ধর্ম ও গবেষনা

নিরব ঘাতক

নিরব ঘাতক
kills আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন,“তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো এই নির্দেশ ই তোমাদের দেয় যে, অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক আর আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা আরোপ করতে থাক” – সুরা বাক্কারাঃ ১৬৮-১৬৯ পবিত্র কুরাআনের এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদের সামনে অনেক বিষয় চলে আসে। আজ আমাদের নিজেদের অবস্থান নিয়ে কিছু আলোচনা পেশ করার চেষ্টা করবো আপনাদের সামনে।  আমাদের দেশে বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতি, বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে অনেক সমালোচনা আর আলোচনা হয়, আলোচনা হয় টিভিতেও। নানা রকম টকশো তে বলা হয়ে থাকে ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের দেশ আর জাতিকে খেয়ে ফেলছে। কথাটা মোটেও মিথ্যা নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে অনেক বেশী সত্যি। আমাদের বাঙ্গালি জাতির জাতীয় পোশাক নিয়ে নানা জনের অনেক মাথাব্যথা। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করি। এবার একটু মিডিয়া নিয়ে কথা বলা যাক। মিডিয়া এমন একটা জিনিস, যেটা একটা জাতিকে গঠিত করে। বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া। বর্তমানে ঘরে ঘরে আমরা পত্রিকা দেখতে পাই। যদিও আপাত দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই দেশ চালাচ্ছে সরকার, তারপরও পিছনের কলকাঠি নাড়ার ব্যাপারে যে মিডিয়া সক্রিয়, তা এখন বোধ করি কারোই অজানা নয়। আজ আমরা মিডিয়াতে যা দেখি, তা হয়তো এখন আমরা দেখি বর্তমান। কিন্তু একটু দিব্য দৃষ্টি দিয়ে দেখলে দেখবেন, ১০ বছরে মিডিয়া কি করেছে। হ্যাঁ, একটা আমুল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে সমাজে। একটু ভেবে দেখু... তো ?? আজ থেকে থেকে দশ বছর আগে যে ফ্যাশন চলতো, ১০ বছর পর আর তা কেন চলেনা ?? এর কারন মিডিয়া। পত্র-পত্রিকা আর টেলিভিশনের ফ্যাশন বিষয়ক অংশে মানুষের সামনে যা তুলে ধরা হয়, তাই আধুনিক ফ্যাশন বলে প্রচলিত হয়। আপনারা হয়ত ভাবছেন, আমি এ নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছি কেন? আসলে ব্যাপারটা আপনারা ভেবে দেখলে বুঝবেন, এটা মাথা ঘামানোর মতই একটা ব্যাপার। আজ আমাদের মিডিয়া নৈতিকতা নিয়ে কথা বলে। কথা বলে বাঙ্গালি সংস্কৃতি নিয়ে। কিন্তু এখনকার পত্র-পত্রিকার পাতা উল্টালে দেখবেন, সেই বিদেশী নায়িকাদের রগরগে সব ছবি। টিভি খুললে দেখবেন “আজকের বলিউড” নামক হাজারো অনুষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ফ্যাশন বিষয়ক পাতায় বা অনুষ্ঠানে আজ আমরা কি দেখি ?? হ্যাঁ, বিদেশীদের পাশাপাশি আমাদের দেশি মেয়েদের বড় বড় ছবি, কভার পিকচার, যেটাতে তারা খুব সুড়সুড়ি জাগানো পোশাক পরে পোজ দিয়ে দাড়িয়ে আছে। এ হল আমাদের দেশের মিডিয়ার সংস্কৃতি প্রেম। মেয়েদের জিন্স-টিশার্ট পরা ছবি পত্রিকায় ছেপে আমরা আমাদের তরুণ-তরুণী আর কিশোর-কিশোরীদের কাছে আসলে কি তুলে ধরতে চাচ্ছি ?? আমরা কি একটা লজ্জাহীন সমাজ চাই ?? যে সমাজে নির্লজ্জ নারী-পুরুষ অবাধে চলাফেরা করবে আর যে যার খুশি মত চক্ষুর তৃপ্তি নিবে ??? আমি আমার লেখার শুরুতে কুরআনের যে আয়াত উল্লেখ করেছিলাম, বোধকরি এতক্ষনে আপনারা তার মর্ম উপলব্ধি করতে পেরেছেন। হ্যাঁ, একটা সমাজে লজ্জাহীনতা আর অশ্লীলতা শুধু শয়তানই ছড়ায়। আর আমরা জেনে না জেনে সেটা অনুসরণ করে যাচ্ছি। এটা আল্লাহ্‌র ই কথা। