সাহিত্য

অন্তরালে অন্ধকার.....

অন্তরালে অন্ধকার.....
পর্ব-১ ও ২ -এই ঘরে কোন মানুষ আছে বলেতো মনে হয়না সাদিয়া । -আরে নাহ! এই ঘরেই আছে। -তুমি এতো শিওর হয়ে বলছো কী করে? -হুম, তুমি খেয়াল করোনি সব ঘরে লাইট জ্বলছে, শুধুমাত্র এটা ছাড়া, আর আমাদেরকে যা বলা হয়েছে তাতে এই ঘরের দরোজাটাতে নিশ্চয়ই তালা দেয়া আছে। -হয়তো তাই, চলো বাড়ির ভেতরে...... থেমে যায় নাবিলা, সাদিয়া ওকে চিমটি কেটে দিয়েছে, তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে জোরেই লেগেছে। হাত সরিয়ে নেয় নাবিলা, -ইশ! কী হলো? ব্যাথা লাগলো তো! ফিসফিসিয়ে সাদিয়া, -আন্টি আসছেন, চুপ থাকো। সাদিয়ার মুখমন্ডল জুড়ে প্রশস্ত হাসির ফুয়ারা, -আন্টি কেমন আছেন? পৌরসভা মেওরের স্ত্রী ওদের এই আন্টি, দাড়িয়ে যান, -ওহ সাদিয়া? চিনতেই পারিনি, বাইরে দাড়িয়ে কেন এসো ভেতরে এসো। -না আন্টি, আজ যাবনা, অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছিতো একটু ঘুরছিলাম, ঢাকা আর মফস্বলের আবহাওয়ার কতো পার্থক্য। আপনি ভেতরে যান, আপনাকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। -না কী আর ক্লান্ত! প্রতিদিনইতো এমন... কবে এসেছো? -গতকাল, আব্বু আম্মুও এসেছেন, আপনি আসবেন আমাদের বাড়িতে। -ও কে তো চিনলামনা সাদিয়া, কে ও? কথাটা বলে নাবিলার দিকে তাকালেন। - ও, আন্টি ওতো নাবিলা আমার ফুফাতো বোন, মরিয়ম ফুফুর মেয়ে। -তাই! ওমা কতো বড় হয়ে গেছো, খুব ছোটবেলায় তোমাকে দেখেছিলাম, কী করছো মা? -পড়াশুনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা। ভ্রু কুঁচকে যায় ওদের আন্টির, -অ। কিসে পড়, তুমিও কী ঢাকায় থাকো? -না চিটাগাং, আমি ইভিনিং শিফটে এম বি এ করছি। - আচ্ছা আমি তাহলে যাই তোমরা সময় করে দুজনই এসো কিন্তু। দ্রুত বেগে ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। সাদিয়া নাবিলার দিকে তাকায়, -মনে পড়ে আন্টির কথা? নুরজাহান আন্টি। বিয়ে করে যখন নতুন এ বাড়িতে আসেন তখন ওনাকে আমরা বউ আন্টি বলতাম। -হুম, মনে পড়ে উনি খুব সাজগোজ করতেন আমি মনে হয় তখন ফাইভে পড়তাম আর তুমি ফোরে তাইনা? আর ওনার একজন সৎ ছেলে আছে তাইনা, মুনির? ও তখন এইটে পড়তো। হেসে দেয় সাদিয়া, -তোমার দেখি সব মনে আছে। নাবিলাও হাসে, খুব ছোটবেলার কথা কী যে মনে থাকবেনা? আরও মনে আছে আন্টি অনেক সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু এখন সে সৌন্দর্যের এতোটুকুও নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিয়া, -ঠিকই বলেছো, আসলে বিয়ের পর থেকে ওনাকে শুধু কষ্টই করতে দেখেছি......... আচ্ছা চলো যাই এখানে এতোক্ষণ দাড়ানো ঠিক হবেনা। -চলো তবে সবটা কিন্তু ঠিক ঠিক জানা দরকার। ২. সাদিয়ার দাদু বাড়ী গমগম করছে। অনেকদিন পর সবাই একসাথে হয়েছে। ওর চাচা, চাচী, ফুফু কাজিনরা। