অনির্ধারিত

একটি গৃহকর্মীহীন হোম কুয়ারেন্টিন উপাখ্যান

একটি গৃহকর্মীহীন হোম কুয়ারেন্টিন উপাখ্যান

গৃহকর্মীহীন হোম কুয়ারেন্টিন সম্ভবত নতুন করে প্রমাণ করল, খু...্তি, মপ, ঝাড়ু, কমড পরিষ্কার করার ব্রাশ ধরলে এই সমাজের পুরুষদের পরুষত্ব খসে যায় না। আমাদের ঠিক ইমিডিয়েট আগের প্রজন্মেও, পুরুষ মানুষের ঘরের কাজে হাত দেওয়াটা যেন ছিলো, একটা ঘোরতর অপরাধ আর লজ্জার তো বটেই। শুধু পুরুষের কথাই বা আসছে কেন? ‘পুরুষ ঘরের কাজে হাত দিবে’, এই প্রসঙ্গে বিগত প্রজন্মের অধিক সংখ্যক নারী এখন পর্যন্ত বিপুল পরিমাণে এলার্জিতে ভুগেন। তাই নতুন বউ-এর সামনে চোখ পাকিয়ে ছেলেকে সাবধান করে দিতে ভুলেন না, ‘খবরদার রান্নাঘরে যাবি না,’।


সময়টা সাময়িক, সবকিছু স্বাভাবিক হলে আবার সকলে ফিরে যাবে যার যার কাজের গণ্ডীতে, পুরুষকে হয়তো তখন এমন ভাবে আর গৃহকর্মে পাওয়া যাবে না অথবা সুযোগ থাকবে না বা আর প্রয়োজনও হবে না। সেটা না হয় না-ই হল!!! তবুও তো পুরুষ এবার প্রমাণ করলো, পুরুষের আত্মসম্মান আর পরুষত্ব এতো ঠুনকো না যে, গৃহকর্মের গণ্ডিতে পা মাড়ালেই তাঁদের অস্তিত্ব খসে পরে যায়। গৃহকর্মে সাহায্য, ‘ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি’ বলেই করুক, আর ‘ঠ্যালার নাম বাবাজী’ বলেই করুক, অথবা স্ত্রী-র প্রতি ভালোবাসা বা দায়িত্ববোধ থেকেই করুক না কেন, দিন শেষে কিন্তু তারাও মোবাইলে আলাপ করে, ‘আমার দায়িত্ব দুইটা, থালা বাটি মাজা আর ঘর মুছা’…… ‘আর আমারটা ফিক্স নাই, যখন যেই কাজের হুকুম আসে সেইটাই’……… ফোনআলাপের প্রথম অংশটা শুধু একটু পালটে গেছে, ‘জানেন ভাবী’ থেকে ‘জানেন ভাই’ হয়ে গেছে!!!!


আবার অনেকের প্রশ্নও থাকে, ‘ঘরের পুরুষটা যদি এতো কাজ করে, তাহলে বউ কি করে???’। বউ বসে থাকে না…… এই সমাজে বউ-রা বসে থাকতে পারে না…… ঘরের পুরুষটার হাতে একটি কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হয়তো তিনি ঘাম ঝরাচ্ছেন অন্য কোন যুদ্ধ জয়ে।
এতো কিছুর পরেও নারী কি অবসর পায়? না কি নারীরও যে অবসর প্রয়োজন এটা সমাজের কাছে এখনও বোধগম্য হয়নি? না কি নারী তুমি নিজেই জানো না তোমারও এক টুকরো অবসর প্রয়োজন?......
এক টুকরো অবসর……
‘ইজি চেয়ারে পা এলিয়ে চোখের পাতা এক করার……’
‘গরম চা ঠাণ্ডা হওয়ার আগে আয়েশি ঢোকে চা শেষ করার……’
‘টান টান উত্তেজনায় চরম থ্রিলার মুভিটা এক বসায় শেষ করার……’
‘কোন এক বইয়ের ভাজে ডুবে যাওয়ার……’
বছরের তিনশ পঁয়ষট্টি দিনের, বিনা সপ্তাহান্তর এই চাকরীর মাঝে, রিমোট হাতে সিরিয়াল অথবা ড্রেসিং টেবিলের শত প্রসাধনীর মাঝের সময়টা সমাজের চোখে বোধগম্য হলেও, নারীর জন্য স্তূপীকৃত বইয়ের অথবা সাদা কাগজে খস খস করে লিখে যাওয়ার ‘টেবিল টাইম’-টা বোধ করি এখনও সমাজের কাছে বোধগম্য হয় নি ( যদিও আমার জীবনসংগী আমার টেবিল টাইমের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নশীল এবং সতর্ক)। তবে সেখানে বোধয় নারীরও অনেকটা দায় আছে……

স্বামীগণ, যতটুকু অথবা যতখানিই করুন, হাতে হাত রাখা মানুষটা-কে করুণা করে নয় ভালোবেসে করুন। এক রাশ গোলাপ না দিয়ে এক রাশ অবসর দিয়েই দেখু... না…… এতে সম্মান বাড়বে বৈ কমবে না…...


আর হ্যাঁ নারীগন, তোমার অবসরটা যেন হয় সৃষ্টির, তোমার অবসরের দিগন্ত যেন হাতের রিমোট আর শত প্রসাধনীর ড্রেসিং টেবিলকে ছাপিয়ে হয়ে ওঠে আরও অনেক অনেক প্রশস্ত......


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)