সেদিন কি দিন ছিলো মনে নাই। সকালে টুকটুকিতে করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। টুকটুকি হলো সবুজ রঙের বড় সি.এন.জি. টেম্পু। বহদ্দারহাটের রাস্তাটা তখনো ঠিক হয় নাই। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, ধূলাবালি, জ্যাম আর টুকটুকিতে ছয়জনে চাপাচাপি করে বসা, সব মেনে নিয়ে নিয়মিত আমাদের যাতায়াত করতে হতো। তো আমাদের গাড়িটা যখন একটা উচু যায়গা পার করছিলো, তখন পাশে ছিলো একটা রিকশা। ওটা ছিলো পায়ে টানা রিকশা। রিকশাভর্তি ছিলো লাকড়ি বা কোনো মালামাল দিয়ে, ঠিকটা মনে আসে না। তো আমাদের ড্রাইভার সেই উচু যায়গাটা পার করতে গিয়ে ওই রিকশায় লাগিয়ে দিলেন। রিকশার আর কি, সঙ্গে সঙ্গে ভূপাতিত। চাকাটা একেবারেই চ্যাপ্টা হয়ে বসে গেলো। আমারা যাত্রিরা সবাই একমত ছিলাম যে দোষটা নিরেট টেম্পুর ড্রাইভারের। একে তো রিকশা বোঝাই মাল, আবার ভাঙ্গা রাস্তা, রিকশা ঠিকমতো ঘোরানো ফেরানো কঠিন, আমাদের ড্রাইভার কি এসব বুঝতো না? আলবত বুঝতো! ও বেটা চাচ্ছিলো কিভাবে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। তো এই অবস্থা দেখে মনে মনে ভাবলাম কি করা উচিত, আমাদের কি উচিত না ড্রাইভারকে ধরে উপযুক্ত ক্ষতিপূরন আদায় করে রিকশাওয়ালাকে দেওয়া, যাতে সে অন্তত রিকশাটা ঠিক করতে পারে? দু-একজন যাত্রি ড্রাইভারকে তিরস্কার করেছিলো বটে, তবে খুব ভদ্র ভাষায়, যার দ্বারা এ পক্ষের ক্ষতি বা ও পক্ষের লাভ কোনোটাই হয় না। অসহায় রিকশাওয়ালা যখন ড্রাইভারের সাথে তর্ক যুদ্ধে নামলো, তখন ড্রাইভার ও তার চ্যালা মিলে তাকে শ্রাব্য-অশ্রাব্য ভাষায় যে তিরস্কার করেছিলো তার সারমর্ম এই যে, দোষটা ছিলো শুধুই রিকশাওয়ালার, এতো মালামাল নিয়ে রিকসা চালানোটা তার দোষ। কিন্তু তার নিজের গাড়ীতে অতিরিক্ত যাত্রীরা যখন ঝুলে ঝুলে যায় সেটা কিছু না। একবার ভাবলাম সবাই মিলে ড্রাইভার বেটাকে শায়েস্তা করি, টাকাটা আদায় করি, কিন্তু একা সাহস পেলাম না, কারন কারোর মধ্যে এ আগ্রহ আমি দেখি নাই। দেখি নাই হয়তো তা আমার চোখের দোষে। মনে কচ্ছিলো কিছু করি, ক্ষতি করে বেটা পার পেয়ে যাবে! কিন্তু যে কাজ জীবনে কখনও আমার দ্বারা হয় নাই তা সেই দিনও হলো না। আমার ভাবনা আর শেষ হয় না, এক সময় আমাদের গাড়িটা যতজোরে পারলো সেখান থেকে বেরিয়ে গন্তব্যস্হলের দিকে ছুটলো। বিবেকের আঘাতে বারবার মনে হচ্ছিলো, আমরা মানুষ না, মানুষ হতে এখনও পারি নাই, মানুষ হওয়া এতো সহজ না। মনে মনে ভাবলাম আজ বেটাকে ভাড়া দেবো না, বদদুআ করেছিলাম যেনো বেটার গাড়িরও একই হাল হয়। জানি, সেইদিন সেই গাড়ীতে যারা ছিলো, যারা কোনো প্রতিবাদ করি নাই, সবাই আমরা সমান দোষি, আমরা সবাই মিলে দোষিকে পালাতে সাহায্য করেছি, আমরা সবাই গরীবের উপর জুলুম করেছি।
সাহিত্য
দোষি
ব্লগটি লিখেছেন: muhammadkamrul
| ২ জুলাই ২০১৬

সকল বিভাগসমুহ:
- মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ(১৩)
- সাহিত্য(৩৮৬)
- উৎসব(০)
- পরিবার ও আমি (বিয়ে ,দাম্পত্য,শিশু লালন পালন )(১৩৪)
- মেইক ইউরসেল্ফ (রুপচর্চা,পারসোনালিটি,ক্যারিয়ার,স্বাস্থ্য)(১৩৩)
- উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)(১৭০)
- অনির্ধারিত(১৫৪)
- ইতিহাসের পাতা থেকে(১৭)
- নোটিশ বোর্ড(৬)
- বিবিধ(৩২৪)
- রান্নাবান্না(১০৪)
- ফিল্ম ও মিডিয়া(২১)
- ধর্ম ও গবেষনা(১০৬)
- অনুবাদ(১৬)
- ইন্টারন্যাশনাল উইমেন(৪০)
- বই পরিচিতি/বই রিভিউ(১৭)
- নিউজ(০)
- অপরাজিতা(০)
- নোটিশ বোর্ড(০)
- তথ্যচিত্র(০)
জনপ্রিয় ব্লগসমুহ:
-
গল্প হলেও সত্যি (শেষ পর্ব)
১২ সেপ্টেম্বার ২০১৯ভিউ হয়েছে: 1347 -
So, if you wishing...
১৫ মার্চ ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1304 -
নারী ও পুরুষ হোক পরস্পরের সহযোগী
১৭ জানুয়ারী ২০২১ভিউ হয়েছে: 1195 -
চন্দ্রগ্রহণে চন্দ্রাহত জীবন
৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ভিউ হয়েছে: 1162 -
এটা কিসের ব্লগ?
১০ মার্চ ২০১৪ভিউ হয়েছে: 1141
অনলাইনে আছেন:
জনপ্রিয় ট্যাগসমুহ:
সম্পর্কিত ব্লগ

জুলাই ২০২৪
শুকনোপাতার রাজ্য
১ জুলাই ২০২৫

শুকনোপাতার কথামালা-৫
শুকনোপাতার রাজ্য
২৪ জুন ২০২৫

শুকনোপাতার কথামালা-৪
শুকনোপাতার রাজ্য
১৬ মে ২০২৫

শুকনোপাতার কথামালা-৩
শুকনোপাতার রাজ্য
১৯ মার্চ ২০২৫
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন

কৃতজ্ঞতা
মুহাম্মাদ কামরুল
৯ নভেম্বার ২০১৭

স্বাধীনতা
মুহাম্মাদ কামরুল
১৬ অক্টোবার ২০১৭

আত্মহ...
মুহাম্মাদ কামরুল
৭ আগষ্ট ২০১৭

যৌতুকের আধুনিক রূপ
মুহাম্মাদ কামরুল
১৮ জুন ২০১৭
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)