সাহিত্য

শত কোটি গল্পের ভীড়ে

শত কোটি গল্পের ভীড়ে
১৮ এভাবেই চলছিলো, মানুষের জীবন জড়িয়ে থাকে নানা ধরণের ঘটণা দিয়ে। যেগুলো পথ নির্বাচনে, সত্য উদঘাটনে, মিথ্যা দুরীকরনে অত্যধিক সাহায্য করে। আফসার উদ্দীন আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। এক পর্যায়ে নিজের অপরাধবোধ তার অশ্রু ধারাকে  অত্যধিক বাড়িয়ে দিলে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন। না জানি কে দেখে ফেলে। কিন্তু দৃষ্টি এড়ায়না সাহারা খাতুনের, উদ্বিগ্ন কন্ঠে, -কী হয়েছে? কাঁদছো কেন? অশ্রু মুছে ফেলেন আফসার উদ্দিন, মলিন কন্ঠ তাঁর, -মণিকা নামের মেয়েটি এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে শুনেছো তো সাহারা? -হ্যা শুনেছি নাফিজ, ঈমণ দুজনই ওর চিকিৎসা করাচ্ছে, এটা ভেবে এতো মন খারাপ করছো? নিজের মনে বেশী চাপ নিওনা, সবই ঠিক হয়ে যাবে দেখে নিও। -না সাহারা, আজ আমি তোমাকে এমন একটা কথা বলতে চাই যা তোমার সহ্য করা কঠিন, কিন্তু আমি আমার অপরাধবোধ থেকে মুক্তি চাই, আর পারছিনা, তোমাদের কাছে লুকিয়ে রেখে আমার দায়বদ্ধতা থেকে পালিয়ে আমি অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছি। শংকিত দৃষ্টিতে স্বামীর চোখের দিকে তাকান, -কিসের কথা বলছো? -বলছি, নাফিজের জন্মের পর আমি যে বাদীর কেস নিয়ে লড়েছিলাম, মনে পড়ে সে সময়ের কথা? -হ্যা মনে পড়ে। -ওনার ঐ কেসের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় ওনার মেয়ে রোকেয়ার সাথে কথা বলতে হয়েছে, তথ্য জানতে হয়েছে। কথা বলতে গিয়ে আমাদের মধ্যে একটা আন্ডারষ্ট্যান্ডিং তৈরী হয়। আর পরবর্তীতে আমি রোকেয়াকে বিয়ে করি........................... সাহারা খাতুনের বিমর্ষ মলিন আর ব্যাথাহত চেহারার দিকে তাকিয়ে থমকে যান আফসার উদ্দিন, সাহারা খাতুনের অশ্রু বাধ মানছেনা, দ্রুত সাহারা খাতুনের দুহাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নেন আফসার উদ্দিন, অপরাধের বোঝায় ভারী হয়ে যাওয়া আফসার উদ্দিনের দু গন্ড বেয়ে ঝরছে অশ্রু, অত্যন্ত নত সুরে, -আমায় ক্ষমা করো সাহারা, আমি সত্যিই আর পারছিনা। আনিকা আনজুম আর মনিকা মমতাজ ওরা আমার সন্তান। রোকেয়া ওদের মা। তবে রোকেয়া আর এই পৃথিবীতে নেই। আমি আমার মেয়েদেরকে আমার পরিচয় দিয়ে আমার কাছে রাখতে চাই। হঠাৎই নাফিজ রুমে টোকা দেয়, -বাবা আসবো? -হ্যা এসো, ঘরে ঢুকে মায়ের পাশে বসে মায়ের অশ্রু মুছে দেয়, আমি আগে থেকেই সবটা জানতাম মা, ভাই  হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাবা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর আমাকে দাও, আমাদের চাচা আমাদেরকে কেন জানেনা, মাতো তোমার প্রথম স্ত্রী! -আমি আর তোমার মা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম, আমার পরিবারের কেউ জানতোনা। যাইহোক যেটা বলছিলাম, ঈমনকেও ডাকো নাফিজ, আমি ওদেরকে বাসায় আনতে চাই। -বাবা ভাইয়াকে আমি বলেছি।ঠিক এসময় ঈমন প্রবেশ করে, অশান্ত এক বাক্য ছুড়ে দেয়, -নাফিজ কালকের মধ্যে এই হাসপাতাল থেকে ওকে সরাবি নইলে কিন্তু............... নাফিজ হতবাক কন্ঠে, - কী বলছ ভাইয়া? ঈমনের লাল টকটকে চোখ, -এই তুই থাম প্রতারকের হয়ে ওকালতি করবিনা, প্রতারণা করবে ঐ লোকটা আর তার মাশুল আমরা কেন দেব কেন? আমার মাকে আজ কাঁদতে হচ্ছে কেন? সাহারা খাতুন এবার কথা বলেন, -চুপ করো ঈমন বড় হয়েছো তুমি, বাবাকে কী বলে সম্বোধন করছো, জীবন সঙ্গী সিলেকশনে আমার ভূল ছিলো,তখন বোঝা উচিত ছিলো যে মানুষ তাঁর বাবা মা ভাই বোনকে ধোকায় রেখে আমার জন্য বাড়ি ছাড়া হতে পারে, সেতো অন্য কারো জন্য আমাকেও ছাড়তে পারে................