ফিল্ম ও মিডিয়া

সার্থক নারী

সার্থক নারী

 

৬ বিতর্কিত মডেল নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় নিউজ হয়েছে। 
এদের সবাই কমবেশি বাজে ভিডিও চিত্র কিংবা নিজেদের খাম খেয়ালিপনার, ইয়াবা সেবন,শিডিউল ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিতর্কিত। কেউ আবার বিতর্কিত এই ধরি এই ছাড়ি রোগের জন্য। হাজার হোক! তারপরেও তারা সমাজের জন্য আইকন। আমরা কমবেশি সবাই তারকা জীবন বা মডেল কন্যা হবার জন্য দিনরাত ঘষামাজা না পারলে আক্ষেপ করে মরছি। হাজার হোক 
তারকা নারী বলে কথা!

একটা কাজের সুত্রে বেশ কয়দিন যাবত এক মহীয়সী নারীর সংগে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটে গাড়ি নিয়ে নিয়ে ঘুরছি। তিনি ডাক্তারপত্নী, ঢাবি শিক্ষক কন্যা, কোন সেলিব্রিটি নন সমাজের পরিভাষায়! তিনি একজন গৃহিণী। কিন্তু আমার চোখে একজন অন্য উচ্চতার মানুষ। তিনি কিংবা তার মতো গৃহিণীরা। 
আসলে নিজের বয়স ছাড়া মা খালাদের বয়সী মানুষদের সাথে খুব একটা মেশার সুযোগ বা সময় হয়না। তাই হয়তো নারী জাতির পতনটাই বড় বেশী চোখে পড়ে। পতনটা আঙ্গুল দিয়ে দেখানো খুব সহজ, কিন্তু ভালো হওয়ার রাস্তাটা খুঁজে নেওয়া খুব একটা সোজা না। 
এই নারী মোবাইলে মিউজিকের যায়গায় কুরআন তেলাওয়াতের অ্যাপ্স সেট করে রেখেছেন। বিশ্বজোড়া কতো কারীর তেলাওয়াত। শোনেন আর বলেন- এর চেয়ে বড় নেশা আর কী আছে বল?
যখন খাওয়ার সময় হয়, তখন ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে দেন খেয়ে নিতে। এমনকি সেটা বিকালের নাস্তা হলেও।
কাপড় কেনার সময় কাজের মেয়ে দুটির কথা ও ভুলেন না- বলেন! ওরা আমার জন্য এতো খাটে, দেওয়া তো উচিতই। 
হজ করে এসেছেন, করেছেন বিদেশ ভ্রমণ ও। ছেলেরা মশারী টানিয়ে দেয় , কেউ মশারী খুলে দেয়।
আমাকে পড়ার জন্য বই ও দেন। আবার কখনো কখনো আমরা মেতে উঠি নারীদের পতন আর সাফল্যের গল্পে। উত্তরাধিকার বা তালাক , চাকরী কিংবা কন্যাসন্তানের অধিকার নিয়ে।

 

আমি এই নারীর মুখে সার্থক নারী জীবনের ছাপ দেখতে পেয়েছি। আর বলেছি- সমাজে আপনাদের মতো নারীদের সেলিব্রিটি হওয়া দরকার ছিল। আপনাদের সফল জীবনের ইতিবৃত্ত সব মেয়েদের জানা আবশ্যক ছিল। মেয়েরা যে শুধু পণ্য না, কিংবা নারীর মুখশ্রীটাই যে শুধু কাজের বস্তু , কোমরের গঠনটাই যে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়, এই বিষয়টা নারীরা ততদিন জানতে পারবে না যতদিন না সে তার নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো সম্পর্কে অবহিত হবে। 
আগে হিন্দু নারীরা অনেক দুঃখ যাতনা সহ্য করেছে। সে সময়ে আশাপূর্ণা দেবী উপন্যাসে বলে গেছেন। পুরুষ নারীকে ইট আর সুরকির মতো ব্যবহার করে সমাজ গঠন করে। এ দেশে শতপুত্রের জননী হতে উৎসাহ দেওয়া হয়, কে জানে আবার পালাবদল হলে এই দেশেই বলবে কিনা বহুপুত্রবতিকে ফাঁসিতে লটকাও! চোখ ফুটলে নারীকে ঠকাবার জন্য সে কালে হয়তো ঐ চতুর জাতটা আর এক চালের আশ্রয় নিবে। 
তা পুঁজিবাদী পুরুষরা নিয়েছে বৈকি! নারীকে খোলস ছাড়িয়ে এনে সেই তো কেজি দরে বাজারি মূল্যে মিনিটে মিনিটে বিক্রিই করছে। নারীর গঠনমূলক ভূমিকার কদর এখন কই? সত্যিই যদি নারী স্বাধীন হতো, শিক্ষা যদি সত্যিই নারীকে স্বাধীন করতে পারতো, প্রগতি যদি নারীকে মুক্তি দিতে পারতো তাহলে অন্তত আর যাই হোক প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের শিক্ষিকাকে তো চোখ খোয়াতে হতো না!
কথাটা খুব বেশী যুক্তিযুক্ত - জাহেলিয়াত যতো ঘনীভূত হয়, নারীরা ততো বেশী নির্যাতিত হয়। কারণে অকারণে নির্যাতিত হয়। চোখের সামনে অজস্ত্র উদাহরণ থাকার পরেও নির্যাতিত হয়। মহাজনের থেকে ধার নিলে চড়া সুদে গলা কাটা যাবেই। পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে যেয়ে নিজেই বিক্রি হয়ে যাওয়া হয়, এটা অতি শিক্ষিত সুশীলারা যদি না বুঝে দোষটা কী তখন পুরুষ মহাজনকে দিলে লাভ হবে? ব্যবসায়ী কী কোনদিন ব্যবসার লোকসান চাইবে?


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)