সাহিত্য

পুরোন পলেস্তারা

পুরোন পলেস্তারা

বড় উঠোনটায় কতগুলো শুকনো পাতা পড়ে আছে। মড়মড় ধ্বনি তুলে হাঁটেনা কেউ এখানটায়। উঠোনের চারপাশে ছায়া দেয়া গাছগুলো মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভোরের আগমনে সেখানটায় পাখিগুলো এসে কিচির মিচির ডেকে যায়। ঝড়ের তান্ডব এলে কিছু ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে থাকে। পাশেই পরিত্যক্ত পুকুর। শুকনো পাতাগুলো সেই ছায়াঘেরা পুকুরে সাতার কাটে। পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়ালে দু একটি লতানো গাছের জন্ম হয়েছে। কি নিয়ম না! কেউ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে বিকশিত হয়, আর কেউবা খুব ধীরে নিঃশব্দে বিলীন হতে থাকে!

ঘাটের পাশটায় শ্যাওলা জমেছে খুব। কি পিচ্ছিল! ওপাশের কলতলার কলে আর পানি ওঠে না। চুলার পাড়টায় কোন রান্নার চিহ্ন নেই। দেখছিলাম সবটা খুটে খুটে। তালা লাগানো মূল গেটের তালা খুলতেও তো আধ ঘন্টা লাগলো আমার। সেটা কি আর রুপা জানে! ও রুপাকে চিনলেন না? আমার বান্ধবী, বাচ্চাকাল থেকে সব একসাথে। এমনকি আমার একটা গোসলের মগ কেনা লাগলেও ও সাথে গিয়ে পছন্দ করে দিবে। ও কেমন গাড়িতে বসেই বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছে। গ্রামে এলাম অথচ কেউ আমাদের এই বাড়ির কাউকেই চিনছে না। দাদা বাবা কাউকে না। বাবার কাছে বাড়ির এক কপি চাবিই ছিলো। নতুন তালা চাবি কিনে দিয়েছেন বুদ্ধি করে। এই না হলেন আমার বাবা। গর্বে বুকটা ভরে ওঠে আমার!

যাই হোক এবার পরিচ্ছন্নতা শুরু করবার পালা। ওয়াশ্রুমে ঢুকে তো আমি হতবাক! এতো এতো অপরিচ্ছন্নতার ভীড়ে কি করে যেন বাথরুমটা বেশ ঝকঝকে রয়ে গেছে! কি ভেবে যেন গোসল সেরে নিলাম আগেই। অনেকটা সময় নিয়ে শ্যাম্পু করে জার্নির ধকল মেটাতে গোসল করে ফেললাম। অনেক বেশি ফ্রেশ লাগছে। আর ফুরফুরে আর হালকা লাগছে শরীরটা। কিন্তু ক্ষিধেটা এবার চাড়া দিয়ে উঠলো নিমিষেই।

বাথরুম থেকে বের হয়ে আমি পুরো থ বনে গেলাম রুপা দুইটা প্লেট হাতে নিয়ে ফ্রেশ মুডে ফ্রেশ হয়ে দাড়িয়ে আছে। বলল, সিমা চল পুকুর ঘাটে বসে দুজনে খাই। আমি ক্ষুধাতে মরে যাচ্ছিলাম যেন। পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে আর কোন শুকনো পাতা জমে নেই। ইশ! কি টলটলে স্বচ্ছতা এই পুকুরের পানিতে। রুপার দিকে তাকালাম ও মুচকি হেসে বললো, আগে খেয়ে নে... পরে কথা বলিস। আমি ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের দিকে তাকালাম, আলু ভর্তা ডিম ভাজি সাথে খাটি ঘি এর স্মেল! গোগ্রাসে গিললাম। খাওয়া শেষ করে পাশের প্লেটটিতে চোখ পড়লো একটা ভাতো নড়েনি অটা থেকে। রুপা নেই। প্লেট হাতে ঘাট থেকে উঠে ভেতরে এলাম। রুপা এরই মধ্যে উঠোন ঘরদোর ঝকঝকে করে ফেলেছে। আমার কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হলো। সাথে শরীরটা শিরশির করছিলো।

একটু পরই গাড়ি থেকে নেমে এলো ঘুমজড়ানো রুপা। একটু রেগেই বললো সিমা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতো, আর তুই একাকী এতো কাজ করে ফেললি। রান্নাও করেছিস দেখছি! দে খুব ক্ষুধা লেগেছে খেয়ে নিই। হাতের বোতল থেকে পানি ঢেলে কয়েকবার কুলি করে উঠোনে বসেই খেতে শুরু করলো রুপা! আমি হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)