সাহিত্য

শত কোটি গল্পের ভীড়ে

শত কোটি গল্পের ভীড়ে
  ১৩ লাঞ্চ করতে বসেছে সবাই। চায়না পরিবেশন করছে। অদৈতর ডানপাশে ঈশাণ,বাম পাশে লিজা, ঈশানের ডান পাশে নিতাই। অদৈত ঈশাণকে লক্ষ্য করে, -কী অবস্থা কাজ কতদুর এগুলো? ঈশাণ মুখের খাবার শেষ করে, -ওরা অন্য জায়গায় শিফট করেছে অদৈতদা, তবে ভেবনা খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে পাব। অদৈত বিমর্ষ কনঠে, -হুম! ইদানিং কাজগুলো জটিল হয়ে যাচ্ছে। ডেভিড তোমার কী খবর? -অদৈত! ঐটা একটা মসজিদ, মুসলমানরা নিজেদের ঘরের চেয়েও ঐ ঘরকে বেশী ভালোবাসে, বুঝতে পারছো? ওটা ভাঙ্গা যেমন তেমন কথা না। রাতের অন্ধকারে ভাংতে গেলেও জীবন মরণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে! অদৈত দাঁতে দাঁত চেপে, -ঐ ম্লেচ্ছদের ভক্তির কথা আমাকে শুনিওনা ডেভিড! যে কোন উপায়ে মসজিদের ঐ জায়গা আমার চাইই! নিতাই মিনমিনিয়ে, -কারো ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে লড়াই করা উচিত না অদৈত দা! হুংকার ছাড়ে অদৈত, -চুপ, সাফাই গাইবিনা। এদেশের সব জায়গার মসজিদ ভেঙ্গে আমি তছনছ করে দেব............ ঈশাণ মলিন কন্ঠে, -শান্ত হও অদৈতদা! কোথাকার মসজিদ এটা? -কুমিল্লা! নিতাই আনমনে প্লেটের খাবার শেষ করে উপরতলায় যাবার জন্য পা বাড়ায়, রক্তচক্ষু নিয়ে সামন এসে দাঁড়ায় অদৈত, কর্কশ কন্ঠে, -অস্ত্রগুলো এনেছিস? -হ্যা আমার রুমে আছে দিয়ে যাবো? -দিয়ে যা। রাত তিনটা। দুজন লোক অদৈতর বেডরুমে ঢুকলো। সমস্ত অস্ত্র পাঁচমিনিটের মধ্যে প্যাক করে নিয়ে চলে গেলো। ১৪ সকালে অদৈতর দৃষ্টি সেদিকে যেতেই পুরো বিল্ডিং মাথায় তুলে চিৎকার শুরু করে দিলো। চায়না রান্নাঘরে রুটি শেকছিলো, দ্রুত ছুটে আসতে গিয়ে পায়ের আঙ্গুলে ব্যাথা পায় কিন্তু সেদিকে খেয়াল না করে অদৈতর সামনে দাড়িয়ে, - কী হয়েছে? অদৈত চায়নাকে এলো পাথাড়ি মারতে থাকে, আর বলে, -তুই আমার এতো বড় সর্বনাশ কেন করলি? তোর কী পুলিশ, রা্বের সাথে যোগাযোগ আছে নাকী? অস্ত্রগুলো  কোথায়? চায়না কাঁদছে, -আমি কিছুই জানিনা বিশ্বাস করো! ও পাশের বেলকনির গ্রীল ভাঙ্গা দেখেছি, তোমার ঘুম ভাঙ্গলে বলতে চেয়েছিলাম। অদৈতর দুচোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে যেন, ধাক্কা মেরে চায়নাকে দরজার বাইরে বের করে দেয়, আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবি দুই মিনিটের মধ্যে, কোনদিন আসবিনা আমার সামনে, যা বলছি নইলে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব। ঈশাণ আর নিতাই সিড়ি বেয়ে নামছিলো, চায়নাকে দেখে বিস্মিত কন্ঠে ঈশাণ বললো, -দিদি কী হয়েছে? কিছু