
১...
-ছাইকাঠি দেখেছো আকাশ?
প্রশ্নকর্তা উত্তরের অপেক্ষায় কিছুক্ষণ। কিন্তু উত্তরদাতা নির্বিকার। তাই দেখে নিজেই বলতে শুরু করে,
-তুমি কী করে দেখবে! রাজকীয় স্বকীয়তায় বড় হয়েছো। ছাইকাঠি দেখা তো দুরের কথা এটার অর্থই হয়তো জানোনা.........
আকাশ নামের মূর্তিসম স্থীর মানুষটিকে জোরে ঝাকায় অনিক,
-কী কথা বলছনা কেন?
আকাশ তবুও চুপ, বসে আছে ছোফার এক কোণায়, যেন জায়গার খুব সংকট।
অনিক নিজেকে কনট্রোল করতে পারেনা, বিমর্ষ আকাশের ভীত মুখাবয়ব দেখে একটুও মায়া হচ্ছেনা, সে এবার দৃঢ় কন্ঠে,
-পুলিশকে আমি জানাবো এবার, দেখি আমায় কী করে আটকাও।
আকাশ এবার নড়ে চড়ে বসে, হাসারও চেষ্টা করে,
-অনিক! মিথ্যা কথা বলছো তুমি, তুমি তো আমার খুব ভালো বন্ধু! তাইনা বলো??
-তুমি জানোই আমি মিথ্যা কথা কখনোই বলিনা।
কথা শেষ করার আগেই টেলিফোনে নাম্বার চাপতে শুরু করে দেয় অনিক। আকাশ এবার তড়িৎ বেগে উঠে এসে অনিকের বাম বাহু শক্ত করে ধরে, নিজের মুখোমুখি ঘুরিয়ে নিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে,
-তুমি খুব ভালো করে জানো আমার বিন্দুমাত্র ক্ষতির জন্য আমি কি অবস্থা করতে পারি রক্তের বন্যা বয়ে যাবে বলে দিলাম।
অনিক আকাশের বুকে ডান হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, রাগান্বিত কন্ঠে
-এছাড়া আর কী করবি তুই হ্যা? এতো বড় অপরাধ করে আসার পরও কোন রকম অনুতপ্ত হওয়ার ইচ্ছা পর্যন্ত নাই। ছিঃ!
২...
অনিক শক্ত প্লান করেছে আকাশের সাথে আর মোটেও মিশবেনা, ওরা একসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছে। আকাশ বাউন্ডুলে প্রকৃতির, বাবার অগাধ সম্পদের ব্যাবহার তার যত্রতত্র, তবে ভালো কাজে তা খুব কমই ইউজ হয়, হাজারটা গার্লফ্রেন্ডেও তার মন ভরেনা- ক্যাম্পাসে একজন, ফেসবুকে একজন, মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা কারো সাথে চালিয়ে যায় প্রেমালাপ, অর্থাৎ যেখানেই তার পদার্পন ঘটে সেখানেই গার্লফ্রেন্ডের খোঁজ। অনিক বহুবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে, এসবের পরিণতি খুব একটা ভালো হয়না। কে শোনে কার কথা?। শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের গার্লফ্রেন্ডকে খু... করে পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়েছে আকাশ, ঐ মেয়েটাও ওদের সাথেই পড়তো। অনিক খুব সাধারণ পরিবারের সন্তান, নুন আনতে পান্তা ফুরায় টাইপের, বাবা নেই তাই পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি সহ পার্ট টাইম জব গুলোতে ওর অংশগ্রহন মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি, পাঁচ ভাইবোনের বড় সে, বোনের বিয়ের জন্য আবার টাকাও জমাচ্ছে।
অনিক ওর ষ্টুডেন্টের বাসায়, চা কাপ ওর ডান হাতে, মোবাইলটা বেজে ওঠে, প্রতিদিনের মতো ওর ষ্টুডেন্ট মুচকী হাসে, ভ্রু কুঁচকে একবার ওর দিকে তাকিয়ে মোবাইল রিসিভ করে অনিক,
-হ্যালো!
ওপার থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে,
-কে অনিক নাকী?
-হ্যা, কে বলছেন?
-আমি বাবা, তিথির আম্মু, তিথি তো কাল রাত থেকে আজ এখন রাত দশটা, বাড়ি ফেরেনি তুমি কী জানো ও কোথায়?
অনিক কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক থাকে, তারপর নির্দয় কন্ঠে বলে,
-না তো আন্টি আমি জানিনা...............!!
কেটে যায় লাইন, ছাত্রের মুখের দিকে তাকায় অনিক, এখনও সে মিটিমিটি হাসছে। অনিক বললো,
-আবিদ, তুমি আমার মোবাইল বাজলে হাসো কেন?
-স্যার আপনার রিংটোনটা হাস্যকর তাই।
-ও! এরচেয়ে ভালো টোন আমার মোবাইলে নেই আবিদ! সস্তা মোবাইল তো?!
আবিদ কিছু বলেনা। চুপচাপ ওর লেখা শেষ করে।
৩...
পরেরদিন বিকালবেলা।
-প্লিজ, সুইট হার্ট, সবইতো তোমার জন্য।।। স্কাইপিতে আকাশ এক অদ্ভুত সুন্দর মেয়ের সাথে, কথা বলছে। মেয়েটাকে দেখেই ওর মাথা ঘুরে গেছে।
-ও! তাই নাকী?
-তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা.........
অনিক ভেতরে ঢোকে, বিশাল একটা রুম আকাশের, বর্ণিল সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা রুমটা.........
আকাশ ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকায়, অনিকের দিকে......
-এটা কী আসার সময় হলো?
-হ্যা হলো, এতো সস্তা সস্তা সেনটেন্স তুমি সবাইকে বলো নাকী আকাশ?
-মানে?...... দাড়াও পরে,
ল্যাপটপে মেয়েটার দিকে তাকায়,
-একটু পরে কথা বলি?
-ঠিক আছে।
সাইন আউট হয়ে,
-কী ব্যাপার অনিক হঠাৎ এসময়? সস্তা সেনটেন্স কোনগুলো? "আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা"!!
-এসব সস্তাইতো, নাটক সিনেমার কথা...... যাইহোক .........
-আরে অনিক, মেয়েরাতো এগুলোই গিলতে থাকে......
-তিথির মা ফোন করেছিলেন।
আৎকে ওঠে আকাশ,
-কী বললো?
-তিথি কোথায় জানতে চাচ্ছিলেন।
-তুমি কী বলেছো?
-জানিনা বলেছি। আকাশ এখনও সময় আছে নিজেকে শুধরে নাও, আত্মসমর্পণ করো!
আকাশ কথা না বলে কিছু একটা ভাবে, অনিক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, নিরবতা বিরাজ করছে। অনিকের মন খুব খারাপ, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আকাশের সম্মতি না পেয়ে বের হয়ে চলে যায়।
৪...
প্রতিদিনের পরিশ্রমের ফলে অনিক বিছানায় শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। হালকা ঘুম এসে গেছে, মোবাইলটা বেজে ওঠে। মেসের অন্য সদস্যরা যার যার মতো নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। আকাশের ফোন আসায় বিরক্ত অনিক, রিসিভ না করে ভাইব্রেশন ছাড়া সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। ফলে ঘুমে আর ডিস্টার্ব হয়না। রাত একটা নাগাদ, অনিকের রুমমেটের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে অনিকের, ঘুমকাতুরে,বিরক্তিভরা কন্ঠ অনিকের,
-কী হলো?
-ওঠ, তোর ফোন এসেছে।
-আকাশের ফোন রিসিভ করবোনা।
অনিক কাঁথা শরীরে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে পাশ ফিরে শোয়।
রুমমেট আবারো ডাকে, তিথির বোন ফোন করেছে।
লাফিয়ে ওঠে অনিক রুমমেটের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়,
-হ্যালো! বিথি!
বিথির কান্নাজড়িত কন্ঠ,
-অনিক ভাইয়া, আপুকে পাওয়া গেছে, আপু এখন হাসপাতালে আই সি ইউ তে...... দোয়া করবেন প্লিজ। আর .......
৫...
আই সি ইউ কেবিনের সামনে বিথি। অনিক দ্রুত এসে ওর পাশে দাড়ায়, শংকিত কন্ঠে,
-এখন কী অবস্থা?
-কী জানি ডাক্তার কিছু বলছেনা, আম্মু ভেতরে গেছে, আপু নাকী কথা বলতে চেয়েছে।
-ও! আকাশ আসছে, একটু দেরী হবে।
-আমার মনে হয় উনি আসবেননা, যদি আমার ধারণা সঠিক হয়।
-কী রকম?
-আপু শেষ যেদিন বাসা থেকে বের হয় সেদিন আমাকে বলেছিলো - "আকাশের সাথে একটা বোঝাপড়া করে তবেই ফিরবো" কিন্তু ফেরেনি। আর এখন এই অবস্থা। আমি ওনাকে ছাড়বোনা।
অনিক ভাইয়া আমি জানি আপনি ওনার বন্ধু কিন্তু আপনি সম্পূর্ন আলাদা একজন মানুষ জেনে শুনে এতো খারাপ মানুষের সাথে কেন আছেন?
কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যায় অনিক, তবুও বলে,
-দ্যাখো বিথি, আমি চেয়েছিলাম ওকে বুঝিয়ে ভালো পথে নিয়ে আসতে, কিন্তু পারলামনা।
বিথির বাবা এসে দাঁড়ান গম্ভীর ও ব্যাথাহত কন্ঠে,
-তুমি কী জানো সেটা বলো অনিক, সেদিন ঠিক কী ঘটেছিলো?
অনিক মাথা নিচু করে, চারপাঁচজন পুলিশ এসে অনিকের হাতে হাতকড়া লাগায় হতবাক হয়ে যায়, অনিক, বিথি আর তার বাবা। পুলিশ দাঁতে দাঁত চেপে, আকাশ সাহেব ব্যাপারটা না জানালে তো জানতামইনা.........
অনিক দ্রুত কন্ঠে,
-কীসের ব্যাপারে, আর আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন?
-এহ ন্যাকা চলো, টের পাবে .........
-খু...ের চেষ্টা করে ন্যাকামী হচ্ছে না?........................
জীবন পথে যখন কেবলই মোড় ঘুরে আনন্দের দেখা পাওয়ার কথা, অমনি বিশাল এক ধাক্কা এসে অনিককে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিলো। মিথ্যা এভাবেই সবটা নষ্ট করে দেয়। আর এভাবেই প্রতারিত হয় কেউ কেউ!
সমাপ্ত
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)