সাহিত্য

শত কোটি গল্পের ভীড়ে

শত কোটি গল্পের ভীড়ে
১৬ আনিকা নিবেদিতাদের নতুন ঠিকানা ফোনে জেনে নিয়ে ওদের বাসার গলিতে ঢুকলো। নিবেদিতার জন্য দোকান থেকে আইসক্রিম, চিপস কিনে নিয়ে কেবলই মোড় ঘুরেছে আর অমনি নিবেদিতা ওকে জড়িয়ে ধরলো, -আন্টি তুমি এখন দেখতে পাও? -হুম পাইতো, নিবেদিতার সুন্দর মুখখানা দেখতে পাচ্ছি। নিবেদিতা ওকে টানতে টানতে টিনের চালের দুটি বস্তির ঘরে নিয়ে যায়। দুটি ঘরই ওর মা ভাড়া নিয়েছে । রাইমা ব্যস্ত হয়ে আনিকাকে বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলো, আনিকার সামনে এসে দাঁড়ালো চায়না। আনিকা রাইমাকে লক্ষ্য করে, -দিদি উনি কে? -আমার বোন চায়না, আনিকা কতদিন দেখা হয়না তোমার সাথে বলোতো! মুচকী হাসে আনিকা, -এখন দেখো রেগুলার হবে, আমার কলেজের কাছে কিনা। রাইমা চায়নাকে লক্ষ্য করে, -চায়না ওর সাথে কথা বল আমি সন্দেশ নিয়ে আসছি। আনিকা মুচকী হেসে, -বসো দিদি, ভালো আছ তুমি? যদিও তোমাকে এর আগে কখনো দেখিনি তবুও অপরিচিত লাগছেনা। -আছি ভালো আনিকা, তোমার কথা এর আগে অনেক শুনেছি জানোতো! আনিকা কন্ঠ শুনে চমকে ওঠে, সেই তানিয়া ম্যামের মতো এই কন্ঠটা, এতো মিল কেন? তবে সেদিনের ঐ দুর্ঘটনায় তানিয়ে ম্যামের কোন যোগসাজশ ছিলোনা। তবে কী? আকস্মিক চমে চায়নার মুখের দিকে তাকায় আনিকা, চায়নাও আনিকার বদলে যাওয়া চেহারা দেখে ইতস্তত বোধ করে, আনিকা কিছু বলার আগেই চায়নার মোবাইল বেজে ওঠে, রিসিভ করে চায়না উঠে দাঁড়ায়, -হ্যালো! ওপারে অদৈতর কন্ঠ শুনে চায়না ভয় পেয়ে যায়, বলছে, -কোথায় আশ্রয় জুটিয়েছিস হ্যা? তোর অস্তিত্বের প্রয়োজন আমার কাছে শেষ হয়ে গেছে কিন্তু এখানকার একটা তথ্য যদি বাইরে যায় তাহলে তোর রক্ত দিয়ে গোছল করবো জেনে রাখিস। চায়না কাঁদছে, রাইমার হাতে সন্দেশের বাটি, বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে আছ, আনিকা, নিবেদিতা অবাক হয়ে চায়নার মুখের দিকে তাকিয়ে। চায়না এবার অশ্রু মুছে দৃঢ় কন্ঠে, -আমি মৃত্যুর ভয় করিনা অদৈত! বলেই মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেয়, আনিকা অদৈত নাম শুনেই চায়নাকে, -অদৈত কে? চায়না স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে, -আনিকা তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে, আমি নিজে আসব তোমার কাছে। আজ কিছু বলার মতো অবস্থা আমার নেই! প্রস্থান করে চায়না। আনিকা একটা সন্দেশের টুকরো মুখে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, -আজ উঠি দিদি, চাচী চিন্তা করবেন, আমি নিবেদিতাকে নিয়ে যাই? রাইমার শংকা কেটে ওঠেনি চায়নার ফোনালাপ নিয়ে, এখন আনিকার এই কথা শুনে আতঙ্কিত কন্ঠে, -না না আনিকা ওরা আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলবে.................. থেমে যায় রাইমা মনে পড়ে ঈশাণ কাউকে এই কথা বলতে নিষেধ করেছিলো। ১৭ আনিকা নিবেদিতাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশায় ওঠে। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর একটা গাড়ী এসে ওর রিকশার সামনে দাঁড়ায়, গাড়ী থেকে নামলো ধুতি পরা একজন লোক আর একজনকে ইংরেজদের মতো মনে হলো আনিকার নেমেই ধুতি পরা লোকটি আশেপাশে তাকাচ্ছে আর মুখটা হাসি হাসি করে ইংরেজ লোকটি কথা বলছে কিন্তু আওয়াজ বড্ড ভয়ংকর আনিকাকে লক্ষ্য করে, -দ্রুত গাড়ীতে উঠে পড়ুন নইলে, রিভলবারর গুলি আপনার মাথার খুলি উড়িয়ে দেবে। আনিকা থরথর রে কাঁপতে শুরু করেছে, কোন কথা না বলে উঠে পড়ে, ভেতরে একজন মহিলাকেও দেখতে পায় মহিলাটি হিংস্র কন্ঠে, -ঐ দিকে কই গেছিলিস কে আছে তোর? আনিকার ভীত মুখমন্ডল দেখে ধুতি পরিহিত নিতাই, -থাকনা লিজা যা জেনে নেয়ার অদৈতদা জেনে নেবে.................. আনিকা হকচকিয়ে ওঠে, এবার কথা বলে ওঠে, -অদৈত কে? অদৈত বর্মন কী? নিতাই ই কথা বলে, -হুম অদৈত বর্মণ, আপনি আগে থেকেই ওর চক্ষুশূল তার উপর মসজিদ ভাঙ্গতে গিয়ে আমাদের দুজন লোক মারা গেছে, মসজিদের ইমাম বলেছেন আপনি নাকী তাকে মসজিদ ভাঙ্গার খবরটা দিয়েছেন। আনিকা আো ভয় পেয়ে যায়, নিতাইয়ের ফোন বাজার শব্দ শুনে কানটাকে সজাগ রাখে, নিতাই রিসিভ করে, -হ্যা ঈশাণ কী খবর? -তোমরা কোথায়? -এইতো আনিকাকে কিডন্যাপ কে..................... -কী!? কী বলছো, এই প্লান আবার কখন হলো? কোথায় তোমরা? -এইতো, সাভারে জ্যামে আটকা পড়েছি, তুমি এতো উত্তেজিত হয়ে কথা বলছো কেন? হ্যালো, হ্যালো............ যাহ কেটে দিলো। দশ মিনিট পরই ডেভিডদের গাড়ীর সামনে রাস্তা ব্লক করে গাড়ী নিয়ে দাঁড়ায় ছদ্মবেশী এহতাশিম বিল্লাহ ঈশাণ, সাথে তার বন্ধু বিপ্লব। নিতাইরা নেমে পড়লো, ঈশাণ রিভলবার তাক করলো আনিকাকে বাম বাহুর মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে,   ডেভিডকে লক্ষ্য করে , -বৃথা চেষ্টা করলে তোমাদের প্রত্যেককে গুলি করবো.........। কিন্তু ডেভিড ঈশানের বাম ডান বাহুতে গুলি করলো, আর রিভলবার ছিটকে পড়ে গেলো, ঈশান দ্রুত আনিকাকে ঠেলে গাড়ীতে উঠিয়ে দিলো, নিজেও উঠে, -বিপ্লব দ্রুত! বিপ্লব আর একটা সুযোগও না দিয়ে ডেভিডের কপালে গুলি করে গাড়ীতে উঠে ষ্টার্ট দিলো। আনিকা ভয়ে চোখ ঢেকে রেখেছিলো, বিপ্লব একটু দুরে িয়ে গাড়ী সাইড করে ঈশাণের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো, আনিা ওর রক্ত দেখে কেঁদে ফেলেছে, -আমার জন্য আপনার এমন হলো............ ঈশাণ মুচকী হাসে, একটু পরে গম্ভীর কন্ঠে, -সরি! আনিকা অবাক হয়ে তাকায়, -আপনি কেন সরি বলছেন............ -না তখন তোমাকে আমার আয়ত্বের মধ্যে রেখে না বের করলে মারাত্মক কিছু হয়ে যেতে পারতো..................... লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে আনিকার মুখমন্ডল, ভালো লাগা ছড়িয়ে পরে ওর সমস্ত স্বত্তা জুড়ে, ঈশাণ ইচ্ছে করেই ওর দিকে তাকায়না, কন্ঠের গম্ভীরতা বজায় রেখে, -সর্বোপরি এ যাত্রায় আল্লাহর সাহায্য ছিলো বেই অদৈতর হিংস্রতা থেকে বেঁচে গেলে। (চলবে)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)