ইন্টারন্যাশনাল উইমেন

জেন্ডার এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি

জেন্ডার এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি

নারীর ক্ষমতায়ন এবং দুর্নীতি আন্তঃসম্পর্কে আবদ্ধ। একদিকে দুর্নীতি যেমন নারীর ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করে, অন্যদিকে নারীর ক্ষমতাহীনতা দুর্নীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর ফলে সমাজে চলমান দুর্নীতির সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নারী।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিমাপক-২০১৩ অনুযায়ী, পুরুষের চেয়ে নারী তুলনামূলক বেশি বিশ্বস্ত এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত। নারীরা পুরুষের চেয়ে ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্রেও বেশি নেতিবাচক। ২০১৩ সালে ২৭% পুরুষ যেখানে কমপক্ষে একটি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ প্রদান করেছে, সেখানে নারীর ক্ষেত্রে এই হার ২২%টিআইবির জাতীয় খানা জরিপ-২০১২ অনুযায়ী, বাংলাদেশেঅত্যাবশ্যকীয়সেবাখাতবিশেষকরেশিক্ষা, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, শ্রম অভিবাসন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে পুরুষের তুলনায় নারী দুর্নীতির শিকার হচ্ছে বেশি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সেবা নিতে মোট ৪২.৭ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার হয় যেখানে পুরুষের হার মাত্র ২৯.৮ শতাংশ। এছাড়া যেহেতু বিশ্বের মোট দরিদ্র মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী, সুতরাং নারীর উপর দুর্নীতির প্রভাব বেশি হওয়ায় সামগ্রিক অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ইংরেজিতে নারীজাতিকে কত নামেই তো ডাকা হয় – ‘ফেয়ার সে...', ‘বেটার হাফ', ‘ইমোশনাল বিইং'বাংলাতেও নারীকে মমতাময়ী, অবলা, কখনো বা দুর্বল বলে অবহিত করা হয়৷ নারীবাদীরা অবশ্য লিঙ্গকেন্দ্রিক এহেন উপমা খুব একটা ভালো চোখে দেখেন না৷ এরপরও, নারীরা যত ক্ষমতায় আসবেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তত ভালো হবে এমন একটা কথা শোনা যায় হামেশাই৷

এর পেছনে যুক্তি হলো, নারীর মধ্যে ঘুস নেয়া বা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা কম৷ কিন্তু নেতৃত্ব বা ক্ষমতায় আসা নারীদের সম্পর্কে এমন কথা কতটা সত্যি, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে প্রচলিত এই ধারণার সত্যতা তুলে ধরা হয়েছেতাতে বেশ কয়েকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নারীর কম দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এই যেমন, পেরুর রাজধানী লিমায় সাবরিনা করিম নামের এক নারীর মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে বিষয়টি৷এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাবরিনা দেখিয়েছেন যে, লিমায় ১৪ বছর আগের তুলনায় ২০১২ সালে ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে৷ আর আপাতদৃষ্টিতে এ পরিবর্তন এসেছে ট্রাফিক কর্মকর্তা পদে প্রায় ২,৫০০ নারী সদস্যকে নিয়োগ করার পর৷ লিমার ৮৬ শতাংশ মানুষই নাকি এই নারী ট্রাফিক পুলিশদের কাজে সন্তুষ্ট৷ শুধু তাই নয়, সেখানকার প্রায় ৬৭ ভাগ অধিবাসীর মতে নারীরা কম দুর্নীতিপরায়ণ৷