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) বলেন, একদিন রাসুল (সা) এক আনসারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তাঁর ভাইকে অধিক লজ্জা ত্যাগ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছিলেন। রাসুল (সা) তখন বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। কারন লজ্জা ঈমানের অঙ্গ” – সহীহ বোখারী প্রিও ভাই ও বোনেরা, তাহলে আমরা কি ধরে নিব ?? আমাদের মিডিয়া একটা নির্লজ্জ জাতি গঠন করতে চায়?? যদি তাই না হবে, তবে কেন আমাদের মিডিয়া পরোক্ষ ভাবে আধুনিকতা আর ফ্যাশন এর দোহাই দিয়ে নির্লজ্জ পোশাক কে প্রচার করছে। তারা কি মুসলিমদের ঈমান হারা করতে চায় ?? নাকি মুসলিম তরুন-তরুনীদের লজ্জা ত্যাগ করতে পরামর্শ দিচ্ছে ?? আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে সুরা নুর এর ১৯ নং আয়াতে বলেছেন, “যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ও প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি”। এখন হয়ত অনেকে বলবেন, আপনার এতো ধর্মের সুড়সুড়ি, আপনি না রাখলেই তো হয় পত্রিকা। আপনি টিভি না দেখলেই তো হয়। কিন্তু ভাই ও বোনেরা, আমরা “এইডস” নামের নিরব ঘাতকের ব্যাপারে সচেতন হতে চাই। তার চেয়ে বড় নিরব ঘাতক আমাদের সমাজের নৈতিকতা কে হ... করে চলছে, তার জন্য কি আমাদের সচেতন হবার দরকার নেই ?? সাহিত্য আর সংবাদ মাধ্যম একটা জাতি আমাদের উপহার দিতে পারে যে জাতি হবে নৈতিকতা আর আদর্শের দিক থেকে উত্তম। কিন্তু আজ তারা তাদের সেই ক্ষমতার ব্যাবহার করতে ভুলে গেছে। কোন এক অজানা কারনে তারা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছে। আমরা মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে বাস করি। এই সমাজের বেশিরভাগই নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করি। আজ মুসলিমদের ঈমান ধ্বংস করা হচ্ছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যা আমরা মুসলিমরা স্বাভাবিক ভাবে সমাজে বহন করে বেড়াচ্ছি। একবার ভেবে দেখু..., আগামি ১০ বছর পর আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? আমাদের সন্তানরা তখন ইসলামের নাম শুনলে জিজ্ঞাস করবে, সেটা কি ?? কারন সেভাবেই আমাদের মিডিয়া আমাদের সমাজকে ঢেলে সাজাচ্ছে। চাইলেও আমরা তখন আমাদের সন্তানদের, ভাইদের, বোনদের ফিরিয়ে আনতে পারবোনা। আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন। আর তা হতে হবে এখন থেকেই। ঘরে ঘরে ছেলে মেয়েদের এ কথা সুস্পষ্ট করে মা-বাবাকে শিক্ষা দিতে হবে যে, আধুনিকতার নামে আমরা যা দেখছি পত্র-পত্রিকা আর টিভিতে, তা মহাপাপ আর ঈমান বিনষ্টকারী। আমাদের চুপ করে বসে থাকার সময় নেই ভাই ও বোনেরা। কারন, রাসুল (সা) বলেছেন, “ যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান,পরে তারাই তার ব্যাপক প্রচারের ব্যাবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারী, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে যে, যা তার পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি” – ইবনে মাজাহ-কিতাবুল ফিতান-হাদীস নং ৪০০৯ আজ আমাদের সমাজে তাকালে আমরা রাসুলের (সা) বাণী কি একটু ও প্রতিফলিত হতে দেখিনা ? প্রিও ভাই ও বোনেরা, ইসলাম, তাওহিদ আর ঈমানের মধ্যেই আসল সাফল্য। আমরা মুসলিম হয়ে যদি ইসলামের মধ্যে শান্তি খুঁজে না পাই, খোঁজার চেষ্টাটুকুও যদি না করি, তবে আমাদের জন্য খুব ই বিপদের সময় আসছে। সে সময় আমাদের মৃত্যুর সময়, যখন আমরা আল্লহ কে আর আমাদের পাশে পাবনা, আমাদের গাফেলতি আর গা ছাড়া ভাবের কারনে। আল্লাহ্‌ তো বলেই দিয়েছেন, “যে কেউই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা কামনা করবে, তা কখনোই তার নিকট হতে কবুল করা হবেনা এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন” – সুরা আলে-ইমরানঃ ৮৫ আসুন এইসব নিরব ঘাতক অসামাজিক বিষয়ের উপর নিরব অস্ত্র প্রয়োগ করি। এ অস্ত্র জ্ঞানের অস্ত্র, নৈতিক শিক্ষার অস্ত্র, ইসলামি শিক্ষার অস্ত্র। আমাদের শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতিরা যখন প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, নিজেরাই বুঝতে পারবে যে কোনটি ভুল, তখন তারা নিজেরাই আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসবে। এ জন্য আমাদের একটু কষ্ট করতে হবে। যে যেই অবস্থায় আছি, এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে পরিবার আর বন্ধু মহলে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দিন। আমীন!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)