ফিল্ম ও মিডিয়া

যখন কিছুই লুকানোর থাকেনা......!!!!!!!!!!!!

যখন কিছুই লুকানোর থাকেনা......!!!!!!!!!!!!
  আকর্ষণীয়  পোশাক পড়া মেয়েটা  ৮ নাম্বার বাসে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে উঠলো । বাসে কিলবিল করা অসংখ্য মানুষের মাঝে একটু যায়গা করে দাঁড়ালো।তার ঠিক  পিছনে দাড়িয়ে আছে ২ টা yoo yoo টাইপের কলেজ বয়। ইচ্ছা করে করে গায়ে হেলে পড়া, নানারকম উল্টা পাল্টা কথায় কান গরম হচ্ছে মেয়েটার কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। কারন সরাসরি তো তাকে কিছু বলছেনা! একটা পর্যায়ে ২ বন্ধুর মধ্যে একজন মেয়েটার কাঁধে টোকা দিলো- এই যে আপু শুনছেন? মেয়েটা তাকাল, কি বলতে চাও ? - মানে , আমার বন্ধু না আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি! আপনি একটা চরম মাল! মেয়েটা হকচকিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল- তোমরা কি জানো, আমার ছোট ভাই তোমাদের সমান? জুতা দিয়ে ২ গালে ৪ টা বারি খেতে চাও? বেয়াদব কোথাকার!   ভাবছেন, আমি কি নিয়ে লিখা শুরু করলাম হটাত! আসলে হটাত নয়, অনেকদিন ধরেই ব্যাপারটা নিয়ে লিখবো বলে ভাবছিলাম। আপনারা নিশ্চয়ই ক্লিয়ার শ্যাম্পুর ঐ বিজ্ঞাপন টা দেখেছেন! বরফি খ্যাত অভিনেত্রী ইলিয়েনা ডি ক্রুজের সেই বিজ্ঞাপনটি! যেখানে ডি ক্রুজ বলছিলেন- আমি জানি আপনি আমাকে ফলো করছেন , আমার শর্ট , মেকাপ......আর ইম্প্রেশন জমানোর মতো সব কিছু! ইভেন dandruf. এরপর আরও অনেক কথা বলে বিজ্ঞাপনের শেষ মেসেজ টা এরকম- যখন কিছুই লুকানোর থাকেনা তখন অনেক কিছুই থাকে দুনিয়াকে দেখাবার! এখানে ২ টা প্রশ্ন আসে- ১- নারীর মধ্যে কি কিছুই লুকানোর নেই? ২- দুনিয়াকে নিজের সব কিছু দেখানোর কি প্রয়োজন? একটা বিজ্ঞাপন একটা সমাজের অনেক বাস্তব অবস্থার প্রতিচ্ছবি। ক্লিয়ার ব্যবসা করছে বাংলাদেশে,vat সহ পণ্য কিনছে , কিনবে এদেশের জনগন। তাহলে কেন ভিনদেশী মডেল দিয়ে আমাদের প্রথা বিরুদ্ধ কথা দিয়ে সাজানো এই বিজ্ঞাপনের এমন ঢালাও প্রচারণা? তাও, এটার শেষ মেসেজ গুলো কি ভয়াবহ! কিছুই নাকি লুকানোর নেই, তাই সব কিছুই দুনিয়াকে দেখাতে হবে।   প্রাচীনকাল থেকেই একটা প্রবাদ সমাজে চলমান- লজ্জাই নারীর ভূষণ। লজ্জা বলতে নিজেকে পাবলিক প্রোপার্টির মতন প্রদর্শন থেকে দূরে রাখাকেই আমি বুঝি।আসলে আপনি যখন কিছুই না লুকানোর সংকল্প করেন, তাতে আপনার আল্টিমেট লাভ টা কি হয়? আপনার লাভ একটাই সেটা হোল প্রশংসা কুড়াতে পারেন সকলের। যদিও এই প্রশংসা আপনার নয়, আপনার সৃষ্টি কর্তার প্রাপ্য। আর বাকিদের কি লাভ জানেন? এই যে ব্যবসা সফল বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনাকে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, সেই পণ্য আপনি ই কিনছেন , হাজার টাকার মেকআপ গায়ে মেখে ওনাদের ই আবার বিনোদন দিচ্ছেন এতে আপনার কোন লাভ কি আসলে দেখতে পান কোথাও?   কিছুদিন আগে ফেবুতে এক পেইজ দেখলাম, যার অ্যাডমিনের কাজ একটাই। বাসে রিক্সায় মাঠে ঘাটে সব যায়গায় ই যতো সুন্দর নারী আছে, তাদের শরীরের  বিশেষ কিছু পার্টসের ছবি তোলা। হুম! এটা রাস্তা ঘাটে চলা ফেরা করা সাধারণ মহিলাদের চিত্র, বাংলাদেশের ই বিভিন্ন এলাকার।