বলেনা চায়না, ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামে, ঈশান নিতাইকে লক্ষ্য করে তুমি অদৈতদার ওখানে যাও আমি আসছি...... দিদি কথা বলছনা যে...। নির্বিকার কন্ঠ চায়নার, -অস্ত্র চুরি গেছে। ভালোই হলো জানোতো ঈশাণ, আমি ভাবতাম অদৈত ছাড়া জীবনটা আমার অচল, কিন্তু আজ এই মুহূর্তটা আমাকে বলে দিচ্ছে, অদৈতকে বুঝি আমার চেয়ে বেশী ঘৃণা কেউ করেনি। কিন্তু এখন আমি যাবো কোথায়? কথা শেষ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ঈশান চায়নার পাশাপাশি হাঁটছে, মাথা নিচু করে, -তোমার দিদির কাছে যাবে? রাইমা দিদির ওখানে? বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকায় চায়না ঈশাণের মুখের দিকে, -ঈশান দিদির বিয়ের পর সেই যে জামাইবাবু কলকাতা নিয়ে গেলো, তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ বাবা মা বেঁচে থাকাকালীন দিদির কোন খবর পাইনি। -হুম জানি আমি, অদৈত তোমার জামাইবাবুকে মেরে ফেলেছে। পরে তোমার দিদি টাঙ্গাইল থাকতো, এখন সাভারে আছে। নিবেদিতা স্যান্যাল তামার দিদির মেয়ে! সেদিন আমিই ওদেরে বাসা চেইঞ্জ করে দিয়ে এসেছি। চায়নার কন্ঠ একেবারে রুদ্ধ হয়ে গেছে, কিছু বলতে পারছেনা, ঈশাণ এরই মধ্যে ঠিকানা লিখে দিয়ে, -দিদি আমরা গাজীপুর বাস ষ্ট্যান্ডে এসে গেছি, তুমি এই ঠিকানাটা নাও ঐ যে ঐ বাস ধরে চলে যাও। চায়না বাসের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসে, -তুমি এমনটা কেন করলে ঈশাণ? অদৈত জানতে পারলে তোমার বংশ শুদ্ধ শেষ করে দেবে যে.................. -আমি শুধুই আমার দায়িত্ব পালন করেছি দিদি। এখন আরও একটা বিশাল দায়িত্ব আমার কাঁধে,সেটা পালন করতে হবে। তুমি যাও দিদি, আমি যোগাযোগ রাখবো। ঈশাণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলে, -আর আমি অদৈতকে ভয় করিনা, আমার প্রভু আমায় রক্ষা করবেন। কৃতজ্ঞতায় নত হয় চায়না, -তোমার পায়ে মাথা ঠুকে প্রাম করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু তুমিতো আমায় দিদি ডেকেছো, তবে কথা দিচ্ছি যে কোন বিপদে, সাহায্যের প্রয়োজনে আমায় পাশে পাবে। মা কালীর দিব্যি! চলে যায় চায়না রাণী বর্মণ, পেছনে ফেলে যায় শতকোটি স্মৃতির পসরা, যে স্মৃতিগুলো কোন সুখ দিতে পারবেনা। ১৫ আজ আকরাম উদ্দিনের বিয়ে। আনিকা আর মণিকা সদ্য বিয়ে পড়ানো নতুন চাচীর পাশে বসে আছে। নাফিজ জনাব ইমতিয়াজকে নিয়ে সে ঘরে ঢোকে, হাস্সোজ্জল কন্ঠে, -আনিকা, মণিকা দ্যাখো কে এসেছেন? ওরা দুবোনই উঠে দাঁড়ায়, বাবার ভালোবাসা ওরা না পেলেও বাবার বন্ধু হিসেবে এই মানুষের স্নেহ ওরা পেয়েছে। মণিকা অবাক কন্ঠে, -আংকেল