পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )

গল্প হলেও সত্যি (পর্ব-২)

গল্প হলেও সত্যি (পর্ব-২)

মোট ১২ দিনের সফর শেষে, সকলে মিলে ঢাকায় ফিরলাম। বিয়ের অনুষ্ঠান, গ্রামের বাড়ির সফর, সব মিলিয়ে শেষ হয়ে এলো আমার সেমিস্টার ব্রেক। সামনের সপ্তাহ থেকে নতুন সেমিস্টার শুরু। তিন ভাই এক বোন আর এই বিধবা মায়ের একান্নবর্তী সংসারে নিজেকে খাপ খওয়াতে, চোখের পলকে কেটে গেলো একটি সপ্তাহ। 

হেমা আপুর শাশুড়ি নাকি বিয়ের পরদিনই গাল ফুলিয়েছিলেন, ঘরে দুটো কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও তিনি আশা করেছিলেন বউ সাত সকালে উঠে সোফা আর ঘর ঝাড়বে আর পাকা গিন্নির মতো খু...্তি ধরবে। নতুন বিয়ে হলে রাতের ঘুমে যে বেয়াড়া নিয়মে চলে সেটা কে না জানে, জানলেও বা কি? বুঝে কয়জন? প্রতিদিন সকালে উঠবো ভেবেও চোখ খুলে দেখি ১০টা বাজে, আমি ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বের হই, শাশুড়ি মা কি অগ্নিমূর্তি হয়ে আছেন, ঠিক হেমা আপুর শাশুড়ির মতো? কিন্তু না, প্রতিদিন সকালে আমার শাশুড়ি মা, আমার মনে গাঁথা ‘শাশুড়ি চিত্রের’ ছবি ছিঁড়তেন, এক গাল হাসি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে, এতো লজ্জা লাগতো!!! 

খুব কষ্টে আড়মোড়া ভেঙে একদিন বেশ সকালে উঠলাম, চা বানালাম, ঘরের টুকটাক গোছগাছ করলাম, এর মধ্যে কয়'শ বার হাই তুলেছি কোন হিসাব নেই, মা মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘কি বউমা রাইতে ঘুম হয় নাই? তুমি যাও তো ঘুমাও’। আমার এই ঘুমের স্বাধীনতা দেওয়ায়, মাকেও কিন্তু কম পোহাতে হয় নি। আমার ননদের কটমটে চেহারা আর আড়াল থেকে মায়ের সাথে তর্কগুলো শুনেই বুঝতাম, আমাকে এই পরিবারে আপন করে নেয়ার দায়িত্বটা শক্ত হাতে উনি সামলাচ্ছেন। আর আমার মাথায় প্রতিদিন এক গাদা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ভিড় করতো, এমনটাও, তবে হয়? বাবা-মা, চেনা পরিবেশ, সব ফেলে বাঙালি মেয়েরা যখন একদিনের নোটিশে বাড়ির বউ হয়ে যায়, আপন করে নেওয়ার সমস্ত দায়িত্ব তো তার উপরেই বর্তায়, এটাই তো সমাজের নিয়ম। তবে কি এই সমাজে প্রথা ভাঙ্গারও মানুষ আছে? তাও আবার স্বয়ং শাশুড়ি রূপে?

ক্লাস শুরু হলো, সেই সাথে ধীরে ধীরে বাড়ল পড়ার চাপ। একদিন দ্রুত পায়ে মা আমার রুমে আসলেন, এসেই বললেন, ‘বউমা, পাশের বাড়ির ভাবীরা আইসা তোমার সাথে গল্প জুড়াইবো, আমি বাইরে থেক্কা তোমার রুমের দরজা আটকায় দিলাম, কমু তুমি ভার্সিটি গেসে, তুমি রুমে বইসা পড়’। মানুষটাকে যতই দেখতাম, ততই অবাক হতাম, আর খুব মন খারাপ হোতো সামিয়া আপু আর হেমা আপুর কথা ভেবে। সামিয়া আপু টেনেটুনে তাও অনার্সটা শেষ করতে পেরেছিলো, আর হেমা আপু তাও পারেনি। ‘এখনকার মেয়েরা বেশি শিক্ষিত হয়ে আর সংসার করতে চায় না, তাই কম শিক্ষিত বউই ভাল’, ‘এখনকার বউরা লেখাপড়া শিখবে, চাকরী করবে, আমাদের দেখবে কে? আমাদের যাইতে হবে বৃদ্ধাশ্রমে’, ‘যারা সাংসারিক, তারা পড়াশোনা কইরাও সাংসারিক, আমার ছেলে এক গ্লাস পানি নিয়াও খাইতে পারে না, জানো না? তুমি কেমনে আশা করো তুমি সারাদিন ক্লাস কইরা আসবা আর ও নিজের শার্টটা নিজে ভাজ কইরা রাখবে?’ এই কথা গুলো শুনে শুনে সামিয়া আপু, হেমা আপু অঝরে চোখের পানি ঝরিয়েছে, প্রতিবাদ করেনি, পাছে সংসারে না অশান্তি হয়। সেই সংসারকে মুখ বন্ধ করে সোয়ে নিয়েছে, মেনে নিয়েছে। আচ্ছা, এই

সমাজে আরও কতো শতসহস্র সামিয়া আর হেমা আছে? যাদের চোখের পানির দামে দিব্যি হেসে খেলে বেঁচে রয়েছে সভ্যতায় মোড়ান সংসার।

চলবে……

প্রথম পর্বঃ https://bit.ly/30g6I90

তৃতীয় পর্বঃ https://bit.ly/33KzC3h


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
আমার ডিভাইস ভাবনা

আমার ডিভাইস ভাবনা

২২ জানুয়ারী ২০২৪

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

২৮ ডিসেম্বার ২০২৩

আমার বাচ্চা খায় না!!????

আমার বাচ্চা খায় না!!????

২৪ ডিসেম্বার ২০২৩

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

আক্রমনাত্মক দাওয়াহ!!!

১৩ ডিসেম্বার ২০২৩