তবে শুধু পেরু নয়, আমাদের এই উপমহাদেশও নারীর ক্ষমতায়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়নি৷ ১৯৯৩ সাল থেকে ভারতের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে নারীর জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়৷ চলতি বছর বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নারীদের এই অগ্রাধিকার দেওয়ার পর সুপেয় বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সুবিধাসহ গ্রামগুলোতে স্কুল ও অন্যান্য সরকারি সেবা বেড়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে কমেছে দুর্নীতিও৷ দেখা গেছে, নারী নেতৃত্বাধীন গ্রামগুলো পুরুষ নেতৃত্বাধীন গ্রামগুলি থেকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত৷ এছাড়া, ক্ষমতাসীন পুরুষরা যেখানে রাস্তা-ঘাট নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্পগুলিতে টাকা খাটান, সেখানে নারীরা বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে৷ অর্থাৎ, তৃণমূল পর্যায়ে বা জনগণের চাহিদার প্রতি নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল৷ তাই নারী কম দুর্নীতিপরায়ণ কিনা তা নিয়ে পুরুষ বা নারীবাদীদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও গণতন্ত্রের মান উন্নয়নে নারীদের ইতিবাচক ভূমিকার কথা একেবারে অস্বীকার করতে চান না গবেষকরা৷ 

দূর্নীতির সাথে নারীর সম্পর্ককে দুইভাবে দেখা যায়ঃ দূর্নীতির মাধ্যম হিসেবে এবং দূর্নীতির সংঘটক হিসেবে নারী। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)র একটি গবেষনা উদ্ধৃত করা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি নারীর অভিজ্ঞতায় দুর্নীতি : বাংলাদেশের দুইটি ইউনিয়নের চিত্রশীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে গাজীপুর ও জামালপুর জেলার দুটি ইউনিয়নের ওপর এ গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে সংস্থাটি।ওই গবেষণায় ২০১৩ সালের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জামালপুর ও গাজীপুর জেলার দুইটি ইউনিয়ন থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়। গবেষণায় নারীরা কখনো দুর্নীতির সংঘটক, কখনো মাধ্যম ও কখনো  সুবিধাভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

দুর্নীতির সংঘটক হিসেবে নারী: গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানকারীর অবস্থানে থেকে নারীদের একটি অংশ দুর্নীতিতে সংঘটক হিসেবে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে কাজ করানোর জন্য, নারী অভিযোগকারী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে বিচার-সালিশের রায় নিজের পক্ষে আনার জন্য এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করার সময় সুবিধা লাভের জন্য ঘুষ দিয়ে থাকেন। 

এর মধ্যে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পদের জন্য তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য দুই লাখ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ভুল তথ্য দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি স্থাপন করা, প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ করা, নিয়মিত উপস্থিত না থেকে দায়িত্ব অবহেলা করা, রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি বিতরণে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা, নিয়মিত ক্লাশে না গিয়ে ছাত্রদের কোচিং পড়তে বাধ্য করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে দুস্থ নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বিভিন্ন ভাতার টাকা অবৈধভাবে আদায় করা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের জালিয়াতিতে সহায়তা করা, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে ও কৃষি ব্যাংকের সেবা প্রদানে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে থাকে। আর এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট  নারী তার প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান ও ক্ষমতাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করেন।

 দুর্নীতির মাধ্যম হিসেবে নারী: টিআইবির গবেষনা এলাকায় দুর্নীতির অংশ হিসেবে নারীদের ব্যবহারের (মাধ্যম) তথ্য পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদে উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে খালি চেকে নারী সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়, যার বিনিময়ে নারীরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। পারিবারিক পর্যায়ে নারীকে ব্যবহার করে এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ, ব্যাংক ঋণ বা দাদনের টাকা আত্মসাৎ করা, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে, উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ে, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে এবং ব্যাংক সংশ্লিষ্ট নারী কর্মীর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করার নজির রয়েছে। 

এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নারীদের পরোক্ষভাবে দুর্নীতির অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহের সময় অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট মেম্বার বা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে কাজীর অনৈতিক সহায়তায় বিয়ে সম্পন্ন করিয়ে দুর্নীতির মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।