বসুন। ডঃ নাফিজের সাথে আপনার পরিচয় কী করে? আনিকা আর নাফিজের চোখাচোখি হয়, নাফিজ দ্রুত কন্ঠে, -উনিতো আমার বাবারও বন্ধু............... আনিকা নতুন চাচীর সাথে পরিচয় করিয়ে দাওনা! আনিকা পরিচয় করিয়ে দিতে গেলে, ওদের চাচী সানিয়া হাসিমুখে, -আমি কিন্তু তোমাদের ইমতিয়াজ আংকেলকে চিনি, উনি আমার চাচাতো ভাই! আনিকা মণিকা দুজনই উৎফুল্ল কন্ঠে, -অ তাই! নাফিজ ইমতিয়াজউদ্দীনের পাশে বসে, -এহতেশাম আসলোনা আংকেল? আনিা চমকে তাকায় নাফিজের দিকে, অবাক কন্ঠে, -কে এহতেশাম? ইমতিয়াজ উদ্দীন হাসিমুখে, -ও আমার ছেলে মা? হঠাৎই ঢুকে পড়ে এহতেশাম, হাস্যোজ্জল কন্ঠে, -এসে গেছি বাবা! নাফিজ উঠে এসে জড়িয়ে ধরে, -যাক আকাশের চাঁদ আজ মাটিতে নেমেছে। এহতেশাম নাফিজকে ছেড়ে বাবার কাছে যায় জড়িয়ে ধরে, বাবা ছেলেতে খুব ধীরে ধীরে কিছু কথা হয়। আবেীয় কথা, সবশেষে ইমতিয়াজ উদ্দীন শংকিত কন্ঠে একটা কথা বলে চলে যান, -সাবধানে থেকো ! এহতেশাম স্বাভাবিক হয়ে, তাকায় আনিকার দিকে, একবার ছবিতে দেখেছিলো। দৃষ্টি ফিরাতে খানিক্ষন সময় নেয়, মনের মণিকোঠায় আনিকার পুরোটা বন্দী করে ফেলে, নাফিজ দুষ্ট কন্ঠে, -এহতেশাম তোমাকেতো এমন করতে দেখিনি..................... দৃষ্টি নিচু করে, -আনিকা আনজুম, আর মণিকা মমতাজ! ঠিক বলেছি? আনিকার রাগটা কেন জানি লজ্জায় পরিণত হয়। এহতেশাম নিজের পরিচয় দেয়, -আমি এহতেশাম বিল্লাহ ঈশাণ এবার মাষ্টার্স শেষ করলাম। একটা হাউজিং প্রকল্পের সাথে আছি। আর ...... আনিকা লজ্জিত কন্ঠে, মুচকী হেসে, -মানব সেবা করি...... হেসে ওঠে সবাই। যাবার একটু আগে আনিকাকে একা পেয়ে ঈশাণ দ্রুত এগিয়ে আসে, -তোমাকে একটা কথা বলার আছে, -কী? -তোমার নানাবাড়ী কুমিল্লাতে তাইনা? -হুম...... -বায়তুল হুদা মসজিদ চেন? -হ্যা নানাবাড়ীর পাশেই, কী হয়েছে? -ওটা ভাঙ্গার প্লান করা হয়েছে, তোমাকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি, তুমি ব্যাপারটা এমন কাউকে জানাও যেন. লোকবল নিয়ে..... -কী বলছেন? আমি মসজিদের ঈমামে বলি? উনি কখনোইএমন হতে দেবেননা। -বলো! আনিকা মোবাইলে কথা শেষ করে, -আপনি কী এখন চলে যাবেন? -হুম...... -খেয়েছেন? সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় ঈশান, মুচকী হেসে, -ভালো থেকো......... ঈশান চলে যাচ্ছে, আনিকার মনে এক অশান্ত ঝড় তুলে, ঐ বাক্তিত্বসম্পন্ন চেহারাটা যেন আরো কিছু বলে গেলো, দৃষ্টির আড়াল না হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে দেখলো আনিকা। আর নিজে নিজেই বললো, -এতো ভালো কেন উনি? (চলবে)

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)