একবার ভাবুন তো, আপনার অঙ্গ প্রতঙ্গ কেউ মোবাইলে বা কম্পিউটারে জুম করে দেখছে আর মজা লুটছে কেমন লাগে তখন?   জনাব হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দেখলে চুইঙ্গামের মতো চাবাতে ইচ্ছে করে! একজন সুশীল, শিক্ষিত শিক্ষকের যদি এহেন বাজে ধারনা আর খায়েশ করে মেয়েদের দেখলে, একটা রিক্সাওয়ালা কিংবা মেথরের তাহলে কি ইচ্ছা করে একবার ভাবুন তো দেখি!আর আপনার সাজ সজ্জা নিত্যদিন কারা দেখছে বিনা পয়সায়? রিকশাওয়ালা, মেথর, মুচি, দোকানদার সহ সমাজের সবাই।   নারী যদি পর্দায় ঢুকে যায়, ক্ষতি হয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের। কারন, তখন তারা মানুষকে দেখানোর জন্য  গাদা গাদা লিপস্টিক নেল পোলিশ ফেস পাউডার কিনবেনা। না কিনলে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে পারবেনা, শো বিজে বিজ্ঞাপন বানানো হবেনা, মডেল কন্যারা পড়ে যাবে মহা বিপদে।   ইসলাম আপনাকে কতো সম্মানিত করেছে দেখু..., ইসলাম চায় নারী শালীনতার মধ্যে থাকুক, যাতে কেউ তাকে পথে ঘাটে কটু দৃষ্টিতে না দেখে, বাজে কথা না বলে,  টিজ না করে! ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলেরা যাতে মাল বলে অপমানিত না করে,   ইসলাম চায় নারীকে যেন যে সে না দেখে, স্বামী ও যদি নারীর সুষমা ভোগ করে তাহলেও তাকে আগে মোহরানা আদায় করতে হবে,   কারন নারী মায়ের জাতি! নারী এতো সস্তা নয় যে যে খুশী সে  চুইঙ্গামের মতো চিবোতে চাইলেও চিবোতে পারবে।   ইদানিং একটা সুর উঠেছে যে - বোরখা বা হিজাব পড়ে কি লাভ? ইভ টিজিং তো বন্ধ হয়না! এটার পিছনেও নারী লোভী মিডিয়ার হাত। কারন, এক যায়গায় যখন রব উঠে যায়, যে অমুকের বিরিয়ানি খুব মজা খেতে , তখন সে খাদ্য ঢাকা থাকুক আর খোলা, তার স্বাদ সবাই পেতে চায়। যারা অশ্লীল ভাবে চলেন, কিছুই না লুকানোয় বিশ্বাসী, তাদের কাজকর্ম আর ধ্যান ধারনার ভুক্তভোগী হয় আপামর নারী সমাজ।   আমি ক্লিয়ারের এই বিজ্ঞাপনের তীব্র বিরোধিতা করে বলবো- যখন কিছুই দেখানোর থাকেনা , তখন অনেক কিছুই থাকেই নিজের মতো লুকাবার।সবচেয়ে অবাক বিষয় এটাই যে, ক্লিয়ার একটা খুশকি নাশক শ্যাম্পু! কিন্তু মাথা যদি না ঢাকা হয়, মানে চুল যদি না লুকানো হয়, খুশকির  সম্ভাবনা আরও ১০০ গুন বেড়ে যায়।এটা আমার কথা না, জগৎবিখ্যাত স্কিন স্পেশালিষ্টদের কথা ।কিন্তু দুনিয়াকে সব কিছু দেখাবার এই ঢালাও প্রচারে চুলের ক্ষতির এহেন বানী, একটা anti dandruff shampoo র জন্য কি শোভা পায়? বরং, নারীদের চুলে খুশকি বাড়ানোকে উৎসাহিত করার দণ্ডে জরিমানা করা উচিৎ এই প্রতিষ্ঠানকে।   কিছুই না লুকানোর শিক্ষা এ দেশের নারী সমাজকে দিবেন না দয়া করে। আপনারা তো সেই সুসভ্য দেশের নাগরিক যে দেশে চলন্ত বাসে নারী ধর্ষিত হয়ে মৃত্যু বরণ করে! আপনারা কিছুই লুকান না! তাই আপনাদের দেশের পুরুষদের পশু বৃত্তির কোন সীমা পরিসীমা নেই।কিছুই না লুকানোর শিক্ষাটা নাহয় আপনাদের নারীদের জন্যই তুলে রাখলেন!       Like

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)