
তসলিমা নাসরিন ছোট বেলায় মায়ের চাপে সুর করে কুরআন শরীফ পড়তেন। কিন্তু ভাষা দুর্বোধ্য হওয়ায় সেই কুরআনকে হৃদয়ে ধারন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখছিলাম। একটা হিজাব পড়া মেয়ে কোন একটা বিষয় নিয়ে আরবিতে কনফেস করছে। নীচে আরবি লেখাও উঠছিল টাইটেল হিসেবে। কিছুটা আরবি জানায় ভাসা ভাসা কিছু অর্থ যদিও বুঝলাম , কিন্তু পুরাপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে পারলাম না ব্যাপারটা। অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস যাকে বলে। ভালো করে কয়েকবার দেখেই ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল। যাক ! তাও তো না বোঝার যন্ত্রণায় কাতরাতে হয়নি আমাকে।
ভিডিওর উপরে নীচে সমস্ত যায়গায় আরবি কমেন্ট। এটাই যেন একটা আলাদা জগত , আলাদা পরিসর। আর এই একটা পার্থক্যই যেন মুসলিম বিশ্বকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে রেখেছে।
সেটা হলো এই ভাষার পার্থক্য। ব্যাপারটা দুঃখজনক। আমরা একজন বিধর্মীর সাথে যতো সহজে পরিচিত হতে পারি, তার কালচারের সাথে একাত্ম হতে পারি, ঠিক ততোটাই দুরূহ যেন আমাদের নিজেদের কালচারের সাথে খাপ খাওয়ানো।
আমাদের দেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রকৃত মুসলিম হওয়ার ধাপ হিসেবে যে জিনিষটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে- কুরআন খতম করা।
যে কোন বাসায়ই ইসলামী আচার আচরণ শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হলে বাবা মা বলেন- আরে ও তো ২ বার কুরআন খতম দিয়েছে! তারপরেও যে এমন বেয়াড়া কেন হলো ছেলেটা!
অথচ, যেই কুরআন সে খতম দিয়েছে তার একটা আয়াত ও হয়তো মনে লালন করতে পারেনি। কিংবা সেই যে বাল্যকালে একবার কুরআন খতম দিয়েই ধর্মের সব নৈতিকতা শেখা হয়ে গেছে, এই বদ্ধমূল ধারনা থেকেও বাবা মা বের হতে পারেন না। অথচ, ঐ কুরআনের আদেশ নিষেধ সে জানেই না, ভ্রুক্ষেপ করার তো প্রশ্নই আসে না!
ধরুন , আপনি কোন একটা বই পড়ছেন। ক্যারিয়ারের গাইড লাইন হিসেবে , হতে পারে একটা চাইনিজ বইই। টানা পড়েই গেলেন , অথচ বুঝলেন না কি লেখা আছে এতে।
অর্থ না বুঝে, গাইডলাইন পড়ে আসলে কি কোন লাভ হয়? যে জিনিষের অর্থই আপনি জানেন না, সে জিনিষ আরবিতে লেখাই হোক আর চাইনিজে তাতে কি বা যায় আসে? তোতা পাখির মতো আওড়ানো কি মানুষের জীবন বিধানের চূড়ান্ত ঠিকানা হতে পারে কখনো?
আর আল্লাহ কুরআনেই বলেছেন আরবি সবচেয়ে সহজ ভাষা। বাস্তবিকই তাই। আপনি যখন আরবির শব্দগুলো জানবেন , সর্বনাম জানবেন তখন আরবি বুঝতে আপনার খুব সময় লাগবে না।
আমাদের বাচ্চারা কিন্তু অনেক মেধাবী । ডরেমন দেখে যদি ওরা হিন্দিতে ইচ্ছা মতো কথা বলতে পারে , আরবি কেন বুঝবে না? শুধু আমাদের দোষ। বিষয়টাকে আমরা মৌলিক হিসেবে পাত্তা দেই না, এটা আমাদের কাছে অপশনাল।
চাকরীর জন্য মানুষ কতো ভাষাই তো শিখে। তখন সময় নেই, কাজের চাপ ,পড়ার চাপের কোন অজুহাত থাকে না। শুধু অজুহাত আল কুরআনের ভাষা কে জানতে। অথচ , এই কারনেই আমরা পুরা মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন , একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোই।
কিন্তু ইচ্ছা থাকলে আরবি জানতে মাদ্রাসায় ও পড়া লাগে না। অনেক বছর আগে মাদরাসা ছেড়ে এসেছি, কিন্তু আজও অনুশীলন না থাকার পরেও ভাষাটা একবারে ভুলে যাই নি। কারন , আল্লাহ এই ভাষা মানুষের হৃদয়ে প্রথিত করে দেন , যে একবার এই ভাষার সৌন্দর্য বুঝতে পারে তার মনে।
অন্য যে কোন ভাষার চেয়ে আরবি সহজ।
এটা আমার কথা নয় , আল্লাহর কথা। আর তার কথাই চিরন্তন, এবং সত্য।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)