাকে আটকে রেখেছে কেন? -আমি কাউরে যেন কিছু কইতে না পারি। -কী বিষয়ে?............ কথা বলেনা জরিনা, নাবিলা বললো, -তোমার ভয় নেই আমি কাউকে কিছু বলবনা, আর আ... মি  তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবো, তোমার বাবা মার সাথে দেখা করাবো...... ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে জরিনা, আর ভেতরে অন্য কোন ঘরের দরোজা খোলার আওয়াজ পেয়ে, জরিনা খুব দ্রুত জানালা বন্ধ করে দিলো। নাবিলা আর ওখানে দাড়ানো সঙ্গত মনে করলোনা, দ্রুত পা ফেলে নানা বাড়ির পথ ধরলো। ৪. নাবিলা ল্যাপটপে জরিনার ছবি আপলোড করে, হালকা বিবরণসহ প্রতিবেদন লিখতে শুরু করলো । কিন্তু সাদিয়া প্রবেশ করর কারণে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেললো, এখন জানালে ওকে না নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইবে, কথায় কথা বাড়বে। সাদিয়া নাবিলার পাশে বসলো, -নাবিলা কথা আছে, জরুরী। -কী কথা? -দাদীকে জরিনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, চাচী আর আম্মুও ছিলো। আগ্রহী হয় নাবিলা, -কী বললো? -চাচী বললো জরিনা নাকি কোন এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে। অনেক খুঁজেছেন মেওর চাচা সহ সবাই। পায়নি। নাবিলা মনোযোগী কনঠে, -ওনাদের কথায় তোমার কী মনে হলো যে ওনারা এই নাটক বিশ্বাস করেছেন? -হ্যা, বিশ্বাস মানে কী, যেন “এক আত্মা দো দীল” চাচীতো জরিনাকে এতো এতো বকা দিলো, সাথে দাদীও। -তোমাকে খবরটা দিয়েছিলো কে যেন? -মুনিরের সৎ বোন মাশকুরা। -আচ্ছা ও কী কোন হেল্প করতে পারবে? -চলো ওদের বাসায় গিয়ে কথা বলি। -না তুমি ওকে এখানে ডাকো। -আসবে? -কেন আসবেনা? তুমি না ওর হবু ভাবী। নাবিলার ঠোঁট জুড়ে দুষ্টুমীর হাসি। সাদিয়া অনুরোধের সুরে, -সত্যটা কিন্তু সকলের সামনে আনতেই হবে, নাবিলা। চরিত্রহীন ঐ লোকের সাথে...... মাশকুরা প্রবেশ করলো, সাদিয়া খুশি হয়ে, -দেখো ও অনেকদিন বাঁচবে, এসো বসো মাশকুরা এতোক্ষন তোমার কথায় বলছিলাম। মাশকুরা হাসি মুখে, -শুনলাম কাল তোমাদের সাথে আম্মুর দেখা হয়েছিলো, আমার সাথে দেখা না করে চলে এসেছো, তাই আমি আসলাম। -ভালো করেছো। নাবিলা বললো। সাদিয়া বললো আমি নাস্তা নিয়ে আসি নাবিলা তুমি ওর সাথে কথা বলো। নাবিলা কোনরকম ভূমিকা না করে, -জরিনার রুমটা কখন কখন খোলা হয়? -শুধু খাওয়ার সময়। -প্রত্যেক বেলাতেই কী খাবার দেয়া হয়? -আমি  সঠিক জানিনা। -তুমি কখনো খাবার দিয়েছো? -না আমাকে কখনো যেতে দেয়না, আর খাবার কে কখন দেয় আসলে সেটাও আমি জানিনা। -মাশকুরা তুমি কী বুঝতে পারছো, তোমার পুরো পরিবার একটা জঘণ্য ক্রাইমে জড়িয়ে গেছে? চুপ হয়ে মাথা নিচু করে মাশকুরা, ওর দৃষ্টি ছলেছলো, ধরা গলায়, -নাবিলা আপু আমি সেটা বুঝি, আম্মু যা করছে শুধুমাত্র সংসারের অশান্তি কমাতে আর আমার মুখ চেয়ে। সাদিয়া খাবারের সরঞ্জাম হাতে নিয়ে ঢোকে। মাশকুরা বলতে থাকে, -এই ঘটনার আগে এমন কোন দিন নেই  যেদিন আব্বু  আম্মুকে মারেনি, আর ভাইয়াও একটু এদিক সেদিক হলেই আম্মুকে টর্চার করতো, জরিনার সাথে এরকম হওয়ার পর আম্মু যখন পুলিশকে জানাতে চেয়েছিলো, তখন ভাইয়া...... মাশকুরা এবার একটু জোরেই কেঁদে ফেলে, সাদিয়া ওর মাথায় হাত রেখে শান্তনা দেয়, নাবিলা নির্বাক, মাশকুরাকে স্বাভাবিক হওয়ার সময় দেয়। একটু পরে নাবিলা মলিন কন্ঠে, -মাশকুরা তুমি আমাদেরকে সবটা বলো, আমি কথা দিচ্ছি তোমর আম্মুকে কোন সমস্যায় ফেলবোনা...... মাশকুরা বিব্রত কন্ঠে, -ভাইয়া খুবই বাজে একটা কথা বলেছিলো, যে জেল যদি খাটতেই হয় তাহলে মাশকুরাকেও জরিনার মতো করে ধরা দেবো। জিহবায় কামড় দেয় নাবিলা, সাদিয়াও। একটু চুপ থাকে তিনজনই। নাবিলা বললো, -তুমি আমাদেরকে সাহায্য করবে? -কী রকম? নাবিলা কিছু বলার আগে সাদিয়া বললো, -আমরা ছাদে চলে যাই কেউ এসে পড়বে। নাবিলা সম্মতি জানালো। ছাদের এক কোণে তিন জনই দাড়ালো, নাবিলা বললো, -এটা এমন একটা প্লান, যেটাতে ডু অর ডাই টাইপের ফলাফল। তোমাকে যে কাজটা করতে হবে তা হলো জরিনাকে ঐ ঘর থেকে বের করার জন্য ঐ তালার চাবিটির নকল কপি বানাতে হবে। -আমি কপি করেছি গতকালই, সাদিয়া আপু অনেকদিন আগে বলে রেখেছিলো। -ও তাহলে তো এক ধাপ এগিয়ে,  বাড়িতে  যেন তোমার বাবা আর ভাইয়া থাকে। আমরা যখন যাবো তার পনেরো মিনিট আগে তোমাকে ফোন করে জেনে নেবো তারা আছে কী না ঠিক আছে? ভীত কন্ঠ মাশকুরার, -হুম! -ভয় পেওনা তুমি, চাবিটা আমাকে দাও, চাবি ঠিক আছে তো? -হ্যা আপু। চলবে....... (আগামী পর্বে সমাপ্য)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)