অনির্ধারিত

'তোমাকে স্মরণ করতে দেখেছি, পোশাকে পরিচ্ছদে'

'তোমাকে স্মরণ করতে দেখেছি, পোশাকে পরিচ্ছদে'
নবীর পারিবারিক জীবনের আলোচনায় মহিলা বক্তারা আনেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনসাফ, ভালোবাসা, ঘরের কাজে হাত লাগানো, ইত্যাদি। পুরুষেরা আনেন তাঁর কৃচ্ছতা, স্ত্রীদের শাসন করতে পারার সক্ষমতা। বক্তৃতার শেষে পুরুষ এবং নারীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আহারে আমার অমুকের মা বা বাপটা এমন হইত যদি।
 
পুরুষ, সীরাত থেকে পরিবার সুন্দর করা শিখবেন? ভাবেন দেখি, ফাতিমা রুকাইয়ার র মত মা-হারা কন্যা পিতাকে কতটা পেয়েছিলেন বলে জান্নাতের সুখবর পেয়েছেন? কেমন স্বামী ছিলেন আইশার, যিনি বয়স হওয়ার পরও তাঁর সাথে একাকী সময় কাটাতেন? দৌড় দিয়ে জিতে গিয়ে শিশুর মত খুশী হতেন? বাড়িতে তরকারি রান্না হলে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে তরকারি পাঠাতেন? কেমনতরো পুরুষ মানুষের কাজ এগুলো? অত খুঁটিনাটি দেখার সময় কই পেতেন তিনি? আবার চরম এক কূটনৈতিক ঝামেলায় স্ত্রীর কাছে এসে পরামর্শ করেছিলেন, স্ত্রীর কথায় কাজও করেছেন। হুট করে একদিনে স্ত্রী এই পরামর্শ দেয়ার উপযুক্ত হন নি, বুঝেন নিশ্চয়ই। স্বামীকে কতটা বুঝলে, তাঁর জীবনের মিশনকে কতটা জানলে পদে পদে পাশে থাকা যায়? আগে থেকে তাহলে কতটুকু সময় স্ত্রীর পেছনে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি?
 
নারী, শিখতে পারেন আপনিও। অন্য মহিলাকে মোটা বলেছিলেন বলে স্বামী বকেছেন। বিলাস না, একটু খরচ বাড়াতে বলেছিলেন বলে অভিমান করেছেন। স্ত্রীরা কি জবাব দিয়েছিলেন? 'জানে না আমি কোন বাড়ির মেয়ে?' কিংবা 'না হ্য একটু বলেছিই, এভাবে বকলো কেন?' এইসব? নাকি সঙ্গে সঙ্গে ভূল স্বীকার করে নিয়েছিলেন? স্বামীর আগের পক্ষের কন্যাদের আদর করেছেন, স্নেহ দিয়েছেন। মধ্যরাতের তাহাজ্জুদে স্বামীর অনুগামী হয়েছেন। দান করবেন বলে নিজ হাতে কুটির শিল্পের কাজ করেছেন, অপ্রয়োজনীয় জিনিসের লিস্ট ধরিয়ে দেন নি বাজার উজাড় করে আনতে। রাত নেই দিন নেই, মেহমান আপ্যায়ন করেছেন। যুদ্ধযাত্রায় গেছেন, চামড়ার মশক বয়ে মুজাহিদদের খাইয়েছেন। রাসূলকে কেবল একজন স্ত্রী নয়, অনুসারীর চোখে দেখেছেন, সাহাবীদের কাছে সে বর্ণণা দিয়েছেন। নিজের কাজ সেরে আশেপাশের মহিলাদের নিয়ে বসেছেন, হাতে ধরে দেখিয়েছেন ওজু গোসল, পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম। যত জানবেন, তত মন্ত্রমুগ্ধ হবেন নিশ্চিত।
বক্তৃতায় আবেগ দরকার নেই৷ ফ্যাক্ট বলেন। আজকাল রোল মডেলরা স্বামী স্ত্রী কে কবে কার হাত আগে ধরেছিলেন, এইসবও ভরা মজলিসে বলছেন। কারণ একটাই। অনুসারী বাড়ানো। ভালোবাসা জীবনাচরণ থেকেই আসে। এটাই কাজ আপনার। নবী জীবনের সৌন্দর্য তুলে ধরা। আপনার শ্রোতা কারা, তাদের জন্য উপযুক্ত উদাহরণগুলো উঠিয়ে আনা। যদি না পারেন, আপনার বক্তৃতা কিছু সময় কিছু মানুষকে শোনাতে পারবেন, কানে ঢুকবে, কাঁদাবেও হয়ত। না সুদ ঘুষ ছাড়াবে, না সততার অনুশীলন শেখাবে, না মুসলমান বানাবে।
 
আপনার বক্তৃতা শেষে এক বুক অর্থহীন আফসোস নিয়ে আপনার শ্রোতা বাড়ি ফেরে, দেখার চোখ আছে আপনার?
 
 
শিরোনামঃ না'তে রাসুল। সাইফুল্লাহ মানসুর 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)