আর একটি উপায়ের কথা বলা যায়। এর উল্লেখ ২০১২ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়। স্টেলা ডাউসন এর করা এই রিপোর্টে তিনি দেখিয়েছেন, নারী ভোটার হিসেবেও দূর্নীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন।

বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রভাবশালী মহল এবং কয়েকজন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিত্ত্বের কিছু উক্তি তুলে ধরা যাক।

বিশ্বব্যঙ্ক এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে, ভারতীয় গ্রামগুলোর মধ্যে পুরুষশাসিত গ্রামের চেয়ে নারীশাসিত গ্রামে শতকরা ২.৭ থেকে ৩.২ ভাগ দূর্নীতি কম হয়। বিশ্বব্যাঙ্ক পরিচালিত  ১৯৯৯ সালের একটি রিপোর্টে উঠে আসে চমকপ্রদ একটি তথ্য১১% এর ওপরে নারীসংশ্লিষ্টতা বাড়লে প্রতি মান বৃদ্ধির জন্য দূর্নীতি হ্রাস পায় ১০ ভাগ। তবে এর অনেক অন্যান্য প্রভাবক রয়েছে।

৭৫ থেকে ১৭৮ পর্যন্ত ইরানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, মেহনাজ আফখামী মনে করেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীর মতামত দূর্নীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

শ্রী মূল্যাণী ইন্দ্রাওয়াতি, যিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী ছিলেন, বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি সরাসরিভাবেই জাতীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারকে প্রভাবিত করে।  

অপরদিকে, নাইজেরিয়ায় নয় বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকা হেলেন ক্লার্ক মনে করেন, নারী পুরুষের থেকে কম দূর্নীতিগ্রস্থ হবার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

 

এই পার্থক্যের কারণঃ

নারীর ব্যপারে কম দূর্নীতিগ্রস্থ হবার ব্যপারটি একটি শক্তিশালী ধারণা হিসেবেই বর্তমান, কোন প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব নয়। এর পেছনে কেউ কেউ কেবল মানসিক ধ্যানধারণা আবার কেউ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দায়ী করেছেন। কারণগুলোকে একটু খতিয়ে দেখা যাক।

প্রথমতঃ নারীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ, দূর্নীতিতে নারীর ভূমিকাকে প্রভাবিত করে। ভারতের গ্রাম পর্যায়ে ৩০০০ জন নির্বাচিত পুরুষ ও নারী জনপ্রতিনিধিদের মতামতে উঠে এসেছে এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রভাবক। নারী যখন শিক্ষার নিন্মহার, প্রশিক্ষণের অভাব, গৃহকর্মের বোঝা, পুরুষশাসিত সমাজের নানা বাধাবিপত্তি, পিতা, ভাই বা স্বামীর ওপর আর্থিক-সামাজিক নির্ভরশীলতার নিগড় থেকে বের হতে পারছেন না, তখন তাঁকে দিয়ে দূর্নীতির কাঠামো ভেঙ্গে ফেলার চিন্তা করা বেশ কঠিন।

দ্বিতীয়তঃ ব্যক্তিগত সীমানা পেরিয়ে নারীর আবেগ অনেক সময় তার কর্মক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। বানদুয়াহ দেখিয়েছেন, নারী বাজারে বিক্রেতা হিসেবে অন্য নারীকে ওজনে কম দেয়া বা নিম্নমানের পণ্য গছিয়ে দেয়া ধরণের দূর্নীতি করে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে তেমন কোন দৃশ্যমান জরিপ পাওয়া যায় নি। সুশিক্ষা বা যথাযথ প্রশিক্ষণ এক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে কি না, তিনি সেটিও দেখান নি।

