বিবিধ

স্মৃতির পাতা থেকে...

স্মৃতির পাতা থেকে...

২০১৫ সাল মার্চ মাসের ২৪ তারিখের প্রথম প্রহর....
চারদিকে ফজরের আযান হচ্ছিলো এমন সময় মাথার কাছে র ফোনটা বেজে উঠলো , বুকটা ধক করে উঠলো আমি লাফ দিয়ে বিছায় উঠে বসলাম; নানুর কিছু হয়ে যায়নি তো! ধুরুধুরু বুকে ফোন হাতে নিয়ে চেয়ে দেখি এক শুভাকাঙ্ক্ষী নামাযের জন্য জাগিয়ে দিতে আমাকে ফোন দিয়েছে। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিক.....
ওইদিন আউয়্যাল ওয়াক্তে হয়ত আমি ফজর (অসুস্ততার জন্য) পড়তে পারতাম না, ওর উছিলায় পড়তে পেরেছি এরজন্য তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

বছরের এই সময়টাতে ঋতুর পরিবর্তনের কারণে কম বেশ সবাই সর্দি-কাশি আর জ্বরে ভোগে। তখন আমিও এমন ভুক্তভোগী ছিলাম এবং খুবই সিরিয়াসভাবে। এতো বেশি কাশি ছিলো যে কাশতে কাশতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হতো। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হতো।

তারপর উঠে নামায, কোরআন পড়ে, স্টুডেন্টদের আরবী পড়িয়ে সকালের আনুষঙ্গিক কাজ সারলাম কিন্তু আমার কেন জানি ভালো লাগছিলো না! এটা কি শারীরিক অসুস্ততার জন্য নাকি অন্য কারণে জানিনা! সাড়ে ১১টায় বাংলা পড়াতে স্টুডেন্টের বাসায় গেলাম। (তখন আমি চারটা টিউশনি করি।) ওখান থেকে বাসায় এসে নামায পড়ে বসে আছি এবং অন্য একটা টিউশনিতে যাবো মনেমনে সে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় আম্মুর ফোন,
:তোর নানু জানি আজ কেমন করছে। তুই কি বাড়ি আসবি?
-আঁখি তো পরীক্ষা দিতে গেছে ও আসুক আর আমি টিউশনিটা করে আসি। তারপর দেখি!
কিন্তু আম্মু আমাকে খুলে বলেনি নানুর একেবারেই শেষ অবস্থা।
আমি টিউশনিতে চলে আসলাম। এবার বড় মামা একবার আম্মু একবার ফোন দিচ্ছে।
আম্মুঃ তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।
বড় মামাঃ তুই আসতে সাদিয়া, নাহিদ, আঁখিকে নিয়ে আসিস।
যা বুৃঝার আমি বুঝে গেছি!

কিভাবে বাসায় এসেছি আমি জানিনা। কোনরকম প্রয়োজনীয় কাজ সেরে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি আর ভাবছি আঁখিকেও নিয়ে যাই কিন্তু ও কত নাম্বার ফ্লোরে পরীক্ষা দিচ্ছে আমার জানা নেই! ওর ম্যামের নাম্বারে ফোন ঢুকছেনা। আমি উদ্ভ্রান্তের মত রাস্তায় দাড়িঁয়ে আছি একপা সামনে দিচ্ছি দু'পা পিছাচ্ছি এতবড় ভবনের কোথায় খুঁজবো! খুঁজে বের করতেও তো অনেক সময়ের দরকার! কিন্তু সেই সময় ধরে ওকে খোঁজা আমার পক্ষে তো সম্ভব না। আল্লাহ্ তায়ালার অনেক বেশি করুণাময়। আমি রাস্তায় দাড়িঁয়ে সাতপাঁচ ভাবছি আর পথের দিকে তাকিয়ে ওর অপেক্ষা করছি দেখলাম ও আসছে । আজ আগে আগেই পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েছে। ওকে কোনরকম টেনে রিক্সায় তুলে ছুটলাম মামাতো বোন সাদিয়ার মাদ্রাসায়। ওখান থেকে বাসস্ট্যান্ড পার হতেই দেখলাম ছোট মামাতো ভাইটা রাস্তার পাশে মসজিদটার সামনে দাড়িঁয়ে আছে। ওর হুজুর ওকে এখানে দিয়ে গেছে। ওদের মসজিদের সামনে দাড়ঁ করিয়ে ছুটলাম সি এন জি ঠিক করতে । সি এন জি ঠিক করে ওদের নিয়ে রওয়ানা হলাম।
প্রতিক্ষার পথ অনেক দীর্ঘ হয় সেদিনই বুঝতে পারলাম। চালককে বারবার তাগিদ দিচ্ছি দ্রুত চালানোর জন্য। কিন্তু পথ যেন আর ফুরাতে চায়না! মাঝপথে আসার পর আবার বড় মামার ফোন; কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে শুনলাম আমার অপেক্ষা না করে যে চলে যাওয়ার সে চলে গেছে তার সবচেয়ে আপন ঠিকানায়।

এই একটি ক্ষেত্রে কখনই সময়ের অপচয় হয়না। যার যতটুকু নির্ধারিত সময় সে ততটুকুই থাকতে পারে। এই দিকে তাঁকিয়ে অন্তত আমাদের সময়ের মূল্য দেওয়া উচিত!

শেষ দেখা আমি দেখিনি। আমার ভাগ্যটাই কেমন যেনো! নানাভাইকেও শেষ দেখা দেখিনি আমি। জেঠা-দুই জেঠির কাউকেই দেখিনি। আর দাদা-দাদুকে তো চোখেই দেখিনি! কিন্তু আমার দু'হাত দিয়ে পরম মমতায় শেষবারের মত সাজিয়ে তো দিতে পেরেছি নানুকে, এতেই সান্ত্বনা!

শুধু দো'আ করি....আমার এই প্রিয় মানুষটাকে আল্লাহ বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করুক। তার কবরকে বেহেস্তের গালিচা বানিয়ে দিক, বেহেস্তের শীতলতা দান করুক।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