বিবিধ

আলো আঁধারের ছায়......

আলো আঁধারের ছায়......
আমার পড়াশোনার বিষয়টিই এমন যে ভালো কথার চেয়ে মন্দ কথাই বেশি শুনতে হয় আমাকে। সুখের চেয়ে জীবনে বিরাজমান দুঃখের কথাই বেশি জানতে হয়। আনন্দময়তার চেয়ে বেদনাক্ত গল্পগুলোই আগে কড়া নাড়ে আমার দ্বারে এসে। মানুষের ভেতরের আলোকময়তার চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্নতাই বেশি উন্মোচিত হয় আমার সামনে। বলা হয়, কোন জিনিস যখন সচারচর সংঘটিত হয় মানুষ সেটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একসময় সেই জিনিসটা মানুষের মনের আর তেমন করে প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন জানি না আমার সাথে এমন হয়নি। এখনো কারো কষ্টের কথা শুনলে, দুঃখের কথা জানলে, বেদনাক্ত চেহারা দেখতে, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে অনুভব করলে খুব বেশি কষ্ট হয়। এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে! তাদের পানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে! যে গোলকধাঁধায় তারা ঘুরপাক খাচ্ছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। অন্ধকারে নিমজ্জিত মনগুলোকে অভয় দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, এই তো আরেকটু এগোলেই পেয়ে যাবে আলোর সন্ধান। ধৈর্য্য ধরে রেখে কদম সামনে বাড়াও। উঁচু নীচু পথ দেখে ভয় পেয়ো না। দূর থেকে দেখছো তো তাই এমন মনেহচ্ছে। যখন চলতে শুধু করবে নিজের অজান্তেই দেখবে পথের সাথে তাল মিলিয়ে, সব বাঁক পেড়িয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছো গন্তব্য পানে ইনশাআল্লাহ।  ‘নানান প্রতিকূলতায় জীবনের পথ যখনই লাগবে খুব দুর্বোধ্য, রাখবে মনে আলো আঁধারের মাঝে আলো সর্বদা অপ্রতিরোধ্য’। এই কথাটা চলার আমি সবসময় মনে রাখতে চেষ্টা করি। তাই যখনই কোন কারণে চোখের সামনে হঠাৎ আঁধারের পর্দা নেমে আসে। নিজেই নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি এই আঁধার ক্ষণস্থায়ী রূপে এসেছে। কেননা আলোকে বেশীক্ষণ আড়াল করে রাখার ক্ষমতা আঁধারের নেই। আমার কাছে যখনই কেউ কোন সমস্যা নিয়ে আসে একথাটাই বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় কেউ কেউ এত বেশি বেদনাহত থাকেন তাদেরকে বোঝাতে গেলে বোঝেন তো নাই, উল্টো ভয়াবহ রকম উত্তেজিত হয়ে যান। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মনের সব রাগ ঝেড়ে গটগট করে উঠে চলে যান। ও হ্যা যাবার সময় স্বশব্দে দরজা বন্ধ করতে ভুলেন না। আমার সাথে এমন যে ক’বারই হয়েছে দরজা বন্ধের শব্দে চমকে উঠেছি ভীষণ ভাবে। মনেহয়েছে ঠিক এতটাই প্রচন্ডতার সাথেই সেই ব্যক্তি তার মনের দরজাটাও বন্ধ করে দিলেন। এরফলে না তার ভেতর থেকে বদ্ধ বাতাস বেড়িয়ে আসতে পারবে, না বাইরে থেকে বিশুদ্ধ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। যারফলে গুমোট পরিবেশে দমবন্ধ করা এক অস্বস্থিতে কাটবে তার সময়। যা তাকে আরো নাজুক ও দুবর্ল করে তুলবে সমস্যার মোকাবিলায়।  এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলেও, তাদের কষ্টগুলোকে মমতার পরশ বোলাতে চেষ্টা করলেও তারা কাউকে সেই সুযোগ দিতেই নারাজ থাকেন। বিদ্বেষে তাদের মনের পেয়ালা এতটাই টইটুম্বুর থাকে সেখানে মমতা মাখা শব্দরা পড়া মাত্র গড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়। জায়গা করে নিতে পারে না কোমল ভালোবাসা। ঘৃণার আগুনের তাপে গলে যায়। ঘৃণার এমন দহন ক্ষমতা দেখে বুক কেঁপে ওঠে। কাছে যেতে চাইলে আমাকেই না জ্বলসে দেয় ঐ আগুন সেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে মনকে। বাবা বলেছিলেন, ক্ষেতে কৃষক যে বীজ বোনে সেই ফসলই ঘরে তোলে। ঠিক তেমনি মানুষের মনেও তুমি যা বুনবে তাই ফিরে পাবে। আমার নিজ অভিজ্ঞতায় মনের ব্যাপারে বাবার কথাটা অবশ্য সবসময় সত্য বলে প্রমানিত হয়নি। ভালো কিছু বোনার পরেও অনেক সময় একদম বিপরীত কিছু ফিরে পেতে হয়েছে অনেক মনের কাছ থেকেই। একসময় ব্যথিত হতাম খুব এটা নিয়ে। মনেহতো আমি এত ভালো ব্যবহার করছি তাহলে মানুষ কেন আমাকে কষ্ট দেয়? কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি যে, অনাবাদী জমির মত কিছু কিছু অনাবাদী মনও আছে। সেইসব মনে যত ভালো কিছুই বোনা হোক না কেন অনুর্বরতার কারণে অবিকশিতই থেকে যায়। যার ফলে উত্তম কিছু ফিরে আসার কোন সুযোগই থাকে না। আবার কত সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে উর্বর জমিরও তো ব্যর্থ হয় ফসল ফলাতে। তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বীকার তো মানুষের মনকেও হতে হয় অনেক সময়। তাই দোষ-গুণ যাচাই বাছাই ইত্যাদি ঝামেলাতে এখন আর যেতে চাই না। ভালোটা দিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি। কারণ উত্তম প্রতিদান দেবার একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। প্রতিদান একমাত্র তাঁর কাছেই আশা করা উচিত।  কিন্তু মনখারাপের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি না। এমন মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা মনকে খুব ব্যথিত করে। এমন মানুষদের প্রতি আমার কখনোই ঘৃণা বা রাগ হয় না। দয়া বা করুনাও হয় না। আমার মায়া হয়। খুব খুব বেশি মায়া। কারণ নিজের স্বল্প জ্ঞান থেকে এইটুকু অন্তত জানি ও বুঝি যে, ব্যক্তি জীবনের তিক্ততা এই মানুষুগুলোকে এমন তিক্ত বানিয়ে দিয়েছে। তাদের মনের তিক্তরার বিষ এমন ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে যে তারা না চাইলেও তাদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে বিষবাস্প। নিজ জীবনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কারো ভেতরের ইতিবাচকতাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখে বলেই একজন মানুষ কোনকিছুর ভেতর থেকেই ইতিবাচক কিছু খুঁজে নিতে পারে না। কোন এক কোনায় যদি এক বিন্দু নেতিবাচক কিছু থাকে সেটা খুঁচিয়ে বের করে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। সুন্দরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা কতোটা ভয়াবহ একটা ব্যাপার হতে পারে? ভাবতে গেলেই আমার দমবন্ধ করা অনুভূতি হয়। কারো মনের বিশ্বাসের প্রদ্বীপ যখন নিভে যায়, সে আলোর মাঝেও অন্ধকার দেখবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমার তাই সেই মানুষগুলোর উপর রাগ হয় যাদের কারণে একজন মানুষ ডুবে যায় আঁধারের চোরাবালিতে।  এজন্যই আসলে কেউ আমাদের যতই আপন বা প্রিয় হোক না কেন, তাকে এতখানিক ক্ষমতা দেয়া ঠিক না যাতে সেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নিভিয়ে দিতে পারে মনের প্রজ্জলিত আলোক শিখাকে। ভাইয়া একদিন আমাকে বলেছিলেন, আমাদের ভাগ্য কিন্তু শুধু আমাদের কর্মফল দ্বারাই নির্ধারিত হয় না। অন্যের কর্মফলের প্রভাবও এতে পড়ে। এটাও এক ধরনের পরীক্ষা। তাই নিজের সাথে সাথে আশেপাশের মানুষের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত। এই কথাটির সত্যতা আমিও অনুভব করি প্রায়ই। যখন দেখি আমার কোন ভূমিকাই নেই অথচ অন্যের কারণে কখনো আমার জীবন খুব বেশি জটিল হয়ে যাচ্ছে, আবার কখনো অনেক সহজ ও সুন্দর। তাই আমিও মনে করি নিজের সাথে সাথে অন্যের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরী। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, না জানি কি হয় সারাক্ষণ এমন আতংকে থাকা। সারাক্ষণ অন্যের পেছনে লেগে তার ভালো কাজগুলোকেও অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করা। সারাক্ষণই সুন্দরের পেছনের নিশ্চয়ই কুৎসিত কিছু লুকায়িত আছে সেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগা। হ্যা অন্যের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কিন্তু সেটা নিজেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। কিভাবে অন্যের নিন্দা ও সমালোচনা করা যায় সেই সুযোগের অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে নয়। চিন্তা ও সতর্কতার দ্বারা জীবনকে সহজ ও সুন্দর করার ইচ্ছাটাকে আমি যতটা সাপোর্ট করি। দুশ্চিন্তা ও অতি সতর্কতার দ্বারা নিজেই নিজের জীবনকে জটিল করে তোলাটাকে ততটাই অপছন্দ করি। ভাগ্যে কি আছে তা তো কারোই জানা নেই। ভবিষ্যৎও অজানা। যা ঘটার তাই ঘটবে। সুতরাং কেন অকারণ দুশ্চিন্তা? কেন অহেতুক অন্যের দিকে আঙ্গুল প্রদর্শন। একজন্য কি আমলনামায় পূন্যের পাল্লা ভারি হবার কোন সম্ভাবনা আছে? নাকি ধারণা নামক মিথ্যায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশী এতে? ভাবে দেখা উচিত আসলে আমাদের!  তাছাড়া আমাদের জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরা নেই। এবং আল্লাহর ইচ্ছাতে সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। কিন্তু জীবনে সংঘটিত কিছু সিদ্ধান্তের উপর আমাদের কোন হাত থাকে না। কোন পছন্দ-অপছন্দ বা মত প্রকাশের অপশন থাকে না। কারণ সেই সিদ্ধান্ত গুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য নেন। সেগুলোই আমাদের নিয়তি। আপাত দৃষ্টিতে কল্যাণকর মনে না হলেও নিয়তির প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য কোন না কোন ভাবে কল্যাণই বয়ে আনে।এমন সিদ্ধান্তগুলোকে চুপচাপ মেনে নেয়াটাকেও তাই দূরদর্শিতা মনেহয় আমার কাছে। এভাবে ভাবলে ও মেনে নিলে মনেও অনেক শান্তি পাওয়া যায়। এবং অন্যেকে দোষারোপ করা থেকেও নিজেকে ব্যহত করা সম্ভব হয়। মন সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রাখি বলেই হয়তো মন শান্ত থাকার প্রয়োজনীয়তা একটু বেশিই গুরুত্বের সাথে দেখি। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দ্বারা মনকে শান্ত রাখার সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রসূ ফর্মূলা যেটা পেয়েছি সেটা হচ্ছে, সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা। আমি বিশ্বাস করি, মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আল্লাহর চেয়ে বেশি কেউ আমাকে জানেন না। এমনকি আমি নিজেও না। তাই এমন কোন বোঝা আল্লাহ আমার উপর চাপাবেন না যা বইবার সামর্থ্য বা যোগ্যতা আমার নেই। আমি মনে প্রাণে আরো বিশ্বাস করি আমাকে ঘিরে আবর্তিত প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট-বেদনা-অপ্রাপ্তি আমার জন্য এক একটি পরীক্ষা। যা আমার জন্য অদূর ভবিষ্যতে কল্ল্যাণকর কিছুতেই রুপান্তরিত হবে ইনশাআল্লাহ। 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