তৃতীয়তঃ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দূর্নীতিতে নারীর প্রভাবকে অন্যভাবে সংগায়িত করতে পারে। রাইস এবং এমরয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক ‘Fairer Sex or Purity Myth’ নামক একটি গবেষণায় দেখান একনায়কতন্ত্র বা গণতন্ত্রের অধীনে নারীর আচরণও বদলে যায়। একনায়কের অধীনে, সাধারণত পুরুষ শাসক থেকে পাওয়া ক্ষমতা, যা উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর কাছে আসে, সেই কাঠামোতে নারী যে কোন পরিবর্তনে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন না। এর কারণ হতে পারে, ঝুঁকি নিতে না চাওয়া, কিংবা ক্ষমতার চেয়ারে পুতুল্ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া। এখানে দূর্নীতিকারী হিসেবে নারী বেশ সাবধানী, ধরা পড়ে যাবার আশংকায় প্রত্যক্ষ্ দূর্নীতিতে অংশ নেন বলেও তারা দেখিয়েছেন। আবার অপরদিকে, গণতান্ত্রিক কাঠামোতে যদিও নারী শক্ত ভূমিক রাখতে পারেন, আবার জবাবদিহীতার মাত্রা বেশী বলে সরাসরি দূর্নীতিতে জড়িয়ে যান অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায়।

GOPAK (Gender Equality in Parliaments and Political Corruption) নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণাও একই প্রভাবের দিকে নির্দেশ করে।

দূর্নীতিগ্রস্থ সমাজ বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এমন একটি জটিল বিষয় যে শুধুমাত্রই নারীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একে অনেক বেশী বদলে ফেলার স্বপ্ন দেখা অনুচিত। উপরন্তু, অধুনা রাষ্ট্রযন্ত্র কিংবা এইরকম বড় কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে এক একটি পদ একটি চেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করে, যার আচরণ নির্ধারিত হয় সে চেয়ারের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা এবং ঐতিহাসিক পরম্পরা থেকে। সেখানে যিনি আসীন হয়েছেন, তিনি নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন, পরিস্থিতির ক্রীড়নক হতে বাধ্য হন অধিকাংশ সময়ে।

GOPAK এর কয়েকটি সুপারিশ এক্ষেত্রে দেখে রাখা যায়। জাতীয় পর্যায়ে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো নারীর যথাযথ অংশগ্রহণ ও দূর্নীতি রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্বে নারীর ভুমিকা বৃদ্ধির জন্য-

-     জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ

-     রাজনৈতিক দলসমূহের সংবিধান, নীতি ও কার্যপদ্ধতি সংশোধন, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণবিধি পরিবর্তন

-     সকল পর্যায়ে নীতিনির্ধারণী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক কাজে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ

-     দূর্নীতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সংগঠনের নারী শাখা গঠন

-     উচ্চপর্যায়ের কমিটিসমূহে নারীদের সমান অবস্থান নিশ্চিতকরণ

-     নির্বাচনের প্রার্থীতায় নারী পুরুষ সমান সংখ্যা বজায় রাখা

২। সংসদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞা বাড়ানোর জন্য-

-     সংসদ সদস্যকর্তৃক জাতীয় আয়ব্যায়ের হিসাব নীরিক্ষাকরণ

-     রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের নীতিনির্ধারণ, ঋণ সংস্থানে নজরদারি

-     সংসদের কাছে জবাবদিহীতাকারী অডিটর নিয়োগ, যারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে

৩। লিংগবৈষম্য এবং দূর্নীতিরোধে জাতিসংঘ, বেসরকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীন কাজের পরিবেশ সৃষ্টিকরণ।

তবে, সঠিক ও সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, শিক্ষার উচ্চহার, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থা, জেন্ডার সংবেদনশীল সুশাসন ইত্যাদি দূর্নীতিকে যেমন কমিয়ে আনতে পারে, নারী বা পুরুষ উভয়কেই বসাতেই পারে যার যার মর্যাদার আসনে। উপরন্তু, দূর্নীতি হ্রাসের উপায় হিসেবে নারীকে ব্যবহার করতে চাইলে সেক্ষেত্রেও নারীর স্বকীয়তা লোপ কিংবা তার ওপর আকাংক্ষার বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা উচিত।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)