বিবিধ

ক্ষুদে ডাক্তারদের জন্য স্টেথোস্কোপ

ক্ষুদে ডাক্তারদের জন্য স্টেথোস্কোপ
Print Friendly and PDF  তোমরা কি জান, তোমরা ঘরে বসে নিজেই বানাতে পার স্টেথোস্কোপ আর পরীক্ষা করতে পার নিজের হৃৎস্পন্দন? তুমি এখনও একজন সত্যিকারের ডাক্তার নও, তাতে কী হল? আমাদের আজকের এই মজার সায়েন্স প্রোজেক্টের সাহায্যে তুমিও ডাক্তারদের অপরিহার্য সেই যন্ত্র স্টেথোস্কোপ বানাতে ও ব্যাবহার করতে পারবে। এবার আর তোমাকে ডাক্তার সাহেব হতে রূখে কার সাধ্যি? তাহলে আর দেরি কেন? চল ঝটপট কীভাবে বানানো যায় সেই যাদুর কাঠি অর্থাৎ স্টেথোস্কোপ, তা দেখে নেই! আমাদের যা যা লাগবে-- স্টেথোস্কোপ বানাতে হলে প্রথমেই লাগবে একটি বেলুন, একটি মাঝারি লম্বা নল অথবা পাইপ, দুটো ছোট ছোট ফানেল, কাঁচি, সময় দেখার জন্য একটা টাইমার। এখানে তুমি মোবাইলের টাইমারও ব্যাবহার করতে পার। এছাড়া একটা রাবার ব্যান্ড আর ক্যালকুলেটরও সঙ্গে রাখতে পার। কীভাবে তৈরি হবে আমাদের স্টেথোস্কোপ? প্রথমে নল বা পাইপটা হাতে নিয়ে তার দুপাশে দুটো ফানেলকে আটকে দিতে হবে। বেলুনটা ফুলিয়ে বড় করে তারপর সেটা থেকে আস্তে করে সব বাতাস বের করে দিতে হবে। এরপর কাঁচি দিয়ে বেলুনটার উপরের এক-তৃতীয়াংশ কেটে নিতে হবে এবং কাটা অংশটাকে টেনে একটা ফানেলের খোলা মুখের উপর শক্তভাবে আটকে দিতে হবে। এজন্য চাইলে রাবার ব্যান্ডও ব্যাবহার করতে পার যাতে জিনিসটা ঠিক জায়গা মতো থাকে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আমাদের স্টেথোস্কোপ। কত সোজা দেখলে? তোমাদের নিশ্চয়ই এখনও একটু একটু সন্দেহ হচ্ছে যে এটা দিয়ে আসলেই হৃৎস্পন্দন শোনা যাবে নাকি আমি শুধু শুধু গপ্পো বলে তোমাদের বোকা বানাচ্ছি। তাহলে চল পরীক্ষা করে দেখি আমাদের স্টেথোস্কোপটা কাজ করে কি-না। প্রথমে তুমি নিজের বুকে হাত দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করো তোমার হৃৎপিণ্ডটা ঠিক কোথায় ধুকধুক করছে। তারপর শান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে সেই মুখে বেলুন লাগানো ফানেলটা তোমার বুকের উপর চেপে ধর। মনে রেখ, এখানে ফানেলটা সরাসরি তোমার ত্বকের উপর ধরতে হবে। এবার নলের অপর প্রান্তে লাগান অন্য ফানেলটা তোমার কানে ধরো। দেখবে খুব মৃদু একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। এবার টাইমারটা চালু করে গুনতে শুরু কর ২০ সেকেন্ডে তুমি কতগুলো হার্ট বিট শুনতে পেলে। তারপর সেই সংখ্যাটাকে তিন দিয়ে গুণ করলেই তুমি পেয়ে যাবে এক মিনিটে তোমার হৃৎপিণ্ড কতবার স্পন্দিত হয়। এভাবে তুমি আরও কিছু পরীক্ষা করতে পার। যেমন পাঁচ মিনিট দৌড়ে এসে তারপর আবার একইভাবে নিজের হার্ট বিট মেপে দেখতে পার যে হার্ট বিট কতটা দ্রুত হল। বিষয়টি মজার না? এইভাবে তুমি তোমার আম্মু, আব্বু, আপু, ভাইয়া এমনকি তোমার পোষা প্রাণীর হার্ট বিটও মাপতে পারবে এবং নিজের হার্ট বিটের সঙ্গে তুলনা করে দেখতে পারবে পার্থক্যটা কেমন। এখন নিশ্চয়ই তোমাদের খুব জানতে ইচ্ছে করছে পুরো ব্যাপারটা আসলে কীভাবে সম্ভব হল? সেটাই বলছি শোন। একজন ডাক্তার যখন তার স্টেথোস্কোপ দিয়ে তোমার হার্ট বিট শোনেন তখন তিনি আসলে দুই ধরণের শব্দ শুনতে পান। প্রথমটা দীর্ঘ আর মৃদু একটা শব্দ। আর দ্বিতীয়টা সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র শব্দ। তোমরা নিশ্চয়ই জান আমাদের শরীরে হৃৎপিণ্ডের কাজ হচ্ছে শরীরের সব দূষিত রক্ত ভিতরে টেনে নিয়ে সেটাকে পাম্প করে বিশুদ্ধ বানিয়ে শরীরের বাকি সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সরবরাহ করা। যাতে আমরা ঠিকভাবে সব কাজ করতে পারি। হৃৎপিণ্ড যখন এই বিশুদ্ধ রক্ত বের করে দেয় তখন হৃৎপিণ্ডের ভালভ বা প্রকোষ্ঠগুলি বন্ধ হয়ে যেতে থাকে আর তাতে একটা মৃদু শব্দ সৃষ্টি হয়। আবার দূষিত রক্ত যখন হৃৎপিণ্ডের ভেতর প্রবেশ করে তখন অন্য দুটো ভালভ যাকে বাংলায় কপাট বা দরজা বলতে পার, ওই তীব্র শব্দটা তৈরি করে। আমরা যখন ব্যায়াম বা খেলাধুলা করি তখন আমাদের শরীরের পেশিগুলোতে বেশি বেশি করে রক্ত আর অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য হৃৎপিণ্ড খুব দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে। হৃৎপিণ্ডের ভালভগুলো বন্ধ হবার সময় যেই শব্দটা তৈরি হয় সেটা ফানেলের মুখের ওই বেলুনটাতে একটা কম্পন সৃষ্টি করে। বেলুনের এই কম্পন ফানেলের ভেতর দিয়ে নলের মধ্যে প্রবাহিত বাতাসেও কাঁপন ধরায় যার ফলে হৃৎস্পন্দনের ওই মৃদু শব্দ নলের বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তোমার কানে পৌঁছে যায়। দেখলে তো, বিজ্ঞান জানা থাকলে কত সহজে কঠিন একটা জিনিস বানিয়ে ফেলা যায়। আবার সেটা কীভাবে কাজ করে তাও ব্যাখ্যা করা যায়। তাই এখন থেকে আমরা বেশি বেশি করে বিজ্ঞান চর্চা করব, নতুন নতুন জিনিস শিখব আর আরও নতুন জিনিস শিখার ইচ্ছা মনে নিয়ে বড় হতে থাকব। bdnews24.com

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন
আমার আমি

আমার আমি

গাঙচিল

২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

Create your own tune – 4

Create your own tune – 4

গাঙচিল

১১ জুন ২০২০

আপনি কেমন মা?

আপনি কেমন মা?

গাঙচিল

৪ ডিসেম্বার ২০১৯