সাহিত্য

শত কোটি গল্পের ভীড়ে

শত কোটি গল্পের ভীড়ে
২৩ দুদিন হলো আনিকা আর মণিকা ধানমন্ডিতে এসেছে। সবার সাথে বেশ মানিয়ে নিলেও সাহারা খাতুন নিজে থেকেই একটু দুরত্ব বজায় রেখে চলছেন। মণিকা এক্সিডেন্টের পর থেকে পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে গেছে। এখন আগানোর চেষ্টা করছে। আনিকা নিজের রুমে ছিলো ওর মোবাইলটা বেজে ওঠে অচেনা এক নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করে সালাম দেয়, ওপার থেকে সালামের উত্তর আসে কিন্তু আনিকা যারপর নাই অবাক হয় উত্তর শুনে, ওর মনে হল এই প্রথমবার উত্তরদাতা সালামের জবাব দিচ্ছে। সালামের জবাব দিয়ে ওপার থেকে বলল, -আমাকে চিনতে পেরেছো? আনিকার চিনতে একটু দেরী হলেও চিনে ফেলে, মুচকী হেসে, -তোমাকে চিনবনা? কেমন আছেন বলো, হঠাৎ আমাকে ফোন করলে?কোথায় তুমি? -আনিকা তোমাকে খুব দরকার, আমি বাইরে একটা দোকান থেকে কথা বলছি তুমি একটু নামো, জরুরী দরকার আছে। -কিন্তু আমিতো এখন আর আশুলিয়ায় থাকিনা, এখন ধানমন্ডিতে চলে এসেছি, তুমি বরং ২৭ নাম্বার রোডে চলে আসো, কিন্তু তুমি আমাকে কেন ডাকছো? -অনেক দেরী হয়ে গেছে আনিকা, আর দেরী করতে চাইনা......... আমি মুসলমান হতে চাই আনিকা! -কী বলছো দিদি! মানে আমি কী স্বপ্ন দেখছি!............... উচ্ছাস আর আনন্দের আতিশয্যে আনিকা পারলে লাফায় যেন। ২৭ নং রোডের একটা কফিশপে ঢোকে আনিকা। ঢুকেই এদিক ওদিক তাকায়। চায়না রাণী বর্মণকে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে সেখানে গিয়ে দুটো স্যান্ডউইচ আর কফি অর্ডার করে। চায়নাকে দেখে খুশি হয় আনিকা, শাড়ী পরেছে ঠিকই কিন্তু যথেষ্ট পর্দা করার চেষ্টা করেছে, মাথায় একটা স্কার্ফও পরেছে। আনিকা কিছু বলার আগেই চায়না আনিকার ডান হাত ধরে আনিকা অনুভব করলো চায়নার হাত বরফশীতল হয়ে গেছে, -আনিকা আমার আর দেরী সহ্য হচ্ছেনা প্লিজ কি কি করতে হবে বলো। আনিকা যত্ন সহ কালেমাগুলো পাঠ করায়, সাথে অর্থও বুঝিয়ে দেয়। চায়না কফিতে চুমুক দিয়ে, -আমি এগুলো আগে ষ্টাডি করেছি আনিকা! আনিকা সান্ডউইচ খাওয়া শেষ করে, ভ্রু কুঁচকিয়ে, -ষ্টাডি? কিসের কথা বলছো? -কুরআন, বাইবেল, গীতা আমার এক ফ্রেন্ড আছে তানিয়া তানভীর...... আনিা বিস্মিত কন্ঠে, -ম্যাম তোমার ফ্রেন্ড? মলিন হয় চায়না মুখাবয়ব, -হুম সে জন্যইতো, ওকে সেদিন নকল করে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম......... -সেসব থাক দিদি, তোমার একটা নাম দিয়ে দিই কী বলো! সাদিয়া নামটা তোমার কেমন লাগছে? -সুন্দরতো! আচ্ছা শোন কথা বলতে বলতে ছাড়লাম, আমি ষ্ডাডি কে কিছু অংশ বুঝিনি তাই ঈশান কে ডেকেছিলাম ও ব্যাখ্যা করে দিয়েছে। চেনোতো ঈশাণকে? নামটা শুনেই আনিকা লজ্জায় লাল হয়ে যায় যেন, মুচকী হেসে মাথা নিচু করে......... হঠাৎ চায়না প্রায় চমকে উঠে, ওমা আনিকা,  ঐতো ঈশাণ দেখো চলো পরিচয় করিয়ে দিই। আনিকা চায়না দৃষ্টি অনুযায়ী তাকায়, উৎফুল্ল মুখাবয়ব নিমিষেই কালো হয়ে যায়, বলল, -দিদি দাড়াও যেওনা, ওখানেতো অদৈতও আছে। ঠিক এসময় আফসার উদ্দিন দুজন ভদ্রলোকের সাথে কফিশপে ঢোকেন আনিকা দেখেই ভয়ে চুপসে যায় অদৈত দেখে ফেললেই সর্বনাশ, দ্রুত অদৈতর দিকেই তাকায়, অদৈত দেখতে পেয়েছে, -ঈশাণ ওটা আফসার উদ্দিন না? আরে শিকার দেখি হাতের মুঠোয়, ঈশান অস্থির কন্ঠে, -অদৈতদা গুরুত্বপূর্ণ মিশণটা ভুলে যেওনা, আজ না অস্ত্র পাচার করার কথা! -ও তাইতো আচ্ছা চলো তাহে ওঠা যাক, আর এই ম্লেচ্ছকে পরেই দেখে নেব। অদৈতকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ঈশাণ ফিরে আসে কফিশপে। আফসার উদ্দিনের কাছে গিয়ে দ্রুত কন্ঠে, -আঙ্কেল আপনি প্লিজ সাবধানে থাকবেন, অদৈত আপনার খোঁজে ছিলো, আজ দেখতে