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া আর মজা করা নিয়ে ব্যাস্ত। সাদিয়া নাবিলাও এতোক্ষণ সবার সাথেই ছিলো, কিন্তু ওদের মনে একটা চিন্তা সবসময় আছেই তাই  আনন্দিত ওরা হতে পারছেনা। খুব ঘনিষ্ঠ ও গোপনীয় সূত্রে ওরা একটা বিভৎস ঘটনা শুনেছে,    কিন্তু সে ব্যাপারে কেউ কিছুই বলছেনা। নাবিলার আসার কথা ছিলোনা এবার, কারন ওর পরীক্ষা ছিলো, কিন্তু সাদিয়া প্রায় জোর করে আসতে বলেছিলো । সাদিয়া ওর দাদীর কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে, দাদীর কাছে সহজে কেউ আসেনা, সাদিয়া মৃদু স্বরে, -দাদী তুমি যে একা একা থাকো তোমার খারাপ লাগেনা? -না......! অভ্যাস হয়ে গেছে, আর বসে বসে বই পড়ি তাতেই সময় কেটে যায়। -দাদী!...... -হুম...... -কীরে কথা বলছিসনা যে। -না দাদী কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা। -কিসের ব্যাপারে? -দাদী, আমাদের মেওর আংকেলের ছেলে আছেনা, মনে আছে? ঐযে মুনির, ও কী ভালো? দাদীর দৃষ্টিতে কৌতুহলের ছায়া, সাদিয়ার থুতনী ধরে মুখটা নিজের মুখের সামনে এনে, -কীরে কী ব্যাপার হ্যা? সাদিয়ার মুখমন্ডলে আলাদা কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে দাদী অনুৎসাহিত হন। তবুও বলেন, -খুব ভালো ছেলেরে, খুব ভালো, তোর বাবাতো ওদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন ............ নাবিলাকে প্রবেশ করতে দেখে থেমে যান, আবারো বলেন, -দেখ, সাদিয়া আমাদের সাংবাদিকের এতোক্ষণে নানীর কথা মনে পড়েছে। নাবিলা হেসে দিয়ে, -না নানী তোমার কথা কী আমি ভূলতে পারি?  আসলে একটা রিপোর্ট লিখে মেইল করে পাঠিয়ে দিলাম, তাই দেরী হলো। সাদিয়ার উদ্বিগ্ন কন্ঠ, -দাদী কী যেন বলছিলে? বাবা কিসের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন? নাবিলা ওর নানীর বাম পাশে বসলো। দাদী অবাক কন্ঠে, -ও মা তুই জানিসনা? মুনিরের সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব। নাবিলা আর সাদিয়া দুজন দুজনের দিকে তাকায়, দুজনের ছোখ ছানাবড়া, সাদিয়াতো কেঁদেই ফেলে। নাবিলার কন্ঠে শান্তনার সুর, -ভেঙ্গে পড়োনা সাদিয়া, ইনফরমেশন যদি সঠিক হয় আমরা সফল হবোই। -দাদী নাবিলার কথার আসল অর্থ বুঝতে পারেননা, নিজের মতো করে বুঝে নিয়ে, -হ্যা হ্যা কান্নার কী আছে, সবাইকেই শশুর বাড়ী যেতে হয়, এটাই নিয়ম। আমিতো অনেক ছোটবেলা এ বাড়িতে ঢুকেছিলাম, তোর দাদা অনেক ব্যাস্ত থাকতো, সেই যে ঢুকেছি......... এখন বের হওয়ার সময় এসে গেছে, আর ভালো লাগেনা, এখন শেষ বিদায়টা হয়ে গেলেই যেন শান্তি! দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দাদী, বলতে থাকেন, -আজ স্বপ্ন দেখেছি তোর দাদা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। সাদিয়া দাদীর এসব শুনে আরো বেশী কাঁদতে থাকে।।চলবে.........

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)