
অনেকেই বলেন- এতো হিজাবি রাস্তা ঘাটে তবুও ইভ টিজিং কেন বন্ধ হয়না? তারমানে হিজাবের কোন বাস্তবিক প্রভাব সমাজে নেই!
বিষয়টাকে একটু অন্যভাবেও দেখা যায়। সমাজে অনেক হিজাবি বেড়েছে সত্যি, কিন্তু আনুপাতিক হারে গণমাধ্যমগুলোতে হিজাবিদের উপস্থিতি বাড়েনি, সমাজের রোল মডেল হিসেবে এখনো নন হিজাবিরাই প্রাধান্য পাচ্ছে। তাছাড়া আজকে অমুক মন্ত্রী, কালকে অমুক ভার্সিটিতে হিজাবি ছাত্রী বের করে দেওয়া , পরশু হিজাব পড়ার অপরাধে চাকরীতে নিয়োগ না পাওয়ার মতো ঘটনাও কম নয়। তারমানে এই দাড়ায়, জনগন এই আব্রুকে বরণ করে নিলেও প্রশাসন কিংবা মিডিয়া বিষয়টাকে খুব সহজভাবে নেয়নি। বরং অবদমন করতে চাইছে। আর ইভ টিজিং এর শিকড় ও এইখানেই। গণমাধ্যমে যখন নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ হয় সেটা একজন নারীর শারীরিক অবয়ব হিসেবে আর থাকেনা! সেখানে সামস্টিকতা চলেই আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের কে বিজ্ঞাপনে কাজের বুয়া, বাথরুম পরিষ্কারক কিংবা জাস্ট সৌন্দর্য বর্ধনের প্রসাধনীর ভোক্তা ছাড়া অন্য কোন গঠনমূলক ভূমিকায় দেখানোই হয়না।
আর নারী দেহের ইঞ্চি ইঞ্চি কিংবা দেহ ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের তো কোন অভাব নেই। এমনকি আফটার শেইভ লশন কিংবা পারফিউমের বিজ্ঞাপনেও নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে নারী যে একটা পণ্য এই ধারণাই আপামর জনতার মধ্যে বিকশিত হয়।
কিছুদিন আগে নাওমি ওলফ নামক এক বিধর্মী সাংবাদিকের একটা লেখা পড়েছিলাম। বিষয়বস্তু ছিল হিজাব বা শরীর ঢাকার বিষয়ে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে- পশ্চিমা নারীরা বেশীরভাগ সময়েই মানসিক অশান্তিতে ভোগে, তাকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে। বিশেষ করে, ফিজিক্যাল ফিটনেস নিয়ে তারা সারাক্ষণ দড়ি টানাটানির মধ্যে থাকে। চিন্তায় ভোগে যে কখন কোমরের ভাঁজ কিংবা একটু মুটিয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে কেউ মন্তব্য করে বসে। যেখানে, মুসলিম মহিলারা এই ধরণের সমস্যায় ভোগে না বললেই চলে, কেননা তারা কভার করে শরীর এবং চুল।
এটা হয়তো গবেষণা দেখেই এভাবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে পশ্চিমা নারীদের মানসিক অসন্তুষ্টি নিয়ে লেখা হয়েছে। আমার মনে হয় পৃথিবীর সব দেশেই যারা শরীর ঢাকে তাদের চেয়ে যারা শরীর ঢাকে না তাদের এই দেখানো বিষয় নিয়ে অনেক মানসিক অসন্তুষ্টিতে ভুগতে হয়।
ইউভন রিডলি , যিনি আফগানিস্তানে সাংবাদিক ছিলেন, তালেবানদের সাথে থেকে থেকে যিনি ইসলামকে জানতে শিখেছিলেন, হিজাবের মর্ম তিনিও বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করে বলেছিলেন- যে লেখক লেখে তার চেহারা কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য কেউ না দেখলেও লেখার প্রয়োগ বা আবেদন কোন অংশেই কমে যায় না। যে রেডিও আরজে রেডিওতে কথা বলে, তার চেহারা না দেখার অপরাধে কেউ তো বলে না যে সে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে না!
যারা চেহারা কিংবা বাহ্যিক উপস্থাপনাকে সামাজিকীকরণের একমাত্র মাধ্যম মনে করেন, তাদের জন্য হিজাবের এই বৈশ্বিক দিকটা অনেকটাই অনুকরণীয় হতে পারে।
পুরুষ অর্থ উপার্জন করে, আর নারী জাতি গঠন করে। একজন মাকে অবশ্যই অনুকরণীয় হতে হবে তার সন্তানের কাছে, তার নিজের মেয়ের কাছে।
অন্ধভাবে মিডিয়া আমাদের যা শেখায় তা না বলে যে কোন জিনিষ নিয়ে গভিরভাবে ভাবতে পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতো অনেকখানিই। আর হিজাব কীভাবে পড়বে, কি হবে তার মাধ্যম তার সঠিক ব্যবহার নিয়েও অনেক ভাবার বিষয় আছে যদিও, তবুও বলি! শুরুটা কিন্তু খারাপ না, সেটা যেভাবেই শুরু হোক। আর হিজাবিদের ও সচেতনভাবেই জানতে হবে, হিজাব কেন পড়ছেন! নাহয়, সুশীল অভিযোগ কিংবা প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়েও তাল গোল পাকাতে হবে- তোমাকে নিশ্চয়ই ফ্যামিলি থেকে চাপ দেওয়া হয়! কিংবা মাথায় চুল নাই তাই বুঝি মাথা ঢাকো?
এইসব কারনেই ইভ টিজিং এর মতো বিষয় ঘটছে। ইভ টিজিং মানেই তো নারীকে অপদস্ত করা তাই না?
সেটা মিডিয়া করতে পারলে পাড়ার ছেলেরাও করতে পারে! এখানে বোরখা হিজাবকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বরং এর ব্যবহার আরও বাড়িয়ে এটাকেই রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা সময়ের দাবী!
শুভ হোক বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হিজাবিদের পথ চলা। বিশ্ব হিজাব দিবসে আজকের দিনে এটাই চাওয়া!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)