ধর্ম ও গবেষনা

কৃতজ্ঞতা

কৃতজ্ঞতা

রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সালমা। পথের ধারে নকশা করা বাড়ি, পথের বুকে চলতে থাকা গাড়ি, আর চারিপাশের চাকচিক্য দেখে মনটা ছোট হয়ে গেল তার। জীবনে পাওয়া না-পাওয়ার ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো, ক্ষনিকের জন্য জীবনে মিশে থাকা সব নেয়ামত, রহমতের কথা ভুলে, যা পাওয়া হয়নি তার জন্য মনটা ভারী হয়ে উঠলো সালমার।

কিন্তু পরক্ষনেই মনটা আবার সম্বিত ফিরে পেলো তার, নিজেকে স্মরন করিয়ে দিলো তার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের কথা, স্মরন করিয়ে দিলো এই পৃথিবীর ক্ষনস্হায়ীত্বের কথা আর মৃত্যুর পরের অনন্ত অসীম জীবনের কথা, যা হয়তো হবে চিরসুখের, নয়তো চিরদুখের। সে ভাবতে থাকে, যদি চিরসুখের আবাসের বাসিন্দা হতে পারি, তবে কম করে হলেও দশটি পৃথিবীর সমান বড় একটা জান্নাত আমাকে দেওয়া হবে, যা দেখে দুনিয়ায় আমার কি ছিলো কি ছিলোনা, সুখে ছিলাম কি অসুখে ছিলাম তার ছিটেফোটাও মনে থাকবে না। আর যদি তা না হয়, যদি চিরদুখের যে আবাস আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন সেখানের বাসিন্দা হয়ে যাই, তবে সর্বনিম্ন যে শাস্তি আমার জন্য থাকবে তা হলো আগুনের একজোড়া জুতো আমাকে পরানো হবে যার উত্তাপে মাথার মগজ ফুটতে থাকবে! দুনিয়ার কোনো কিছুই তখন আমার কোনো উপকারে আসবে না।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনটা হালকা হয়ে গেলো সালমার। দুনিয়ার মোহ কেটে যেতে দেখে স্বস্তি পেলো সে। আকাশের কালো মেঘ প্রবল বাতাসের ধাক্কায় যেভাবে দুর হয়ে যায়, পরকালের ভাবনা তেমনি মন থেকে দুনিয়ার মোহ ঠেলে দুর করে দেয়।
ঠোটের কোণে জমা হাসি আর চোখের কোণে জমা অশ্রু নিয়ে সে বললো-

ইয়া রব!
কত কিছুর জন্যই তো কাঁদি,
তবু আপনার জন্য কেন কাঁদতে পারি না?
ইয়া রব!
কত কিছুর জন্যই তো হৃদয় গলে,
কিন্তু আপনার জন্য, কেবল আপনারই জন্য কেন গলতে পারে না?
আপনার ভয়ে,
আপনার প্রতি ভালোবাসায়,
আপনাকে দেখবার আশায়,
আপনার বানানো জান্নাতের লোভে,
আপনারই বানানো দোজখের আতঙ্কে,
কেনো মোর আঁখি অশ্রুজলে শিক্ত হয় না কভু,
কেনো মোর অন্তর কম্পনে শিহরিত হয় না প্রভু?


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)