সাহিত্য

ওরা আমাদের প্রতিবেশি

ওরা আমাদের প্রতিবেশি

সন্ধ্যার আজানের আর মিনিট পনেরো বাকী। বেশ ক'টা লেবু সামনে নিয়ে বসেছে আলেয়া। লেবুর শরবত বানানোর জন্য। ছেলে দুটো রোজা রেখেছে আজ! কিইবা বয়স এই আট নয় বছরই তো হবে। আলেয়া লেবু কাটে আর ভাবে, এইতো সেদিন বড়টার জন্ম হলো, দাইমা ছুটে গিয়ে বাইরে অস্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকা ওর আব্বুকে বলল,

"জাফর ও জাফর মিষ্টি আনতে যাও, ভালো দেইখ্যা মিষ্টি আইনো কইলাম, তুমি ছেলের বাবা হইছো"!

বাবা হওয়ার আনন্দে সে পুরো গ্রামে মিষ্টি বিলিয়ে দিয়েছিল। তারপর ছোটটা এলো..... ছেলে বা মেয়েতে ওর বাবার তেমন আলাদা চাওয়া ছিল না। এক বছর বাদেই আবার দাইমা আগের সম্বোধনেই খবরটা দিয়েছিলেন। মিষ্টি এনেছিল জাফর! এতো ছোট ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে আমি যখন হিমশিম খেতাম জাফর তখন কোথা থেকে হাজির হয়ে যেত, আর আমাকে বিশ্রাম নিতে বলে দুই ছেলেকে সামলাতো...... ওরা যখন যা চেয়েছে যেমন করেই হোক এনে দিতো!

কিন্তূ আমি পারছি না, জাফর আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছে। ছেলে দুটো দু দিন ধরে বিরিয়ানি খেতে চাচ্ছে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, ছেলেদের স্কুলের খরচ মিটিয়ে তিনবেলা নুনভাত রেডি করার পর আর যাইহোক বিরিয়ানি খাওয়া যায় না! জাফরের মৃত্যুর পর কাজের বুয়া হিসেবে কাজ পেয়ে ঢাকায় আসে আলেয়া। এক বস্তিতে ছোট এক ঘর ভাড়া করে ছেলেদুটোকে নিয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে কাজ করে আলেয়া। সামনে ঈদ ছেলেদের জন্য কাপড় চোপড় কেনা হয়নি এখনো!

আলেয়া এর মধ্যে শরবত বানিয়ে ফেলে। শুকনো মরিচ দিয়ে আলুভর্তা বানায়। তিনটা প্লেটে গরম ভাত নিয়ে আলুভর্তা আর ফালি করা লেবু প্লেটে সাজিয়ে নেয়। ঘরের দিকে যাচ্ছে। অমনি ছেলেদের কথা শুনতে পেলো,

বড়টা বলছে,
নাইম আইজ হয়তো বিরানি রানছে মায় ...... গন্ধ আসতাছে না?
ছোটটা বড় করে নিশ্বাস টানে,
আহ কি সুন্দর গন্দ ভাই! আজ মজা কইরা খাইতে পারুম......
আলেয়া থমকে যায়। বিরিয়ানির গন্ধ আসছে ঠিকই কিন্তু বাইরে থেকে! চোখ ভর্তি অশ্রু এসে বেসামাল করে দেয় আলেয়াকে! এখন কি করে এই ভর্তার প্লেট নিয়ে রোজাদার ছেলেদুটোর কাছে যাবে সে!

#ওরা_হয়তো_আমাদেরই_প্রতিবেশি।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)