পেয়েতো ......... যাইহোক খুব কষ্টে সামলে নিয়েছি। আনিকা বাবার পাশে আসে কান্না কান্না চেহারা দেখে আফসার উদ্দিন, -কী হয়েছে মা? এমন কেন চেহারা, অদৈতকে দেখেছ? -হুম! -বোকা মেয়ে আমার কিছুই হবেনা মা, ঈশাণ বাবা মেয়েটাকে বাসায় দিয়ে এসো, আমি রিকশা ঠিক করে দিই। ঈশাণ আনিকার দিকে তাকায়, আনিকা লজ্জায় মাথা নিচু করে, ঈশাণ ইতস্তত কন্ঠে, -না আঙ্কেল, আমার একটা কাজ ছিলো...... -কাজ পরে আগে রেখে তারপরে যেও, এসো। রিকশায় উঠে বসে আনিকা পাশে ঈশাণ, দুজনই অনেকটা ইতস্তত অবস্থানে। ২৪ কিছুদিন পর। ইমতিয়াজ আহমেদ ইজি চেয়ারে বসে আছেন আনমনে। মিসেস ইমতিয়াজ লুচি আর খেজুরের ট্যালট্যালে গুড় নিয়ে বেলকণিতে নিয়ে গেলেন, বললেন, -চা বৌমা নিয়ে আসবে। ইমতিয়াজ আহমেদ মৃদু স্বরে, -ইকরাম ফিরেছে লুবনা? -না ফেরেনি, বৌমা বললো ফিরতে দেরী হবে। তবে ঈশাণ আসবে কিছুক্ষন পরই, তুমি শুরু করো। লুচির একটা টুকরা মুখে তোলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, বললেন, -আজতো ঈশানদের এপার্টমেন্টটা বিক্রি হলো। -তাই? আনন্দিত কন্ঠস্বর লুবনা খানমের। বড় বৌমা নিপুন চা নিয়ে আসে, ইমতিয়াজ আহমেদ হাস্সোজ্জ্বল কন্ঠে, -তুমিও বসো বৌমা একসাথেই চা খাই। -হ্যা বাবা বসছি,  ঈশাণের বিয়ে কবে? ইমতিয়াজ আহমেদ মুচকী হাসেন শুধু। লুবনা খানম বললেন, -তোমার দেবরেরতো সময়ই হয়না, কতো ব্যস্ত বলোতো, মেয়েটাকে সময় দিতে পারবে? ইমতিয়াজ আহমেদ চায়ে চুমুক দিলেন, -জানোতো লুবনা গতাল নাকী অদৈতর সীমান্তে অস্ত্র পাচার করার কথা ছিলো, অস্ত্র সহ দুজনকেই বিজিবি সদস্যরা আটক করতে পেরেছে, সেটা সম্ভব হয়েছে ঈশাণের ইনফরমেশনে। দেশের এতো বড় বড় উপকার করে যাচ্ছে আমার ছেলেটা অথচ ওকে কেউ চিনছেনা। আরে নোবেল পুরস্কারতো আমার ছেলেরই পাওয়া উচিত। কলিং বেল বেজে ওঠে এসময়, কাজের মেয়েটি খুলে দেয়। ঈশাণ দ্রুত পায়ে বেলকণিতে গিয়ে বাবা মাকে সালাম দেয়। রাতে ডিনার টেবিলে সবাই। ইকরামও আছে ঈশান কিছুটা লজ্জিত কন্ঠেই, -বাবা এখানে সবাই যেহেতু আছে আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছি...... -কী বলো! -বাবা আমি খুব দ্রুত আনিকাকে বিয়ে করতে চাই। তোমরা আয়োজন করো। ইমতিয়াজ আহমেদ উচ্চস্বরে, -আলহামদুলিল্লাহ! মিসেস লুবনাও খুশি হন। ইকরাম হেসে বলল, -বাবা তুমি তাহলে আফসার আঙ্কেলর সাথে কথা বলে দিন ঠিক করে ফেল আমি কার্ড বানাতে দিচ্ছি। রাত্রির নিকষ কালো অন্ধকার ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। ঈশাণের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আগামী শুক্রবার। রাত তিনটা তিরিশ। তাহাজ্জুদের জন্য দাড়িয়ে যায় ঈশাণ, অনেক কথা আছে যে মালিকের সাথে। নিজের প্রয়োজনের কথা, জানা অজানা গুণাহের কথা, নতন জীবনের ঢুকতে যাওয়ার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদে নিজের ভূমিকার কথা............ নামাজ শেষেজায়নামাজে অনেক্ষণ বসে থাকে ঈশান, অদৈতর প্লানগুলো নিয়ে ভাবে, অদৈতর বর্তমানে প্রথম প্লান হলো, আনিকার বাবাকে খু... করা। দ্বিতীয়ত আনিা আর মনিকাকে জিম্মিকরে ওদের সমস্ত সম্পদ দাবী করা, এরপর দেশের প্র্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও অস্ত্র তৈরীর জন্য লোকবল তৈরী করা, আর প্রতিমাসে দশকোটি টাকার অস্ত্র বিদেশে পাচার করা। ঈশাণের মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন জাগলো, "আচ্ছা অদৈত জানলো কী করে যে নাফিজ, ঈমন আনিকার ভাই?" তবেকি সেদিনই জেনেছে যেদিন আনিকা নাফিজের সাথে ধানমন্ডি এসেছিলো...... যেভাবেই জানুক বা না জানুক, অদৈত সব জানে এটা ভেবেই এগুতে হবে। চলবে.........

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)