আজ এতো বছর পর তো আর কিছু করর নেই!  কথা যা বলার আমি বলবো ঈমন, তোমরা না তোমাদের বাবা উনি, সে সম্মানটুকু তো দিতেই হবে। মাথা নিচু করেন আফসার উদ্দিন, লজ্জায় তাঁর মরে যেতে ইচ্ছে করে, ঈমণ হনহন করে বের হয়ে যায়, নাফিজ একবার বাবার দিকে, তো আর একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়। সাহারা খাতুন বসা থেকে উঠে, -তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করতে পারো, আমার আপত্তি নেই। ১৯ জ্ঞান ফিরেছে মণিকার, পাশে বসে আছে আনিকা, কাঁদছিলো। একটু আগে ঈশান এসেছে, মলিন স্বরে, -আনিকা! পেছনে তাকায় আনিকা, উঠে দাঁড়িয়ে, -কখন এসেছেন? -এখনই। মণিকার দিকে তাকায় ঈশাণ, -কী অবস্থা মণিকা এখন কেমন লাগছে তোমার? -ভালো, তবে খুব টায়ার্ড লাগছে! মণিকা অন্য পাশ ফিরে শোয়, আনিকা ওর মাথার চুলগুলো নেড়ে দেয়, ঈশাণকে পাশের চেয়ারটায় বসতে বলে, ঈশাণ বসে বলল, -চাচা চাচী আসবেননা? -আসবেন দুপুরের খাবার নিয়ে আসবেন, আপনার এখন কী অবস্থা? ওখানে আপনি কী ঈশাণ চক্রবর্তী নামে পরিচিত? -হুম! ওদের দলে কোন মুসলিম নেই, অদৈত মুসলিমেরকে দেখতে পারেনা, তাই এই টাইটেলটা লাগিয়েছি। আনিকার কন্ঠে শংকা, -সাবধানে থাকবেন প্লিজ! ঈশাণ মুচকী হেসে, -এই কথাটা খুব মনে থাকবে আমার! আনিকা উদ্বিগ্নতা,মণিকাকে নিয়ে শংকা, আর লজ্জায় একেবারে কুঁকড়ে যায়, মাথা নিচু করে, একটু পরে, -নামাজ কিভাবে পড়েন? -মসজিদে, গিয়ে, তবে খুব সাবধানে থাকতে হয়। আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও, ঔষধ কি সবগুলো আছে! -হ্যা আছে......... নাফিজ ভেতরে ঢোকে, ঈশাণকে দেখে হাসিমুখে, -কখন এসেছো ঈশাণ? ঈশান উঠে দাঁড়িয়ে নাফিজের সাথে কোলাকুলি করে, -এইতো দশ মিনিট, কেমন আছো? -ভালো, তুমি বসো আমি একটু আরো ঔষধ নিয়ে আসছি......... ঈশান দ্রুত কন্ঠে, -না ওটা আমায় দাও, আমি নিয়ে আসি তুমি বরং মণিকাকে দেখো। প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঈশাণ বেরিয়ে যায়। নাফিজ মণিকার পার্লস চেক করে, -বাবা তোমাদেরকে ধানমন্ডির বাসায় নিতে চান! -অ! -অ কেন? - ঈশাণ আসার আগে ঈমন ভাইয়াকে ফোন করেছিলাম উনি আমাকে বলেছেন তুই কোনদিন ফোন করবিনা, কেঁদে ফেলে আনিকা, -আমরা ওখানে যাবোনা ভাইয়া, আর কী দরকার নতুন করে ঝামেলার? যেমন আছি খুব ভালো আছি। বেশ কিছু সময় ধরে নাফিজ মণিকাকে চেক করে, আনিকাও চুপ থাকে। এ সময় ঈশাণের পাশে হেঁটে আসেন আফসার উদ্দিন, আনিকা কাছে এগিয়ে যায়, কাঁপা গলায়, -বাবা! আফসার উদ্দিনও আবেগে কেঁদে ফেলেন, আনিকাকে জড়িয়ে নেন কিন্তু মণিকা  চিৎকার করে ওঠে, -এই প্রতারক এখানে কেন? এই লোকটাকে কেন ঢুকতে দিয়েছো তোমরা......... আফসার উদ্দিন দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে যান। ঈশাণ ওনাকে শান্তনা দেয়। লজ্জায়, মাথা নিচু করেন আফসার উদ্দিন, ঈশাণের দিকে নির্ভরশীলতার দৃষ্টিতে তাকান, -তুমি জানো? তবুও.... ঈশাণ হ্যা সূচক মাথা নাড়ে, -হুম! তবুও বলতে কিছু নেই আংকেল, আপনার মেয়েকে আমি আমার ভালো লাগার জন্যই বিয়ে করবো! আফসার উদ্দিন জড়িয়ে ধরেন ঈশানকে, -আমায় বাঁচালে বাবা, খুব সুখি হও তুমি খুব খুব....। (চলবে)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)