সাহিত্য

দিনযাপন

দিনযাপন
 
images

 গতকাল খুব পছন্দের একটা কানের দুল পরেছিলাম। সাদা ঝকঝকে ছোট্ট ছোট্ট পাথর বসানো। এসব ব্যাবহার্য গহনা, কসমেটিক্স সামগ্রীর প্রতি আমার চিরকালের আলসেমী ভরা আড়ি। সাজগোজও সহজে করিনা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখি একপাশের কান খালি। সেটি খুঁজতে গিয়ে মেঝেতে  কিছু খেলনা থাকায় সেগুলো উঠিয়ে রাখলাম। ব্যাস বেমালুম ভূলে গেলাম দুলটির কথা। পরে একজন খুব চুপি চুপি দুলছাড়া কানটি দেখে ফেলে যখন বলল, আর একটা কোথায়? তখন আবার খুঁজতে শুরু করলাম, পেয়েও গেলাম। মনে পড়লো আমার একটা পিচ্চি দুই আঙ্গুলের দুষ্ট মিষ্টি মেয়ে আছে, সেই পন্ডিত,বিজ্ঞানী মানুষটি আমার কানে ঝকঝকে নতুন কিছু দেখে টান দিয়েই খুলে নিয়েছে,নিয়ে সেটা মুখে পুরে আগে পরীক্ষা করে  দেখেছে খাওয়ার যোগ্য কিনা, অযোগ্য বুঝতে পেরে ফেলে দিয়েছে।

এবার আসি দ্বিতীয় ঘটনায়। আমার একজন ছেলে আছে অসম্ভব রকমের প্রশ্ণবানে সারাক্ষণ আমায় ব্যস্ত রাখে। উত্তর পারলে বলবে একদম ঠিক, টুয়েন্টি পয়েন্ট। না পারলে মুচকী হেসে বলবে তোমাদের এটা ছিলোনা?যে ছেলেটি  খুব পছন্দের কোনকিছু নষ্ট হয়ে গেলে কেঁদে দুচোখ ভাসায় সেই পছন্দের জিনিসগুলোই যদি তার পিচ্চি বোনটা নষ্ট করে তখন সে হেসেই উড়িয়ে দেয়, ওটা আর এমন কী? কখনো আমি যদি বলি শিজাকে মার দিই? তখন খুব আদুরে কন্ঠে বলবে, না বাবা ও কী আর বোঝে? ওকে কি আর মার দেয়া যায়! এভাবেই কিছু কিছু মুহূর্ত কাটে।

তৃতীয় ঘটনা,
পারিবারিক বৈঠক চলছে। কুরআন  তেলাওয়াত করছিলাম আমি, হঠাৎই পুচকে ঐ মেয়েটা আমার দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এলো, এসে মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বুঝলাম তেলাওয়াতটা ওর মগজে স্থাপিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

শেষ ঘটনা,
মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার জন্য পরিসংখ্যানের অংক করছিলাম। এলোমেলো অগোছালো আমার চারপাশ, সাথে আমার আনাড়ী অসুন্দর চুলগুলোও। বুয়া এসেছে খানিকটা পরিচ্ছন্ন করে দিতে। বুয়ার দিকে একবার খেয়াল করলাম,সে মিটমিট করে হাসছে, মনোযোগ দিলামনা এখন অংকে মনোযোগ দেয়া বেশী জরুরী। কিন্তু মন উসখুস করছে কেন হাসলো? আবার তাকিয়ে দেখি আবার হাসছে আমার তাকানো দেখে হাসি থামিয়ে,
-আফা একটা কথা!
আমারও উৎসুক প্রশ্ন,
-কী!
-আপনেরে এহন মডেল মডেল লাগতাছে! আপনের চুলগুলা মডেল গো মতো হইছে ........
আমি রীতিমতো হা করে তাকিয়ে আছি, মনে মনে আবেগীয় খুশি, ওমা তাই নাকী তাহলে তো আয়না দেখতে হয়! এতো এলোমেলো চুল, শুধু স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধোয়া মুখমন্ডল  যদি কোনরকম পার্লারিং না করেই মডেলদের লাগে তাহলে এই বুঝি মডেলের সংজ্ঞা!

এইসব ছোট ছোট দিনযাপন, মুহূর্তেই কিছু কিছু অনাহূত নিঃসঙ্গতাকে দুরে ঠেলে দেয়, অবমূল্যায়নের হীনমণ্যতাকে ছুড়ে ফেলে দেয় আবর্জনাময় নর্দমায়। তখন খোলা আকাশের নিছে দাঁড়িয়ে বিস্তৃত সবুজকে সাক্ষী রেখে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে,
ইয়া রব! আমি ভালো আছি, তুমি আমাকে ভালো রেখেছ। সাথে একটা আঁকুতি থেকে যায় মাবুদ আব্বুর সাথে জান্নাতে দেখা করিয়ে দিও। তখন চোখের কোণের দু ফোটা চকচকে বিন্দু আকাশের নীলকে ঝাপসা করে দিতে মুহুর্ত সময়ও নেয়না।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)