ফিল্ম ও মিডিয়া

চলচ্চিত্র পর্যালোচনা – ‘দেবী’

চলচ্চিত্র পর্যালোচনা – ‘দেবী’

এই মুহূর্তে এই চলচ্চিত্রটির পর্যালোচনা দেখে অনেকই হয়তো হাসবেন, ‘এতদিন পর আসসে রিভিউ দিতে’। গত এক মাসে অসংখ্য রিভিউ হয়তো পড়েছেন, চলচ্চিত্রটিও দেখেছেন নিঃসন্দেহে। চলচ্চিত্রটি আমি দেখেছি গতকাল, কিছুটা দোদুল্যমান অবস্থায়, কারণ আমি কখনোই কোন ভৌতিক চলচ্চিত্র দেখি না, আমার নিজের কিছু ফোবিয়া আছে তাই। ঠিক একই কারণে দেবী উপন্যাসটিও আমার পড়া হয়নি, তাই আমার এই রিভিউটি পুরোটাই হবে চলচ্চিত্র ভিত্তিক।

অবশেষে সকলের মুখে শুনে মনে হলো, চলচ্চিত্রটি তাহলে একবার দেখতেই হয়……… এবং যারা আমাকে অভয় দিয়েছেন ছবিটি দেখতে, তাদের অনেকেই বলেছেন, ‘কিছুই না দুইবার শুধু দুইটা চুল-ওয়ালা ভুত আসবে, বাকি সব সাউন্ড এফেক্ট’!!!!!!

এক কথায় যদি বলি, এই প্রথম কোন ভৌতিক সিনেমা সম্বন্ধে আমার ধারণাই পালটে গেছে। যদিও সব ভৌতিক সিনেমা এক নয়। এই সিনেমাটি বিশেষ ভাবে যেই কারণে আমার কাছে ভাল লেগেছে, তা হচ্ছে এটি নিছক কোন ভৌতিক সিনেমা নয়, এখানে সম্পর্ক, সামাজিক অবক্ষয় বা বলা যেতে পারে উইমেন ভায়োলেন্স-এর একটি প্রকট চিত্র উঠে এসেছে এবং সেটা দমনেই নারীর মাঝে দেওয়া হয়েছে এক অলৌকিক শক্তি।

মধ্যবিত্ত পরিবারের দম্পতি আনিস এবং রানুর মধ্যকার সম্পর্কের রসায়োন আমাকে খুবই অভিভূত করে। রানু প্রায় প্রতি রাতেই উপলব্ধি করে, সে কাওকে দেখছে, নারী এবং পুরুষের গলায় কেউ তাকে ডাকছে, কেউ নূপুর পরে হাঁটছে। এই নিয়েই প্রায় রাতে রানু অস্বাভাবিক আচরণ করে। আনিস, পরম ভালোবাসায়, অভয় দিয়ে, রানুকে আগলে রাখে। পর্যায়ক্রমে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও, রানুর প্রতি আনিসের ভালোবাসা এবং ধৈর্যের যেন কোন ঘাটতি নেই।
হুমায়ূন আহমেদ – এর অত্যন্ত জনপ্রিয় সৃষ্টি ‘মিসির আলি’ ঘটনাটিকে তলিয়ে দেখেন, এবং তথ্য অনুযায়ী জানতে পারেন, কৈশোরে এক পরিত্যক্ত মন্দিরে রানুর সাথে ঘটে যাওয়া গোপন ঘটনাটি। যেইদিন থেকে রানুর মাঝে এই পরিবর্তন। কাহিনী সূত্রে, মন্দিরে থাকা রুক্মিণী দেবীর শক্তি রানুর মাঝে ভর করার কাড়নে, রানু শক্ত হাতে প্রতিহত করতে পেরেছিল অপরাধী জালালুদ্দিনকে। এবং সেই একই শক্তি পরবর্তীতে ভর করে নিলু নামের অপর এক পার্শ্ব চরিত্রে, এবং নিলুও ঠিক একেই ভাবে অপরাধীকে প্রতিহত করে মুক্তি পায়। পুরো ব্যাপারটাকেই আমার কাছে রূপক মনে হয়েছে। স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে, এই দুই নারী যখন সহিংস আচরণের শিকার হতে যাচ্ছিলেন, যেটা আমাদের সহ আরও অনেক সমাজেই নারীদের প্রতি হয়ে থাকে, একই ভাবে তারা দুষ্টের দমন করতে পেরেছিলেন। শৈশব বা কৈশোরে ঘোটে যাওয়া অবাঞ্ছিত ঘটনা যে শুধু সেই সমেয়ই ব্যক্তিকে আঘাত করে শেষ হয়ে যায় না, এই একই ঘটনা হয়তো সেই ব্যক্তিকে তাড়া করে বেড়ায় পরবর্তী জীবনেও। রানুর ক্ষেত্র ব্যাপারটি ঠিক তাই হয়ে ছিল, তাই সে কখন অপরাধী পুরুষটির গলা শুনতে পেতো, আবার সেই সাথে নারী কণ্ঠের শুভ শক্তির শব্দও শুনতে পেতো, যেই শক্তি তাকে ভবিষ্যতের বিপদ আপদের ইঙ্গিত দিত।

প্রতিটি অভিনেতাই অসামান্য অভিনয় দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটি চরিত্রকে। সেই ক্ষেত্রে জয়া আহসানের কথা বলতেই হয়, একটা সময় মনে হচ্ছিলো আমি শুধু রানুকে চিনি, জয়া আহসানকে চিনি না!!!!! প্রথম সিনেমা হিসেবে, অনম বিশ্বাস নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি কাজ করেছেন। টানটান উত্তেজনার এই সিনেমাতেও, অনম বিশ্বাস দর্শকদের সময় করে হাসিয়েছেন। যেমনটা হুমায়ূন আহমেদ তার গল্প, উপন্যাস বা সিনেমার খুব সিরিয়াস মুহূর্ত গুলতেও হাসতে বাধ্য করিয়েছেন!!!!!

কিছুটা অফ টপিক হলেও, কথাটা না লিখে পারছি না, মিসির আলির কক্ষটি খুব অগোছালো থাকলেও, কিছু অংশে আমার কাছে মনে হয়েছে এমন একটা কক্ষে যদি কখন থাকার সুযোগ হতো !!!! আলো, বাতাস, সবুজ আর বই......... আর কি চাই !!!!!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)