সাহিত্য

শত কোটি গল্পের ভীড়ে

শত কোটি গল্পের ভীড়ে
th   ২৭ এভাবেই চলছিলো। মানুষের দীর্ঘ জীবনের এক একটা পার্ট এভাবেই চুকিয়ে যায়। আর মানুষগুলো এগুতো থাকে মৃত্যুর দিকে। মণিকা ডাক্তার হয়েছে, ওর বিয়ে হয়ে গেছে। বেশ ভালোই চলছিলো সবকিছু ,দুইবোনের ভালোবাসা আজও আগের মতোই। আনিকার কাছে বিদায় নিয়ে রাস্তায় নামে ঈশান। ঈশান গাড়ী থেকে নেমে হাটছিলো, অদৈত সাদিয়ার (চায়না রাণী) ব্যাপারে জানতে চেয়েছে বাধ্য হয়ে এদিকে আসতে হয়েছে। এক জায়গায় প্রচন্ড ভীড় দেখে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করে সে। দ্রুত কন্ঠে বললো, -কী হয়েছে? এখানে একটু ভেতরে যেতে দিন প্লিজ! একজন বলে উঠলো, -এই এক্ষুনি ঘটেছে ঘটনাটা, এটা কিন্তু একসিডেন্ট না খু...! খু...! আমি দোকান থেকে নিজে চোখে দেখেছি! একটা গাড়ী এসে বারবার তাকে তাড়া করছিলো, উনি ভয় পেয়ে আমার দোকানের পাশে এসে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। উপায় না দেখে গাড়ীর গ্লাস খুলে ইয়া বড় একটা রামদা পেটে বসয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঈশান কেবলই ভেতরে ঢুকেছে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থকলো অনেক্ষণ পাশ থেকে লোকেদের উৎকন্ঠা, -চেনেন আপনি? ওনাকে কি চেনেন ? অনেকবার এই এলাকায় দেখেছি। ঈশান স্বাভাবিক হতে সময় নেয়। হাটু গেড়ে পাশটায় বসে পড়ে, অজান্তেই দুচোখের কোণ ভিজে ওঠে ধরা গলায় বলে, -হ্যা চিনি। আপনারা নিবেদিতাকে চেনেন? অনেকে একসাথ, -হ্যা হ্যা চিনি, ঐ গলির মুখে থাকে। কেউ কেউ বললো, -আমার দোকানে পণ্য নিতে আসতো! -আর এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে দেখেছি, এও মহিলাও সাথে থাকতো। ওর মা নাকী? ঈশাণ স্থীর কন্ঠে, -না মাসী, আর আপনার একটু কয়েকজন মহিলাকে ডাকুন। ওনাকে ভেতরে নেয়ে যাক। এরই মধ্যে পুলিশ, মিডিয়া সব এসে গেছে, সাদিয়ার কতোগুলো ছবি উঠায় মিডিয়া। মহিলারা আসার পর একজনে ঈশাণ প্রায় ফিসফিসিয়ে, -হালকা গরম পানিতে বড়ই পাতা দিয়ে গোছল করাবেন। মহিলাটি অবাক কন্ঠে, -ওতো হিন্দু বাবাজি! -উনি মুসলমান হয়েছিলেন। -ওমা তাই! খুব ভালো খুব ভালো ঠিকআছে তুমি ভেবোনা কিন্তু আমি পোড়ানো বন্ধ করব কিভাবে, ওরতো আত্মীয় স্বজন আছে, আর এখানে এক স্থানীয় হিন্দু প্রভাবশালী লোক আছে তার উপরে কথা বলা....... -সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা। আমি এখানে কথা বলে আসছি। ঈশান একজন ইন্সপেক্টরকে চুপিচুপি কিছু একটা বলে, আর ইন্সপেক্টর মিডিয়াকে আপাতত লাইট ক্যামেরা বন্ধ করার ঘোষণ দেয়। ঈশাণের ছবি ছাড়া, ওর পরিচয় ছাড়া সবটা কাগজের পাতায় আর টিভির পর্দায়......................................... ২৮ ছোট্ট একটা শশ্মানঘাট! পোড়ানোর বন্দোবস্ত চলছে, চিৎকার করে কাঁদছে রাইমা, নিবেদিতা। নিবেদিতার কন্ঠ দিয়ে মাসী মাসী শব্দটি বের হচ্ছে বারবার। ঈশাণ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, -আপনারা পোড়ানোর ব্যবস্থা বন্ধ করুন, তারচেয়ে বরং জানাজা, দাফনের ব্যবস্থা করুন। একমাস আগে উনি মুসলমান হয়েছেন। উপস্থিত সবার দৃষ্টি ছানাবড়া! চমকে ওঠে রাইমা স্যান্যাল। বিশ্বাস করতে চায়না। নিবেদিতা ফুঁফিয়ে কাঁদে বলে, -মা, মাসী কাল বিকেলেই আমাকে বলেছিলো যে, "আমি মারা গেলে তুমি কিন্তু আমাকে পোড়াতে দেবেনা, আমাকে কবর দিতে বলবে ঠিক আছে?" রাইমা চুপ হয়ে যায়। ঈশাণ আনিকাকে ব্যাপারটা জানায়, আনিকা আসে। ভোরবেলা অদৈত এসে ওর ফ্লাটে ঢোকে পত্রিকার প্রধান শিরোনামে ওর দৃষ্টি আটকে যায়, বড় বড় করে লেখা আছে, "কুখ্যাত সন্ত্রাসী অদৈত বর্মণের পরিচয় ফাঁসঃ মুসলমান হবার কারণে একজন মহিলাকে খু..."  দেখেই চিৎকার করে ওঠে, -এই তোরা কে কোথায়? দ্রুত টিভি ছাড়! নিতাই,  সামাদ, সহ নতুন দুজন মহিলা পড়িমড়ি করে অদৈতর সামনে আসে, রাগে আগুন সম অদৈতর দুচোখ দেখে পত্রিকার দিকে তাকায় সবাই। টিভি ছেড়ে দেয় এক মহিলা। অৈত পুরাতনদেরকে ছাটাই করেছে, তার মধ্যে লিজাকেও নতুন আরও কয়েকজন এসেছে। সামাদ ভীত কন্ঠে, -এটা ঈশানেরই কাজ অদৈত...................... -এই চুপ! একদম চুপ একটা কথা হবেনা! যে এটা করেচে তার জীবে আর মাত্র দু দিন আমি তার যমদূত! টিভিতে হুবহু সেই খবরটায় প্রচার করা হচ্ছে! সাথে অদৈতর ছবিও দেখানে হচ্ছে, আর বলা হচ্ছে, "এই সন্ত্রাসীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে পাঁচলক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে! অদৈত প্রায় পাঁচ মিনিট কিছু একটা ভেবেই দ্রুত কন্ঠে, -দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে ফেলো, আমরা শিফট করবো, যারা এখানে নেই, তাদরকে জানানের দরকারও নেই। খুব সমস্যা হলে আমরা ইন্ডিয়ায় চলে যাবো, ওখান থেকে হবে আসল তেলেসমাতি! (আগামীতে সমাপ্ত)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)